গুছিয়ে রাখা আবেগ পর্ব ৬

0
631

#গুছিয়ে_রাখা_আবেগ
#পর্ব_৬
#আজরিনা_জ্যামি

আরহাম কি করবে বুঝতে পারছে না। একদিকে ওর মা চলে যাচ্ছে আরেকদিকে বোন। কিন্তু ওর কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে ওর বোন। আরুহি খুব একটা আঘাত পায়। মাথা একটু কেটে রক্ত পড়ছে আর হাতে এক জায়গায় কেটে গিয়েছে। আরহাম আরুহিকে কোলে তুলে নিল ততক্ষনে আবরার আর আফরিন ও এসে গেছে। আরহাম তাড়াতাড়ি করে বোনকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দিল। আফরিন ও সাথে সাথে যাচ্ছে। তবে আবরার কারো ডাক শুনে থেমে গেল। আর ওদিকে এগিয়ে গেলো। কারন এখন তো এই মানুষটার এখানে থাকার কথা না।

এদিকে আরহাম আরুহিকে ডাকছে,

“এই আরুহি বোন আমার চোখ খুলে দ্যাখ তোর ভাইয়া তোকে ডাকছে । কিছু হবে না তোর তোর ভাই কিছু হতে দেবে না। আমরা হাসপাতালে পৌছে গেছি। ”

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা হাসপাতালে পৌছে গেল। আরুহিকে ডাক্তার দেখছে আরহাম কাঁদছে বোনকে হারানোর ভয়ে। তবে এ কান্নার শব্দ নেই। একটু আগেই কিসব বলছিল সেসব ভেবেই ওর বুকটা ভার হয়ে আসছে। আরহাম একটা চেয়ারে বসে আছে। আফরিন পাশে বসে বলল,,

“কিছু হবে না আরুর দেখবেন ও খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।”

“তুমি জানো আফরিন একটু আগে আরুহি আমাকে বলছিল ভাইয়া আমি যেদিন মরে যাবো সেদিন তুমি কিন্তু কাঁদবে না। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমি বেশি দিন বাঁচবো না। খুব ভয় হচ্ছে ভাইয়া।আর এখনি এসব আমার মাথা কাজ করছে না। আমার যে বোনটা ছাড়া পৃথিবীতে কেউ নেই। ওর কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো।”

“কিছু হবে না আরুহির। আরুহি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এটা বলুন আরুহি ওভাবে রাস্তায় দৌড়াচ্ছিল কেন?”

তখনি আরহাম আবরার এর সাথে কাউকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। তা দেখে আফরিন ও তাকালো। আফরিন আবরারের সাথে ভালো মাকে দেখতে পেল। আফরিন উঠে গিয়ে বলল,,

“ভালো মা তুমি এখানে কিভাবে!”

তখন ভালো মা মুচকি হেসে বলল,,

“আরে আমি তো বাড়িই যাচ্ছিলাম তোর বাবা গাড়ি পাঠিয়েছিল । তোদের আসার কথা থাকলেও এলিনা তাই ভাবলাম এটাই বাড়ি ফিরি। কিন্তু ওঠার পরেই দেখলাম একটা মেয়ে আমাদের গাড়ির পেছনে দৌড়াচ্ছে। প্রথমে ভাবলাম অন্যকিছু পরে দেখলাম না আমাদের গাড়ির পেছনেই দৌড়াচ্ছে। তাই গাড়ি থামাতে বললাম তখনি মেয়েটা এক্সিডেন্ট করলো। গাড়ি থেকে আসতে আসতে তোরা নিয়ে এলি মেয়েটাকে।”

আরহাম এর মুখ থেকে কোন কথাই বের হচ্ছে না। ও যে কতো বছর পর ওর মাকে দেখতে পেল। এটা সত্যি ওর মা তো। ও এক পা বাড়ালো তখনি ডাক্তার বের হয়ে বলল,,

“মিস আরুহি ঠিক আছে ওনার মাথায় একটু চোট পেয়েছে আর হাতটা একটু কেটে গেছে। তবে উনি খুব স্ট্রেস এ ছিলেন তাই অজ্ঞান হয়ে গেছে। চিন্তার কোন কারন নেই আজকেই বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন আরেকটু পরই ওনার জ্ঞান ফিরবে।”

আরহাম বলল,,

“ধন্যবাদ ডক্টর!”

আরহাম ভালো মায়ের সামনে গিয়ে বললেন,,

“ধন্যবাদ এখানে আসার জন্য আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমার বোনের জ্ঞান ফেরা অব্দি একটু আমার বোনের সাথে থাকবেন। আমি একটু আসছি।”

কথা বলার সময় আরহাম এর চোখ ছলছল করছিল। ভালো মায়ের কি হলো জানা নেই। উনি আরহাম এর গালে হাত রেখে বললেন,,

“চিন্তা করো না তোমার বোনের সাথে থাকবো আমি।”

“ধন্যবাদ!”

বলেই আরহাম ওখান থেকে চলে গেল। ও বাইরে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিতে লাগলো। আবরার আর আফরিন কিছুই বুঝতে পারলো না। ততক্ষনে রোজা এদিকের সব শুনে তো অবাক। আরুহির মতো মেয়ে পাগলের মতো রাস্তায় দৌড়িয়েছে। ভালো মা আস্তে আস্তে আরুহির কেবিনে ঢুকলো। উনি স্পষ্ট শুনেছে মেয়েটা মা মা করছিল তিনি শুনেছিলেন। উনি গিয়ে আরুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। কি জানি মেয়েটাকে দেখে ওনার আদর করতে ইচ্ছে হলো। তাই উনি আরুহির কপালে একটা চুমু দিল। ওনার চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। উনি তাড়াতাড়ি পানি ফেললেন কিন্তু কেউ তো দেখেই ফেলল আরহাম হাত মুখ ধুয়ে এসেছিল ও দেখে ফেলল। আবরার আর আফরিন আর রোজা কিছুই বুঝতে পারছে না। আরহাম দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। তখন আরুহির জ্ঞান ফিরে এলো। আরুহি চোখ খুলে আগে ওর ভাইয়াকে দেখতে পেল। ও অস্ফুট স্বরে বলল,,

“ভাইয়া মা!”

তখন নজর পড়লো ওর বাম দিকে যেখানে আবরারের ভালো মা বসে আছে পেছনে আবরার আফরিন আর রোজা দাঁড়িয়ে আছে। ও অস্ফুটে সুরে বলল,,

‘মা তুমি?”

তখন ভালো মা মুচকি হেসে বলল,,

“কে তোমার মা! তোমার মাকে কি আমার মতো দেখতে আর তুমি ওভাবে গাড়ির পেছনে ছুটছিলে কেন? যদি আরো বড় কোন ক্ষতি হয়ে যেত। ”

আরুহি আরহাম এর দিকে তাকালো ও মাথা দিয়ে না ইশারা করলো যাতে কিছু না বলে। তাই ও বলল,,

“আপনি কে?”

“ঐ যে আবরার আর আফরিন কে দেখছো আমি ওদের ভালো মা।”

“ওহ আচ্ছা! ধন্যবাদ এখানে আসার জন্য আসলে আমার মাকে আপনার মতোই দেখতে তাই ভাবলাম আপনিই হয়তো বা। সমস্যা নেই আন্টি। ভাইয়া এখানে আসো।”

আরহাম বোনের পাশে আসলো তখন আরুহি আরহাম এর হাত ধরে বলল,,

“আমি বাড়ি যেতে পারবো কখন?”

“আজকেই যেতে পারবি।”

“তাহলে চলো এমনিতেও আমার হাসপাতাল ভালো লাগে না।”

“ওকে আমি ডক্টরের সাথে কথা বলছি।”

আরহাম চলে গেল। তখন আরুহি বলল,

“সরি সকলকে আমার জন্য সবাই টেনশনে পড়ে গেছিলেন। আর আন্টি আপনাকেও সরি আপনি হয়তো কোথাও যাচ্ছিলেন।”

“সমস্যা নেই মা। আমি বাড়িই ফিরছিলাম।”

“ওহ আচ্ছা আপনি কোথায় থাকেন?”

তখন আবরার বলল,,

‘ভালো মা আমাদের সাথেই থাকে। আসলে ভালো মায়ের একটা ওষুধ নেওয়ার কথা ছিল তাই উনি হাসপাতালে এসেছিলেন ‌।”

“ওহ আচ্ছা। রোজা রনি ভাইয়ার কি অবস্থা এখন?

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে এখন ধন্যবাদ তোদের দুই ভাইবোন কে।”

“ইটস্ ওকে!”

তখন আরহাম এলো তাই আরুহি বলল,

“কি বলল ডক্টর?”

“চল বাড়ি যাবো।”

“হুম আমি এক পায়ে খাড়া।”

“তা তো দেখতেই পাচ্ছি শুয়ে শুয়ে।”

এ কথা শুনে আরুহি হাসলো আর বলল,,

“চলো এবার তোমার বোনের হাত ধরো আর গাড়িতে নিয়ে বসাও।”

“হুম চল আমি সব ফর্মালিটিজ শেষ করেই এসেছি।”

আরুহি আবরারের ভালো মায়ের সামনে গিয়ে বলল,,

“আমাদের বাড়িতে সময় করে আসবেন আপনার দাওয়াত রইল। আফরিন চেনে আমাদের বাড়ি ও আপনাকে নিয়ে আসবে। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ আসছি।”

আর আরহাম বলল,,

“আমার কথা রাখার জন্য ধন্যবাদ।”

আরুহিরা সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। রনিদের সাথেও দেখা করলো। ওরা চলে গেল। গাড়িতে বসে আরুহি বলল,,

ভাইয়া একটা ফুচকার দোকানের সামনে গাড়ির থামাবে। খুব ঝাল দিয়ে ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে।

চলবে,,

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। আজ ব্যস্ত থাকার জন্য লিখতে পারি নি যতটুকু লেখা ছিল ততটুকুই পোস্ট করে করলাম এখন ছোট হওয়ায় জন্য দুঃখিত । কাজের চাপে রিচেক হয় নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ। কাল বড় একটা পর্ব দিব ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here