চন্দ্রাণী ২৯

0
60

#চন্দ্রাণী(২৯)

চন্দ্র শর্মীকে কোথাও না পেয়ে চিন্তায় পড়ে গেলো। এতো রাতে শর্মী কোথায় গেলো?
বেশ খানিকটা সময় কেটে যাওয়ার পর চন্দ্রর হঠাৎ করে কি মনে পড়তেই ছাদের দিকে ছুটলো। ছাদ ছাড়া সবখানেই খোঁজা হয়েছে।
চন্দ্রর ধারণা সত্যি হলো। ছাদে গিয়ে দেখে শর্মী ফ্লোরে বসে আছে। সামনে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। আগুনে পুড়ে যাচ্ছে কতোগুলো কাগজ।

চন্দ্রকে দেখে শর্মী মলিন হেসে বললো, “শেষ করে দিলাম আপা।তার সব স্মৃতি শেষ করে দিলাম।আমার জীবন থেকে তার সব ছায়া মুছে ফেললাম।আল্লাহ যাকে আমার ভাগ্যে রাখে নি তার স্মৃতি রেখে কি করবো আমি? ”

চন্দ্র বললো, “ভাগ্যে যা আছে তা মেনে নিতে শিখ।যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে। ”

শর্মী আগুনের দিকে তাকিয়ে বললো, “ভালো? কোন ভালো আপা?
সেই ভালো যা আমার বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে? আমার ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নিয়েছে?
আমার মন ভেঙে খানখান করে দিয়েছে? এতো ভালো কেনো হলো আপা?আমি তো এতো ভালো চাই নি আমার। আরেকটু কম হলেও তো ক্ষতি হতো না। ”

চন্দ্র বোনের পাশে বসে বললো, “আজ যা কষ্ট মনে হচ্ছে তোর দেখবি একদিন সেই কষ্ট তোর জীবনে সুখ হয়ে ধরা দিবে।
আজ যা হারিয়ে ভাবছিস সর্বহারা তুই,একদিন বলবি তা হারানোয় বুঝি জীবন এতো সহজ হয়েছে, সুন্দর হয়েছে।
বিষধর সাপ যতোই পোষ মানুক না কেনো,বিষদাঁত ফুটাতে কিন্তু সে ভুলে না।মনে রাখিস।”

শর্মী কিছু বললো না।

চন্দ্র বললো, “তোর এই জামার সাথের ওড়না কই?”

শর্মী বললো, “রুমেই আছে। ”

চন্দ্র বললো, “চল আমাকে দেখাবি।”

শর্মী বুঝতে পারলো না ওড়না দেখার কি আছে? তবুও বোনের সাথে নিচে নেমে গেলো।
নিচে গিয়ে দেখে সত্যি শর্মীর ওড়না বারান্দায় আছে। চন্দ্র এক মুহূর্ত ভেবে নিজের রুমে গেলো। খুঁজতে গিয়ে দেখে তার ওড়নাটাই নেই।

খাটের উপর বসে চন্দ্র মাথা চেপে ধরে বসে রইলো। ভালো লাগছে না তার।কিছু ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে যেনো একটা গোলকধাঁধায় ঘুরছে সে।
কে নিলো তার ওড়না?

বাহিরে শাহজাহান তালুকদারের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঘরে ঢুকেই চন্দ্রকে ডাকলেন।
চন্দ্র বাহিরে এসে দেখে এলাহি আয়োজন। কাচ্চি বিরিয়ানি , চিকেন চাপ,মিষ্টি।
শাহজাহান তালুকদার স্ত্রীকে চেয়ারে বসিয়ে বললেন, “একটা সময় তোমার প্রতি ভালোবাসার কমতি ছিলো, যত্নের কমতি ছিলো। আমার অবহেলা, আমার দুর্ব্যবহার সহ্য করে তুমি আমার হাত ধরে এই পর্যন্ত এসেছ।আমার সকল ভুল নিজ গুণে ক্ষমা করে দিয়েছো।আমার দেওয়া আঘাতকে তুমি ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছ।
আমি তোমার কাছে কতটা ঋণী তা কেউ না জানলেও আমার আল্লাহ জানে।
আজ আমি তোমার সাথে করা সব অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাই রেহানা।”

আজ কানিজের সাথে কথা বলে আসার পর শাহজাহান তালুকদার সিদ্ধান্ত নিলো যেই মানুষ্টা আজ পর্যন্ত তার সাথে সংসার করে যাচ্ছে, তার সব বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার প্রতি ভালোবাসা,কৃতজ্ঞতা প্রকাশ স্বরূপ তাকে একটা সারপ্রাইজ দেওয়া যাক।কখনো তাকে এভাবে স্পেশাল ফিল করানো হয় নি।আজ না হয় একটু ছেলেমানুষী করেই তাকে খুশি করবেন।

পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটা গোলাপ বের করে হাটু গেড়ে বসলেন শাহজাহান তালুকদার।
চন্দ্র দ্রুত হাতে ফোন নিয়ে ভিডিও করতে শুরু করলো।
এরকম আনন্দময় একটা মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী না করলেই নয়।

রেহানার দুই চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে।সিতারা বেগম একটা চেয়ারে বসে ছেলের কর্মকাণ্ড দেখছেন।তার একরোখা, একগুণ ছেলেটার জীবনে কতো উত্থান পতন ঘটেছিলো তিনি তো সব কিছুর সাক্ষী ছিলেন।

রাতে সবাই মিলে কেক কাটলো।হৈহল্লা করে সবাই মিলে খাবার খেলো।
চন্দ্র একবার ভাবলো মা’কে জিজ্ঞেস করবে টগরের কথা। পরক্ষণে মত বদলালো।
যে মা পেটের সব কথা তাকে না বললে শান্তি পেতো না,সেই মা যখন এটা চেপে গেছে তবে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। চন্দ্রকে সেই কারণ খুঁজে বের করতে হবে।

টগর বিছানায় শুয়ে আছে। মাথার ভেতর শুধু চন্দ্র চন্দ্র করছে।এতো কেনো উতলা লাগছে?
কবে চন্দ্রকে বাড়িতে নিয়ে আসবে?
শাহজাহান তালুকদার কি এতো সহজে মেনে নিবে সবটা?
টগর ভাবতে ভাবতে চোখ বুজলো।তন্দ্রা লেগে এসেছে টগরের।সেই মুহূর্তে অস্পষ্ট খট করে শব্দ হতে টগরের তন্দ্রা কেটে গেলো। চোখ বুঁজেই টের পেলো বিপদ আশেপাশেই আছে। মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে টগর কান পেতে রইলো আততায়ীর আক্রমণের অপেক্ষায়।
আজকে আবারও হামলা করবে টগরের ভাবনাতে ছিলো না। শোঁ করে একটা শব্দ হতেই টগর লাফিয়ে সরে গেলো। ছু//রি গিয়ে তোশকের মধ্যে গেঁথে গেলো।টগর লাফিয়ে নেমে এসে ঝাপটে ধরার আগেই হামলাকারী বোরকার পকেট থেকে আরেকটা ছু//রি বের করে টগরের ডান হাতে আঘাত করলো। বাম হাত দিয়ে টগর ডান হাত চেপে ধরে দুই পা পিছিয়ে গেলো।আততায়ী সামনে এগুতে যেতেই ল্যাং মেরে টগর তাকে ফ্লোরে ফেলে দিলো।
বিদ্যুতের গতিতে আক্রমনকারী স্থান ছেড়ে পালালো।
টগর পিছন নিলো না আর।এই বোরকা পরা মানুষটা কে টগর বুঝে গেছে।

ডান হাত গভীরভাবে কে//টে গেছে। আগে ফার্স্ট এইড নিতে হবে। তারপর নির্ঝরকে কল দিতে হবে।এতো সব বিপদের মধ্যে ও টগরের মন ভীষণ আনন্দিত লাগছে।
টগর ভেবে পেলো না এতো উৎফুল্ল হওয়ার কি আছে?
একটা মানুষকে ফিরে পাবে বলে এতটা আনন্দ কেনো লাগছে?নিজের মানুষ হলে বুঝি এরকমই হয়?

নিজের মানুষ! একটা নিজের মানুষের জন্য টগর কখনো তো এতো উদগ্রীব হয় নি।কাউকে কখনো পেতে ইচ্ছে করে নি।অথচ আজ মন কেমন করছে! নিজের এই বালখিল্যতায় নিজেই লজ্জা পেলো টগর।
হাতে ব্যান্ডেজ করে আপন মনে বললো, “আপনি আমার দূরে থাকা ভীষণ আপনজন চন্দ্র।”

চলবে……
রাজিয়া রহমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here