ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১

0
3650

ডিভোর্স ছাড়া কি অন্য কোন রাস্তা নেই!মিহির কথা শুনে ঝাঁঝাল কন্ঠে শাফিন বললো,ডিভোর্সি একমাত্র পথ তোমার থেকে মুক্ত হওয়ার।

– আমি যদি ভিন্ন পথ দেখাই!

– আর কোন ভিন্ন পথ আমি দেখতে পাচ্ছি না।

শাফিন তুমি আমার সাথে তিন বছর রিলেশন করার পর বিয়ে করেছো! এখন বিয়ের দু’বছরেই আমাকে তোমার সহ্য হচ্ছে না।

– কি বলতে চাও সেটা বলো এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলবে না।

– আমি চাই আমারা ডিভোর্স না নিয়ে আলাদা থাকি। ধরো আগের মতো। তুমি তোমার মতো লাইফ লিড করলে।আমি আমার মতো। মনে করো এটা দ্বিতীয় সুযোগ। একবছর এভাবে থাকার পরও যদি তোমার মনে হয় না। আমাকে তোমার আর প্রয়োজন নেই তাহলে ডিভোর্স। দেখো চার বছরের রিলেশনে আমরা কিন্তু অনেক বার মিউচুয়াল ব্রেকআপ করেছি। তাই সেরকম মনে কর।এটাও আমাদের মিউচুয়াল ব্রেকআপ।

– শাফিন কিছু সময় চিন্তা করে বলে, ওকে ডান। তবে এই এক বছরে আমাকে কোন রকম ডিস্টার্ব করবে না।

– আগামীকাল সকালেই আমি চলে যাবো শাফিন।

– কোথায় যাবে? এশহরে তুমি কতটুকু পরিচিত।

– সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমারটা আমি বুঝে নেবো।

– বুঝে নেবো বললেই তো হবে না। আমার ও-তো একটা দ্বায়িত্ব আছে?

– সে দ্বায়িত্ব থেকে কিছু সময় পূর্বেই মুক্ত হয়েছো।

– ওকে এজ ইউর উইশ। তবে তুমি চাইলে এই ফ্লাট শেয়ার করে আমরা থাকতে পারি!

– ধন্যবাদ মিস্টার শাফিন মাহমুদ। তবে আপনার এতো কষ্ট করে আমাকে সহ্য করতে হবে না। আমার ব্যবস্থা আমি ঠিক করে নিতে পারবো।

মিহি নিজের জন্য খাবার নিয়ে টেবিলে বসে খাওয়া শুরু করলো।

শাফিন একবার আড় চোখে মিহির দিকে তাকিয়ে, নিজে কিচেনে গেলো খাবার আনতে। কিন্তু কোন খাবার পেলো না। কিচেন থেকে বের হয়ে বলে, আমার খাবার কই?

– আমি কি করে বলবো।আমি কি আপনার ঘরের বউ নাকি? আপনার জন্য খাবার রেডি করবো।

– তুমি না করলে কে করবে?

– সেটা আমি কি জানি

– জানো না মানে?

– ও হ্যালো মিস্টার আওয়াজ নিচে,আমি আপনার বউ না যে আপনার ঝারি শুনবো। নিজের খাবারের ব্যবস্থা নিজে করুন।

– ছিহহহহ মিহি দু’দিন আগেও তুমি না খেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করেছ। আমি বাহির থেকে খেয়ে এসেছি তাই না খেয়ে শুয়ে পরেছো। আর একদিনে এতো পরিবর্তন।

– আপনি ভুলে যাচ্ছেন মিস্টার।যার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। সে ছিলো আমার হ্যাসবেন্ড।যদিও সেটাও আমার বোকামি ছিলো। আর আপনি আমার কে?

– আমি তোমার কে মানে?

মানে হলো একটু আগে থেকে আপনি আমার এক্স। সো ডিয়ার এক্স নিজের খাবারের ব্যবস্থা নিজে করুন। আমি ঘুমাই আজ একটা শান্তির ঘুম হবে। পাশে কারো নাক ডাকার শব্দ থাকবে না। গুড নাইট ডিয়ার এক্স।

শাফিন বোকার মতো তাকিয়ে রইলো মিহির চলে যাওয়ার দিকে। চেয়ারে বসে গালে হাত দিয়ে। দু’দিন আগের কথা ভাবতে লাগলো,

ফ্লাশব্যক…..

বন্ধুদের সাথে পার্টি করে রাত একটার দিকে বাসায় ফিরেছে শাফিন। মিহি খাবার টেবিলে বসে থেকে শাফিনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে সেখানেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে। কলিং বেলের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় মিহির দ্রুত উঠে এসে দরজার খুলে দিলে। শাফিন মিহিকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। মিহি ভাবছে হয়তো ফ্রেশ হয়ে আসবে। তবে শাফিন আর আসলো না। মিহি রুমে এসে দেখে শাফিন ঘুমিয়ে পরেছে। মিহি শাফিনকে ঠিক করে দিয়ে শাফিনের গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে সোফায় বসে কাঁদতে লাগলো। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই এটা রোজকার অভ্যাশ শাফিনের। মিহি এতো চেষ্টা করছে মানিয়ে নিতে তবে বারবার সে ব্যর্থ।কাঁদতে কাঁদতে সোফায় শুয়ে ঘুমিয়ে পরে মিহি। সকালে শাফিনের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে।

অলস ভঙ্গিতে বলে, যাও এক কাপ কফি করে আনো।

মিহি আর চুপ থাকতে পারলো না। ধৈর্য ধরতে ধরতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।শাফিন এভাবে চলতে থাকলে আমি তোমার সংসার করবো না।

– ওকে তুমি চলে যাও আমি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিচ্ছি

-এতো সহজে বলে ফেললে কথাগুলো অথচ একদিন তুমি আমার পিছু পিছু ভালোবাসি ভালোবাসি বলে ঘুর ঘুর করতে।

– সে সময় চলে গেছে। এখন আর ঘুরঘুর করিনা।এতো কথা কেন বলছো সেটাই বুঝতে পারছি না। ডিভোর্স চাইছো ডিভোর্স দেবো।

– সব কিছু এতো সহজ শাফিন!আপনার মন চাইলো আমার সাথে চার বছর প্রেম করলেন, দুই বছর সংসার করলেন। এখন ডিভোর্স দিয়ে দেবেন? ভুলে যাবেন না। আমার ফ্যামেলির বিরুদ্ধে যেয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি।

– তুমি ভুলে যেও না নিজের বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে এসে তোমাকে বিয়ে করেছি।

– উদ্ধার করেছেন।

– তোমার সমস্যা কোথায় মিহি?

– আপনি জানেন না সমস্যা কোথায়?

– না জানিনা তুমি জানিয়ে দাও।

– প্রতিরাতে নেশা করে ক্লাব থেকে দুটো’ তিনটে বাজে বাসায় ফেরেন। সারাদিন পরে পরে ঘুমান।ঘুম থেকে উঠেই নিকোটিনের ধোয়া ছাড়েন। আর মেয়ে ফ্রেন্ডদের কথা না হয় বাদ দিলাম।

– তাতে তোমার কি?তোমাকে তো কোন কিছুর অভাব দেইনি।

– ভালোবাসার অভাব সবচেয়ে বড় অভাব সেসব বোঝার মতো জ্ঞান আপনার নেই।

– ও এখন আমি খারাপ চরিত্রহীন?

– সেটা নিজেকেই প্রশ্ন করুন।

শাফিন রাগের মাথায় মিহির গায়ে হাত তুললো।

মিহি দূরে সরে এসে বললো, কাপুরুষ শুধু এসবি করতে পারে। একটা নেশাখোরের কাছ থেকে এর বেশি আশা করাও যায় না।

শাফিন উঠে এসে মিহির গলা চেপে ধরে বলে আর একটা কথা বললে এর পরিণাম ভালো হবে না।

মিহি চুপচাপ অন্য রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

দীর্ঘ সময় পর দরজা খুলে বেড় হতেই শাফিন বলে, রোজ রোজ ঝামেলা করার যেয়ে আমরা ডিভোর্স করে নিলেই তো হয়?

ডিভোর্সের কথা শুনে মিহির কলিজা ধক করে উঠলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, বিচ্ছেদ কি সব সমস্যার সমাধান?

– হয়তো আমাদের জন্য এটাই বেটার অপশন

-যদি আমি অন্য অপশন খুঁজে দেই।

– আমি আর কোন অপশন চাইছি না।

– তুমি কি নতুন করে প্রেমে পরেছো?

– একবার ভুল করেছে দ্বিতীয় বার একি ভুল করবো না।

– তারমানে সিঙ্গেল থাকতে চাও?

– হু নিজের মতো বাঁচতে চাই

মিহি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে শাফিনের দিকে একটা মানুষ এতো তাড়াতাড়ি পরিবর্তন কি করে হতে পারে? প্রেমিক হিসেবে যে মানুষটা ছিলো সবচেয়ে বেটার আজ হ্যাসবেন্ড হিসেবে সে জিরো। কত অদ্ভুত ভাবে সব সমীকরণ পাল্টে যায়।

– এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? শাফিনের কথায় ঘোর কাটে মিহির। অস্ফুটে স্বরে বলে, বদলে যাওয়া মানুষ।

– মানে?

– মানে বুঝতে হবে না।

– বুঝতেও চাইনা। বললেই বাসা থেকে বের হতে হতে বলে গেলো আমি ফিরে এসে সমাধান চাই?

শাফিনের ফিরতে ফিরতে রাত হলো। শাফিন আসতেই মিহি নিজের ডিসিশন জানিয়ে দিলো।

শাফিন প্রথমে অমত করলেও পরে মেনে নিলো।

সকালে ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো মিহি তখন শাফিন গভীর ঘুমে।

এগারোটার দিকে ঘুম ভাঙতেই মিহি মিহি করে চিৎকার করতে লাগলো। কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করে কোন সারা শব্দ না পেয়ে উঠে এসে খুঁজেতে লাগলো। খুঁজতে খুঁজতে চোখ গেলো খাবার টেবিলে গ্লাসের নিচে একটা কাগজের দিকে। কাগজের টুকরোটা হাতে নিতেই চেখে পরলো গোটাগোটা অক্ষরে লেখা হ্যাপি ব্যাচলার লাইফ। লেখাটা পড়তেই গত রাতের কথা মনে পরলো। মিহি আর ফিরবেনা মনে পরতেই জোড়ে লুঙ্গি ড্যান্স গান ছেড়ে নাচতে লাগলো।

ফোন নিয়ে উদয়কে কল করলো ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই শাফিন আনন্দিত কন্ঠে বললো, আপদ বিদেয় হয়েছে মামা। আজকে রাতে পার্টির ব্যবস্থা কর সব খরচ আমার।

উদয় আশ্চর্য হয়ে বলে, কি বলছিস বুঝিয়ে বল।

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা

সূচনা পর্ব

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here