#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-২২
মিহির কোলে ছোট্ট শেহরোজ। মিহি শেহরোজের দিকে তাকিয়ে আগামীকাল রাতের কথা ভাবছে।ঠিক সময় ওই হোটেল বয় তাদের যদি সরিয়ে না আনতো তাহলে না জানি কি হয়ে যেতো! ভেবেই হৃদয় কেঁপে উঠলো।শেহরোজের কপালে চুমু খেলো। শেহরোজ এখন ঘুমচ্ছে। শেহরোজকে শুয়ে দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো। লাল পাড়ারে বাসন্তী শাড়ী। হাত ভর্তি চুড়ি। চোখে ব্লু লেন্স। আলতা নিয়ে হাতে পায়ে সুন্দর করে আলতা পরে নিলো। সিঁথিতে টকটকে লাল আবির দিয়ে নিলো। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। যে কেউ মিহিকে দেখলে এখন নব বঁধু মনে করবে।মিহি বাহিরে এসে লিরাকে বলে আমি তৈরি চলো।
লিরা মিহিকে দেখে বলে, তোমাকে দেখে এখন আর কেউ চিনতে পারবে না। আর মুসলিম তো কল্পনাও করবে না। আজ থেকে তুমি হলে মিসেস ইরাবতী মুখার্জি। চলো বৌদি আমাদের লক্ষ্যে নেমে পরি।
মিহি শেহরোজকে কোলে নিয়ে লিরার সাথে বের হলো। দু’চোখ বন্ধ করে বলে,আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও আমার তো আর কোন রাস্তা ছিলো না। তুমি আমাকে সাহায্য করো। যাতে তাড়াতাড়ি এই নাটকের ইতি টানতে পারি।
লিরা বললো এখন আমরা যাবো সরকারি কোয়ার্টারে, সেখানে তুমি ঈশান মুখার্জির ওয়াইফ আর আমি তার বোন। এখন থেকে কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।কোন ভাবে ধরা পরলে চলবেনা।
– হুম মাঠে যখন নেমেই পরেছি এই খেলার শেষ দেখে ছাড়বো।
– তোমার আর শাফিনের বিয়ের কোন প্রমাণ নেই। মানে ম্যারেজ সার্টিফিকেট।
– থাকবে না কেন আছে। কারণ আমরা পরিবারের বিরুদ্ধে যেয়ে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করেছিলাম।
– ওয়াও দ্যাস গুড। তাহলে কাজটা সহজ হবে।
– কি কাজ?
– দেখো তার মানে আয়রা যে কাগজটা দেখিয়েছে সেটা নকল। আর তোমার আসল কাগজটা বের করে আয়রার বিরুদ্ধে কেস ফাইল করা যাবে।যে ভাবে তোমার নামে করেছে।ঠিক সে ভাবে। তুমি ওই কাগজ কোথায় রেখেছিলে।
-আমার বাসার কেবিনেটে।
– কোন কাজী অফিসে রেজিস্ট্রি করেছিলে।
– মতিঝিল।
– ওইখান থেকে কাগজ নতুন করে তুলতে হবে। তারপর দেখো ওদের চালে কি করে ওদেরকেই নাচাই।
______________________________________________
রাত পার করলো বারে।রাত শেষ হয়ে এখন দিনের শুরু এখন কোথায় যাবে? এরিকার দেওয়া ঠিকানায় নাকি অন্য কোথাও। কিছু সময় ভেবে চিন্তে সোজা চলে গেলো এরিকার দেওয়া ঠিকানায়। সেখানে যেয়ে দেখা হলো এক মধ্য বয়স্ক মহিলার সাথে। শাফিন তার হাতে থাকা কাগজাটা মহিলার সামনে ধরলো। মহিলাটি শাফিনকে একটা রুমে নিয়ে গেলো। শাফিনকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কন্ঠে বললো,এই রুম থেকে বের হবেনা এরিকার ফিরে আসা অব্দি। আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
শাফিন বেডে হেলান দিয়ে বসে পরলো। চোখ বন্ধ করতেই মিহির চেহারাটা ভেসে উঠলো।সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালো।আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুঁজতে লাগলো। তখন মহিলাটি শাফিনের খাবার নিয়ে আসলো।। শাফিনকে কিছু খুঁজতে দেখে বলে,কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলো।
-আপনার মোবাইলটা দেয়া যাবে?
মহিলাটি নিজের মোবাইল বাড়িয়ে দিলো।
শাফিন মোবাইলটা নিতেই। সে চলে গেলো। মোবাইল নিয়ে প্রথম সে মিহির নম্বারে কল করলো। রিং হচ্ছে। একবার দু’বার তিনবার। এমন করে কয়েকবার কল করলো।কোন লাভ হলো না ওপাশ থেকে রিসিভ হচ্ছে না। হতাশ হলো শাফিন। এবার কল করলো উদয়কে। উদয়ের ফোন বন্ধ বলছে। একবার ভাবলো কল করবে নুহাসকে পরে আবার ভাবলো।ওযদি আয়রার সাথে মিলে থাকে তাহলে বিপদ বাড়বে।নিজের ফেসবুক একাউন্ট লগইন করতে যেয়েও করলো না। মোবাইল রেখে দিলো।বিষন্নতা ঘিরে ধরলো। মনে মনে বলছে,তুমি কি আজও আমার অপেক্ষায় আছো? নাকি অন্য কোন ঠিকানা খুঁজে নিয়েছো। তুমি কি ভালো আছো প্রিয়তমা। চোখ দুটো ভরে উঠলো।শত ঝামেলার পরেও একবার মিহির চেহারা দেখে নিলে কেমন শান্তি লাগতো। আজ সেই শান্তি টুকুও নেই।
______________________________________________
ঈশান পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। সার্ভেন্টের হাতে এক প্যাকেট তেলাপোকা। ঈশান আয়রা দিকে তাকিয়ে বলে,মিস আয়রা প্রস্তুততো তেলাপোকার সাথে বাসার করার জন্য?
– আপনি এসব বলবেন আর আমি ভয় পেয়ে যাবো।
– নাহহহ তা কেন পাবেন আপনার জন্য হ্যান্ডসাম তেলাপোকা আর সুদর্শন ইঁদুরের ব্যবস্থা আছে তো। ঈশান সার্ভেন্টকে ইশারা করতেই সার্ভেন্ট কিছু তেলাপোকা ছেড়ে দিলো। আয়রা তেলাপোকা দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়ে বলে,এগুলো সরিয়ে ফেলুন।
– কেন আপনি তো এদের ভয় পান না তাহলে সমস্যা কোথায়? একটু রোমান্স করুন এদের সাথে আমি দেখি আপনি কত সাহসী।
তেলাপোকা আয়রার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় বিচরণ করতে লাগলো। আয়রা চোখ বন্ধ করে সয্য করতে লাগলো।
ঈশান সার্ভেন্টকে ইশরা করতেই সার্ভেন্ট কিছু ইঁদুর এনে ছেড়ে দিলো।
এবার আয়রা নিজেকে আর সংযত করতে পারলো না চিৎকার করে বলে এগুলো সরিয়ে ফেলুন আমি বলছি।
ঈশান সার্ভেন্টে ইশারা করতেই সার্ভেন্ট সেগুলো নিয়ে গেলো।
ঈশান আয়রাকে উদ্দেশ্য করে বলে,জানতাম আপনি খালি মুখে কথা বলবেন না।তাইতো আপনার আদর যত্ন করার জন্য সামান্য ব্যবস্থা। এবার আরো আদর যত্ন না চাইলে বলে ফেলুন।
আয়রা খানিকটা সময় নিয়ে বলে, পানি দিন আমাকে।
– আপনি কি আবার বউ নাকি? যে চাইলেই পেয়ে যাবেন। আগে উত্তর পরে পানি।
– আপনার মতো মানুষ আমি দ্বিতীয় দেখিনি। একজন শত্রুরকেও পানি চাইলে কেউ মানা করে না।
– ও হ্যালো আপনি আমার স্পেশাল অতিথি। তাই আপনার জন্য স্পেশাল ট্রিট।কথা না ঘুরিয়ে সোজাসাপ্টা উত্তর দিন।
– সেগুলো,সব নুহাসের কাছে।
– আপ্যায়ন কম হয়ে গেছে তাইতো আচ্ছা আরো বিশেষ ব্যবস্থা আছে। কু*কু*রে*র কলিজা ভুুনা। আর টি*ক*টি*কি*র বিরিয়ানি।
এমন উদ্ভট খাবারের নাম শুনেই আয়রার বমি আসলো।
ঈশান বলে, আপনি হয়তো বুঝে গেছেন আমি ফাঁকা আওয়াজ দেই না। যেটা করি সেটাই বলি। এবার বাকিটা আপনার ইচ্ছে।
– কিছু ডকুমেন্ট নুহাসের কাছে বাকিগুলো আমার বাসার স্টোর রুমের আলমারির লকারে।
– বাসার এড্রেস আর লকারের চাবি দিন।
– আপনি কি করে খুঁজে পাবেন আমাকে সাথে নিয়ে চলুন।
– গভীর জলের মাছ আমি তাই আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করবেননা। যতটুকু বলছি ততটুকু করুন।
– আয়রা এড্রেস আর চাবির সন্ধান দিয়ে দিলো।
ঈশান আয়রার সামনে ঝুকে বলে বাইদা ওয়ে আপনার চোখ গুলো নর্দমার মতো সুন্দর। মানে চোখ সুন্দর, তবে দৃষ্টিতে আবর্জনা।
নুহাস আর রমিজ রাজ একসাথে বসে আছে। দু’জনের চেহারায় চিন্তার ভাজ। আয়রার মতো বিচক্ষণ একজনকে কেউ কি করে গু*ম করে দিলো।
নুহাস বললো,আমাদের লোকরা সবাই কি ঘুমিয়ে ছিলো।
– আয়রা একা গিয়েছিল।
নুহাস হাত তালি দিয়ে বলে বাহহহ বাহহহ মিস্টার রমিজ রাজ এই বুদ্ধি নিয়ে আপনি এম,কের সাথে টক্কর নিতে চান?
রমিজ রাজ উঠে বলে,গেলে আয়রা গেছে আমার টাকা তো যায়নি।
– মানে!
– ওইখানে শুধু শো অফ করার জন্য টাকা ছিলো। সর্বোচ্চ এক কোটি হবে, আবার এরচেয়ে কমও হতে পারে।
তবে আয়রার সিগনেচারের পর পুরো টাকা আমার একাউন্টে জমা হবে।
– তা এতো কালো টাকার হিসেবে দেবেন কি ভাবে?
– সেসব তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি বরং আয়রাকে খুঁজে বের করো।যদি একবার মুখ খুলে তাহলে তুমি আমি দু’জনেই ফেঁসে যাবো।
– সবটা হয়েছে আপনার জন্য। আমাদের একজন কেউ আয়রার সাথে থাকলে আর এতো বড় দূর্ঘটনা হতো না।
– বাচ্চা মেয়েটা নাকি আমাকে ভালোবাসে তাই ভালোবাসার পরিক্ষা নিলাম।আর হ্যাঁ যখন তখন আমাকে কল করবে না।যাও এখন।
নুহাস বের হয়ে আসলো। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে রেখে কিছু ভাবছে এর মধ্যেই চোখ গেলো ফাহিনের দিকে। ফাহিনের হাতে কিছু প্যাকেট এদিক সেদিক তাকিয়ে ফাহিন গাড়ীতে বসলো। নুহাস ও ফাহিনকে ফলো করতে লাগলো। ফাহিন একাটা বহুতল ভবনের সামনে গাড়ী পার্ক করে রেখে সামনে এগিয়ে গেলো।
নুহাসও তাকে ফলো করে চলে আসলো। কিন্তু……
#চলবে