চমক পর্ব 1

0
1866

চমক

তাজ গাড়ি পার্ক করে ভার্সিটির দিকে হাটা ধরল। সব মেয়েদের সে ক্রাশ। তার আউটলুকিং, ফিগার, স্টাইলিশ, অ্যাক্টিভিটি জাস্ট ওয়াও। এতে তাজ খুবই গর্ববোধ করে। এইজন্যই বোধহয় আজ একটু বেশিই আউটফিট হয়ে এসেছে। তাই তো শুরু থেকেই সব মেয়েরা তাজের কাছে অ্যাট্রাক্টিভ হ‌ওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এটা তাজের খুব ভালো লাগে। মেয়েদের তার রুপের জ্বালে আটকানোটা যেন ওর একটা নেশা।
হঠাৎ করে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল। বৃষ্টি হবে বোধহয়? তাজ মাথা উঠিয়ে আকাশের দিকে তাকায়। কালো মেঘের মধ্য দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর বিদ্যুত খেলে যাচ্ছে। আচমকাই এক ফোঁটা বৃষ্টি পরলো তাজের গালে। ভাবগতিক ভালো ঠেকছে না, তাই তাড়াতাড়ি পা চালাচ্ছে। কিন্তু এরমধ্যেই ঝুপ করে বৃষ্টি নেমে পড়লো। আশেপাশে তাকালে দেখা যায়, ছেলেমেয়েরা যে যার মতো ছুটছে আবার কেউ কেউ ছাতা মাথায় নিয়ে হাঁটছে।
অবস্থা বেগতিক দেখে তাজ কোনো উপায় না পেয়ে একজনের ছাতার নিচে চলে গেল কোনো রকম পারমিশান না নিয়েই।

এখন বর্ষাকাল। তাই যেকোনো সময়‌ই বৃষ্টি হতে পারে। এই ভেবেই মেহজাবিন বাসা থেকে বেরোবার সময় ছাতা নিয়ে বের হয়। এখন তা কাজেও দিয়েছে। ভার্সিটিতে যাবার সময় হঠাৎই মেঘ গুড়ুম গুড়ুম করে বৃষ্টি নামলো। তাই ছাতা মেলে কিছুদূর হাঁটার পর কে জানি চলে আসলো ওর কাছে। পাশ ফিরতেই দুজনার চোখাচোখি হয়ে গেল। তাজ বিপদগ্রস্তদের মতো মুখ করে বলল, ‘ সরি আন্টি। বৃষ্টিতে প্রায়‌ই ভিজে যাচ্ছিলাম। তাই কিছু চিন্তা না করেই আপনার……. মেহজাবিন তাজকে আর কিছু বলতে দিলো না। তাজের হাতে ছাতাটা ধরিয়ে দেয়। তারপর বোরকা একটু উপরে তুলে দৌড় দেয়ার মতো তাড়াতাড়ি হেঁটে কোথায় যেন মিলিয়ে যায়। তাজ অত্যন্ত অবাক। বোকার মতো ওখানেই দাঁড়িয়ে পরলো। এই দশ সেকেন্ডের মধ্যে কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝে আসছে না। তারপর ওর কিছু একটা মনে হতেই দাঁড়িয়ে না থেকে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করে দেয়।

বোরকার উপরের পার্টটা ভিজে যাওয়ায় মেহজাবিন লেডিস ওয়াশরুমের ভিতরে বোরকার ঐ পার্টটা চেঞ্জ করে একটা হিজাব বাঁধলো। অনেক সময় মানুষকে নানান পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় বলে মেহজাবিন ওর ব্যাগে সবসময়ের জন্য একটা হিজাব রাখে। শুধু হিজাব‌ই না মুভ, বাম, কাটাছেঁড়ার মলম, কিছু তুলো, গজ, একটা কাঁচি আর বমি আটকাতে কিছু চাটনি (গাড়িতে উঠলেই গা গুলায়)। না জানি কখন এসবের প্রয়োজন পরে। হলো ও তাই। কোথাকার না জানি কোন এক ছেলে এসে হুমড়ি খেয়ে ছাতার নিচে চলে আসে। আত্মমর্যাদা বলতে কিচ্ছু নেই। ওখানে ছাতা মাথায় আর কোনো ছেলে ছিল না, না কি? যত্তসব! মেয়ে দেখলেই তাদের গা ঘেঁষতে মন চায়। ক্যারেকটারলেষ একটা, এদের ক্যারেক্টার বলতে কিচ্ছু নেই।
এমনভাবেই মেহজাবিন বিড়বিড় করতে লাগলো। মেজাজ তার যথেষ্ট পরিমাণে খারাপ। এও ভেবে তার হাসি পাচ্ছে যে, ছেলেটা মেহজাবিনকে আন্টি বলে ডেকেছে। কিন্তু কেন? মেহজাবিন বোরকা পড়ে বলে? কিন্তু আজকাল অধিকাংশ মেয়েরাই তো বোরকা পড়ে। তাদের তো আন্টি ডাকে না।
কারন একটাই, বোরকা পড়ার মধ্যে তফাৎ আছে। কেউ বোরকা পড়ে স্টাইলিশের জন্য, আর কেউ পড়ে পর্দা রক্ষার জন্য। স্টাইলিশ গুলো ফেস, চুল, বুক, পিঠ ঢাকার জন্য হিজাব বাঁধে না; বাঁধে পুরুষদের তার উপর অ্যাট্রাক্টিভ করার ক্ষেত্রে। আর যারা পর্দা রক্ষার্থে বোরকা ব্যাবহার করে, তারা সম্পূর্ণ শরীরেই কাপড় দ্বারা আবৃত রাখে এবং তার উপর যেন কোনো কু’দৃষ্টির অ্যাফেক্ট না পড়ে, সেই বিষয়ে খুবই সচেতনতা অবলম্বন করে।
মেহজাবিন ও ঐরকম। শয়তানের ওয়াস ওয়াসা থেকে বাঁচতে ওকে যদি সবসময় কালি মেখেও থাকতে হয়, তাহলে ও থাকবে।
মেহজাবিনের কোনো দুঃখ নেই আন্টি ডাক শুনায়। এরকম কত শত ছেলেরা আন্টি, খালাম্মা, চাচী বলে ডেকেছে। তাতে কি হয়েছে? মেহজাবিন কি বুড়ো হয়ে গেছে? মেহজাবিন চায়‌ই তো ওটা; সম্মান। স্লিভলেস, ফাটাছেড়া জামা পড়ুয়া মেয়েরা তো “মাল” হয়ে যায় সবার কাছে। না পায় কোনো সম্মান, না থাকে কোনো ইজ্জ্বত। তারা কখনোই শান্তি পায়না কিছুতেই। কারন হারামে তো আরাম নেই। তবুও শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলে। তাই এরা ইহকালের সাথে পরকাল ও হারিয়ে ফেলে খুব সহজেই। আল্লাহ্ তুমি হেদায়েত দান করো। আমিন!

দুটো ক্লাসের পর তাজ আবারো ঐ মহিলাকে খুঁজতে বের হলো। যদিও ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে ‘ মুরুব্বি মানুষ এই ভার্সিটিতে করবে টা কি? দেখে তো শিক্ষিকাও মনে হয় না, আবার স্টুডেন্ট তো নয়‌ই। তাহলে?
তাজের কোনো যায় আসে না কাউকে খোঁজার। ওটা ওর বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পরে না। যার পিছনে এমপির মেয়েরা পর্যন্ত ঘুরঘুর করে, আর সে কি না মাত্র একটা ছাতার জন্য কোনো বয়স্ক মহিলাকে খুঁজছে? হাউ স্ট্রেঞ্জ!
বেহুদাই ক্যাম্পাসে এদিক সেদিক ঘুরঘুর করছে। হঠাৎ এক জায়গায় তাজের চোখ আটকে পরে। একটা রোরকা পরিহিতা মেয়ের উপর। যে কি না ঘাসের উপর বসে ব‌ই পড়ছে। কিন্তু যাকে তাজ খুঁজছে, তার সাথে মিল পাওয়া যাচ্ছে না। বোরকা এক হলেও উপরের দিক কোনো মিল নেই। তবুও মেয়েটার কাছে এগিয়ে গেল তাজ।

কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মেহজাবিন মাথা তুলে তাকায়। হঠাৎ দেখা তো, খুব বড়সড় চমক খেলো। ছেলেটা এখানে আসলো কেন? কোনো কারণ আছে কি? মেহজাবিন কিছু বলার আগেই তাজ বলে উঠলো, ‘ আপনি কি ঐ ছাতাওয়ালী? এই যে এই ছাতার মালিক? হাতে ধরা ছাতা টাকে দেখিয়ে বলল।
মেহজাবিনের স্থির গলা, ‘ হ্যাঁ।
‘ও আচ্ছা। তাহলে আপনার ছাতাটি নিয়ে নিন। এটার জন্য তিন ঘন্টা অবশ হয়ে ছিলাম।

‘ দিয়ে দেবার কি আছে। আপনার কাছেই রেখে দিন। বলা তো যায় না বৃষ্টি কখন কি এসে পরে।

তাজ হতভম্ব। এতো সুন্দর কন্ঠ মানুষের কি করে হতে পারে? তাহলে এ কি কোনো বয়স্ক মহিলা নয়, কোনো মেয়ে।
‘ সরি। আপনাকে তখন আন্টি বলে ডেকেছিলাম।

‘ কি হয়েছে তাতে? আমি তো কিছু মনে করিনি। আপনি নিসংকোচে ডাকতে পারেন। আর হ্যাঁ, আমার তখন একটা বড়সড় ভুল হয়েছিল। ওভাবে আপনার হাত ধরাটা ঠিক হয়নি। কিন্তু এর থেকে ভালো কোনো উপায় আমার কাছে ছিল না। কারন, এক‌ই ছাতার নিচে দুজন গায়রে মাহরাম থাকলে সেখানে তৃতীয় ব্যাক্তি এসে হাজির হয়। সে হলো স্বয়ং ইবলিশ। তাই ইবলিশের ধোকার থেকে পরিত্রাণ পেতে তাড়াহুড়োয় আপনার হাতে ছাতাটা ধরিয়ে দেই। যদিও আপনাকে বলে ব্যাপারটা ম্যানেজ করা যেত; তবুও বলিনি। কারন আমার কাছে সময় ছিল খুব কম। আর মাত্র ছাতার জন্য আপনার এভাবে সময় নষ্ট করে আমাকে খোঁজার কোনো প্রয়োজন ছিল না; যদিও এটা উচিৎ; তবুও আমার দিক থেকে না করাই ভালো ছিল। আমি কিছু মনে করতাম না।
তাজ কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। এতো স্পষ্ট করে, এতো এতো মায়া নিয়ে কেউ কি করে কথা বলতে পারে? এই পঁচিশ বছরে তাজ দু চারটে আলগা ক্রাশ খেলেও, মেহজাবিনের প্রতি একটা ভালো লাগা তৈরি হয়ে গেল মূহুর্তেই। (চলবে ইনশা আল্লাহ্)

১.

#ছদ্মনাম মায়া ইসলাম
পরের পর্বটাই শেষ পর্ব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here