#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-২
নাইট ক্লাবে পার্টি করছে শাফিন। সে যেনো আজ বন্দি জীবন থেকে মুক্ত হলো। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে কাটিয়ে রাতে পার্টি করছে। উদয় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শাফিনের দিকে, কে বলবে যেই মেয়ের জন্য এক সময় পাগল ছিলো আজ সেই মেয়ে চলে যাওয়াতে এতো আনন্দ করছে। উদয় উঠে এসে শাফিনকে বলে, শাফিন আর খাস না। বেশি খেলে সামলাতে পারবিনা নিজেকে। শাফিন মাতাল কন্ঠে অস্ফুটস্বরে বললো, আজ থেকে নো লিমিট বলেই আরো কয়েক পেক গিলে বলে,ওকে গাইস তোমরা ইন্জয় করো।বলেই টলতে টলতে সমানে এগোতে লাগলো।
সকালে বের হয়ে মিহি চলে এসেছে বর্ষার বাসায়।মিহির একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড বর্ষা।
বর্ষা মিহিকে বললো, তোর মাথা ঠিক আছে?
-আমার মাথা ঠিকি আছে বর্ষা।
– আমার তো মনে হচ্ছে না। তুই আঙ্কেল আন্টিকে জানাবি না। তুই আর শাফিন আলাদা হয়েছিস?
– না জানাবো না। জানিস বর্ষা আমারা মেয়েরা সব ছাড়লেও নিজের স্বামীকে ছাড়তে পারিনা। এই যে দেখ আমার এখনো মনে হচ্ছে শাফিন আগামীকাল সকালে এসে বলবে, মিহি চলো বাসায় চলো তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না।তোমাকে আমার চাই।
বর্ষা কিছু বলবে তার আগেই বর্ষার হ্যাসবেন্ড মুজাহিদ বলে,তোমাকে এক বালতি সমবেদনা। তুমি যা ভাবছো তা হবার নয়।তুমি যে আসায় আছো তাতে সেগুরে বালি।
বর্ষা রাগ দেখিয়ে বলে, কি সব আজে বাজে কথা বলে যাচ্ছ কখন থেকে। তুমি হয়তো জানোনা।ভার্সিটিতে সেরা জুটি ছিলো শাফিন, মিহি।
মিহি বলল,বর্ষা তুই চুপ থাক। দুলাভাই এমন কথা বলার কারণ?
– আজকে সারাদিন সে ঘুরে ফিরে বেড়িয়েছে। রাতে পার্টি করেছে। বলেই মিহির সামনে একটা ভিডিও অন করলো। যেখানে দেখা যাচ্ছে শাফিন কত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। মাতলামো করছে। মুজাহিদ বললো, দেখো মিহি ও তোমাকে ফিরিয়ে নেবে সে আশা বাদ দাও।
মিহি কিছু না বলে রুমে চলে গেলো। দরজা বন্ধ করে দিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে বসলো। বসে বসে কিছু চিন্তাভাবনা করে নিলো। কি ভাবে নয়ে ছয়ে সতেরো হয়।
বর্ষা এসে দরজায় নক করে বলছে, মিহি দরজা খোল একদম উল্টো পাল্টা কিছু করবি না।
মিহি দরজা খুলে বের হলো, রিলাক্স জানু আমি কেঁদে কেটে শোক পালন করবো ঘরে বসে সেই কোয়ালিটির মেয়ে না। তিন বছর আমার পিছু বাঁদর নাচ নাচিয়েছি। দুই বছর বউ হিসেবে ওর সব বদ অভ্যাস দূর করার চেষ্টা করেছি। এবার হবে অন্য খেলা। এবার বুঝবে “কত চালে কত ভাত?
-মানে?
-মানে তুই বুঝবি না। এবার দেখ মিহি কি করে ঝয়ে নয়ে সতেরো করে।
– কি বলছিস আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা
– তোর বুঝতে হবে না তুই শুধু দেখে যা। বলেই চোখ মারলো বর্ষাকে।
______________________________________________
উদয় শাফিন কে ধরে নিয়ে এসেছে বাসায়। শাফিন বলছে ওই তুই আমাকে কেন নিয়ে আসলি!আজকে সারারাত ফুর্তি করবো। উদয় কে ধরে বলে, তুই একদম ঠিক করেছিস বিয়ে না করে। বিয়ে মানেই প্যারা। আজকে থেকে তুইও সিঙ্গেল আমিও সিঙ্গেল দু’জন মিলে বিন্দাস জীবন কাটাবো। বলতে বলতে ঘুমিয়ে পরলো সোফাতেই।
উদয় অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেয়ালো টাঙানো শাফিন, মিহির একটা কাপল পিকের দিকে। কে বলবে সেই দিনের পার্ফেক্ট প্রেমিক যুগল আজ বিচ্ছেদে প্রশান্তি পাচ্ছে। নিজের ফোন বের করে কল করলো মিহিকে দুইবার রিং হয়ে কেটে গেলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তিনটে বাজে। তাই আর কল করলো না মিহিকে। বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে, তোমাকে আমি ভালোবেসেছিলাম মিহি। তবে একতরফা ভালোবাসা কখন পূর্নতা পাবে না। সেটা আমি জানতাম। কিন্তু কখন তোমাকে অসুখি দেখতে চাইনি। আজ এই পরিস্থিতির জন্য কোন না কোন ভাবে তুমি নিজেও দায়ী বিয়ের আগেই যার অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পারোনি। কি করে ভাবলে বিয়ের পর সেই মানুষটা পাল্টে যাবে?
রাতের সব আধার ভেদ করে উদয় হলো এক নতুন আলোর। সে যেনো জানান দিচ্ছে এক আগমনী বার্তা। সেই বার্তায় ডেকে ডেকে সবাইকে বলতে চাইছে, আধারের শেষেই রয়েছে আলোর ফুয়ারা।যেখান থেকে শেষ তার বিপরীতেই রয়েছে নতুন সম্ভাবনা।
সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মিহি বেড়িয়ে পরলো একটা ইন্টারভিউ দিতে। সকাল দশ-টায় ইন্টারভিউ। কিন্তু সাইনবোর্ড থেকে উত্তরা যেতে সময় লাগবে তাই আগেই বেড় হচ্ছে।
বর্ষা বললো, তুই না খেয়ে কেন বের হচ্ছিস?
– তুই ভাবিস না। আমি রাস্তায় কিছু খেয়ে নেবো বলেই বেরিয়ে গেলো।
রাস্তায় বের হয়ে গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো
অফিস টাইমে গাড়ি পাওয়া টাফ। বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা গাড়ী পেলেও সেটায় বিন্দু পরিমান ফাঁকা নেই। হাত ঘড়িটার দিকে বার কয়েক চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে পাঠাও এ্যাপ থেকে একটা বাইক রাইড নেওয়ার কথা চিন্তা করছে। এমন সময় একটা লোক বললো, আপু আপনি কোথায় যাবেন?
– আমি কোথায় যাবো সেটা আপনাকে কেন বলবো।
এরমধ্যেই বাইক চলে আসলো। মিহি চলে গেলো। উদয় নিজের চেহারা থেকে মাস্ক সরিয়ে মিহির যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
______________________________________________
দশটায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে আসলো।কিচেনর কাজের ক-ও পারেনা শাফিন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছু চিন্তা ভাবনা করে ইউটিউবে প্রথমে রুটি বানানোর রেসিপি দেখলো। রুটি বানানোর চেষ্টা করছে তবে আটায় এতো পরিমান পানি দিয়েছে যে সব হাতে লেগে লেগে যাচ্ছে অনেক চেষ্টা করেও রুটি বানাতে সক্ষম হলো না। এবার চিন্তা করলো অমলেট বানাবে। ইউটিউব দেখে দেখে সেটাই চেষ্টা করছে। পেয়াজের একদিকে ধরতে সেটা হাত থেকে ছুটে যাচ্ছে। এবার পেয়াজ ছাড়া অমলেট বানাবে ঠিক করলো। চুলায় ফ্রাইপ্যান বসিয়ে গ্যাস অন করে ডিম দিয়ে দিলো। তবে বেচারা তেল দিতেই ভুলেগেছে। এবার ডিম পুড়ে গেলো। রাগে দুঃখে গ্যাস অফ করে দিয়ে মিহিকে কল দিলো। কিন্তু কোন লাভ হলো না রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে কেউ রিসিভ করছে না। শেষে বাসা থেকে বেড় হয়ে রেস্টুরেন্টে নাস্তা করে নিল। যদিও বাহিরের খাবার হজম হয়না শাফিনের। আজ আর কোন উপায় না পেয়ে খেয়ে নিল পরোটা, ভাজি
নাস্তা শেষে বাসায় চলে আসলো, বাসায় ফিরতেই দেখে কাজের বুয়া দাঁড়িয়ে আছে গেটের কাছে। কাজের বুয়া রহিমা শাফিন কে দেখেই বলে,সাহেব আমার পাওনা টাকা দিয়া দেন।
– মাস তো শেষ হয়নি।মাস শেষ হলে দিয়ে দেবো।
– না সাহেব এহন দিয়া দেন।ভাবি না আইলে আমি আর কাম করতাম না।
– বিরক্ত হয়ে শাফিন ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে দিয়ে কিছু বলবে তার আগেই চোখ আটকে গেলো ওয়ালেটে থাকা মিহির হাসোজ্জল ছবির দিকে। ছবির দিকে তাকিয়ে বলে হাসা হচ্ছে খুব তাইনা তুমি কি ভেবেছো। তোমাকে ছাড়া আমি অচল।আমিও দেখিয়ে দেবো। তোমাকে ছাড়াই আমার চলে।
রহিমা বেগম বললেন, সাহেব আপনি কার সাথে কথা কন?
– তুমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো টাকা তো দিলাম আর কি?
রহিমা চলে যাওয়ার আগে বললো,পাগল হইছে।
শাফিন বললো,এই তুমি কি বললে আবার বলো!
রহিমা বেগম দ্রুত চলে গেলেন।
শাফিন রুমে চলে আসলো। পুরো ঘর অগোছালো একদিনেই অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে। বেডের উপর তোয়ালে,প্যান্ট,টিশার্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা।একবার বেডের দিকে তাকাতেই মনে পরলো, মিহির কথা।
ফ্লাশব্যাক….
শাফিন এটা কি?
তুমি দেখতে পারছো না এটা তোয়ালে।
– আমি দেখতে পারছি এটা ভেজা তোয়ালে। আর ভেজা তোয়ালে বারান্দায় মেলে দিতে হয়। এভাবে বেডের উপর না।
– আমি পারবো না।
– পারবে না মানে কি এক্ষুনি এটা বারান্দায় মেলে দিয়ে আসো।
– না এটা এখানেই থাকবে।
মিহি তোয়ালেটা তুলে শাফিনের হাতে তুলে দিয়ে বলে,এটা মেলে দিয়ে আসো।
দুজনেই মিলে টানাটানি করতে করতে তোয়ালে দু’ভাগ হয়ে গেলো।
সে কথা মনে পরতেই শাফিন মাথা ঝাড়া দিয়ে বলে, উঁফ বড় বাঁচা বেঁচে গেছি।বলেই তোয়ালেটা বিছানায় ভালো ভাবে রেখে বলে আজকে থেকে কেউ টানাটানি করবে না। তুই আর আমি দু’জনেই মুক্ত। এসব ভাবনার মাঝেই স্বশব্দে মোবাইল বেজে উঠলো। মোবাইল রিসিভ করে কানে তুলতেই চিৎকার দিয়ে বলে না এটা হতে পারে না।
#চলবে
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক/পাঠিকা সবাই কেমন আছেন? গল্পের নামে ছোট একটা মিস্টেক হয়েছে।তবে সেটা আর ঠিক করা যাবেনা। তাই এতটুকু এডজাস্ট করে নেবেন। আর অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য জানাবেন।
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰