#চন্দ্রাক্ষী
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ২
পুরো রাত বৃষ্টি হয়েছে বলেই হয়তো সকালটা আজ এত সুন্দর।
বৃষ্টির পর মাটি থেজে আলাদা সৌরভ ভেসে বেড়ায় বাতাসে।
বুক ভরে শ্বাস নিয়ে সে সৌরভ নিজের অন্তস্থলে গোপন কুঠুরিতে তালাবদ্ধ করে রাখা যায়।
এশাদ এই মূহুর্তে ঠিক সেকাজ করছে। সবে মাত্র আলো ফুটতে শুরু করেছে। আর সে বেরিয়েছে জগিং করতে।
জুতোর ফিতেটা বেধে ধীরে ধীরে ছুটে চলেছে সে।
শহরের রাস্তাগুলো এখন কতটা নিসঙ্গ অথচ কিছুক্ষণ পরেই হয়ে উঠবে কোলাহলে কলরব।
এ সময়টা এশাদ সম্পূর্ণ নিজেকে নিয়ে, আরীকাহ্কে নিয়ে এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে।
আরীকাহ্ মেয়েটা চমকে উঠতে পছন্দ করে যদিও এশাদ তেমন কিছুই পারে না তবে সে যদি মুঠোভরা ঘাস লতাপাতা নিয়ে আরীকাহ্ এর হাতে দেয়, তখন আরীকাহ্ চোখে হাসির একটা দমক দেখা দেখা যায়।
ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে আরীকাহ্ এর চোখে,ঠোঁটে, গালে।
এবং এই হাসিটা হয় এশাদের পুরো দিনের মন খারাপ, ব্যস্ততা, ক্লান্তিকে এক লহমায় কাটিয়ে উঠার টনিক।
বসন্ত এসে গেছে। আমের মুকুলের গন্ধ চারপাশে। মেডিকেল কলেজের এপাশটায় পলাশ ফুলের সমারোহ।
এশাদ পায়ে ভর দিয়ে হাতে হাতে কুড়িয়ে নিচ্ছে মুঠোভরা পলাশ।
“কী রে! সব গোছগাছ শেষ?”
ফুলে ফেঁপে উঠা শ্বাস প্রশ্বাসের সমেত এশাদের উদ্দেশ্য প্রশ্ন করে ঋক্ষ। দাঁড়িয়ে বুক ভর্তি শ্বাস নিয়ে এশাদের উত্তরের অপেক্ষায় সে।
শ্যামল বর্ণ ঋক্ষের চিবুক বেয়ে টপটপ করে ঘাম নেমে আসছে।
“হুম আশা করছি সব গুছানো হয়েছে ইতিমধ্যে। কারণ আরু এসবে বেশ আগ্রহী এবং পটু।”
“শেষমেষ ওকে রেখেই যাবি?”
“ভেবেছিলাম। তবে হচ্ছে না। ও যাবে আমাদের সাথে।”
“তাহলে….. ”
“ভেবেছিলাম আমি না থাকলে হয়তো মা-মেয়ের দূরত্ব কমে যাবে তবে আরু যাবেই।”
“যাই বলিস তাই বলিস। আমার কিন্তু তোর আরুকে দেখার খুব ইচ্ছে। পাঁচ বছর চুটিয়ে প্রেম করলি, বিয়ে করলি ছয় মাস হলো অথচ একদিন ম্যামের দেখা পেলাম না?
মানুষ শুনলে হাসবে।”
দু পকেট ভর্তি পলাশ ফুল নিয়ে মুচকি হেসে এশাদ জবাব দেয়,
“জানিস তো, আরু আমার ব্যক্তিগত সম্পদ। এবং ব্যক্তিগত সম্পদ যত ব্যক্তিগত থাকবে ততটাই ভালো। আমি আমার ব্যক্তিগত বিষয় সবার সামনে বাড়িয়ে চড়িয়ে প্রেজেন্ট করি না।”
এশাদ যখন ফিরলো আরীকাহ্ তখন সব গোছগাছ করে সকালের রান্না শেষ করেছে মাত্র। এশাদ হাত মুঠো ভর্তি পলাশ ফুল এগিয়ে দিতেই আরীকাহ্ বলল,
“প্রিয়তম তুমি কী আমায় এক মুঠো দাহন দিচ্ছো?আমি তো জ্বলে যাবোই তুমিও কী মুক্তি পাবে?”
মুচকি হেসে এশাদ আরীকাহ্-এর গালে হাতের স্পষ্ট স্পর্শ মাখিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ফিরে এসে হাজার খানেক দ্বিধা নিয়ে বলেই ফেলল,
“আমি যতদূর জানি মেয়েরা মায়ের সাথে গভীর সম্পর্ক রাখতে পছন্দ করে বা বেশ প্রয়োজন মনে করে।”
“আমি তাদের দলে নই।”
“যা হয়েছিল ভুলে যেতে পারো।”
“ভুলে যাওয়ার মতোন হলে যেতাম। তুমি জানো পুত্র কুপুত্র হয় তেমনি মাতাও কুমাতা হয়। আর ভদ্রমহিলা মা তো অবশ্যই সে সাথে কুমাতাও।”
“আরু! এভাবে বলে না। উনি অনুতপ্ত।”
“উনার অনুতপ্ততায় কি আমার ক্ষতিপূরণ হবে?”
এশাদ খেয়াল করলেন আরীকাহ্ বেশ রেগে গিয়েছে। ফর্সা গালদুটোয় গোলাপি আভা ফুটে উঠেছে। এটা আরীকাহ্-এর রাগের প্রাথমিক লক্ষণ। আপাতত সে মেয়েটাকে কাঁদাতে চাইছে না। তাই প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন,
“আচ্ছা তৈরী হয়ে নাও। আমরা বেরুবো। কারণ রাস্তা প্রায় ১৪ ঘন্টার হবে৷”
জানালার পাশটায় বসেছে আরীকাহ্। আজ অফিশিয়ালি ভাবে পরিচিত হতে যাচ্ছে এশাদের সব কলিগদের সাথে।
ব্যাগপত্র গুছিয়ে রেখে এশাদ এসে আরীকাহ্-এর পাশে বসেছে।
তাদের পুরো টিম যাচ্ছে। পাঁচজন ডক্টর সাথে চারজন নার্স।
পরিবারের সদস্য হিসেবে আরীকাহ্ এবং কামাল সাহেবের স্ত্রী যাচ্ছেন। বাকী সবাই অবিবাহিত বলে তারা একাই যাচ্ছে।
যথাযথ ভাবে সবার সাথে পরিচিত হয়ে আরীকাহ্ নিজের মতোন করেই আছে। শক্ত হাতে এশাদের হাত ধরে আছে তবে দৃষ্টি বাহিরের দিকে।
বাসের ভিতর বেশ আড্ডা মুখর পরিবেশ।সবাই আড্ডায় মেতে উঠেছে। বাহিরের হালকা বাতাসের দমকায় ঘুম চলে এলো আরীকাহ্-এর।দুহাতে এশাদ কে আবদ্ধ করে পা তুলে নিলো । এশাদের কাধে মাথা রেখে কখন যে ঘুমে বিভোর হয়েছে সেদিকে খেয়াল নেই।
বাহিরে ততক্ষণে সন্ধ্যে নেমেছে। বৃষ্টির ফোটার সাথে রাস্তার সংঘর্ষ, সেই রাস্তার উপর দিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগামী বাস।
জানালা দিয়ে পানির হালকা ছাট আসছিল।হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো আরীকাহ্-এর।
আধোঘুমে খেয়াল করলো,
বাহিরে বৃষ্টির পানিতে দাঁড়িয়ে আছে এক ছোট্ট শিশু।
যার গা থেকে ঝুলে ঝুলে পড়ছে রক্তাক্ত মাংস।
দেখেই বমি পেলো আরীকাহ্-এর।
চারপাশ ভারী হয়ে উঠছে পঁচা গন্ধে।
এশাদকে ডাক দিতেই অনুভব হলো পাশে রাখা এশাদ যেন নিশ্চুপ হয়ে আছে। বাসের লাইট অফ। কেমন যেন নীরবতা।
ব্যাগ হাতড়ে ফোন বের করে ফ্ল্যাশ জ্বলতেই আরীকাহ্ দেখলো
তারপাশে এশাদ নয়, বসে আছে এক দলা মাংস। যা তেলে ভেজে ঝলসে আছে। আর গা দিয়ে আসছে হিমশীতল করা মৃত্যুগন্ধ।
চলবে
#ছবিয়ালঃসাজিদ