ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ৩২

0
959

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৩২

খোলা আকাশের দিকে গু*লি ছুড়ে। মোর্শেদ চৌধুরী বলে,ঠিক এভাবেই তোমার বুকেও গু*লি চালাতে আমার হাত একটুও কাঁপবে না।

শাফিন অট্টহাসি দিয়ে বলে,মৃত্যুর ভয় শাফিনের নেই। শেষবার বলছি পাপের পথ থেকে ফিরে এসে নিজেকে আইনের আওতায় সমর্পণ করুন।

– জানো পৃথিবীতে সবচেয়ে অকৃতজ্ঞ প্রাণী হলো মানুষ। এই দেখো তোমার নিজেকেই, তোমার ওয়াইফ,তোমার বাচ্চাকে এতোদিন সেভ করেছি আমি।তোমার অনুপস্থিতিতে তাদের গায়ে আঁচড় ও লাগতে দেইনি। আর তুমি তোমার সামান্য কিছু ছাড়তে চাইছো না!

– মিস্টার চৌধুরী আপনি যা, যা করেছেন সব কিছুর পেছনেই স্বার্থ আছে। আমি ওয়াইফকে বাঁচিয়েছেন আপনার বংশধরকে রক্ষা করতে।ভেবে ছিলেন ছেলেটা তো আর নেই। তাই তার সন্তানকে বাঁচিয়ে রেখে আমার বংশ বাঁচিয়ে রাখি। তবে আমি ভুল করেছি আমার তো শুধু শেহরোজ মাহমুদকে বাঁচিয়ে রাখা উচিৎ ছিলো। শুধু শুধু মেয়েটাকে এতোদিন বাঁচিয়ে রাখলাম।

– শুধু এই ভালো কাজটুকু করার জন্য আপনার শাস্তি কিছুটা কম করার চেষ্টা করবো।

– অট্রহাসি দিয়ে বলে,নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিজের হাতে শেষ করে দিয়েছি। দু’বার ভাবিনি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, তোমাকে শেষ করতে চেয়েও বারবারা ফিরে এসেছি। তার কারন কি জানো? পিতৃত্বের টান। যেই টান বারবার তোমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আমার মা আমাকে বলতো, সন্তান হচ্ছে নাড়ি ছেড়া ধন। নিজে শত আঘাত সহ্য করলেও সন্তানের শরীরে একটা আঁচড়ও সহ্য করবো না।

শাফিন হুট করেই মোর্শেদ চৌধুরীর হাত পেছন থেকে শক্ত করে ধরে বলে,আমার মায়ের মৃ*ত্যু*র জন্য আপনি দায়ী এটা জানার পরে আপনাকে এই পৃথিবীতে নিশ্বাস নেয়ার আর এক মূহুর্ত সময় দেবো না। ভেবেছিলাম সব প্রমাণ এক সাথে করে আপনাকে ধীরে ধীরে শাস্তি দেবো। তবে সেটা আর সম্ভব না। মোর্শেদ চৌধুরীর হাতের পি*স্ত*লটা নিয়ে সাথে সাথে মোর্শেদ চৌধুরী মাথায় তাক করে টিগারে চাপ দিবে তার আগেই কেউ একজন শাফিনের হাত থেকে ফেলে দিলো।

ঈশান বলে,পাগল হয়েছিস! আইন নিজের হাতে কেন তুলে নিচ্ছিস?

তুই আমাকে কেন আটকাচ্ছিস?আমার রাস্তা থেকে সরে যা। আজকে একে নিজের হাতে খু*ন করে তবেই আমার শান্তি।

দু’জনের কথা বলার ফাঁকেই মোর্শেদ চৌধুরী পালিয়ে চলে যায়।

শাফিন মোর্শেদ চৌধুরীকে না দেখতে পেয়ে ঈশানের কলার চেপে ধরে বলে, আজকে আমি তোকে মে*রে*ই ফেলবো। তোর জন্য আজ আমার মায়ের হ*ত্যা*কা*রী*কে পেয়েও কিছু করতে পারলাম না।

ঈশান নিজের কলার ছাড়িয়ে বলে, শুধু তোর মা কেন? এই লোকের জন্য কত মা,বোনের জীবন নষ্ট হয়েছে। কত অসহায় মানুষকে পাচার করেছে। কত যুব সমাজকে নষ্ট করেছে।তাকে ছেড়ে দেবো না। তবে এটা একটা টোপে।সে এখন যেখানে যাবে আমরা জানতে পারবো। তার পিছুে লোক লাগিয়েছি। তুই নিজেকে শান্ত কর। আমি তোর ছেলের কাছে তার বাবাকে ফেরত দিতে চাই।

শাফিন হাঁটু মুড়ে বসে বলে,কেন করলো এই লোকটা এমন। কেন?

ঈশান শাফিনের কাঁধে হাত রেখে বলে,রিলাক্স। সব পাপের শাস্তি সে পাবে।তবে সমাজ থেকে এসব আবর্জনা উপড়ে ফেলা এতো সহজ না। কারণ আমাদের সমাজে উচ্চপদস্থ অনেক লোক এদের হাতের পুতুল।

শাফিন উঠে ঈশানকে জড়িয়ে ধরলো। সেই যে ট্রেনিংয়ে তোর সাথে আমেরিকায় দেখা হলো তারপর এতো দূরত্ব। তবুও বিপদে তুই আমার ফ্যামেলিকে সাহায্য করেছিস।

– তুই ভাবির ছবি না দেখালে তো ভাবিকে চিনতেই পারতাম না। সেদিন ভাবি আমার অফিসে আসতেই। আমি ভাবিকে দেখে আশ্চর্য হয়েছিলাম। কারণ তোর মৃ*ত্যু ভাবির নিখোঁজ সংবাদ।আরো অনেক তথ্য আমার কাছে ছিলো।যাইহোক ভাবি না আসলে তো সাহায্য করতেই পারতাম না।

– দু’জনেই মধুপুর গ্রামে চলে আসলো তখন মধ্য দুপুর মিহি শেহরোজকে ওর নানুর কাছে রেখে গোসেলে গেছে। তপ্ত রোদ কেবল মাত্র তার তেজ কমাতে শুরু করেছে। শাফিনের বুকের ভেতর কেমন একটা অনূভুতি হচ্ছে। নিজের সন্তানকে ছুয়ে দেখতে পারবে ভাবতেই কেমন লাগছে।

ঈশান আর শাফিন উঠনে এসে দাঁড়িয়েছে। মিহি গোসল শেষ করে উঠনে কাপড় মেলতে এসে শাফিনকে দেখতে পেয়ে এক ছুটে শাফিনের কাছে যেয়ে শাফিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

শাফিনও নিজের প্রেয়সীকে আগলে নেয় নিজের বক্ষে।

ঈশান একটু দূরে সরে যায়। দূরে দাঁড়িয়ে ভাবে, আমি কি করে তোমাকে ভালোবাসার মতো অন্যায় করতে পারলাম? তুমি তো অন্যকারো আমানত,অন্যকারো ভালোবাসা। কি করবো বলো,তোমার সাথে এই দু’মাস থাকতে থাকতে কখন কি ভাবে তোমার প্রেমে পরে গেলাম বুঝতেই পারলাম না। তবে আমি অন্যায় করলেও ভালোবাসা তো অন্যায় না।বলো?

মিহি আর শাফিন উঠনে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে, শাফিন মিহির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,ভর দুপুরে সুন্দরী রমনী ভেজা চুলে এক যুবকে তার রুপের আগুনে জ্বলসে দিচ্ছে। এখন যদি এই বোকা পুরুষ ভুল করে বসে তবে কি দোষ কি হবে? বোকা পুরুষের?

শাফিনের কথা শুনে মিহি শাফিনকে ছেড়ে দিয়ে সোজা ঘরে চলে আসে। শাফিনও মিহির পিছু পিছু আসে। শাফিন ঘরে ঢুকতেই চোখ যায় ঈশানের কোলে হাসোজ্জল শেহরোজের দিকে। যে তার ছোট ছোট হাত পা নাড়া নাড়ি করে নিজের ভাষায় কিছু,বলতে চাইছে। যদিও সেই ভাষা কেউ বুঝতে পারছে না।

ঈশান শাফিনকে দেখতে পেয়ে শেহরোজকে বলল,বাবাই আজকে আমার দ্বায়িত্ব শেষ তোমাকে তোমার বাবাইয়ের হাতে পৌঁছে দিতে পেরে।ছোট শেহরোজ কি বুঝলো জানা নেই খিলখিল করে হেসে উঠলো। ঈশান শেহরোজকে শাফিনের কোলে দিয়ে বলে,এই নে তোর দুনিয়া।

শাফিনের চোখে আনন্দ অশ্রুতে ভরে উঠলো, শাফিন হাত বাড়িয়ে ছোট্ট শেহরোজকে কোলে তুলে নিলো।শেহরোজ তার ছোট,ছোট চোখ দিয়ে তাকিয়ে রইলো তার বাবার দিকে। শাফিন শেহরোজের ছোট, ছোট হাত গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলো।শাফিনের মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব শান্তি যেনো এই ছোট শেহরোজের মধ্যে রয়েছে। শেহরোজ নিজের হাত দিয়ে শাফিন একটা আঙুল ধরে রাখলো,।শাফিন শেহরোজকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে। মিহির চোখেও আনন্দ অশ্রু যা মিহির গাল বেয়ে গড়িয়ে পরছে। মিহি ধির পায়ে শাফিনের পাশে এসে দাঁড়ালো শাফিনের হাতের উপর হাত রেখে শেহরোজকে জড়িয়ে ধরে বললো,ভালোবেসে ভুল করিনি আমি।

ঈশান গলা ছেড়ে একটু কাশি দিয়ে বলে,আমরাও তো আছি এখানে।

মিহি শাফিনকে বললো চলো রুমে চলো। দু’জনে সমানে পা ‘বাড়াবে তার আগেই র‌্যা*বে*র কয়েকজন সদস্য ঢুকে পরে বলে,মিস্টার শাফিন মাহমুদ। আপনাকে একবার আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে।

————————————————————————
সুম আর ফাহিন পাশাপাশি বসে আছে।দু’জনেই চুপ করে আছে কেউ কোন কথা বলছে না। মিনিট পাঁচেক চুপ থাকার পর সুমু বললো,তুই কেন এই পথে পা’বাড়ালি?

– ফাহিনের সহজ স্বীকারোক্তি, তোর জন্য।

– মানে?

– মানে খুব সোজা একজন এতিম যখন জন্মের পর থেকে নিজের সাথে লড়াই করে বেঁচে থেকে কোনমতে একটা পাবলিক ভার্সিটিতে পড়তে পারে সেটা তার জন্য বড় পাওয়া। তবে মানুষ বড্ড লোভী স্বভাবের জানিস তো। তাইকো সে তোকে ভালোবাসার মতো লোভ করে বসে। কিন্তু আমার মতো অনাথকে তুই কি কেন ভালোবাসবি? তবুও বার-বার তোর কাছে ছুটে গিয়েছিলাম একটু ভালোবাসা পাওয়ার আসায়। তুই কি বলেছিলি তোর যোগ্য হতে। শতবার চেষ্টা করেও একটা চাকরি জোগাড় করতে ব্যার্থ হয়েছি। তবে তখন আরো গভীর ভাবে আমার এতিম হওয়ার যন্ত্রণা আমাকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছে। কারণ এই সমাজে চলতে গেলে হয়ত রাগে টাকার জোড়। নয়তো মামার জোড়। আমার তো কিছুই ছিলো না।

– তুই একবার আমাকে সব কিছু খুলে বলতে পারতি। আর তাছাড়া তুই সব সময় বলতি তোর মা, বাবা গ্রামে থাকে। তুই অনাথ আশ্রমে ছিলি সেটা একবারও বলেছিস।

– বলতে চেয়েছি তবে সাহস হয়নি৷ছোট বেলা থেকে মানুষের অনাদর, অবহেলা সহ্য করেছি। আমি জানি এই শহরের বৃত্তশীলরা আমাদের কোন নজরে দেখে।

– একবার শুধু বলে দেখতি।

– কি বলতাম তোদের আমি একটা জা*র*জ সন্তান। যার পিতা, মাতার কোন পরিচয় নেই। যার মা হয়ত জন্মের পর তাকে পাপ ভেবে কোন হসপিটালের ডাস্টবিনে ফেলে রেখে গেছে।

সুমু ফাহিনের কাছে এসে ফাহিনের গালে নিজের দু’হাত রাখলো। ফাহিনের চোখে চোখ রেখে বলে,আমিও তোকে ভালোবাসি ফাহিন। তুই প্রপোজ করার আগে থেকে। কিন্তু আমি একজন দায়িত্বশীল ফাহিনকে দেখতে চেয়েছিলাম। যদি জানতাম তোর জীবন অবহেলায় জর্জরিত তবে আমার ভালোবাসা দিয়ে তোকে মুড়িয়ে নিতাম। একবার বলে তো দেখতে পারতি।

ফাহিন সুমুর কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে,আগে কেন এভাবে আমাকে ভালোবাসার পরশ দিলিনা। এখন তো আমাকে পুলিশ গ্রেফতার করবে।

সুমু ফাহিনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,তুই যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিজের দোষ স্বীকার করেছিস। তখন তোর জন্য আমি লড়াই করবো।চল এক্ষুনি আমরা থানায় যাবো,তুই নিজের দোষ স্বীকার করে নিজেকে পুলিশের হেফাজতে করে দিবি।

______________________________________________
শাফিন ঈশান দু’জনকেই র‌্যাব সদস্যরা নিয়ে যাচ্ছে। মিহি বারবার বলছে প্লিজ ছেড়েদিন ওদের ওরা কি করেছে?

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।

হ্যাপি রিডিং 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here