#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -২৯
ব্রেকিং নিউজে ছেয়ে গেছে মিডিয়া। ডিসি অফিসার রমিজ রাজকে হ*ত্যা করতে চায় দূর্বৃত্তরা। ঈশান বুঝতে পারছে এটা শাফিনের কাজ। কিন্তু শাফিনকে খুঁজে বের করবে কি করে? হঠাৎ ঈশানের চোখের সামনে মিহির চেহারা ভেসে উঠলো।ঈশান যা বোঝার বুঝে গেছে। সোজা চলে আসলো বাসায়। মিহির রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ এতো রাতে মিহিকে ডাকতে ইতস্তত বোধ করছে। বেশ কিছু সময় দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে থেকে। চলে যাবে ভাবতেই কিছু পড়ার দ্রিম করে একটা শব্দ হলো। মনে হলো কেউ যেনো লাফিয়ে পরেছে। সাথে সাথে ঈশান দরজার কড়া নাড়লো। কয়েকবার আওয়াজ করতেই মিহি দরজা খুলে দিয়ে বলে,মিস্টার মুখার্জি আপনি এতো রাতে? কোন সমস্যা?
ঈশান শেহরোজকে কোলে তুলে নিয়ে বলে, আমাদের এক্ষুনি এখান থেকে পালাতে হবে।
– আমরা সরকারি কোয়ার্টারে আছি। এরচেয়ে নিরাপদ স্থান আর কোথায়?
– আপনাকে অত শত ভাবতে হবে না। যা বলছি সেটা করুণ একদম হাতে সময় নেই।
মিহি বললো,আমি এখান থেকে এক পা’ও নড়বো না। ঈশান শেহরোজকে কোলে নিয়ে বলে,আপনার ম*রা*র শখ আপনি থেকে যান আমি আর শেহরোজ চলে যাচ্ছি।
– আমার ছেলেকে দিয়ে যান।
– আমি চাই ও বেঁচে থাকুক আপনার ভুলের জন্য আমি এই ছোট্ট প্রাণকে হারাতে দেবো না।
– আর কোন উপায় না পেয়ে মিহিও বেড় হয়ে আসলো।
ঈশান ড্রাইভ করছে। তার পাশের সিটে মিহি শেহরোজকে নিয়ে মন মরা হয়ে বসে আছে।
ঈশান বললো,”মিসেস মাহমুদ” আপনি কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছেন?
– আমার জীবনে লুকানোর মতো কি আছে?
– মিস্টার মাহমুদ।
ঈশানের কথা শুনে মিহি ঘাবড়ে গেলো। কোনমতে নিজে সামলে বলে,মানে?
– মানে বর্তমানে আপনার কাছে লুকিয়ে রাখার মতো জিনিস একমাত্র মিস্টার মাহমুদ ছাড়া আর কিছু নেই।
– বাজে কথা বন্ধ করুণ। শাফিনকে আমার লুকিয়ে রাখতে হবে কেন? ও আসলে তো ভালোই এই খেলা থেকে মুক্তি পাবো।
– এই যে বললেন খেলা। এই খেলাটাই তো লুকোচুরি। তবে আমার থেকে কিছু লুকালে সেটা আপনি ভুল করবেন। বরং আমাকে বলুন আমি আপনাকে সাহায্য করবো।
– এসব কথার কোন মানেই হয় না। আপনি তখন থেকে উল্টো পাল্টা কথা বলেই যাচ্ছেন।
– বলার কারণ অবশ্য আপনি।দেখুন আপনাকে আসাতে বলার পর থেকে আসা পর্যন্ত আপনার চেহারায় আমাবস্যার চাঁদ নেমেছে। সেটা তো এমনি এমনি না নিশ্চয়ই?
– ওইখানে থাকলে আমি আমদের বাসায় যেতে পারতাম।আর স্বাভাবিক ভাবেই শাফিন একবার হলেও আমাদের বাসায় আসবে।এমন হতে পারে ওর সাথে আমার দেখা হয়ে গেলো।
– আবার এমনও হতে পারে দেখা হয়ে গেছে।
মিহি এবার রেগে বলে,আপনি সরাসরি বললেই তো হয়। আমাকে আপনি সন্দেহ করছেন। এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলার তো কিছু নেই। আর শাফিনের সাথে দেখা হলে অবশ্যই আপনার সাথে ওর দেখা করাতাম।
– সরি। আসলে আজকে আপনার উপর হা*ম*লা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। রমিজ রাজ জেনে গেছে আপনার পরিচয়। তাই আপনাকে আমি এখন আপনার বাবার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। আপনি সেখানেই থাকবেন কিছুদিন।
এরমধ্যেই মিহির ফোনটা বেজে উঠলো। ঈশান একবার আড় চোখে মিহির দিকে তাকালো। মিহি কল কেটে দিলো।
ঈশান বললো, আপনার মোবাইল নাম্বার তো আমার আর লিরার ছাড়া কারো কাছে নেই। তবে কে কল করলো?
-সিম কোম্পানি থেকে কল এসেছিলো। এখন এটা নিয়েও আপনার সন্দেহ করত হবে?
– আমি যাস্ট জিজ্ঞেস করেছি।আর হ্যাঁ আপনি জানলে অবাক হবেন, আপনার শ্বশুর মশাই এখনো জীবিত আছেন! আর তারচেয়ে… বলে থেমে গেলো
– তাহলে উনি এতো বছর ধরে কোথায় আছেন?
– সেটাই তো কথা।
______________________________________________
নুহাস আর রমিজ রাজ ভিষন চিন্তায় আছে। রমিজ রাজ নুহাসের কলার ধরে বলে,সব হয়েছে তোর জন্য। কে বলেছিলো ওই বিপদ কে বাঁচিয়ে রাখতে। এবার ও আমাদের কাউকে ছাড়বে নান।আর এম,কে আমাদের ছাড়বে না।
রমিজ রাজের ফোনটা বেজে উঠলো, রিসিভ করে কানে তুলতেই গম্ভীর কন্ঠে কেউ বললো,আজকে বেনাপোল সীমান্তের চালান আটক করেছে বিজিবি।তোমরা কি ঘাসে মুখ দিয়ে চলো। আজ রাত চারটার মধ্যে গাজীপুর হ্যাভেন রিসোর্টে দেখতে চাই। বলেই খট করে কল কেটে দিলো।
নুহাস বললো, নিশ্চয়ই এম,কের কল ছিলো।
– হুম। অদ্ভুত এক লোক। এর চেহারা আজ পর্যন্ত দেখতে পারলাম না।
– তারমানে সে এখন বাংলাদেশে?
– সে তো গত কয়েক মাস যাবত বাংলাদেশে।
– তাকে কিছুতেই শাফিনের কথা বলা যাবে না।
দু’জনেই বেড় হয়ে গেলো। কিন্তু দরজার সামনে আসতেই মনে পরলো, রমিজ রাজ এখন কড়া পাহাড়ায় আছে। এখন বেড় হলে মিডিয়া জেকে ধরবে।
নুহাস বললো এখন তো বেড় হতেই হবে অলরেডি রাতের বারোটা পার হয়ে গেছে।
– কিছু একটা করো। আমার মাথায় কিছু আসছে না।
– স্যার আপনি নরমাল পোশাক আর চাদর দিয়ে নিজেকে আড়াল করে আমার সাথে বেড় হয়ে আসুন। আমরা বেড় হতেই সার্ভেন্টকে বলে সব লাইট অফ করিয়ে দিবেন।
প্লান মতো বেড় হয়ে আসলো। কিন্তু নুহাস ভাবছে অন্য কথা। যেই হিরে গুলো নুহাস শাফিনের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে সে সম্পর্কে কেউ জানেনা। কিন্তু সেগুলো পাচার করবে কি করে? নাকি এখন বলে দেবে রমিজ রাজকে।
নুহাসকে গভীর ভাবনায় বিভোর দেখে। রমিজ রাজ জিজ্ঞেস করলো, এতো কি ভাবছো?
নুহাস বলেই ফেললো,স্যার আপনার সাথে একটা ডিল করতে চাই।
– কিসের ডিল আর কেমন ডিল?
– আমার কাছে কিছু হিরে আছে। সেগুলো পাচার করতে পারলে কয়েক কোটি টাকা পাবো।আপনি সাথে থাকলে ফিফটি ফিফটি ভাগ পাবেন।
লোভী মানুষ রমিজ রাজ। টাকার কথা শুনেই চোখ চকচক করে উঠলো।খুশি হয়ে বলে শুভ কাজে আবার কিসের দেরি। কালকেই কথা বলবো চোরা কারবারিদের সাথে।
নুহাস খুশি হয়ে বলে ধন্যবাদ স্যার।স্যার শাফিনের থেকে আমরা আরো কিছু রিপোর্ট সংগ্রহ করেছিলাম যেখানে এসবের সাথে যুক্ত কিছু মানুষের নাম আর তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ আছে। সেগুলো কি করবো?
– এখনো রেখে দিয়েছো কেন? সব জ্বা*লি*য়ে দাও।
– ঠিক আছে কাল ফিরেই সেসব জ্বা*লি*য়ে দেবো।
এম,কে, একটা ইজি চেয়ারে বসে,অট্র হাসি দিয়ে বলে, বোকা শাফিন অচথা নিজের জীবন শেষ করলো। কে বলেছিলো এম,কের কেস নিতে। না নিতো কেস আর না ম*র*তে হতো। কচি বয়েসে প্রাণ হারালো। এক,কে,কে খুঁজে পাওয়া এতো সহজ নাকি। এতো সহজ হলে সে কি দুই বাংলার মানুষের নাগের ডকা দিয়ে এসব করে বেড়াতে পারে।
______________________________________________
শাফিন মিহির দেয়া ঠিকানায় পৌঁছে মিহিকে কল করলো। কিন্তু মিহি কল কেটে দিলো। শাফিন দ্বিতীয় বার আর কল করলো না। নিজে লুকিয়ে সেখানে প্রবেশ করার চেষ্টা করতে লাগলো ঠিক সেই মূহুর্তে মিহির রুমে দাউদাউ করে আ*গু*ন জ্ব*লে উঠলো। শাফিন সেখানে বসে পরলো। তার পা জেনো আটকে গেছে। সবাই চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলো। পানি দিতে লাগলো। আশ্চর্যের বিষয় হলো আগুন শুধু ওই রুমটাতেই জ্ব*ল*ছে। সবাই ঘুম ভাঙ্গতে ভাঙতে সব প্রায় পুড়ে গেছেে।শাফিন মুখ ডেকে মানুষের পিছু পিছু আসলো। কেউ নেই। আর ঘরের সব জিনিস পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সাথে সাথে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, মিডিয়া সব এসে হাজির। শাফিন সরে আসলো। কিছুটা পথ হাটতেই তার পায়ের নিচে কিছু অনুভব করলো। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে আবার সামনে অগ্রসর হলো। এবারও কিছু বাজলো।
শাফিন নিচু হয়ে পায়ের নিচ থেকে সেটা উঠিয়ে হাতে নিয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। শাফিনের মুখ তখন খোলা। ল্যামপোস্টের আলোতে চেহারা বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট। সেদিকে কোন খেয়াল নেই।
ঠিক শাফিনের সামনে দাঁড়িয়ে কেউ একজন বলল,এএসপি শাফিন মাহমুদ?
#চলবে
ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰