চন্দ্রাক্ষী পর্ব ৮

0
718

#চন্দ্রাক্ষী
#পর্বঃ৮
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

মেয়েটির আজ বিয়ে ছিল।ষোড়শী বকুলের বিয়ে ঠিক হয় পাশের জেলা শহরে।
গতকাল সন্ধ্যায় গ্রামের অনেকে মিলে আনন্দ করে গায়ে হলুদ দেয় তার।
সব যেন স্বপ্নের মতোন। তবে স্বপ্ন ভাঙে, স্বপ্ন ভাঙার কোনো শব্দ হয় না।আবার স্বপ্ন হঠাৎ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।
গায়ে হলুদ নিয়ে যখন বকুল অপেক্ষা করছে তার জীবনের সব থেকে বিশেষ দিনের।
ঠিক সে মূহুর্তে সেখানে এলো
চেয়ারম্যানের শালা এবং তার দল।
উঠিয়ে নিলো তাকে। রাতভর চললো পালা ক্রমে ধর্ষণ। হাতের মেহেদীর রঙ তখন পুরোপুরি লাগেইনি। অথচ হাতদুটো একদল নরপশুর নখের আঁচড়ে ক্ষত বিক্ষত।

বিয়ের বাড়ি তো আগেই মরা বাড়িতে পরিণত হয়েছে, সকালে যখন বকুল বাড়ি এলো তখন তাকে দেখে সবাই না দেখা হয়েই রইল।
ছোটো ছোটো ভাই-বোন এগিয়ে এলেও কান্না থামলো না তার।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কাকে কে কী বলবে? আর তাছাড়া এই গ্রামে এসব অহরহ হচ্ছে। বরপক্ষ জেনে বিয়ে বাতিল করলো।ছেলে বললে,সে তবুও বকুলকে বিয়ে করবে। যারা এসব করেছে তাদের শাস্তি দিবে। কঠিন শাস্তি। বরপক্ষের লোক ঘরে আবদ্ধ করলো তাকে। এদিকে বকুলের পরিণতি হলো আরো নির্মম।
বকুল বেঁচে থাকলে চেয়ারম্যানের শালা আসবে। বারবার আসবে। তাই তার ছোট চাচা এক বার আঘাত করেই গলা থেকে মাথা নামিয়ে ফেলে বকুলের।
হাত-পা গলা আলাদা করে ফেলে দেয় পাশের বাড়ির ডোবায়।

কারণ?বাপ-মা মরা এই মেয়েকে শেষ করার জন্য চেয়ারম্যান তাকে দশ হাজার টাকা দিয়েছে যে। বাকীটা সে সামাল দিবে।

এমনটা ধারণা করছে পুলিশ।সবটা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ঋক্ষ।
“বর্তমানে আইনী ব্যবস্থা অনেক এগিয়ে। মানবাধিকার, বিভিন্ন সংস্থা থাকতেও এসব কেনো সহ্য করছে গ্রামের লোক?”
“কারণ কারো মুখ খোলার সাহস নেই।এদের হাত উপর মহল অবধি। ভাই সবার পরিবার আছে,জানের মায়া আছে। কে যাবে এদের সাথে লাগতে?”
“তাই বলে এসব?”

পুলিশ কনস্টেবল কোনো জবাব দেয় না।ছাতা হাতে বেরিয়ে যায়।
বাচ্চা দুটো এখনো দাড়িয়ে আছে।
ঋক্ষের পাশে এসে দাড়িয়ে বলল,

“আমার বুবু ঠিক হবো না?তয় যে দাদী কয় ডাক্তারেরা মরা মানুষ চাইলে তাজা করতে পারে। তাগো হাতে আল্লাহ অনেক রহমত দিছে।দাদী কী মিছা কইল?”

স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের বারান্দায় দাড়িয়ে থাকা সবাই অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তাদের চলে যাওয়ার দিকে৷

দক্ষিণের দিকটায় বসে আছে এশাদ, আরীকাহ্।
এশাদ চিন্তিত হলেও আরীকাহ্-এর ফোনে ব্যস্ত। হঠাৎ গা এলিয়ে দিলো এশাদের দিকে।
এশাদ তখন মনে মনে নানান হিসেব কষতে ব্যস্ত।
আরু কী তবে ভুলে গেলো আজকের দিনের কথা? দুদিন আগেও তো মনে ছিল।

ধ্যান ভাঙলো আরীকাহ্-এর স্পর্শে।
আরীকা্হ আংগুল নেড়ে তাকে কিছু দেখাচ্ছে,

“এই সেই কুহুকপুর। যেখানে মেয়েদের জীবন্ত কবর দেওয়া হয়। দেখো! এখানে মেয়ে জন্ম নেওয়া মানে অভিশাপ মনে করে। কারণ মেয়েরা বংশ পরিচয়ের পরিধি বাড়াতে পারে না। আর এখানের জমিদার তার পাঁচ কন্যা…………

” আরু থামো।”
“আরে শোনো না।”
“না।একটু কফি করে দিবে?”
“স্ট্রং?”
“তোমার মতোন স্ট্রং।”
“আচ্ছা বোসো আমি আসছি।”

রান্নাঘরে কফি বানানো ব্যস্ত আরীকাহ্কে দেখে ঋক্ষ এগিয়ে গেলেন।
ভণিতা না করেই বললেন,

“কফি পেতে পারি? ”
“অবশ্যই।”
“আমরা কী পূর্ব পরিচিত?”
“মনে হচ্ছে না।”
“মন কিন্তু মাঝেমধ্যে মিথ্যে বলে।ভালো করে জিজ্ঞেস করুন তো! আমার যেন কেন মনে হয় আমি আপনাকে কোথাও একটা দেখেছি।”

“এটা সিনেমায় প্রচলিত ডায়লগ ভাই।”

“আরু,আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল।ভুলে গেলে?”
“মানে?”
“তোমার ভাই কই আরু? আজ কী সত্যি কি মনে নেই?”

কথা শুনছিল আরীকাহ্।গ্যাসের চুলোয় তখন দপদপিয়ে আগুন জ্বলছে। আগুনের দিকে তাকিয়ে আরীকাহ্ দেখতে পেলো দাউ দাউ করে জ্বলছে মানুষ। স্তুপ পড়ছে আগুনে পুড়ে মরা লাশের।

চলবেঃ

#ছবিয়াল_তানজীর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here