#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩০ (২য় খণ্ড)
[অন্তিম পর্বের শেষাংশ]
বাড়িতে এসেই ফিওনা আর রিওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল রাগিনী। রিও আর ফিওনা আগের চেয়ে অনেক বড়ো হয়েছে। শরীরের গঠনের পরিবর্তন হয়েছে। শরীর চওড়া হয়েছে। গায়ের লোমগুলো তুলনামূলকভাবে বড়ো হয়েছে। রাগিনীকে ঘরে ঢুকতে দেখেই ছুটে এলো রিও দৌড়ে। রাগিনীর পায়ের সাথে গা ঘেঁষে আহ্লাদী আচরণ করতে লাগল সে। রাগিনী হেসে দিয়ে নিচু হয়ে বসে রিওকে কোলে নিতেই রিও জিহ্বা বের করে রাগিনীর গালে ঠেকিয়ে লেহন করে দিলো। রিও আর ফিওনার তুলো দিয়ে তৈরি ছোট্ট ঘরের দিকে তাকাল রাগিনী। ফিওনার চাঞ্চল্য কমে গিয়েছে বেশ ক’দিন ধরেই। সে জানে এই চটপটে স্বভাব কমার কারণ। রিওকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে তুলোর ঘরটাতে বসিয়ে দিয়ে ফিওনার মাথাতেই হাত বুলিয়ে দিলো সে। হাসি মুখে বলল,
“আমি জানি তুমিও মা হতে যাচ্ছো। তোমার জন্যও সময়টা অনেক কঠিন ডিয়ার ফিওনা। কিন্তু তোমার যত্নের কোনো কমতি হবেনা।”
ফিওনা রাগিনীর পানে তুষ্টি নিয়ে তাকাল। তারপর কয়েকবার ডেকে উঠল। দরজা খোলার আওয়াজে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই রিও তৎক্ষনাৎ নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে যেন তেড়েফুঁড়ে গেল দরজার দিকে। তার এমন হা/মলে পড়া দেখেই রাগিনী বুঝে ফেলল কোহিনূর এসেছে। উঠে দাঁড়াল রাগিনী। কোহিনূর ততক্ষণে ঘর থেকে বেরিয়ে দরজা ভিড়িয়ে দিয়েছে রিও-এর খামচে দেওয়ার ভয়ে। রাগিনী নরম সুরে রিও-কে ডেকে বলল,
“রিও! কাম হেয়ার!”
রিও পেছন ঘুরে ছুটে এলো রাগিনীর কাছে আর রাগিনী তাকে নিজের কাছে তুলে নিতেই কোহিনূর আবারও ঘরে এসে রিও আর ফিওনার খাবার নিতে রাখতে রাখতে বলল,
“এতগুলো দিন পেরিয়ে এলো এই বদ বিড়াল এখনো আমাকে সহ্য করতে পারে না। সো মি. রিও আপনার কোন পাকা ধানে আমি মই দিয়েছি?”
বলেই রিও-এর গাল টেনে দিতেই রিও আরো ক্ষেপে উঠল। রাগিনী রিওকে সামলে বলল,
“গিভ হিম রেসপেক্ট। সেও কিন্তু বাবা হতে যাচ্ছে।”
কোহিনূর প্রফুল্লচিত্তে বলল,
“ওহ রিয়েলি! মি. রিও তুমিও বাবা হতে যাচ্ছো, আমিও বাবা হতে যাচ্ছি। অন্তত এই সূত্রে হলেও চলুন ফ্রেন্ডশীপ করে ফেলি!”
কোহিনূর রিও এর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে রিও নিজের সামনের এক পা বাড়িয়ে দিয়ে কোহিনূরের হাত ঠেলে দিয়ে বুঝিয়ে দেয় সে কোহিনূরের সঙ্গে কোনোমতেই বন্ধুত্ব করতে চায় না। রিও আর কোহিনূরের এমন কাণ্ড দেখে শব্দ করে হাসল রাগিনী।
চা শেষ করে হাতে ফোনটা নিয়ে নিজের রুমে ঢুকল অভিরূপ। ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে নিজের লাগেজ খুলে টিশার্ট খুঁজতে লেগে পড়ল। এটা ওটা ঘাঁটতেই আঁড়চোখে তাকাল দেয়ালের দিকে। চোখ বড়ো বড়ো করে প্রশ্ন করল,
“কী দেখছ এভাবে?”
সে জানে নিজের করা প্রশ্নের উত্তর সে পাবে না। তবুও মুখ থেকে হাসি সরে গেল না তার। বরং ঠোঁটজোড়া আরো খানিকটা প্রশস্ত করে গ্রীন কালার একটা টিশার্ট বের করে দেয়ালের দিকে দেখিয়ে বলল,
“এটা কেমন লাগবে আমাকে? মানাবে?”
পুরো ঘর নিস্তব্ধ। নেই অভিরূপ ছাড়া অন্য কারোর অস্তিত্ব। তবুও অভি প্রশ্ন করা বন্ধ করছে না। উত্তর পাচ্ছে না তবে নিজের মতো উত্তর সাজিয়ে নিচ্ছে।
“ভালো লাগছে না তাই না? ওকে দেন ডার্ক ব্লু কেমন লাগছে?”
কিছুক্ষণ থেমে অভিরূপ আগ্রহ নিয়ে বলল,
“ভালো লাগছে? ওকে তাহলে এটাই ফাইনাল।”
মুখ থেকে কথা শেষ হওয়ার পরপরই মুখ থেকে হাসি বিলীন হলো অভিরূপের। উজ্জ্বল মুখটাতে দেখা দিলো বিষণ্নতার আঁধার। স্তব্ধ হলো সে। টিশার্টটা আস্তে করে হাত থেকে ফ্লোরে পড়ল তার। ধীর এবং এলোমেলো পায়ে দেওয়ালের কাছে গিয়ে সেখানে লাগিয়ে রাখা বড়ো ফ্রেমের ছবিটাতে থাকা রমনীর গালে হাত ছুঁইয়ে দিতেই মস্তিষ্কে পরিপূর্ণ হলো যন্ত্রণা। প্রিয় মানুষটিকে হারানোর এক তীব্র ব্যথা। ধপ করে নিচে বসে পড়ল সে। ছবিটা রূপার আর অভিরূপের। ছবিতে তারা দুজন রিকশায় বসে। রূপা রাস্তার পানে তাকিয়ে আর অভিরূপ রূপার পানে। ছবিটার মধ্যে রূপাকে ইডিট করে বসানো হয়েছে। এই ছবিটা নিজের কাছে সবসময় রেখে দেয় অভিরূপ। অনুভব করে রূপাকে। একলা সময় ছবিতে থাকা নারীটির সঙ্গে কথোপকথন চলে তার। এভাবে হয় দিন আর রাত! রূপার ছবিটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার সময় যখন ফোনের শব্দ সেই কাজে ব্যাঘাত ঘটালো তখন বিরক্তি নিয়ে তাকাল অভিরূপ। হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে মায়ের নম্বর দেখে রিসিভ করল সে। গলা খাঁকারি দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল।
“হ্যালো, অভি!”
“হ্যাঁ মা। বলো।”
“কেমন আছো? খাওয়াদাওয়া ওখানে ঠিক করে করছ তো?”
চিন্তিত সুরে জিজ্ঞাসা করলেন মিসেস. সুরভী। সঙ্গে সঙ্গেই অভিরূপ আশ্বাস দিয়ে বলল,
“ফিকার না কারে, মাম্মা। আমি ঠিক আছি আর অনেক অনেক খাচ্ছি। যখন যা ভালো লাগছে তাই অর্ডার করছি বাট আইসক্রিম বাদে।”
“ওটা তো তোমার খাওয়া চলবেও না। গলা ঠিক রাখতে হবে তো।”
অভিরূপ কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করে বলল,
“গলা ঠিক রাখার চক্করে আমার ফেবারিট আইসক্রিম খেতে পারছি না। অনেক হয়েছে এত নিয়ম মানা যাচ্ছে না। তুমি আমার ফেবারিট ভ্যানিলা আইসক্রিম বানিয়ে রাখবে আমি বাড়ি গিয়ে সারাদিন আইসক্রিম খাব। ডিল ডান?”
মিসেস. সুরভী শব্দ করে হেসে বললেন,
“ওকে ডান।”
মিসেস. সুরভী আর কিছু বললেন না। হালকা কাশলেন। উসখুস করতে থাকলেন। অভিরূপ আন্দাজ করতে পারল তার মায়ের না বলা কথাগুলো। আগ্রহ নিয়ে বলে উঠল,
“আরো কিছু বলবে মা?”
মিসেস. সুরভী এবার বড়ো শ্বাস নিয়ে সাহস করে বলেই ফেললেন,
“আসলে, তোমার বাবার বন্ধু আছে না আব্রাহাম আংকেল বলে ডাকো? উনার মেয়ে তোমাকে পছন্দ করে। তাই তোমার আংকেল নিজে প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল।”
“আশা করছি তুমি আর বাবা তাদের মানা করে দিয়েছ!”
অভিরূপের কণ্ঠসুর মুহূর্তেই পাল্টে গেল। গম্ভীর এবং ভরাট কণ্ঠসুরে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন মিসেস. সুরভী। তবুও তিনি বললেন,
“কী করে মানা করি এত সহজে, অভি? তুমি বোঝার চেষ্টা করো। মেয়েপক্ষ নিজে প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। আর লিমা মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী, পড়াশোনা জানে আর মডেলিং করে অনেক পরিচিতি তার।”
অভিরূপের চোয়াল শক্ত হলো।
“এটা কোথায় লিখা আছে যে মেয়েপক্ষ প্রস্তাব দিলে বারণ করতে নেই? আই হোপ, আমার সাথে কথা বলা শেষ করার পরই তুমি তাদের জানিয়ে দেবে বিয়েতে আমার ইন্টারেস্ট নেই।”
“তুমি কি আজীবন বিয়ে না করে থাকবে ওই মেয়েটার জন্য? তুমি একমাত্র ছেলে অভিরূপ। আমার সাধ তোমার বিয়ে নিয়ে। কত স্বপ্ন আমার! তোমার জন্য আমি নিজের স্বপ্ন পূরণ না করেই ম/রে যাব।”
মিসেস. সুরভী এবার আবেগঘন কথাবার্তা বলতে শুরু করলেন। তাকে থামাতে অভিরূপ নরম হলো কিছুটা।
“কে বলেছে আমি বিয়ে করব না? আমি অবশ্যই বিয়ে করব। যেদিন আমার মনের কোনো স্থান রূপাঞ্জনা নামক মেয়েটার দখলে থাকবে না। যেদিন অন্য কোনো মেয়ের প্রতি আমি মুগ্ধ হবো সেদিন সেই মুহূর্তে আমি ওই মেয়েটাকে বিয়ে করব।”
মায়ের উত্তরের প্রতীক্ষা করল না অভিরূপ কেটে দিলো কল। গলা দিয়ে কোনো শব্দ আর বের হতে চাইছে না। চোখ দুটো জ্বলতে শুরু করে দিয়েছে। উপরদিকে ছবিতে রূপার মুখের পানে তাকিয়ে বলল,
“কিন্তু আমি জানি, অন্য কোনো মেয়ের প্রতি আমি আর মুগ্ধ হতে পারব না। আর না রূপাঞ্জনা নামটা আমার হৃদয় থেকে মুছবে।”
রূপার হাসি মুখটা কল্পনা করল অভিরূপ। রেগে বলল,
তুমি হাসছ? আমি শুধু তোমার জন্য ভালো আছি। তুমি প্রতিদিন আমার স্বপ্নে এসে আমায় ভালো থাকতে বলো। বলে দিয়েছ, আমি ভালো থাকলে তবেই তুমি ভালো থাকবে। আমি ভালো আছি অনেক ভালো আছি।”
একটু থামল অভিরূপ। ফের নিজে নিজের প্রলাপ বকে বলল,
“সবাই জানে, অভিরূপ চৌধুরী নিজের জীবনে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু অভিরূপ নিজে জানে সে এখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে যেখানে সে তার প্রেয়সীর প্রাণহীন দেহটা দেখেছিল। অভিরূপ চৌধুরী! যাকে অনেক মেয়ে চায় কিন্তু সে এমন একটা মেয়েকে চেয়েছে যে কিনা তাকে এমনভাবে প্রত্যাখান করে দিয়েছে, তাকে জোর করে পাওয়ার রাস্তাও সে রাখেনি।”
নিচু হয়ে হাঁটুতে হাত রেখে নিচের মুখ লুকিয়ে নিলো অভিরূপ। কাটল বেশ কিছুক্ষণ। কিয়ৎক্ষণের মাঝেই তার মুখের প্রতিক্রিয়া পাল্টে হাসতে দেখা গেল। উঠে গিয়ে নিজের গিটার বের করে রূপার ছবির সামনে চেয়ার নিয়ে বসে নিজের মতো সুর তুলতে তুলতে নিজেও চিকন সুরে গেয়ে উঠল,
“যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে
কেটেছিলো নৌকার পালে চোখ রেখে,
যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে
কেটেছিলো নৌকার পালে চোখ রেখে,
আমার চোখে ঠোঁটে গালে তুমি লেগে আছো,
আমার চোখে ঠোঁটে গালে তুমি লেগে আছো।”
শাওয়ার সেরে এসে বসতেই টাওয়াল হাতে নিয়ে রাগিনীর চুল সযত্নে মুছে দিতে শুরু করল কোহিনূর। রাগিনী মাথা আরো এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘কাল নয়ন ফিরছে?”
“হ্যাঁ সকালের ফ্লাইটে। আমি এয়ারপোর্টে যাব। ওকে নিয়ে আসব।”
রাগিনী মুহূর্তেই বায়না ধরে বলল,
“আমিও যাব!”
“এখান থেকে অনেকটাই দূরে এয়ারপোর্টে। তোমার যাওয়ার দরকার নেই।”
রাগিনীর রাগ হলো এবার। তেতে উঠে বলল,
“আপনি না নিয়ে গেলে একাই চলে যাব। সবসময় আমাকে বাচ্চাদের মতো ট্রিট করছেন।”
কোহিনূর অকপটে জবাব দিল,
“কারণ আমাদের বেবি তোমাকেও বাচ্চা বানিয়ে দিয়েছে।”
“তা বেবি পেটে থাকলে মাও বেবি হয়ে যায় এটা বুঝি এই বই থেকে জানলেন?”
চাদরের নিচ থেকে বইটা বের করে কোহিনূরকে দেখিয়ে দিলো রাগিনী। কোহিনূর থতমত খেয়ে রাগিনীর চুল মুছে দেওয়া বন্ধ করে দিলে রাগিনী খিলখিল করে হাসল। কোহিনূর আমতা আমতা করে প্রশ্ন করল,
“এটা কোথায় পেলে?”
“আপনি যেখানে রেখেছিলেন সেখান থেকে। এসব বই পড়তে পড়তে আপনি আমার জন্য অভার থিংক করতে শুরু করেছেন।”
কোহিনূর ‘কেয়ার ওফ মাদার অ্যান্ড বেবি ডিউরিং প্রেগন্যান্সি’ নামক বইটা ছোঁ মে/রে নিয়ে নিলো রাগিনীর থেকে। আর বলল,
“এসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবেনা। যাও চিরুনি নিয়ে চুল ঠিক করে নাও।”
ভেংচি কেটে বেড থেকে উঠে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়ায় রাগিনী। হাতে চিরুনি নিয়ে শুধায়,
“নয়ন আসছে তবে রায়ান ভাই কি তার জন্য কোনো প্ল্যান করেছে?”
“উমম… ইয়াপ! ইটস স্পেশাল!”
রাগিনী আরো কিছু বলতে গেলে তার ফোনটা বেজে উঠল। কপালে ভাঁজ পড়ল তার। তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নিয়ে গলা শুকিয়ে এলো তার। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন কানে ধরে গম্ভীর গলায় বলল,
“হ্যালো!”
ওপাশ থেকে কিছু কথা শুনে ভেতর থেকে যেন সর্বস্বান্ত হয়ে গেল রাগিনী। হৃদয় থেকে র;ক্ত ক্ষরণ হতে লাগল একটু একটু করে। পায়ের জমিন যেন নরম হয়ে গেল। নড়বড়ে হয়ে পড়তে নিলে দেয়াল ধরে নিজেকে সামলে নিলো সে। কোহিনূর ছুটে এসে রাগিনীর বাহু ধরতেই কল কেটে দিলো রাগিনী। নিজের স্ত্রীকে মুহূর্তের মাঝেই মূর্তির ন্যায় হতে দেখে অস্থির হয়ে কোহিনূর জিজ্ঞেস করল,
“কী হয়েছে রাগিনী? এমন করছ কেন? কী হয়েছে বলো আমায়!”
রাগিনী তবুও অনেকটা সময় ধরে চুপ করে রেখে থেমে থেমে কয়েকটা অক্ষর মাত্র উচ্চারণ করল,
“আমি এতিম হয়ে গিয়েছি আজ।”
আর একটাও কথা উচ্চারণ করল না রাগিনী। নিজেকে কোহিনূরের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করার উদ্দেশ্যে দরজার কাছে গুয়ে দাঁড়াল। পেছনে না তাকিয়ে আবার বলল,
“আমি তৈরি হয়ে নিচ্ছি। আপনি গাড়ি বের করুন। লা/শ নিতে যেতে হবে।”
কোহিনূর ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। সে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কী করে হলো এমনটা বুঝতে পারছে না। রাগিনীর পিছু পিছু যেতে চেয়েও যেন গায়ে শক্তি হচ্ছেনা। নিজের উপর খানিকটা জোর খাঁটিয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে।
খাটিয়াতে করে শাহ্ রাশেদের মৃ/তদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শেষ কার্য সম্পাদন করা হবে উনার। কোহিনূরও যাচ্ছে রাগিনীর বাবার খাটিয়া ধরে। বেশি মানুষ হয়নি বাড়িতে। কারণ সবাই জেনেছে মানুষটির অপরাধ সম্পর্কে। একজন অপরাধীর শেষ কার্যে কেউ আসবে না স্বাভাবিক। নিজের বাবাকে নিয়ে একবারের জন্য চলে যাওয়া একমনে উপরের করিডোর থেকে দেখছে রাগিনী। চোখে না রয়েছে কোনো অশ্রু, না রয়েছে কোনো প্রলাপ আর না করছে কোনো অভিযোগ। সে সম্পূর্ণ নীরব। এ যেন পাথরের হৃদয়! শাহ্ রাশেদ হার্ট অ্যাটাক করেছেন জেলেই এবং সঙ্গে সঙ্গেই মৃ;ত্যু ঘটেছে এমনটাই জানতে পেরেছে রাগিনী। আর পুলিশ তাকে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়েছে। সেটা এখনো খোলার সময় পায়নি সে। চিরকুটের কথা মনে আসতেই হাতে ধরে রাখা চিরকুটের ভাঁজ খুলতেই নিজের বাবার চিরচেনা প্যাঁচানো হাতের লেখায় চোখজোড়া বিদ্ধ হয় রাগিনীর।
“আমি কখনো ভাবিনি আমার রাজকন্যার সুন্দর চোখজোড়া একদিন আমায় ঘৃ/ণায় বিদ্ধ করে ফেলবে। তোমার চোখে আমি সীমাহীন ঘৃ/ণা দেখেছি যেদিন সেদিনই আমার বাঁচার ইচ্ছে ম/রে গিয়েছিল। আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম আমি কত বড়ো ভুল করেছিলাম রূপার সাথে। কিন্তু উপলব্ধি করেও কোনো লাভ ছিল না। আমি অপেক্ষা করছি মৃ/ত্যুর। এই জ্বালা সহ্য হচ্ছেনা আমার। যেই ছোট্ট মুখে তুমি আমায় ছোটোবেলা থেকে ‘আই লাভ ইউ, বাবা ‘ বলতে ঠিক সেই মুখ থেকে ‘ আই হেইট ইউ’ শোনাটা আমার কাছে খুবই যন্ত্রণার ছিল। আমি আর কিছুই চাইনা। শুধু চাই আমার ছোট্ট মেয়েটা ভালো থাকুক। এটা ভেবে আমি খুবই খুশি যে কোহিনূরের মতো একটা ছেলের হাতে তোমায় তুলে দিতে পেরেছি। শুধু শেষ ইচ্ছে ছিল তোমার ওই মুখে যদি ‘আই লাভ ইউ, বাবা’ শুনতে পেতাম তাহলে আমার আর চাওয়ার কিছুই থাকত না। ভালো থেকো মাই প্রিন্সেস। আই লাভ ইউ মাই চাইল্ড!”
রাগিনী চোখ বুঁজে নিলো। ঢল গিলে নিজের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা সব ক/ষ্টগুলো গিলে নিতে চাইল। শ্বাস ঘন হতে শুরু করল তার। চোখ খুলল সে। সামনে দেখতে পেল শামীমাকে। মলিন পানে শামীমার দিকে চাইতেই শমামীমা তার গালে হাত রেখে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললেন,
“কষ্ট হচ্ছে?”
রাগিনী মাথা নাড়াল। তার কষ্ট হচ্ছে না। পরক্ষণেই শামীমা রাগিনীকে নিজের বুকের সঙ্গে চেপে ধরে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। রাগিনী বিড়বিড়িয়ে বলল,
“কেন কষ্ট হবে? উনাকে বাবা বলে আমি মানিই না। উনাকে আমি একজন অপরাধী হিসেবেই চিনি। আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না।”
শামীমা বুঝতে পারলেন মেয়েটা নিজের কষ্ট প্রকাশ করতে চাইছে না। কথা বাড়ালেন না তিনি। আগলে রাখলেন নিজের মেয়ের মতো আরেক মেয়েকে।
রাত হলো। ধরনী জুড়ে অন্ধকার নামল। চারিদিকে পিনপতন নীরবতা। ঘরে একা একা টেবিলের কাছের চেয়ারে বসে আছে রাগিনী। বেশ অন্যমনস্ক সে। হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল কোহিনূর। প্রথমে বেডে চোখ বুলিয়ে রাগিনীকে দেখতে না পেয়ে টেবিলের দিকে তাকালে অগোছালো মানবীকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সে। কোহিনূর তার নিকটে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বিষণ্ণ সুরে বলল,
“মন খারাপ? বাবার জন্য খারাপ লাগছে?”
রাগিনীর র;ক্তিম বর্ণের লোচন দুটো দুহাতে কচলে গমগমে আওয়াজে বলল,
“আমি কি বলেছি আমার মন খারাপ?”
রাগিনীর পাল্টা উদ্ভট প্রশ্নে কোহিনূর পাশে থাকা একটা চেয়ার টেনে নিয়ে রাগিনীর সামনা-সামনি বসল। নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে বলল,
“তুমি বললে তারপর আমাকে বুঝতে হবে?”
“সেটা কখন বলেছি?”
“বাবা মা/রা গিয়েছে তোমার। অথচ তোমার চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পড়তেও দেখিনি। কেন এভাবে নিজের কষ্ট লুকিয়ে যাচ্ছো? কী বোঝাতে চাইছ এভাবে তুমি? তোমার বাবা একজন অপ/রাধী সেকারণে তোমার তার মৃ/ত্যুতে কষ্ট হচ্ছেনা এটা বোঝাচ্ছ?”
রাগিনী প্রতুত্তরে কিছুই বলল না। নির্বাক ও নির্জীব হয়ে রইল সে। কোহিনূর বুঝল সে এ বিষয়ে কিছুই বলতে চাইছে না তাই প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে বলল,
“রাত হয়েছে অনেক। খেয়ে ঘুমাবে চলো। খাবার এনেছি আমি।”
বিছানায় রাখা খাবারের ট্রে হাতে নেওয়ার সময় কোহিনূর দেখল সে পানি আনতে ভুলে গিয়েছে। বিলম্ব না করে সে উঠে বাহিরের দিকে হাঁটা ধরে বলল,
“একটু ওয়েট করো। আমি পানি নিয়ে আসছি।”
কোহিনূর যাওয়ার সাথে সাথেই নিজের মাথা টেবিলে ঠেকিয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে পাশে থাকা ফোনটা হাতে নিলো রাগিনী। কিছু একটা মনে করে ফোনের লক খুলে ফোনের রেকর্ডিং অপশনে গেল সে। সেখানে তার কলে কথা বলা সমস্ত রেকড হওয়া থাকে অটোমেটিক। খুঁজে খুঁজে রাশেদ সাহেবের সঙ্গে বলা কলের কথোপকথন বের করল সে। রেকর্ড অন করতেই সে শুনতে পেল তার বাবার গলা। বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠল তার। সারা শরীরে কাঁপুনি ধরল। তার বাবার গলার সুর যেন নিষ্প্রাণ এবং পাথর হয়ে যাওয়া রাগিনীকে জাগিয়ে তুলল।
‘পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের খাবার-দাবারেরও খেয়াল রাখবে। বাহিরে বেশি রোদে একদম ঘোরাঘুরি করবে না। রাত জাগবে না। সাবধানে রাস্তায় চলাফেরা করবে, ডিয়ার। আই লাভ ইউ মাই প্রিন্সেস!’
রাগিনী আর দমাতে পারল না নিজের ব্যথাগুলো। নিজের জন্মদাতা পিতাকে চিরজীবনের মতো হারানোর যাতনা সইতে না পেরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো সে। আটকা আটকা গলায় বলল,
“আই লাভ ইউ, বাবা।”
রাগিনী কল্পনা করে নিলো তার বাবা এই মুহূর্তে থাকলে নিশ্চিত তাকে থামিয়ে বলতেন, ‘তুমি এখনো বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি করো রাগিনী। বড়ো হয়েছ। একজন সাইকোলজিস্ট হয়েছ। সামনে মা হতে যাচ্ছো। এখনো আমার মেয়েটাই বাচ্চা রয়ে গেল।’
এসব মনে করে কান্নার বেগ বেড়ে গেল তার। সেই কান্নার আওয়াজ কোহিনূরের কর্ণগোচর হতেই দূরন্ত বেগে রাগিনীর কাছে ছুটে এলো কোহিনূর। চিন্তিত হয়ে জানতে চাইল,
“কী হয়েছে রাগিনী?”
রাগিনী মুখে কিছু বলল না। তবে কোহিনূর শুনতে পেল তার ফোনে বাজতে থাকা রাশেদ সাহেবের বলা কথার রেকর্ড। সেটা শুনেই কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে রাগিনীকে আর কোনো প্রশ্ন না করে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরল সে। রাগিনী কিছু বলল না। নির্বিঘ্নে অশ্রুপাতের মাধ্যমে করতে থাকল নিজের কষ্টের নিবারণ। কোহিনূর নীরবে মাথা নুইয়ে রাগিনীর চুলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বিলি কেটে দিতে ব্যস্ত রইল। মাঝে মাঝে কান্না করা ভালো। কান্না কষ্টকে হালকা করে। বুকের ভার কমে যায়। কোহিনূর রাগিনীকে আটকাবে না।
কেটে গেল আরো এক সপ্তাহ। প্রথম তিনদিন বেশ ভেঙে পড়লেও নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখায় রাগিনী এখন বেশ স্বাভাবিক হয়েছে। তাছাড়া কোহিনূরের হরহামেশাই রাগিনীকে হাসানোর চেষ্টায় এখন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে রাগিনী। আজকে নয়নতাঁরার দেশে ফেরার কথা। রেজাল্টের জন্য আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করেছে নয়ন লন্ডনে। তাই দেশে ফেরার ডেটও পিছিয়ে গিয়েছে কিছুটা। কোহিনূর সকাল সকাল অফিসে এলেও নিজের বোনকে নিতে যেতে হবে তাই দ্রুতই নিজের কাজ সেরে নিতে থাকল সে। একসময় নিজের কাছের ল্যাপটপ বন্ধ করতে করতে সে ব্যস্ত মনে ডেকে উঠল,
“মেহরাজ! গাড়ি বের করো। আমি বের হবো।”
মেহরাজের কোনো সাড়া পেল না কোহিনূর। কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলে অন্যকেউ একজন কোহিনূরের কেবিনের দরজা খুলে ধীর গলায় বলল,
“স্যার গাড়ি বের করব? আজ আপনি আবারও আমার নামের বদলে মেহরাজের নাম নিয়ে ফেলেছেন।”
থতমত খেয়ে তাকাল কোহিনূর। নিজেকে কোনোমতে সামলে জবাবে বলল,
“হ্যাঁ গাড়ি বের করো, মাহাদ। আমার বোন আসবে আজ। তাকে নিতে যাব।”
মাহাদ ছেলেটা সম্মতি জানিয়ে চলে যেতেই মাথা নুইয়ে কপালে হাত রাখল কোহিনূর। টেবিলে থাকা তার আর মেহরাজের একসঙ্গে তোলা ছবির ফ্রেমের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“আড়াই বছর কেটে গিয়েছে মেহরাজ। তুমি নেই এখানে। কিন্তু আমার প্রতিটা প্রয়োজনে আগে তোমার নাম উচ্চারিত হয় আমার মুখ দিয়ে। কিন্তু তোমার সাড়া আর পাই না। তুমি হন্তদন্ত হয়ে আর আমার কাছে আসো না।”
হাফ ছেড়ে উঠে দাঁড়াল কোহিনূর। ধীর পায়ে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে।
একহাতে ট্রলি ব্যাগ এবং কাঁধে সাইড ব্যাগ। পিঠ বিস্তৃত তার চুল হাঁটার সাথে সাথে দুলছে। এপাশ ওপাশ মাথা ঘুরিয়ে ভিড়ের মাঝে নিজের চেনা মানুষগুলোকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে নয়নতাঁরা। সুদীর্ঘ দুটো আঁখি উৎসুক হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে তার ভাই, প্রিয় ভাবীজান আর প্রিয় মানবটিকে। অবশেষে পেছন থেকে লম্বাচওড়া এবং প্রশস্ত মানুষকে কালো কোট পরিহিত দেখতে পেয়েই মুখে হাসিটা দীর্ঘ হলো তার। হাতের ট্রলি ব্যাগ নিয়ে হুড়মুড়িয়ে চলে গেল সেদিকে। সময় না দিয়েই সেই লোকটির গলা ধরে ঝুলে পড়ে চিল্লিয়ে বলে উঠল,
“বিগ ব্রাদার! মে আ গেয়া!”
ফট করেই নয়নের এমন কাণ্ডে পড়ে যেতে নিলো কোহিনূর। পরক্ষণেই নিজেকে ধাতস্থ করে নয়নের হাত ধরে নিজের সামনে এনে শক্ত গলায় বলল,
“আসার সাথে সাথে শুরু করে দিয়েছ? কখনো বদলাতে পারো না তুমি?”
নয়নতাঁরা ফট করেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পাশে থাকা রাগিনীর কাছে গিয়ে নিজেকে আড়াল করে বলল,
“তুমিও তো আসার সাথে সাথে শুরু করে দিয়েছ। তুমি কখনো বদলাতে পারো না?”
“আমি কী শুরু করে দিয়েছি?”
ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইল কোহিনূর। নয়ন সাথে সাথে ভেংচি কেটে জবাবে বলল,
“ওইযে তোমার কড়া গলায় ক্যাঁচক্যাঁচ কথা।”
কোহিনূর চোখ গরম করে তাকালে রাগিনী দুজনকেই বাঁধা দিয়ে বলল,
“আসার সাথে সাথে দুজনকে এখানেই শুরু হয়ে যেতে হবে?”
নয়নতাঁরা ফের কোহিনূরকে মুখ ভেঙ্গিয়ে রাগিনীর দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে নিজের ভাবীজানকে উষ্ণ আলিঙ্গন করে বলল,
“কংগ্রাচুলেশনস, মাই ডিয়ার ভাবীজান! ছোট্ট পুচকি আসতে চলেছে বাড়িতে। আমাকেও কংগ্রাচুলেট করো। আমিও তো ফুপি হতে যাচ্ছি।”
“কংগ্রাচুলেশনস নয়ন!”
নয়নের হাত ধরে বলল রাগিনী। তাদের কথোপকথনের মাঝে ঢুকে কোহিনূর দৃঢ় গলায় বলল,
“আমাকেও তো কেউ কংগ্রাচুলেশনস বলো। আমিও তো বাবা হতে যাচ্ছি নাকি!”
কোহিনূরকে নয়ন একহাতে ঠেলে দিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বেশ ভাব নিয়ে বলল,
“সো হোয়াট? আই ডোন্ট কেয়ার!”
কোহিনূর আরো কিছু বলতে উদ্যত হলে নয়নতাঁরা আশেপাশে তাকিয়ে কাঙ্ক্ষিত আরেক ব্যক্তিকে না পেয়ে ব্যাকুল হয়ে বলে উঠল,
“আচ্ছা আর কেউ আসেনি আমায় নিতে?”
“কেন আর কারোর কি আসার কথা ছিল নাকি?”
রাগিনীর এমন কথায় বিব্রত হয়ে পড়ল নয়নতাঁরা। অসহায় দৃষ্টিপাত করল সে তার ভাবীর দিকে। অন্তত তার তো জানার কথা সে কার কথা বলছে। সেও জানে না? তবে ভাই থাকার কারণে মুখ ফুটে কিছু বলতে চাই না আর।
“না তেমন কারোর তো আসার কথা ছিল না। ওই আরকি!”
“তাহলে বাড়ি যাওয়ার যাক চলো।”
নয়নতাঁরার লাগেজ নিজের কাছে টেনে নিয়ে ব্যস্ত সুরে বলল কোহিনূর। নয়নতাঁরা এবার অপ্রসন্ন হয়ে সম্মতি জানালে এয়ারপোর্ট থেকে বাহিরে আসার জন্য হাঁটতে শুরু করল তারা। কোহিনূর হাঁটছে আগে আগে। নয়ন আর রাগিনী পিছু পিছু। হাঁটার মাঝে কোহিনূর একটু পরপরই পিছু ফিরে তাকাচ্ছে রাগিনীর দিকে। মেয়েটা ঠিক করে হাঁটছে কিনা সেটা দেখার জন্য। সেটা লক্ষ্য করে নয়নতাঁরা বলল,
“ভাবী হয় আমার। তোমার বেশি খেয়াল রাখছি। তুমি সামনে তাকিয়ে হাঁটো।”
“বউ হয় আমার। দরকার পড়লে ওকে কোলে নিয়ে হাঁটতে পারি।”
নির্লিপ্তে বলা কোহিনূরের কথায় নয়ন বিরক্তির রেশ ধরে বলল,
“আমার গায়ে শক্তি নেই বলে এভাবে বলছ?”
কোহিনূর উত্তর দিলো না আর। নয়নতাঁরা রাগিনীর কানের কাছে মাথা নিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলল,
“সত্যিই কি তিনি আমায় রিসিভ করতে আসেন নি?”
রাগিনীর হাসি পেল ভীষণ। তবে সেটা কোনোমতে চেপে রেখে গম্ভীর হওয়ার প্রচেষ্টা করে প্রতিত্তোরে বলল,
“কার কথা বলছ তুমি তখন থেকে বলো তো?”
নয়নতাঁরা আরো একবার বিষণ্ণ হলো। ফ্যাকাসে হলো উজ্জ্বল মুখ।
“না কারোর কথা না। চলো।”
দীর্ঘদিন পর সেই চেনা বাড়িতে ফিরল নয়নতাঁরা। তবে চটপটে নয়নতাঁরা হঠাৎ করেই চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। অথচ এয়ারপোর্টেও সে ছিল চটপটে। ভার মুখে গাড়ি থেকে নামল সে। একবার দেখে নিলো নিজের বাড়িটা। মনে আসছে বারবার ইন্সপেক্টর রায়ানের কথা। মিসেস. রমিলা তার সঙ্গে রায়ানের বিয়ে ঠিক করেছিল ঠিকই কিন্তু রায়ান বিয়ে সম্পর্কে কিছু বলেনি। তাদের যতবার ফোনে কথা হয়েছে ততবার রায়ান পড়াশোনা আর খাওয়াদাওয়া ব্যতীত কিছুই বলেনি। আর বিগত কয়েকদিন ধরে যেন নয়নের ফোন কলও এড়িয়ে চলছিল রায়ান। নয়নের মনে হলো রায়ান হয়ত তাকে ঠিক করে মেনে নিতে পারছে না অথবা পছন্দ করে না। এসব ভাবনা আসতেই মন বিষিয়ে গেল তার। তার ভাই আর ভাবী বাড়িতে ঢুকে পড়েছে। নিজের ভাবনার অন্ত ঘটিয়ে এলোমেলো পায়ে প্রবেশ করল সে। সদর দরজা পেরিয়ে ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে চোখমুখ জড়িয়ে গেল তার। মাথা চুলকে চিৎকার দিয়ে বলল,
“বিগ ব্রাদার! বাড়িটা এমন অন্ধকার বানিয়ে রেখেছ কেন? না জানালা খুলে রেখেছ আর না লাইট দিয়ে রেখেছ! আশ্চর্য তোমার কর্মকাণ্ড! এই অন্ধকারে চলতে গিয়ে ভাবীজান যদি পড়ে যায় কী হবে?”
কথাগুলো বলতে বলতে হাতড়ে লাইট খুঁজতে থাকল নয়নতাঁরা। কাঙ্ক্ষিত স্থানে যাওয়ার আগেই ঝলমলিয়ে উঠল আলো। চোখমুখ খিঁচে বুঁজে নিলো নয়ন। আস্তেধীরে নেত্রপল্লব মেলতেই স্তব্ধ হলো সে লোকজনের সমাগম দেখে। বাকহারা হয়ে দেখল মিসেস. রমিলার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা সেই সাথে কোহিনূর এবং রাগিনীকে। তাদের থেকে কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে উর্মিলা আর নোমান। আর সবার মাঝে দাঁড়িয়ে নয়নের কাঙ্ক্ষিত মানুষটি। এত প্রতীক্ষার পর নিজের মনের মানুষের দেখা পেয়ে যেন অশ্রু ধরে রাখতে পারল না সে। রায়ান একটু একটু করে এগিয়ে এলো তার দিকে। নয়নে হৃৎস্পন্দনের গতি দ্রুত বাড়তে থাকল। সকল প্রতিক্রিয়া মিলে একাকার হয়েছে তার। রায়ান বিনীত সুরে জিজ্ঞাসা করল,
“কেমন আছো, তাঁরা?”
শুকনো ঢক গিলে নয়ন অভিমান করে উত্তর দিলো,
“জানি না।”
“তোমার খবর তুমি জানো না? তাহলে আমার খবর রাখবে কী করে?”
নয়ন তেজি গলায় জবাব দিলো,
“আপনার খবর আমি রাখতেও চাই না। আমাকে আপনি একটুকুও সহ্য করতে পারেন না তাই না? সেকারণেই এয়ারপোর্টে নিতে আসেননি।”
রায়ান এবার নয়নের মাঝে অভিনিবেশ করল। ভালো করে পরখ করল মেয়েটির মাধুর্য। তার কথায় এবং কাজে চাঞ্চল্য রায়ানকে উৎকণ্ঠিত করে তোলে। হয়ত মায়ের সিদ্ধান্ত ভুল নয়। এই মেয়েটাই তার জীবনের আলো! সেই ছোটোবেলা থেকে নয়নের প্রতি তার অধিক আগ্রহ সবাইকে তাক লাগাত। সেই আগ্রহ তখন আকর্ষণ হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন নয়নের নিজের মনের কথা ইনিয়েবিনিয়ে বলার চেষ্টা করার ভঙ্গি বেশ কাছে টানে। কখনো কখনো নিজের অজান্তে নয়নের মোহে আবিষ্ট হয়েছে সে। খুব গভীর চিন্তা করলেই বোঝা যায়।
“আমার আকাশটা খুব অন্ধকার। সেখানে চাঁদের মতো টিমটিম করে জ্বলছে আমার মা। যে খুব কষ্টে আমার আকাশটাকে সামান্য আলো দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার একটা সঙ্গী প্রয়োজন। একটা সন্ধ্যাতাঁরা ভীষণ দরকার। তুমি কি আমার আকাশের তাঁরা হবে? সকলের আগে দীপ্তিমান হবে তুমি, তাঁরা? আমার একমাত্র তাঁরা হতে কি তুমি রাজি?”
রায়ানের এহেন কথায় যেন নয়নের পায়ের জমিন কাঁপতে আরম্ভ করল। এ যেন তার দিবাস্বপ্ন! কথাগুলো বারবার কানে প্রতিধ্বনিত হওয়ায় পাগল পাগল অনুভূতি জাগল নয়নের মনে। রায়ান আবারও নিজের হাত বাড়িয়ে বলল,
“আমার মায়ের বউমা হবে তুমি প্লিজ? নিজের জন্য কিছু চাই না। আমি আবার এত স্বার্থপর না। আমি শুধু আমার মায়ের জন্য একটা ছটফটে বউমা চাই!”
লজ্জাবতী নয়নতাঁরা ফিক করে হেঁসে দিলো। শোনা গেল বাড়ি ভর্তি লোকজনের হাসি। সকলের হাসিতে মুখরিত হলো পরিবেশ। নয়নতাঁরা এবার লাজুক ভঙ্গিতে মাথা নুইয়ে নিলো। সবার সামনে রায়ান তাকে এসব বলছে! ভাবতে পারছে না সে। অতঃপর রায়ানের শীতল দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে নিজের কাঁপা হালকা ভিজে হাতটা রায়ানের হাতের উপর রাখল। খুশি, উচ্ছ্বাস যেন আকাশসম হলো তার। এই মানুষটিকে পাওয়া তার কাছে ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। রায়ান নয়নের হাতটা সুন্দর করে নিজের হাতের মাঝে আবদ্ধ করে বলল,
“আমার একটাই দাবি। আমি যদি দশ বাচ্চার বাবাও হয়ে যাই তবুও যেন আমার তাঁরার চটপটে স্বভাব না কমে। তার এই চাঞ্চল্যতা আমি নিজের পুরো জীবন ভরে দেখে যেতে চাই।”
মৃদু হাসে নয়ন। একহাতে ফিওনাকে ভালো করে ধরতেই রায়ান ফের চিন্তিত হওয়ার ভান ধরে বলে,
“তবে হ্যাঁ, বলে তো দিলাম দশ বাচ্চার বাবা হওয়ার কথা। কিন্তু বাচ্চাগুলো তোমার স্বভাব যেন না পায়! তাহলে কিন্তু আমাকে হিমশিম খেতে হবে।”
বলেই শব্দ করে হাসতে শুরু করে রায়ান। নয়নতাঁরা চোখজোড়া সরু করে তার বুকে আলতো করে ধা/ক্কা দিয়ে বলে,
“পাঁজি পুলিশ!”
এবার সকলের মনযোগ কেঁড়ে নিলো এক গিটারের সুর। সিঁড়ির উপরের আড়াল থেকে ভেসে আসা সেই সুর তোলা মালিককে সকলে উপলব্ধি করতে পারলেও নয়নতাঁরা পারল না। এবার সুন্দর গানের গলা চমকে দিলো নয়নকে। মুগ্ধ করল সকলকে।
“কঠিন! তোমাকে ছাড়া একদিন,
কাটানো এক রাত
বাড়াও দুহাত,
হয়ে যাও বাঁধা বিহীন!
বলো! কবিতা হয়ে চলো।
বাগানে দাবানল, জমানো জল
হয় যেমন ঠিকানাহীন!”
মন দিয়ে গান গাইতে গাইতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামল অভিরূপ। প্রশস্ত হেসে তাকাল নয়নের দিকে। বিস্ময় নিয়ে চেয়ে তাকিয়ে রয়েছে নয়ন। অভিরূপ এক সিঁড়ি এক সিঁড়ি করে নামতে নামতে আবার গেয়ে উঠল,
“ও চেয়েছি যতবারই, হয়েছে ছাড়াছাড়ি
মরেছি ততবারই, এসেছে এক বেদনা দিন।”
নিচে নেমে সকলের দিকে চোখ বুলিয়ে নিলো অভিরূপ। সকলকে একসঙ্গে দেখে বেশ ভালো লাগছে তার। নয়নতাঁরা ছুটে এসে আগ্রহ নিয়ে বলল,
“আপনিও এসেছেন! আমি কি স্বপ্ন দেখছি?”
“নো! তুমি বাস্তবেই আছো। যে আমাকে আর আমার গানকে এত পছন্দ করে তার বিয়ের আগে না এসে পারি?”
“থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ সো মাচ!”
অভিরূপ নয়নতাঁরা সাথে হাত মিলিয়ে তাকে ঘুরিয়ে রায়ানের দিকে ঠেলে দিয়ে বলল,
“আমি এখন গান গাইব আর সবাইকে একসাথে গানে তাল মেলাতে হবে।”
সবাই হাসিমুখে সম্মতি জানালে অভিরূপ সহ সকলে গানে তাল মেলাতে আরম্ভ করলে সুন্দর হয়ে উঠল মুহূর্তটি। মুখরিত হলো পরিবেশ। উজ্জীবিত হলো আশপাশ। মাঝে রাগিনী ফিসফিসিয়ে বলল,
“নয়নকে দারুণ মানিয়েছে কিন্তু রায়ান ভাইয়ের পাশে।”
কোহিনূর খানিকটা ভাব নিয়ে বলল,
“দেখতে হবে তো কার বোন!”
রাগিনী মুখ বাঁকিয়ে অন্যদিকে তাকাল কোহিনূরের কথায়। অভিরূপকে একবার পরখ করতেই রূপাঞ্জনা নামটি স্মরণ হলো তার। আক্ষেপ নিয়ে আওড়াল,
“ব্যস…শুধু ওই মানুষটার পাশে যদি আমার বোনটাও থাকত তাহলে…”
“আবার সেসব ভেবে মন খারাপ করছ? এটা সম্ভব নয়।”
“মন তো মানে না, কোহিনূর।”
কোহিনূরের কথা অগ্রাহ্য করে বলে দিলো রাগিনী। মাথাটা আবার ভার লাগছে তার। ভার কমাতে তার সবচেয়ে জানা নিরাপদ স্থান কোহিনূরের কাঁধে মাথা হেলিয়ে দিলো সে। তার একটাই চাওয়া! যারা চলে গিয়েছে তারা ওোরে ভালো থাকুক। আর যারা আছে তারাও ভালো থাকুক, প্রশান্তিতে কাটুক জীবন!
দিন ও রাত্রীর সন্ধিক্ষণ! অর্থাৎ গোধূলিবেলা! রাগিনী ঘরে রিও-কে নিয়ে পায়চারী করছে। ভাবছে কোহিনূরের কথা। লোকটা কিছুটা সময় আগে তড়িঘড়ি করে কোথাও বেরিয়ে গেল। বলেও গেল না কোথায় যাচ্ছে। কোহিনূর সচরাচর এমনটা করেনা। রাগিনীর প্রেগন্যান্সির কথা জানতে পেরে সবসময় সে চেষ্টা করে যাতে রাগিনীকে চিন্তায় না পড়তে হয়। কিন্তু আজকে রাগিনীকে চিন্তায় ফেলেছে। দুবার কলও করেছে কোহিনূরকে সে। কোহিনূরকে কলে পাওয়া যায়নি। রিও-কে নিয়ে যেই না রাগিনী বিছানায় বসল টুং শব্দ করে মেসেজের টোনটা কানে পৌঁছায় রাগিনীর। দেরি না করে হাতড়ে ফোনটা নিয়ে কোহিনূরের নম্বর দেখে উত্তেজনা বাড়ল তার। মেসেজ ওপেন করতেই ছুটে গেল ঘাম।
‘আমি একটা বিপদে পড়েছি রাগিনী। প্লিজ এই ঠিকানায় চলে এসো!’
ঢক গিলতেও কষ্ট হচ্ছে রাগিনীর। শ্বাসটা ঘন হলো তার। কম্পন ধরল সারা শরীরজুড়ে। শক্তি জুগিয়ে কোনোরকম উঠে বাহিরে বেরিয়ে গেল সে।
গাড়ি থেকল অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা রাস্তার একপাশে পকেটে দুহাত গুঁজে আকাশের দিকে স্মরণ করে গম্ভীর ভাবসাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির দেখা পেয়েই গেল রাগিনী। ড্রাইভারকে তখনি গাড়ি থামাতে বলল সে। গাড়ি স্থির হলেই নামতে দেরি নেই তার। ঝড়ের গতিতে গিয়ে কোহিনূরের সন্নিকটে দাঁড়িয়ে কোহিনূরের বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে আতঙ্কিত হয়ে কতগুলো প্রশ্ন করে ফেলল রাগিনী।
“কী হয়েছে আপনার? ঠিক আছেন? কীসের বিপদ হয়েছে?”
রাগিনীর কানের নিচে হাত রাখল কোহিনূর। নিজের শীতল দৃষ্টি দ্বারা শান্ত করল তাকে। শান্ত সুরে বলল,
“আমি ঠিক আছি রাগের রানি!”
“তাহলে বললেন যে বিপদ হয়েছে।”
কোহিনূর সায় দিয়ে বলল,
“হয়েছে তো। সেই দীর্ঘদিন আগেই বিপদটা ঘটে গিয়েছে। ঠিক এই জায়গায়, এই রাস্তায়, এই গোধূলি বেলায়!”
রাগিনী ফ্যালফ্যাল করে চারিপাশটাতে চোখ বুলিয়ে নিলো একবার। রাস্তাটা তার ভীষণ চেনা। এই সেই রাস্তা যেই রাস্তায় কোহিনূরের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়েছিল। প্রথম সাক্ষাৎ ছিল পাগলামিতে ভরপুর! সেসব কথা মনে হতে নিজেই হতভম্ব হয়ে গেল রাগিনী। হেসে দিয়ে বলল,
“আপনার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ ছিল তো এখানেই।”
“সেজন্যই তো ইচ্ছে হলো এখানে এসে তোমার সঙ্গে একটু স্মৃতিচারণ করতে।”
রাগিনী কোহিনূরের পেটে গুঁতো দিয়ে বলল,
“আমার সঙ্গে দেখা হয়ে আপনি বিপদে পড়েছিলেন?”
কোহিনূরের মৃদু হাসিতে ভ্রু কুঁচকে ফেলল রাগিনী। ফট করেই কোহিনূর তার চোখেমুখে ফুঁ দিয়ে বলল,
“অবশ্যই। তবে সে এক ভয়ানক সুন্দর বিপদ! যেই বিপদে আমি সারাজীবন বাঁধা পড়তে চাই।”
রাগিনী মাথা নুইয়ে ফেলল। কোহিনূর তার হাত মুঠোয় নিয়ে চুমু খেয়ে বলল,
“আমাদের বেবি যখন বড়ো হবে তখন তাকে এখানে নিয়ে এসে বলব, জানিস, বাবা! তোর মা খুব ধুরন্ধর ছিল। আমি তাকে বাঁধতে এসেছিলাম আইনের দড়িতে। সে আমায় বেঁধে দিয়েছে ভালোবাসার দড়িতে।”
রাগিনী খুশির সঙ্গে রেগেও গেল। তেজ দেখিয়ে কোহিনূরকে আলতো ধা/ক্কা দিয়ে বলল,
“আপনিও বা কেমন অফিসার শুনি? আমাকে বাঁধতে এসে নিজে বাঁধা পড়ে গেলেন?”
কোহিনূর জবাবে কোনো শব্দ উচ্চারণ না করে শুধু কপালের বাম পাশে নিজের শুষ্ক ঠোঁটদ্বয়ের স্পর্শ ঠেকিয়ে দিলো। গরম শ্বাস উপচে পড়ল রাগিনীর কাঁধে। কোহিনূর নিজমনে বলল,
“এমনই ছিল এক দিন-রাত্রীর সন্ধিক্ষণ!
যেদিন আমার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি গিয়ে পড়েছিল এক জীবন্ত কাঠগোলাপের উপর।
অতঃপর তার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই হৃদয় পড়েছিল ভয়ানক বিপাকে!
সময়ের সঙ্গে সন্ধি হলো আমার হৃদয়ের সঙ্গে তার হৃদয়ের।
সেই যে বউরানি আমার জীবনে এলে,
আজীবনের জন্য আমার হলে।
গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে!”
….সমাপ্ত….
বি.দ্র. অনেক সময় নিয়ে এই গল্পটা শেষ করলাম। অনেক অপেক্ষা করিয়েছি সকলকে। সকলের ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছি। অনেকে আমার উপর বিরক্ত হয়েছেন। তাদের অভিযোগ আমি মাথা পেতে মেনে নিলাম। এই দীর্ঘ গল্প নিয়ে পথচলায় যারা আমার পাশে ছিলেন তাদের ভালোবাসা রইল অন্তহীন! অনেকে বলেছেন অভিরূপের জন্য নতুন কাউকে আনতে। আসলে আমি প্রথম থেকে চেয়েছিলাম অভিরূপকে এক অপূর্ণ প্রেমিক হিসেবে প্রমাণ করতে। সকলের ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না সেটা একই গল্পে ফুটিয়ে তোলা মূল উদ্দেশ্য ছিল আমার। এছাড়া গল্পে সব অনুভূতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কোথাও কোথাও ভুল করে ফেলেছি। তার জন্য দুঃখিত। আর নয়নতাঁরা এবং রায়ানের কথোপকথন পরিবর্তন করেছি। কিছুটা আগের পর্বের কথোপকথন এখানে দেওয়াটা শ্রেয় লেগেছে আমার কাছে। আগের পর্বের কথোপকথনে পরিবর্তন এনেছি। কারণ পর্ব আপলোড করার পর মনে হয়েছিল তাদের কথাবার্তা অপ্রাসঙ্গিক। তাই কাজটা করতে দেরি হয়েছে। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ এবং ভালোবাসা। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]
“