গল্প:- চমক
২.
ছদ্মনাম মায়া ইসলাম
আসরের নামাজ আদায় করে মেহজাবিন আর তার ছোট বোন মায়া ছাদে চলে গেল ফুলগাছে পানি দেয়ার উদ্দেশ্যে। গাছগুলোর কিছু যত্ন নিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলো ওরা। ইতোমধ্যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। একটু পরই মাগরিবের আজান হবে বোধহয়। মায়া নিচে চলে গেলেও মেহজাবিন একটু পর যাবে বলেছে। মন যে তার ভিষণ খারাপ।
কেনই বা ওর সাথে যত সব আশ্চর্যকর মানুষদের দেখা হয়? কেউ বা ওর জন্য হাত কাটে, তো কেউ বা ওর জন্য পড়াশোনা বাদ দিয়ে চাকরি খোঁজে একমাত্র ওকে বউ করে পাবে বলে। ওরা কি জানে না, মেহজাবিন এসবের প্রতি যথেষ্ট বিরক্তবোধ করে। এইতো সেদিনই খালামনির বাসায় গিয়েছিল খালাতো বোনের বিয়ের দাওয়াতে। বিয়ের দিন একটা গাউন পড়ে খুব সতর্কতার সাথে ওও হিজাব বেধেছিল। শুধু ফেইস, দুই হাতের কব্জির নীচের অংশ ছাড়া পুরো আপাদমস্তক ঢেকে রাখছে। মেহজাবিন চায়না তাকে কোনো গায়ের মাহরাম দেখুক; যে কোনো কুদৃষ্টির তীর নিক্ষেপ করুক। পুরুষদের তীক্ষ্ণ নজর থেকে বাঁচতে সবসময়ের জন্য ওও মহিলা মেহমানদের রুমেই ছিল। তবুও একটা ছেলে ওকে দেখেছে। সে আর কেউ নয়, ওরই খালাতো ভাই। তার পরাপরই খালামনিকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। বাবা-মা তখন হ্যাঁ বা না কিছুই বলেননি। পরে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে, ছেলে বেশি সুবিধার না। চরিত্রে কালি আছে। এমনিতেই তো সাধারণ পাবলিক; নামাজ তো পড়েই না; তার উপরে দাঁড়ি পর্যন্ত কামানো। এরকম ছেলে মেহজাবিনের মতো পর্দানশীল মেয়েকে কি করে ইসলামের পথে চলতে সাহায্য করবে? এগুলো চিন্তা বিবেচনা করেই মেহজাবিন সরাসরি না করে দিয়েছিল। কিন্তু বাবা বুঝলো না।
আজ কতদিন হয়ে গেল, বাবাকে সে দেখে না; কথাও হয় না। আচ্ছা বাবার কি মেহজাবিনকে একটুও মনে পড়ে না? উঁহু, একটু কি, মোটেও পড়ে না। মেহজাবিনকে তো বাবা ভালোই বাসে না। যদি বাসতো তাইলে শত অভিমানের মাঝেও ফোনকলে কিছু খবরাখবর নিতো। কিন্তু না। বাসা থেকে বেরোবার সময় একবার হলেও মেহজাবিনের দিকে তাকায়নি পর্যন্ত। আর এখন একমাস হতে লাগল, বাসায় আসে না, মেহজাবিনকে কল দিয়ে কিছু বলে না। মেহজাবিন যদিও কল করে, কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ রিসিভ করে না। আম্মুর আর মায়ার সাথে ঠিকই নিয়মিত কথা হয়। কিন্তু মেহজাবিনের প্রতি তার কিসের এতো অভিমান; শুধু বিয়েতে রাজি হয়নি বলে; মাত্র এটার জন্যই মেহজাবিনকে এতো কষ্ট দিচ্ছে তার বাবা? আর মান অভিমানের পাল্লা ভারী হতে দেয়া যাবে না। ওর বাবা যা’ই বলবে, ও সব কিছুই মেনে নিবে একদম মন থেকে। বাবাকে জানতে হবে তো, মেহজাবিন তার সাথে একদিনও কথা না বলে থাকতে পারে না। আর ওর দূর্বল জায়গা হচ্ছে ওর “বাবা”। যার জন্য মেহজাবিন তার সমস্ত কিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত। তাহলে বাবার কথায় বিয়েতে কেন রাজি হলো না? ঐ যে, ছেলের চরিত্র ভালো না। এটা বাবাকে বুঝাতেই রেগে আগুন। সেদিন রাতেই বাবা বাসা থেকে বেরিয়ে গেছিলেন। যদিও কোনো একটা কাজে তাকে গ্রামের বাড়িতে যেতে হতো, তবুও রাগের বাহানা দেখিয়ে চলে যেতে হয়েছে। নয়তো দুই মেয়ের বায়নায় সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হতো। আবার ওদের মা’কে একা রেখে যাবে কি করে; তাই তাঁকেও নিতে হতো। মোটকথা, কাজের মধ্যে একটা প্রেশারে পড়ে যেতেন তিনি। তাই তো, ঝোপ বুঝে কোপ মারলেন। মেহজাবিনও এরপর আর কোনো কিছুতে অমত করবে না।
কিন্তু মেহজাবিন এখনও তো এসবের কিছুই জানে না, শুধু ওর মা ছাড়া।
মাগরিবের আজান হওয়ায় মেহজাবিন নিচে নেমে অযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে পড়লো।
অপরদিকে তাজ এখনো বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। মাগরিবের আজান যে দিচ্ছে; তাতে তার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। আগেও ছিল না, আর এখন তো মোটেও নেই। সে তো দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে ব্যস্ত। ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফেরার সময় ধরে এখন অবধি পর্যন্ত শুধু মেহজাবিনের কথা ভেবে ভেবেই হয়রান। তার মনে যে ওকে নিয়ে কত শত প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, তার ঠিক নেই।
‘ আচ্ছা, মেয়েটার কি নাম হতে পারে? ভার্সিটিতে তার কাজটা কি? মেয়েটা মেরিড নাকি আনমেরিড? গেটাপে তো বয়স্ক মহিলাদের মতো মনে হয়। যদি বয়স্কই হয়, তাহলে তার ভয়েস এতো নরম আর মোলায়েম কেন? বড় বেশিই আকর্ষণীয় আর হৃদয় কাঁপিয়ে দেয়ার মতো। মনে হয় যেন পনের, ষোলো বছরের কোনো তরুণীর কন্ঠস্বর। আর যদিই অল্প বয়সী হয়, তাহলে মুরুব্বিদের মতো করে বোরকা কেন পড়ে? এর কি কোনো সখ, আহ্লাদ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা বলতে কিচ্ছু নেই? একেবারে মরুভূমির মতো প্রাণ। আর কেমন পাথর হৃদয়ের মানুষরে বাবা; যেই তাজের সাথে একটু কথা বলার জন্য মেয়েদের পাগলপ্রায় অবস্থা হয়ে যায়। সেই স্বয়ং তাজ মেহজাবিনের কাছে সেধে নাম জিজ্ঞেস করায় মুখের উপর না করে দিছিল।
এমন ভাবে,, ‘ ছাতার জন্য কিছু বলেছেন ভালো কথা, তাই বলে খুঁটিয়ে খাটিয়ে জিজ্ঞেস করবেন, এটা কেমন অভদ্রের পরিচয়!
মেহজাবিন যদিও অল্প ভাষায় কোনো রকম মেজাজ না দেখিয়ে ওর বিরক্তির কারণ বুঝিয়ে দিয়েছিল যেটা কারোরই খারাপ লাগার কথা না, তবুও এটা তাজের জন্য খুবই অপমানজনক।
তাজ হঠাৎ করেই মেহজাবিনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গেল। কেমন যেন সূক্ষ্ম সুতার টান অনুভব হচ্ছে। কিন্তু এক দেখাতেই কেন? মেয়েটা ওকে পাত্তা দেয়নি বলে?
‘ আচ্ছা মেয়েটা দেখতে কেমন? তাজের সাথে কি মানাবে? ধুর, বাজে চিন্তা কতগুলো। হোক সে বিবাহিত, বয়স্ক, কুৎসিত, মোটাসোটা, আট বাচ্চাকাচ্চার মা; তাতে তাজের কিচ্ছু যায় আসে না। মেয়েটাকে তার লাগবেই। জোর করে হলেও একই সুতার বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।
চলবে ইনশা আল্লাহ!
এই পর্বে শেষ হচ্ছে না। আরো কিছু পর্ব বাড়িয়ে দিব। আশা করি আপনারা পাশে থাকবেন। শুকরিয়া!