চন্দ্রাবতী,পর্ব:২০

0
517

#চন্দ্রাবতী
#আমিনা আফরোজ
#পর্ব: ২০

সময়ের আবর্তনে কেটে গেছে বেশ কয়েকটি দিন। দেখতে দেখতে সকলের সামনে এসে হাজির হয়েছে নির্ধারিত দিন শুক্রবার। আজ তুহিনের বিয়ে। বিয়ে উপলক্ষে মোল্লা বাড়ি সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। পাড়ার মহিলা এবং ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের চাপা শোরগোলে সারা বাড়ি মুখরিত হয়ে উঠেছে আজ। সেদিন চন্দ্রার ওপর অভিমান করে বাড়িতে এসে মাকে বিয়েতে রাজি হওয়ার কথা বলেছিল তুহিন। বিগত কয়েক দিন তুহিন চন্দ্রার জন্য অপেক্ষা করেছে কিন্তু চন্দ্রা আসে নি। তাই রোকেয়া বেগমের ইচ্ছে অনুসারে আজ ওকে বিয়ে করতে যেতে হচ্ছে। তুহিন একবার ভেবেছিল ও পালিয়ে যাবে কিন্তু পরবর্তীতে মায়ের কথা ভেবে আর যাওয়া হয়ে ওঠে নি ওর। সে ইচ্ছাও আজ একেবারে মন থেকে ঝেড়ে ফেলেছে তুহিন। বাবা মারা যাওয়ার পর ওর মা অনেক কষ্ট করে ওকে মানুষ করেছে । সেই মাকে কষ্ট দেয় কিভাবে ও।

তুহিনের বিয়ে উপলক্ষে মোল্লা বাড়িতে এসে হাজির হয়েছে অনেক আত্মীয় স্বজন। ইতিমধ্যে পালকি নিয়ে মোল্লা বাড়িতে আগমন ঘটেছে বেহারার দলের। পর্বেই বলা হয়েছিল তাদের তাই আজ সঠিক সময়ে হাজির হয়েছেন তারা। আজ মোল্লা বাড়িতে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেহারার দলের কেউ কেউ অদূরে বসে কলকে ভরে তামাক সাজিয়ে আরামে ধুমপান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বেলা যত বাড়তে লাগল, বিয়ে বাড়ির ব্যস্ততাও যেন তত বাড়তে লাগল। এরি মধ্যে তুহিনের চাচি পারুল সবার উদ্দেশ্যে তারস্বরে বলে উঠলেন,

–” আর দেরি নয় , এহনি বাহির হইতে হইবো আমাগোর। এরপর বাইর হইলে যে এইহানেই বেলা ডুইবা যাইবো।”

তুহিনের গোসল করানোর কাজটা বাড়ির লোকজন অনেক আগেই শেষ করেছে। জামা-জুতা ও তাজ পড়ানোর কাজটাও যথাসময়ে সম্পন্ন হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। তাই আর দেরি করে সকলে মিলে বেরিয়ে পড়ল মধুগঞ্জের উদ্দেশ্যে । রূপগঞ্জের থেকে মধুগঞ্জের দূরত্ব খুব বেশি নয়। হেঁটে গেলে বড়জোড় ঘন্টাখানেক লাগে। বরযাত্রীদের জন্য রোকেয়া বেগম ভ্যান গাড়ির ব্যবস্থা করেছেন। বরযাত্রী সকলে বরাদ্দকৃত ভ্যানে উঠে একটু আগেই রওনা দিয়েছে‌ মধুগঞ্জের উদ্দেশ্যে ।

পারুল আর দেরি না করে তুহিনকে নিয়ে গেল রোকেয়া বেগমের কাছে। তারপর বলল,

–” মায়ের কাছ থেইকা দোয়া নিয়ে চল দেকি। শুভ কাজে মায়ের দোয়া নিতে হয় যে।”

চাচীর কথামতো মায়ের থেকে দোয়া নিয়ে মোল্লা বাড়ির উঠোনে এসে দাঁড়ালো তুহিন। আশে পাশে তাকিয়ে একবার দেখে নিল চন্দ্রা এসেছে কি না। কিন্তু চন্দ্রার কোন নিশানা না পেয়ে জোরপূর্বক পালকিতে ওঠে বসল সে। বেহারা দল হাঁক ছেড়ে, নিজেদের বাঁধাধরা বুলি আওড়াতে আওড়াতে তুহিনকে কাঁধে তুলে পায়ে পায়ে তাল রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো । পালকির পেছনে পেছনে আরও কিছু বরযাত্রী জোরে শোরে পা ফেলে চলতে লাগল। সাইকেল আরোহী বরযাত্রীরগন আস্তে আস্তে সাইকেল চালিয়ে তাদের পেছনে পেছনে চলতে লাগল। বুড়ো মানুষদের জন্য দুখানা গরুর গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তারা গরুর গাড়িতে চড়ে গাড়িয়ালকে গাড়ি হাঁকাইতে নির্দেশ দিলেন।

এদিকে সকাল থেকেই কনের বাড়িতে ধোঁয়া উড়ছে। রান্না-বান্নার আয়োজনে কোন রূপ ত্রুটি নেই । সকলেই যে যার নিজের কাজে ব্যস্ত। পাড়ার কুকুরগুলো খাদ্যের অন্বেষণে বিয়ের বাড়ির আনাচে-কানাচে ঘোরাফেরা করছে। ছেলেমেয়েরা বড়দের সহযোগিতায় গেইট সাজিয়েছে। তারা ফুলের তোড়া ও মালা হাতে বাহিরের দরজায় সামনে দাঁড়িয়ে বরকে সাদর সম্ভাষণ জানানোর জন্য মহানন্দে অপেক্ষা করছে। সঠিক খবরের জন্য , ছেলেমেয়েদের মধ্যে থেকে গুটিকতেক ছেলে গ্রামের মাথায় গিয়ে পূর্ব দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসেছিল, ইতিমধ্যে তারা ছুটে এসে জানালো যে , পালকি মধ্যমাঠ পার হয়ে হাই স্কুলের রাস্তা ধরে গ্রামের দিকে আসছে । এতক্ষণ সকলের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত ছিল কিন্তু খবর শুনে তারা নিজস্ব দায়িত্ব পালনে সামান্য বিরতি দিয়ে বরকে বরন করার জন্য প্রস্তুত হইল।

ক্ষণকাল পরে পালকি এসে মোদক বাড়ির দুয়ারে দাঁড়ালো। পালকি দেখে ছোট ছেলে-মেয়েরা উল্লাস করতে লাগল। কেউবা নতুন বরকে ফুলের তোড়া উপহার দিল আবার কেউবা পালকির ছাদে ফুল ছিটে দিলো। আশার দাদি এগিয়ে আসলেন পালকির দিকে । তিনি তুহিনের অনামিকায় সোনার আংটি পড়িয়ে পালকি থেকে নতুন বরকে নামিয়ে আনলেন। যথাসময়ে খাবারের পর্ব শেষ হলো । কাজী সাহেবকে আগেই খবর দেয়া হয়েছিল তাই তিনি যথাসময়ে এসে বিয়ের রেজিস্ট্রারের কাজ সেরে ফেললেন । অতঃপর তিনি প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ সেরে বিয়ের বাকি কাজটুকু শেষ করলেন । কনে বাড়ি থেকে প্রস্থানের পূর্ব মুহূর্তে ইমাম সাহেব বরকে উদ্দেশ্য করে কিছু উপদেশ দিলেন,

–“দুলামিয়া আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ। আপনারে উপদেশ দেবার মত কিছুই নাই
তবুও এই মধুগঞ্জ গেরামের ইমাম হিসেবে যে কথাটি না কইলেই আমার দায়িত্ব শেষ হইব না সেটাই বলছি।
শ্যামল সাহেবের বড় মেয়ে আশা আজ তার বাবার ঘর ছইড়্যা আপন্যার অধীনতা স্বীকার কইরা আপনার ঘরে যাচ্ছে । আজ থেকে তাকে হালাল রুজিতে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আপনার । আপনার ঘরে গিয়ে সে যদি আপনার অনিহাবশত নিজ ধর্মের বিধি-বিধান সমূহ অমান্য করে চলে, তার জন্য আল্লাহর দরবারে সম্পন্ন দায়ী হবেন আপনি নিজে। আর এই কারনেই পরকালে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে আপনাকে। শুধু তাই নয় প্রত্যেক মুসলিম পুরুষের জেনে রাখা উচিত, তার মা, বোন ,স্ত্রী এবং মেয়ে যদি ধর্মীয় বিধান অমান্য করে মনগড়া জীবন-যাপন করে জিন্দেগী কাটিয়ে দেয় তবে তার জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে সে মুসলিম পুরুষকে। আমার এই কথাগুলো শুধু দুলা মেয়েকেই নয় বরং এখানে উপস্থিত সকল মুসলিম পুরুষদের জন্য। তাদের কাছে আমার নিবেদন, তারা যেন তাদের মা, বোন এবং স্ত্রী-কন্যাকে ধর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ রাখেন এবং নিজেও ধর্মপালনে আন্তরিকভাবে যত্নবান হোন ।”

কথাগুলো বলে ইমাম সাহেব আশার হাত তুহিনের হাতে তুলে দিয়ে তাদের বিদায় জানাল। বিয়ের পুরোটা সময় তুহিন একেবারেই চুপ ছিল। নববধুকে পালকিতে ওঠিয়ে দিয়ে তুহিন ওর আত্মীরদের সাথে ভ্যানে ওঠল। যদিও ভ্যান গাড়ির চালককে পালকির পিছনে পিছনে আসার নির্দেশ দিয়েছিল তুহিন।

প্রায় ঘন্টাখানেক পরে মোল্লা বাড়ির উঠোনে এসে
দাঁড়াল পালকি। সাথে সাথে পাড়া প্রতিবেশিরা পালকির চারপাশ ঘিরে দাঁড়ালো। বয়ষ্ক পুরুষরা যেন ভীর জমাইনি এমনটা কিন্তু নয় । তারাও পালকি থেকে বেশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে জনা কয়েকজন মিলে গল্প করতে লাগলেন। অন্দরমহল থেকে কয়েকজন মহিলাদের সাথে রোকেয়া বেগম এলেন নতুন পুত্রবধূকে ঘরে বরন করে নেবার জন্য।

সময়টা শীতের প্রথম সপ্তাহ। উত্তর দিক থেকে শীতের হিমেল হাওয়া বইছে। বাতাসের দরুন পালকির ছোট দরজা দুটো বন্ধ ছিল তখন। সকলের অনুমতি নিয়ে রোকেয়া বেগম পালকির দরজা খুললেন। দরজা খুলতেই সেখানে উপস্থিত সকলে চোখ বড় বড় করে পালকির দিকে তাকিয়ে রইল। রোকেয়া বেগম অবশ্য এমন ঘটনা দেখে আশ্চর্য হলেন না। তিনি আগেই জানতেন আশে পাশের সবাই এমন করেই তাকিয়ে থাকবে। রোকেয়া বেগম সানন্দে আশাকে পালকি থেকে বাহিরে বের করে আনল। বাহিরে দাঁড়িয়ে আশা লজ্জাভীরু চোখে সকলের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে সালাম দিল। নতুন বউয়ের গায়ের রঙ যেন উপস্থিত সকলের চোখ ঝলসিয়ে দিল। আশার গায়ের রঙ কাচা হলুদ, দেহের গড়ন মনোমুগ্ধকর। লম্বা ও চওড়ায় মানানসই। এমন মনোহরিনী মেয়ে আশে-পাশের দশ গ্রামে কেউ কখনো দেখে নি।

রাত্রি ক্রমশ গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগল। খাওয়া-দাওয়া শেষ হতে হতে বেশ রাত হয়ে গেল। যে সমস্ত আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ির কাছে ছিল তারা রাত্রিযাপনের জন্য নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেলেন আর যারা দূর থেকে এসেছিল তারা মে যার সুবিধামতো বিয়ে বাড়ির ঘর গুলিতে গাদাগাদি করে শুয়ে পড়ল । একে একে মোল্লা বাড়ির সমস্ত ঘরের বাতি নিভিয়ে গেল, বাকি রইল কেবল তুহিনের ঘর। যেখানে তখনো মিটমিট করে প্রদীপ জ্বলছিল । তুহিন আগে কখনো আশাকে দেখে নি। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েই বিয়েটা করেছে ও। এই বিয়ে নিয়ে তেমন কোন অনুভূতি নেই ওর। এক রকম জড় বস্তুর ন্যায় একেক এক কাজ করে যাচ্ছে সে।

আশাকে তুহিনের ঘরে পাঠানোর আগে বাড়ির মেয়েরা তুহিনের জন্য এক গ্লাস গরম দুধ আশার হাতে দিয়ে ওকে দরজা পার করে দিয়েছিল। মানুষটা এর আগে অনেক বার সাদা-কালো ছবিতে দেখেছিল আশা কিন্তু আজ সামনাসামনি এসে সেই লোকটাকে কি বলে সম্বোধন করবে আর কিই বা বলবে এ নিয়ে বেশ দ্বিধায় পড়েছে আশা। আশা বার দুয়েক সামনের দিকে পা বাড়িয়ে আবারো পিছনে যেতে লাগল। চিন্তায় ওর মাথা ভনভন করে ঘোরপাক খেতে লাগল। পৌষের এই শীতেও আশার শরীর হতে ঘাম ঝড়তে লাগল।

আশা ওর লজ্জা ভীরু চোখে ঘরের আশে পাশে চোখ বুলাতে লাগল। তুহিন নামক সাদা-কালো ছবির মানুষটি সুসজ্জিত বিছানায় হেলান দিয়ে দুচোখ বুজে বসে রয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে কত কালের ক্লান্তি ওর দুচোখে ভর করেছে। অদূরে একটি চেয়ার ও টেবিল পাতা আছে। টেবিলের উপর কটি কয়েক মোটা মোটা বই রাখা। আশা সামনের দিকে আরো দু এক পা এগিয়ে এসে চাপা কন্ঠে সালাম দিল তুহিনকে এবং হাতের গ্লাসটি টেবিলে রেখে চেয়ারে বসে পড়ল।

তুহিন এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে ছিল। সারাদিনের ক্লান্তি থেকে ওর দুচোখ যেন এখন একটু স্বস্তি পেতে চাইছে। তাইতো বিয়ের পোশাক বদলিয়ে বিছানায় আয়েশ করে শুয়ে ছিল তুহিন । ক্ষনিকের মাঝে কিছুটা তন্দ্রাও এসেছিল ও কিন্তু রিনরিনে কন্ঠস্বর শুনে তড়াগ গতিতে ওঠে বসল তুহিন। তারপর উত্তেজিত কন্ঠে বলে,

–” চন্দ্রা তুমি আইছো ? আমি জানতাম তুমি আইবা কিন্তু বহুত দেরি করলা আইতে।”

এত দিনের স্বপ্নে যে মানুষটাকে নিয়ে অদৃশ্য এক সংসার গড়েছিল আশা, সেই মানুষটির মুখে অন্য কোন মেয়ের নাম শুনে বুকটা হুঁ হুঁ করে ওঠল আশার। তবুও নিজেকে যথাসম্ভব সামলিয়ে বলে উঠল,

–” আফনে কি অন্য কাউরে খুজতাছেন? এইহানে তো আমি ছাড়া কেউ নাই।”

আশার কথা শুনে এতোক্ষণে হুঁশ ফিরে এলো তুহিনের। ওর যে আজ বিয়ে হয়েছে একথা বেমালুম ভুলেই গিয়েছিল আর তাইতো চন্দ্রাকে ওভাবে ডেকে ওঠছিলে তুহিন।

আশার কথার প্রতিউত্তরে আর কোন কথা বলেনি তুহিন। বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল নিরবতায়। গ্লাসে রাখা গরম দুধের উষ্ণতা ধীরে ধীরে কমে শীতল হয়ে আসতে লাগলো কিন্তু আশা তবুও এই খবরটি ওর স্বপ্নের সেই নতুন মানুষটিকে জানাবার কোন ভাষা খুঁজে পেল না। অবশেষে আশা যখন চেয়ারে বসে শীতের তীব্রতায় ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল ঠিক সেই মুহূর্তে আশার কর্নকুহরে প্রবেশ করল এক পুরুষ কন্ঠে আবেগ জড়ানো আহ্বান,

–“আশা, চেয়ারে বসে মিছে মিছে ক্যান শীতে কষ্ট করতাছো? বিছানায় শুয়ে পড়ো। অনেক রাত হইয়্যা গ্যাছে । আবার ভোরে উঠতে হবে আমাকে। তুমি আমার ছোট দেখেই তুমি করে বললাম কিছু মনে করো না।”

গভির রাতের নির্জন গৃহকোণে অচেনা কন্ঠের ক্ষীণ আহবানে আশা চমকে উঠল। ওর বুক দুর দুর করে কাঁপতে লাগল। সে খোলা জানালা পথে বাহিরের পানে তাকিয়ে দেখল চাঁদের হাসি মিলিয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। রাতের অন্ধকারের গায়ে অসংখ্য জোনাক ঝাঁক প্রদীপ জ্বালিয়ে আহার তাদের আহার খুঁজছে।আশাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে তুহিন আবারো বলে উঠলো,

–” কি ব্যাপার এখনো বসে রইছো ক্যান? দেহো তোমার যদি এই হিম শীতে বসে থাকবার ইচ্ছে করে তবে বইসা থাহো কিন্তু আমার এই মুহূর্তে খুব ঘুম পাচ্ছে। ঘরের বাতি নিভাইয়া দাও আমি ঘুমামু।”

কথাটা বলেই তুহিন বিছানার একপাশে শুয়ে পড়ল। আশা ক্ষনকাল তাকিয়ে রইল সেদিকে । তারপর তুহিনের কথামতো ঘরের বাতি নিভিয়ে দিল। বাতি নিভাতেই পুরো ঘর অন্ধাকারে ডুবে গেল। এই নিকষ কালো অন্ধকারে আশা নিজের হাত অব্দি দেখতে পাচ্ছে না। তবুও কোন রকমে হাতরিয়ে হাতরিয়ে বিছানার দিকে চলে গেল।

নিস্তব্ধ এই রাতে নব বর বধুর মতো আরো একজন জেগে রয়েছে নিজের শস্যা ঘরে। প্রিয় মানুষটিকে অন্য কারো হতে দেখলে যে কারোই কষ্ট হয় , এইটাই স্বাভাবিক। তবে চন্দ্রার কিছু করার ছিল না। সেদিন যদি ও তুহিনের কথায় রাজি হয়ে যেত তবে আজ শুনতে হতো সমাজের নানা কটু কথা । সেই সাথে সত্যি হয়ে যেত রাশেদের বানানো কথাগুলো। প্রতিটি পদে পদে তুহিনকে ওর জন্য অপমানিত হতে হতো । তা কি করে হতে দেয় চন্দ্রা। সবাই নিজের প্রিয়জন মানুষটিকে সুখি দেখতে চায় চন্দ্রাও ঠিক তাই চেয়েছে। সময়ের সাথে সাথে তুহিন নিজেকে ঠিক মানিয়ে নিবে ও। নিজের নিয়তিকে মেনে নিয়ে আরো একবার পরাজিত হলো চন্দ্রা। বাহিরের ঘন অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে চন্দ্রা ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,

আমার বেলা, অবেলা, সারাবেলা
শুধু তোমাকে না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস
দালানে দালানে যে নগরে
ছেয়ে গেছে নীল আকাশ
সেখানে শুধু তুমিই ছিলে
বেঁচে থাকার আশ্বাস

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here