#চন্দ্রাক্ষী
#পর্বঃ৭
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
গ্রামের যেদিকটায় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, তার সামনে বিশাল এক সবুজ প্রান্তর জুড়ে রয়েছে দুর্বাঘাসের সমাহার। বা দিকটায় বড় বড় কচু গাছ।
ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে, কচু পাতার গা থেকে পানি ঝড়ছে টুপটুপ করে।
এত বড় কচুর পাতা আরীকাহ্ কোনোদিন দেখেছে বলে মনে পড়ছে না।
কিছুক্ষণ আগেও তো আকাশে ছিল ঝলমলে রোদ, কোথা থেকে যে এলো একদল মেঘ!
আকাশের সাথে অভিমান প্রকাশ করতে করতে নিজেকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
তাদের জন্য বরাদ্দকৃত কর্মচারী খাবার নিয়ে এসেছে।
সবাই এক সাথে বসেছে খেতে। আরীকাহ্ নিজ হাতে খাবার নিয়ে চুপচাপ খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
ইদানীং মনে হয় কেউ একজন তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
সামনে বসে থাকা লোকটির দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো
ঋক্ষ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আরীকাহ্ তাকানোর সাথে সাথেই মানব প্রবৃত্ত কারণে উচিৎ ছিল ঋক্ষের চোখ নামিয়ে নেওয়া তবে ঋক্ষ তা করেনি।
স্পষ্ট চোখে তাকিয়ে আছে আরীকাহ্-এর দিকে।
যেন এক কারীগর খুব যত্ন করে নিজ হাতে তৈরী করা প্রতিমাকে দেখছে।
বিষয়টা ভালো লাগলো না আরীকাহ্-এর।
সে আরো খানিকটা এশাদের গা ঘেঁষে বসে।
এশাদ পরম যত্নে আরীকাহ্-এর বাম হাতে তার হাত আবদ্ধ করে।
“খাইয়ে দেই?”
“লোকে কী বলবে?”
“লোকের ভাবনায় কী?আমার স্ত্রীকে আমি খাইয়ে দিব। এটা আমার জন্য সুন্নত।”
“তাহলে বলতে, অযথা হাত কেন দিলাম খাবারে।”
“সমস্যা নেই। আমি দিচ্ছি।”
এশাদের বিপরীতে বসে নূরী দেখতে পেলো,
কতই না পরম যত্নে এশাদ আরীকাহ্ কে খাইয়ে দিচ্ছে।
অবহেলা না করলে হয়তো আজ আরীকাহ্ এর জায়গায় সে থাকতো।
খাওয়া শেষ করার পূর্বেই কচুপাতা মাথায় দিয়ে দুজন বাচ্চা ছেলে-মেয়ে দৌড়ে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের ভিতর প্রবেশ করে।
ভিজে চুপসে যাওয়া ছেলেটা প্রথমে কথা বলে।
“আমার বুবুরে একটু দেখবেন?”
সিস্টার আফিয়া এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে তোমার বুবু কোথায়?
“হে বিশে কাত্রায়। ওই হানে আছে।”
এশাদ শেষ লোকমা ভাত আরুর মুখে দিয়ে সিস্টারের উদ্দেশ্যে বললেন,
“আপনি যান। হয়তো বেশি অসুস্থ তাই আসতে পারছে না।”
এশাদের কথা মতোন দুজন নার্স ছাতা হাতে এগিয়ে যেতেই তাদের চিৎকার ভেসে আসে।
দ্রুত পায়ে ঋক্ষ, আফতাব হোসেন সাহেব এগিয়ে যায়।
বাচ্চাদুটো তখনো বারান্দায় দাড়িয়ে।
ঋক্ষ প্রথমে দেখতে পেলো মেহেদী রাঙা হাত।
খেয়াল হলো মেয়েটির হাত-পা কিংবা শরীরের বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদা করা।
টুকরো টুকরো মানুষকে নিয়ে এসেছে বাচ্চা দুটো।
ঋক্ষ লক্ষ্য করলেন,
ভয়ার্ত চোখে লাশটি যেন তাকিয়ে আছে।
স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ফিরে এসে বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বললেন,
“লাশটা কার?”
লাশ শুনে আঁতকে উঠল সবাই।
“আমাগো বুবুর। হের খুব বিস শইলে। চেয়ারম্যানের শালা তুইলা নেওয়ার পর বুবুর শইলে কী জানি অইছে
বুবু খালি কানতো।আফনেরা বুবুরে ঠিক কইরা দেন।”
আরীকাহ্ তখন ভিতরের দিকটায়।
এশাদের ইশারায় একজন সিস্টার আরীকাহ্কে ভিতরের দিকেই ব্যস্ত রাখে।
ফোন বের করে আফতাব সাহেব থানার এস.আই কে কল দিলেন।
বাচ্চা দুটো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
পুলিশ এলো ১৫ মিনিটের মাথায়।
লাশ তখব বিবর্ণ। সব রক্ত মনে হচ্ছে বেরিয়ে গেছে।
টুকরো লাশ দেখে গা গুলিয়ে উঠছে সবার।
বাচ্চা দুটো কে জিজ্ঞেস করতে বলল,
“চাচায় বুবুর বিস কমাই দিছে। দা দিয়া কুপাইছে। আমার বুবু ভালা অইব না?”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে এস.আই রশিদ সাহেব বললেন,
“তোদের এই গ্রামে মেয়েরা কখনো ভালো থাকবে না। কারণ তোদের অতীতটাই ভালো না।এ গ্রামে কেন যে মেয়ে জন্মায়!”
পুলিশ লাশ নিয়ে চলে যাওয়ার পর এশাদ সবার উদ্দেশ্যে বললেন,
“এসব কিছু যেন আরু না জানে। কারণ আরুর অতীত যদি পুনরায় জীবন্ত হয়ে যায় তাহলে ছারখার করে দিবে তার ভবিষ্যৎ কে।!
চলবে
#ছবিয়ালঃওমর
(মোটামুটি লকডাউন হয়েই আছি। তাই গল্পটি অল্প হলেও প্রতিদিব দিবো। আরো একটি কথা, অনেকে বলছেন পেইজ আপনার টাইমলাইনে যাচ্ছে না। ফেসবুকের রিচ অটোমেটিক ভাবে কমেছে তাই এমন হচ্ছে। এজন্য যারা গল্প পড়েন একে অপরকে মেনশন করে দিবেন। এতে করে সকলেই পড়তে পারবেন।ধন্যবাদ, আর হ্যাঁ সব্বাই ভালোবাসা নিবেন।❤)