চন্দ্রাক্ষী পর্ব ৬

0
507

#চন্দ্রাক্ষী
#পর্বঃ৬
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

মানুষ যখন অত্যাধিক পরিমাণে ভয় পায় তখন সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আরীকাহ্-এর ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।
ঋক্ষের দুহাতে আবদ্ধ আরীকাহ্।জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।
আরীকাহ্-এর চিৎকারের শব্দে পুরোঘরে আলো জ্বলে উঠেছে, সামনে স্ক্রিনে স্টপ হয়ে আছে মুভি।

পুরোদিন ব্যস্ততার মধ্যে কাটিয়ে রাতে একটু হাওয়া বদলের জন্য হরর মুভি দেখছিল সবাই মিলে।

এশাদ ঋক্ষের দুহাত থেকে আরীকাহ্ কে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিতেই চোখ মেলে তাকায় আরীকাহ্।

ভয় পেয়েছে দেখেই বুঝতে পারছে৷ আফিয়া জ্বর মেপে দেখলো প্রায় ১০২ ডিগ্রি।
প্যারাসিটামল খাইয়ে দিয়ে ঘুমাতে বললে ঋক্ষ বললেন,।

“এশাদ! বি.পি. চেক করতো।
মনে হচ্ছে ও একটু বেশিই প্যানিক।”

নার্স বি.পি মেপে দেখলো প্রেশার অনেক বেশি। ঘুমের প্রয়োজন খুব তবে আরীকাহ ঘুমাতে পারছে না।তার কানে ভেসে আসছে কোনো বাচ্চা মেয়ে তীব্র চিৎকার।

বারান্দায় বসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে দিচ্ছে ঋক্ষ।এ কেমন অনুভূতি হচ্ছে?
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর অনুভূতি মাথা উঁচু করে কেনো ঘা সতেজ করছে?
সে তো বেশ ছিল দেশের বাহিরে।
নিজের হাতের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঋক্ষ।
এই হাত কিছুক্ষণ আগে একটা অজানা অনুভূতির জন্ম দিচ্ছে। এ অনুভূতি শুধুই কলুষিত ভবিতব্য এনে দিবে। তবুও এই বড্ড বেহায়া মন সে ভাবনায় ডুব দিতে চাইছে।

মোরগ ডাকার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আরীকাহ-এর।
নিজের অবস্থান বুঝতে চাইলে অনুভব হলো এশাদ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে।
এক পা তুলে দিয়েছে তার উপর দিয়ে।
হাত সরিয়ে দিতেই এশাদ বললেন,

“সারা রাত ঘুমোতে দাওনি। এখন উঠতে চাইলে মাথায় তুলে আছাড় মারবো। চুপচাপ ঘুমাও।”

“ওয়াশরুমে যাবো।”

এশাদ ছেড়ে দিলে আরীকাহ্ উঠে বসতেই দেখলো তার গায়ের শাড়ি নিচে পড়ে আছে৷
বুকে ভর দিয়ে থাকা ঘুমন্ত এশাদ বললেন,

“রাতে তোমার খুব জ্বর ছিল।যাও ফ্রেশ হয়ে বিছানায় আসবে অন্য কোথাও না।”

“আমি কফি নিয়ে একটু লিখতে বসবো।”
“এখন নয়। জলদি এসো।”

আরীকাহ্ নিজের শরীর থেকে কেমন যেন একটা জ্বর জ্বর গন্ধ পাচ্ছে। তাই ভাবলো গোসল সেরে নেওয়া যাক তবে এক মগ পানি শরীরে ঢালতেই ওয়াশরুমের দরজায় করাঘাত করছে এশাদ।

“মাথায় পানি দিবে না। আবছা ভাবে গোসল সেরে আসো। কোনো প্রয়োজন নেই শ্যাম্পু করার। ঠিক পাঁচ মিনিট সময়। না হলে সামনের পুকুরে চুবানি দিব বলে দিলাম।”

আরীকাহ্ মনে মনে এশাদ কে ভয়ংকর বকা দিয়ে বাধ্য মেয়ের মতোন বেরিয়ে এলো। এশাদ তখন বাহিরে দাড়িয়ে সিগারেট টানছে।

আরীকাহ্ আসতেই তাকে বিছানায় বসিয়ে তার কোলে মাথা রেখে এশাদ বললেন,

“কাল রাতে অনেক স্বামীর সেবা পেয়েছো। এবার নিজে একটু স্বামীর সেবা করো। হাত বুলিয়ে দাও।”

“আমি রাতে…… ”
“ভয় পেয়েছিলে খুব। ”

“বুঝেছিলাম মুভি চলছে কিন্তু তারপর আর কিছু মনে নেই।”
“প্রয়োজন নেই। আজ তুমি আমাদের সাথে যাবে। ”
“কোথায়?”
“স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে।”
“আমি ওখানে কী করবো?”
“আমার পাশে বসে থাকবে। আজ অনেক বাচ্চারা আসবে। তাদের সাথে কথা বলবে।মোট কথা আজ গ্রামের মানুষের সাথে পরিচিত হবে। ”

“আর আমার লেখা?”
“ফোন নিয়ে যাবে অথবা ট্যাবটা সাথে।”
“আচ্ছা বেশ।”

ভ্যানে করে এশাদ ওরা এগিয়ে চলেছে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের দিকে। আরীকাহ্কে একা রাখা ঠিক হবে না।ও যতো বেশি এই সাইকো থ্রিলার জনরার লেখা নিয়ে চিন্তা করবে একা থাকবে, ততো বেশি অসুস্থ হয়ে যাবে।
খুব কষ্ট করে আরীকাহ্কে সুস্থ করে তুলেছে। আর সেই নরকে ওকে ফিরে যেতে দিবে না।

ত্রস্ত হাতে আরীকাহ্ এশাদের হাত ধরে বলল,

“গ্রামটা অনেক সুন্দর। দেখো কোকিল ডাকছে। কতদিন শুনিনা এই ডাক।”

মুষ্টিবদ্ধ হাতে আরীকাহ্-এর হাত নিয়ে এশাদ বললেন,

“তোমার হাসি হাসি মুখটাও এই বসন্তের কোকিলের মতোন। না দেখলে শান্তিই পাই না।”

এশাদের পাশে বসে ফোনে কিছু করছিল আরীকাহ্। এশাস উঁকি দিয়ে দেখে কী করছে সে?
আরীকাহ্ তখন ফেসবুক স্ক্রলিং করছিল।
রোগীর ভীড় কমতেই এশাদের খানিকটা কাছে এসে বসে আরীকাহ্। টেবিলের উপর হাত রেখে অন্য হাতে ফোন চালাচ্ছে।
সে সময় একজন বৃদ্ধ কৃষক এলেন সাথে সাত-আট বছরের এক মেয়েকে নিয়ে।
মেয়েটা অসম্ভব রোগা,শ্যামলা তবে চোখে কিছু একটা আছে যা গভীর।
আরীকাহ্ বেশ খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো মেয়েটার চোখের দিকে।
মেয়েটার চোখ ঠিক চাঁদের মতোন।
চন্দ্রাক্ষী! হ্যাঁ এই মেয়ের আঁখিযুগল চন্দ্রাক্ষী।
মেয়েটার চোখের বিশেষত্ব মনে হচ্ছে ঘনকালো মণির চারপাশে টইটম্বুর পানি।

“ডাক্তার সাব, আমার নাতনীডা ডরাইছে। ওরে একটু ভালো ওষুধ দেন।”

“ভয় কেনো পেয়েছো বাবু?”

এশাদ হাত বাড়াতেই মেয়েটা পিছিয়ে যায়। বৃদ্ধ আশ্বাস দেওয়ায় সে আবার এগিয়ে আসে। সে চেকাপ করতে দেয়।

“ভয় কীসের তোমার? কী হয়েছে?”

“এই গ্রাম মাইয়া মাইনষের লিগা অভিশাপ ডাক্তার সাব। মাইয়্যা হইয়া জন্মাইছে তাই বাপের বোঝা।
বাপে তারে তিন দিন আগে রাইত কইরা ঘরের বাইরে রাইখা দিছাল।তাই ডরাইছে।”

“আশ্চর্য? এটা কেমন কথা?”
“এই গ্রামের এই রীতিই। মাইয়্যাগো জীবন্ত কবর দেয় এই গ্রামের মানুষ। এই এলাকার জমিদার তার পাঁচ মাইয়্যারে গরম তেলে ভাজছিল কারণ তারা বংশ আগাইনিব না তাই।”

বৃদ্ধের কথা শুনে এক অজানা অনুভূতি হচ্ছে আরীকাহ্-এর। বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে কোনো কিছুর পোড়া গন্ধে।

চলবে
#ছবিয়ালঃতুষার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here