#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব২১
রাতের প্রায় মধ্য ভাগ। এতোক্ষণে এলিজা আর এরিকা হয়তো ফিরে এসেছেে।সব জায়গায় খোঁজ করছে শাফিনের। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিচে নেমে এসেছে শাফিন। হেঁটে কিছুটা দূর চলে আসলো। কোন যানবাহন চোখে পরছে না। এই রাতে যানবাহন পাওয়ার কথাও না। আরো কিছুটা দূরে আসতেই একটা বার দেখতে পেলো। সাত, পাঁচ না ভেবে বারে ঢুকে পরলো। বাকি রাতটা এখানেই কাটিয়ে দেবে।
এলিজা বাসায় এসে শাফিনকে না দেখতে পেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে পুরো বাড়ির মাথায় তুলে নেয়। এরিকা বলে তুমি একজন মানুষের জন্য এতো হাইপার কেন হচ্ছ? সে কি তোমার ভালোবাসার মানুষ ছিলো?
এলিজা এরিকার মুখ চেপে ধরে বলে, সব কিছু তোর জন্য হয়েছে। আমার কাছে ভালোবাসার কোন মূল্য নেই। ও ছিলো টাকার মেশিন। এখন আমি কি জবাব দেবো। আর তোকে আমি ছেড়ে দেবো ভাবছিস। কিছুতেই না। একজন কোমায় থাকা মানুষ কি করে পালিয়ে যায়?তার কৈফিয়ত তোকে দিতে হবে এরিকা।
– এটা তো সাধারণ একটা বিষয় তুমি হয়তো জানোনা কোমায় থাকা মানুষ যে কোন সময় ঠিক হয়ে যেতে পারে।
– ওহহ রিয়েলি। তাহলে তোকে যে বলে ছিলাম ভুল মেডিসিন দিতে। তারপরেও ঠিক হয় কি করে?
– তুমি চেক করে দেখো প্রতিদিন আমি ভুল মেডিসিন দিয়েছি তাকে। শুধু আজ রাতের মেডিসিন দেয়া হয়নি। আর তুমি তো জানো আমার টাকা কতো প্রয়োজন?
– তাহলে তুই খুঁজে বের করে দে ওই শাফিনকে। টাকা যা লাগবে তোকে আমি দেবো।
– আমি কোথায় পাবো?
– আমি জানি তুই জানিস ওই শাফিন কোথায় আছে।
– সত্যি বলছি জানিনা। তুমি আমাকে বাসায় যেতে দাও মম বাসায় একা আছে।
– তোর কোথাও যাওয়া হবে না। আজ রাতে তুই আমার সাথেই থাকবি।বলেই এরিকাকে রুমের মধ্যে বন্দী করে রেখে চলে গেলো।
সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে সেদিকে খুঁজে চলেছে শাফিনকে।
______________________________________________
পাওয়ার হাউসের শুনশান নীরবতা ভেদ করে ঈশানের কানে ভেসে আসছে কিছু অস্পষ্ট কথা।
একজন গম্ভীর কন্ঠে বলছে, তাহলে ওই কথাই রইলো,আপনারা চলান ঢুকতে সাহায্য করবেন। আর আমরা আপনাদের খুশি থাকতে সাহায্য করবো। আর হ্যাঁ এটা কিন্তু বড় একটা চলান। এক সাথে তিন ট্রাক।আপনারা হ্যান্ডেল করতে পারবেন তো?
আয়রা মুচকি হেসে বলে, সেটা আমাদের উপর ছেড়েদিন আপনি শুধু ঠিকঠাক মতো টাকাটা আমাদের হাতে তুলে দিন।
লোকটি আয়রার দিকে একটা ব্রিফকেস এগিয়ে দিয়ে বলে,পুরো চার কোটি আছে। কাজটা ঠিকঠাক করতে পারলে আরো চার কোটি পাবেন। টাকা হাতে নিয়ে লোকটাকে বিদায় দিয়ে সামনে ফিরতেই কেউ আয়রার মুখ রুমাল দিয়ে চেপে ধরলো দু’মিনিটে আয়রা অ*চে*ত*ন হয়ে পরলো। ঈশান আয়রাকে কোলে তুলে এনে গাড়িতে রেখে মনের সুখে ড্রাইভিং করছে। আয়রার মাথাটা নিজের কাঁধে এমন ভাবে রাখলো দেখে মনে হবে হ্যাসবেন্ড ওয়াইফ। গাড়ীতে স্লো মোশনে রোমান্টিক গান ছেড়ে রিলাক্সে ড্রাইভ করছে।
কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে আয়রাকে একটা রুমের মধ্যে রেখে হাত দুটো তালাবদ্ধ করে রেখে অন্য রেমে এসে একটা সি*গা*রে*ট ধ*রা*লো। নি*কো*টি*নে*র ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কল করলো লিরা কে। রিসিভ করে লিরা আতংকিত কন্ঠে বলে, স্যার মিহি ম্যামের বিপদ। আপনি আমি কেউ নেই এখন কে বাঁচাবে মিহি ম্যামকে?
ঈশান কল কেটে বলে ওহহ সিট। আমি আবার ভুল করলাম। সাথে সাথে হোটেলে থাকা ঈশানের সহচরীকে কল করে, ওপাস থেকে রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে। বেশ কিছু সময় পর রিসিভ হলো। রিসিভ হতেই ঈশান একজনের অট্টহাসির শব্দ শুনতে পেলো। ঈশান বুঝতে পারলো লোকটা শত্রু পক্ষের তাই কাঠকাঠ গলায় বললো,নিজের লাভের জন্য কোন মেয়েকে ডাল বানায় কাপুরুষেরা।
– বিচ্ছিরি ভাবে হেসে অপর পাশ থেকে লোকটা বলে,মিস্টার ঈশান মুখার্জি। রিলাক্স আমি তেমন কিছু করবো না। শুধু সামনের বারান্দায় থাকা মেয়েটাকে আমার বা হাতে থাকা ব*ন্দু*ক থেকে একটা সু*ট করবো।কাপুরষ হই আর সুপুরুষ হই শত্রুর দূর্বলতার খোঁজ ঠিক রাখি। সো মিস্টার লুজার মুখার্জি সকালে আপনার প্রিয়তামর লা*শ*টা বুঝে নিবেন।
ঈশান হা হা করে হেসে উঠলো।
ঈশানের হাসি শুনে লোকটি বললো, মাথা ঠিক আছে তো মিস্টার মুখার্জি? নিজের স্ত্রীর মৃ*ত্যু*র কথা শুনে কেউ এভাবে হাসে?
– তো আপনার কি মনে মিস্টার ঈশান মুখার্জি বিবাহিত। যাকে মা*রা*র প্লানিং করছেন না সে আমার ওয়াইফ, আর না গার্লফ্রেন্ড। সো তাকে মা*র*লো আমার কি?
– তার মানে কি?রিসিপশনে তো হ্যাসবেন্ড ওয়াইফ লেখা।আমি নিজের চোখে দেখেছি।
– চোখের দেখা সব কি সত্য হয়। বাই দ্যা ওয়ে আপনার নামটা জানতে পারি?
– হাসেম নাওয়াজ।
– ঈশান হেসে বলে, আরেহহহ এম,কের চামচিকা নাকি।?
ইশান কথার তালে হাসেম কে আটকে রাখার চেষ্টা করছে। ঈশানের কাজ শেষ হতেই ঈশান বলে,তোরা যদি চলিস পাতায়, পাতায়, তবে আমি চলি পাতার শিরায় শিরায়। বলেই খট করে কল কেটে দিলো।
হাসেম নাওয়াজ সামনে তাকিয়ে দেখে বারান্দায় কেউ নেই। রাগে হাতের মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দিলো।
কেটে গেলো একটা বিবৎস রাত। ভোরের মিষ্টি রোদ চোখে পরতেই পিটপিট করে চোখ খুললো মিহি। তার পাশেই ঘুমিয়ে আছে শেহরোজ। শেহরোজের কপালে ছোট একটা পাপ্পি দিয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। জানালার পর্দা সরিয়ে বাহিরে দৃষ্টি রাখলো। সূর্যের আলো তখন মাত্র তার আলো বিলাতে শুরু করেছে। মিহি সেই নব আলোর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে, কবে সব অন্ধকার দূর হয়ে আমার জীবনে আসবে এক নব আলো? কবে সব দূরত্ব ঘুছিয়ে আমার প্রিয় মানুষটার সাথে বাঁধবো আমার ঘর?ভাবনার মাঝেই কানে আসলো শেহরোজের কান্নার শব্দ। মিহি দ্রুত শেহরোজকে কোলে তুলে বলে, ওলে আমার বাবাতাহ কাঁদে না।
______________________________________________
জানালার সাদা পর্দা ভেদ করে রোদের ঝলক চোখে পরতেই চোখ মেলে তাকায় আয়রা। আয়রা এপাশ থেকে ওপাশ করবে তখনি দেখতে পায় হাত বাঁধা। সাথে সাথে রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে আতঙ্কিত হয়ে যায়। একটু ভাবতেই রাতের কথা মনে পরে যায়।কাউকে ডাকবে তার আগেই ঈশান একটা আপেলে কামড় দিতে দিতে একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে বলে,গুড মর্নিং মিসেস মাহমুদ।
আয়রা রেগে বলে, কে আপনি?
– আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী। আপেল খাবেন ভিষণ মিষ্টি আপেল। একদম আপনার মতো। এক চোখ টিপে বলে।
– আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি! ছেড়ে দিন আমাকে নয়তো এর পরিণাম ভালো হবে না।
– ইশশশ কি ডায়লগ দিলেন, কোথায় বলবোন ছেড়ে দে শয়তান তুই আমার দেহ পাবি মন পাবিনা।
– আমাকে এখানে আটকে রাখার কারণ?
– কুল মিসেস মাহমুদ। এতো হাইপার কেন হচ্ছেন। আমি আপনার দেহ মন কোনটাও চাইছিনা। কারন দুটোই ডাস্টবিনের মতো ঝকঝকে। আমাকে শুধু বলুন শাফিনের বাসা থেকে যে কাগজ পত্রগুলো গায়েব করেছেন সেগুলো কোথায়?
– তো আপনার কি মনে হয় আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করবেন আর আমি হরহর করে সব বলে দেবো!
– না তা কেনো বলবেন। আপনাকে তো জামাই আদর থুরি বউ আদর করতে হবে তারপর বলবেন।
কেয়ার টেকার বলে ডাকতেই একজন চলে আসলো। ঈশান বললো, এক কাজ করো ম্যাডামকে বউ আদর করো। কিছু সুদর্শন তেলাপোকা এনে বিছানায় ছেড়ে দাও। কেয়ার টেকার বলল জ্বি স্যার দিচ্ছি।
ঈশান আয়রার দিকে তাকিয়ে বলে, এবার শান্তিতে সুদর্শন তেলাপোকার সাথে বাসর সেরে ফেলুন। টাটা।
– এসবের মানে কি? আমি এসব ভয় পাইনা। আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমি কে?
– নো, নো আমি ভালো করে জানি আপনি কে?বলেই বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।
#চলবে