গুছিয়ে রাখা আবেগ পর্ব ৩

0
707

#গুছিয়ে_রাখা_আবেগ
#পর্ব_৩
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

আরুহি আফরিন আর রোজার কাছে যাওয়ার সময় নিতুরা ওর পথ আটকে ধরে বলল,,

“রং ঢং ভালোই করতে পারো!”

“মানে কি বলতে চাইছেন আপনি?

“দুদিন আগেও যে মেয়েটা রিক্সায় করে ভার্সিটি এসেছে সেই মেয়েটা হুট করেই এমন দামি গাড়ি নিয়ে এলো। কি ব্যাপার দুদিনেই এত দামি গাড়ি কোথা থেকে জোগাড় করলে। আবার আবরা‌রের সাথেও ফোনে কি নিয়ে কথা বলছিলে। আচ্ছা তুমি আবার আবরার কে কোন কিছু নিয়ে ব্লাকমেইল করে টাকা নিচ্ছো না তো?”

“ওরকম থার্ড ক্লাস কাজ আরুহি করে না বুঝলেন। বাকি রইল গাড়ির কথা গাড়িটা আমার! আমার ইচ্ছে হলে আনবো না ইচ্ছে হলে নাই। তাতে আপনার কি! আর মিস্টার নিশান আবরার এর সাথে কি কথা বললাম এটা আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নই।”

“বাধ্য না হলেও যে বলতে হবে!”

“ওহ তাই নাকি আমি যদি না বলি তাহলে কারো শক্তি নেই যে আমার মুখ থেকে কথা বের করে।”

তখন রোজা আর আফরিন আসলো আফরিন বলল,,

“নিতু আপু কোন সমস্যা?”

নিতু জোর পূর্বক হেসে বলল,,

“না না আফরিন কোন সমস্যা নেই। আমরা যাস্ট এমনিই কথা বলছিলাম।”

“আরুহি চল ক্লাসের সময় হয়ে গেছে!’

আরুহি কোন কথা না বলে হাঁটা ধরলো ওর মাথায় ঘুরছে অন্য কথা। হুট করে আরুহি বলল,,

“নিশিভুত আমি এতদিন ধরে এসেছি। একা থাকছি কই তুই তো একদিন ও বললি না তোদের বাড়ি যেতে। অবশ্য রোজা একদিন বলেছিল কিন্তু তুই তো একদিন ও বলিস নি।”

তখন আফরিন বলল,

“এ মনে হয় তুই বললেও যেতি। আমি জানতাম তুই যেতি না তাই বলি নি তুই যে ঘাড়ত্যারা।”

“মানুষ ভদ্রতার খাতিরেও একদিন বলে। না তোর মাঝে ভদ্রতা নাই।”

এ রকম শুনে রোজা হেসে ফেললো আর বলল,,

“নিশি ভুত রে তুই বোধহয় জানিস না তোর মা আমাদের দাওয়াত করেছে আজ দুপুরে আমরা ক্লাস শেষে তোদের বাড়ি যাবো। ”

“কি আমার বাড়ি তোদের দাওয়াত আর আমি জানি না। তোদের দাওয়াত কখন দিল।”

“কাল রাতে আন্টি ফোন দিয়েছিল। তখন বলেছে আজ নাকি তোকে দেখতে আসবে তাই আমাদের যেতে বলেছে বিষয়টা দারুন না।”

এ কথা শুনে আফরিন ওদের দুজনের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকালো। তা দেখে ওরা হেসে ফেলল রোজা বলল,,

“ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? সত্যি আন্টি এটাই বলেছে।”

“এ আইছে আমারে দেখতে আইলে আমার আম্মাজান আমারে আগে কইতো না তোগোরে আগে কইতো নাকি।”

“হ সত্যি তাই কইছে।”

“হূদাই আমার রাগ উঠাইস না।”

“আন্টি বলছে তোদের বাড়ি কিছু মেহমান আসবে তাই আমাদের যেতে বলেছে আর কিছু না। হয়তো তোদের আত্মীয় হবে। আর তোকে দেখতে আসলে তো তোকে বলতোই টেনশন নিস না।”

আরুহির কথা শুনে আফরিন শান্ত হলো। তারপর ওরা ক্লাস করতে চলে গেল।

এদিকে,,,

নিতু মনে মনে ভাবছে,,

“এই আবরারদের ফ্যামিলির সাথে ঐ মেয়েটার কি সম্পর্ক আমার মামাতো বোন আফরিন। কিন্তু ঐ মেয়েটার সাথে কি সম্পর্ক সেটাই এখনো জানতে পারলাম না। যদিও কোনদিন ক্লোজ ভাবে ওদের সাথে মেশা হয়ে উঠেনি। জানতেই হবে সবটা নাহলে সব হাতের বাইরে চলে যাবে।

_______________

ক্লাস শেষ করে রোজা আফরিন আর আরুহি গাড়িতে উঠলো। ওরা এক সঙ্গে যাবে বলে ঠিক করেছে। আরুহি ড্রাইভ করবে আফরিন পাশে বসেছে আর রোজা পেছনে। হুট করে রোজা বলল,,

“আরু সুভাসিনীকে একবার ফেরানো যায় না।”

আরুহি কিছু বললো না ও একমনে ড্রাইভ করতে লাগলো। তখন আফরিন বলল,,

“আরু শুনতে পাচ্ছিস রোজা কিছু বলছে তোকে!”

তখন আরুহি গাড়ি থামিয়ে বলল,,

“যে একবার চলে যায় তাকে কি ফেরানো যায়! যায় না তো। সুভাসিনী এমনি এমনি চলে যায় নি। একবুক কষ্ট নিয়ে চলে গেছে। সে ভালোবাসা প্রকাশ করে দেখেছে সেই মানুষটা তার ভালোবাসার মুল্যায়ন করেনি। সে অভিমান করেছে সেই মানুষটা তার পাশে বসে তার অভিমান ভাঙায় নি। সে নিরবে কান্না করেছে সে তার কান্না দেখেনি বুঝতে পেরেও সেই মানুষটা কিছু বলেনি শুধু দেখে গেছে। সে হাড়িয়েও গেছে কিন্তু সেই মানুষটা তার খোঁজ করেনি। কখনো যদি চলার পথে কোথাও দেখা হয়েছে তাহলে অপরিচিত ভাবে দেখা হয়েছে। তবে সুভাসিনী এখন নিজের জন্য বাঁচাতে শিখে গেছে একা হাসতে শিখে গেছে। বাঁচতে হলে নিজেকেই নিজের সঙ্গী হয়ে বাঁচতে হবে এটা সে ভালো ভাবেই বুঝে গেছে। এখন সে আর আবেগ এর জন্য কান্নাকাটি করে না। সে এখন মানুষটাকে প্রমান করেছে সেই আবেগের বয়সের করা ভুল নিয়ে সে বসে নেই। সে এগিয়ে গেছে হয়তো জীবন থেকে অনেক কিছু হাড়িয়ে গেছে তার ইচ্ছে, শখ আর মুখের ঐ মুচকি হাসি। তার একটাই ভুল করেছে সে তখন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে নি। আবেগের বয়সে সেই আবেগের বশে ভুল করেছে এই নিয়ে তার আকাশ সমান অভিযোগ। কেন সে সেই ভুলটা করলো। ভুল জেনেও সব জেনে শুনে সে ঐ কাজ টা করলো। সুভাসিনীকে ফেরানো সহজ কাজ নয় কারন সুভাসিনী নিজেই ফিরতে চায় না।”

আরুহির কথা বলতে বলতে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরল। আফরিন আর রোজার চোখ থেকেও আফরিন বলল,,

“যদি সুভাসিনীর সেই মানুষটা সুভাসিনীকে খুব করে চায় তাহলেও কি সুভাসিনী ফিরবে না।”

“সে চাইলে কি হবে সুভাসিনী যে এখন তার কাছে ফিরতে চায় না। তার এই পৃথিবীর থেকে কোন এক্সপেক্টেশন নেই। শুধু একজন কে ঘিরেই তার জীবন যার জন্য সুভাসিনী বেঁচে আছে।তবে সেদিনের সুভাসিনী এখন আর সুভাসিনী নেই এখন সে বিভীষিকা হয়ে গেছে। সেদিনের সে আর আজকের সে এর মাঝে বিস্তর ফারাক। সেদিনের সে কিছু হলেও কান্না করতো আর এখনকার সে হাজার ব্যাথা পেলেও হাত মুঠো করে শক্ত করে ধরে থাকে। যাই হোক এখন চল আমাদের দেরি হচ্ছে।

আরুহি গাড়ি স্টার্ট দিল সারা রাস্তা আর কেউ কোনো কথা বললো না।
__________________

আবরার বাড়ি ফিরে বাড়ির সবার তোড়জোড় দেখে ওর মাকে জিজ্ঞেস করল,,

“মা আজকে দেখি বাড়ির পরিবেশ টাই অন্যরকম কেউ আসছে নাকি কই আমাকে তো বললে না।”

তখন আবরারের মা বলল,,

“হ্যা আসবে তোর বাবার কাকা আনোয়ার খান আসছে তার পরিবার নিয়ে তাই তোর ফুপুদের বলেছি সাথে আরুহি আর রোজাকে বলেছি আরুহি অনেক দিন পর দেশে ফিরলো না। মেয়েটা একা একা থাকে কি খায় না খায় তাই ওদেরকেও আসতে বলেছি এই এলো বলে।”

“কি! আরুহি আর রোজা আসবে আগে বলবে না আমিই সাথে নিয়ে আসতাম তাহলে। তাছাড়া তুমি আমাকে একবার জানাবে না।”

“আরে বাবা তোকে তো আর দেখতে আসছে না যে তোকে বলতে হবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে তুমি বলবে না আমাকে সে ঠিক আছে তাই বলে এভাবে বলবে। আচ্ছা ভালো মা কোথায়?

“আজকের ডেট কি?

আবরার থেকে করে বলল,,

“ওহ শিট আমি এই দিনটা মিস করে গেলাম কি করে আজ তো ওষুধের লাস্ট ডোজ দেবে। দুদিন হাসপাতালেই থাকতে হবে। এবার দেখবে ভালো মা একেবারে সুস্থ হয়ে যাবে। ”

“ইনশাআল্লাহ একেবারে সুস্থ হয়ে যাবে।”

“ইনশাআল্লাহ মা! তা তোমার মেহমানরা কখন আসবে?

“বলেছে তো দুপুরের খাবার খাবে কিন্তু এখনো আসলো না।”

তখনই আবরারের বাবা নাহিয়ান খান এলেন আর বলল,,

“দেখে যাও তোমরা কারা এসেছে।”

সবাই এগিয়ে গেল নাহিয়ান খান সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলেন ওনার টাকা আনোয়ার খান তার স্ত্রী তাদের ছেলে আহমাদ খান এবং তার স্ত্রী এসেছেন সাথে তাদের ছেলে শিহাব ও তার স্ত্রী রুপা এসেছে। সবাই সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। আবরার সবার থেকে বিদায় নিয়ে উপরে চলে গেল । ও ওপরে গিয়ে ওর রুমে থাকা কিছু জিনিস লুকিয়ে রাখলো যাতে ওর রুমে কেউ এলে কিছু দেখতে না পারে।

___________________

আরুহি রোজা আর আফরিন একসাথে বাড়িতে ঢুকলো। আরুহি ঢুকে যা দেখলো তাতে ওর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল ওরা এখানে কি করছে । ও তাড়াতাড়ি করে মাথার হিজাব এক সাইড দিয়ে ভালোভাবে মুখ আঁটকে ফেললো। যদিও অনেক বছর পর তাদের সাথে দেখা হয়েছে তবুও যদি চিনে ফেলে । তবে চেনার কথা রোজা আর আফরিন ভেতরে ঢুকে পড়েছে ওদের দেখে আবদারের মা এগিয়ে এলো আর বলল,,

“কিরে নিশু আরুহি এলো না?”

“আরে আরুহি তো আমাদের সাথেই ঢুকলো ও আবার কোথায় গেল।”

তখন আরুহিকে ঢুকতে দেখা গেল তা দেখে রোজা বলল,,

“ঐ তো আন্টি আরুহি আসছে।”

কিন্তু ওর মুখ আটকানো দেখে আফরিন আর রোজার অবাক হলেও কিছু বললো না। আরুহি এসে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছেন?”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম!” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি তুমি কেমন আছো? কতোদিন পর তোমাকে দেখলাম তা মুখ ঢেকে রেখেছো কেন? ”

“আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আসলে আন্টি এমনিই আমরা বরং ফ্রেশ হয়ে আসি!”

“হুম যাও যাও আসলে বাড়িতে আমাদের আরো কিছু মেহমান এসেছে। তোমরা ফ্রেশ হয়ে আসো তারপর তোমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।”

“না করালেও সমস্যা নেই আন্টি! আপনি আমাদের নিয়ে ব্যস্ত হবেন না।”

আফরিন ওদের নিয়ে নিজের রুমে গেল। তখন আনোয়ার খান জিজ্ঞেস করল,,

“ঐ মেয়েগুলো কারা?”

তখন নাহিয়ান খান বলল,,

“আমার মেয়ে আর ওদের বন্ধুরা রোজা আর আরুহি!”

আরুহি নাম শুনে সকলেই একটু থমকে গেল কিন্তু কেউ কিছু বললো না। এক নামের মানুষ অনেকেই থাকতে পারে।

____________________

আফরিন ওদেরকে রুমে নিয়ে বলল,,

“আরুহি কেসটা কি হলো বলতো?

“কোন কেস?”

“তুই হুট করে মুখ আটকালি কেন?”

“আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই বাদ দে আমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসছি!”

আরুহি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেল আর গিয়েই মাথার হিজাব খুলে ইচ্ছে মতো মুখে পানি দিতে লাগলো। ওর খুব কান্না পাচ্ছে, না ভাইয়াকে ফোন করতে হবে। ও মিনিট তিনেক পর বের হলো। তারপর বলল তোদের ছাদ কোন দিকে? আফরিন আরুহিকে ছাদ কোন দিকে বলে দিল। ও যাওয়ার পর রোজা বলল,,

“তুই ওকে আগেই বলে দিলি কেন? আমরাও যেতাম ও অপেক্ষা করতো একটু‌।

“তুই ওকে খেয়াল করেছিস রোজা ওকে কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। ও ঠিক নেই রোজা ওর নিজের জন্য সময় চাচ্ছিল। কিন্তু ও হুট করে এমন হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। ”

“ব্যাপারটা আমিও বুঝতে পেরেছি।”

_________________

আরুহি দৌড়ে ছাদে এলো ওর দম বন্ধ লাগছে চোখ দিয়ে পানি পরতে চাইছে কিন্তু ও পরতে দিচ্ছে না। ও কয়েকবার আরহাম কে ফোন দিল কিন্তু আরহাম ধরলো না। আজ তেমন রোদ নেই আকাশ টা মেঘলা ও গিয়ে ছাদের গ্ৰিল ধরে আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে রইলো।

“মিস মেঘ বিলাস করছেন নাকি?”

আরুহি চোখ খুলে পাশে তাকালো দেখলো আবরার দাঁড়িয়ে আছে। ও বলল,,

“মেঘ বিলাস মানে?”

“এই যে মেঘলা আকাশের দিকে মুখ করে আছেন মনে হচ্ছে ভিষন ভালো লাগছে আপনার!” মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে যেভাবে বৃষ্টি বিলাস করে সেরকম ভাবে।”

“ওহ আচ্ছা! আপনি এখানে কেন? আপনার বাড়িতে না মেহমান এসেছে!

“আসলে আমার জন্মের পর এই প্রথম তাদের সাথে দেখা আমি তেমনভাবে কাউকে চিনি না। আর অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলতে কেমন যেন অকার্ড লাগে। তাছাড়া তাদের কম্পানি দেওয়ার জন্য অনেক লোক আছে।”

“ওহ আচ্ছা! আমি তাহলে যাই রোজা আর আফরিন এর বোধহয় হয়ে গেছে।”

“থাকুন না একটু?’

“কেন?”

“এমনি!”

“ওনারা এসেছেন কেন জানেন আপনি?”

“না জানিনা !”

“ওহ আচ্ছা ওনারা আপনার কেমন আত্মীয় হয়!”

“আমার বাবার আপন কাকা হয় তবে আমি এ বিষয়ে জানতাম না।”

“ওহ আচ্ছা!”

“মিস্টার আরহাম আসবে কবে?”

“সিওর হয়ে বলতে পারছি না তবে তাড়াতাড়ি চেষ্টা করছে?”

“আরুহি আপনার সাথে আমার কেমন সম্পর্ক বলুন তো?”

“হঠাৎ এরকম প্রশ্ন?”

“এমনিই বলুন না!”

“আপনার সাথে সম্পর্ক যদি বলি তাহলে প্রথমত আমরা একজন আরেকজনের অপরিচিতা। দ্বিতীয় আপনার বোনের বান্ধবী আমি আপনি আমার কাছে বান্ধবীর ভাই ছাড়া কিছুই নন। তৃতীয়ত আপনার সাথে আমাদের কম্পানি একটা ডিল করেছে সেই হিসেবে কাজের সম্পর্ক।”

“আর কোন সম্পর্ক নেই!”

“মনে হয় না।”

“আচ্ছা সুভাসিনীর সাথে আমার কি সম্পর্ক ছিলো বলুন তো?

আরুহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

“পুরোনো জিনিস থাক না। আজ যেখানেই যাচ্ছি শুধু সুভাসিনী আর সুভাসিনী আমার আর ভালো লাগছে না। আপনি থাকুন আমি গেলাম।”

বলেই আরুহি ওখান থেকে চলে গেল। রোজা আর আফরিন ওর কাছেই আসছিল ওকে দেখে ওরা ওখানেই থামলো। আর একসাথে নিচে গেল। আরুহি ভালোভাবে মাথায় ওরনা টেনে নিল ঘোমটাটা বড় করেই দিল। নিচে যেতেই ওরা নিতুর পরিবার কে দেখতে পেল আবরারের ফুফু হচ্ছে উষা শিকদার আর ফুফা নওশাদ শিকদার ওদের মেয়েই নিতু। আরুহিকে আবারারের মা সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আরুহি সবার সাথে হু হা করে কথা বললো। এমন ভাবে আরুহি ঘোমটা দিয়েছে পুরো মুখ দেখা যাচ্ছে না শুধু অর্ধেক দেখা যাচ্ছে। সবাইকে খেতে বসতে বলল । ওদের ড্রাইনিং টেবিল অনেক বড় তাই অসুবিধা হলো না। সবাই একসাথেই বসলো। হুট করে নাহিয়ান খান বলল,,

“তো আরুহি এবার কি একেবারে দেশে এসেছো নাকি?”

“জি আংকেল একেবারেই এসেছি।”

“এখন থাকছো কোথায়?”

“আমাদের বাড়িতেই ?”

“ওহ আচ্ছা! তোমার ভাইয়ের নাম যেন কি? অনেক আগে তোমাদের সাথে দেখা হয়েছিল এখন মনে নেই কিছু মনে করো না।”

আরুহি এবার কি বলবে যদি ধরা পড়ে যায়। কারন এখানে সবাই ওর শুভাকাঙ্ক্ষী নাও হতে পারে। ও কি বলবে না বলবে তখনি ওর ফোনটা বেজে উঠলো ও হাফ ছেড়ে বাঁচলো আর ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“দুঃখিত আংকেল একটা ইমার্জেন্সি কল এসেছে।”

“সমস্যা নেই তুমি কথা বলো!”

আরুহি উঠে যেতে লাগলো তখন আনোয়ার গিন্নি বলল,,

“খাবার ফেলে উঠতে হয় না। যদি খুব জরুরী ফোন হয় তাহলে এখানে বসেই কথা বলো।”

“ওকে!”

আরুহি ফোন ধরে সালাম দিল,,

“আসসালামু আলাইকুম!

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আপনি কি এ.এম.কে ইন্ড্রান্ট্রিজ এর ওনার A.K বলছেন?

“জি আমিই সে!” কিন্তু আপনি কে বলছেন?

“আসলে আপনার একজন স্টাফকে মানে যার ফোন সে খুব বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে আমরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। আপনি যদি পারেন তাহলে তাড়াতাড়ি একটু হাসপাতালে আসুন উনি খুব গুরুতরভাবে আহত আপনাকে কিছু বলতে চায়। ওনার মানিব্যাগে কার্ড পেয়ে আপনাকে ফোন দিলাম। মনে হয় বেশিক্ষন বাঁচবে না। আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি আসুন?”

“আপনি হাসপাতালের ঠিকানা টেক্সট করুন।আমি এখনি আসছি।”

আরুহি তাড়াতাড়ি চেয়ার থেকে উঠে পড়ে। আর বলে,

” দুঃখিত আমাকে এখনি যেতে হবে। আমার এক পরিচিত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।”

আরুহি তাড়াতাড়ি রে আফরিনের রুম থেকে ওর জিনিসপত্র নিয়ে আসে। এদিকে আবরারের মা আবরার কে বলে,,

নিশান তুমি ওর সাথে যাও মেয়েটা যদি একা সামলাতে না পারে। একা কতদিক সামলাবে।

আরুহি কোন দিক না তাকিয়ে বের হয়ে যায়। পেছন থেকে আফরিন আর রোজার ডাকে কিন্তু ও শোনেনা। আবরার ও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়। কিন্তু ও আসার আগেই আরুহি গাড়ি নিয়ে চলে যায়। আবরার ও পেছনে ওর গাড়ি নিয়ে যায়। আরুহি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ঢুকে লোকটার কেবিনে যায়। তখন লোকটা বলে,

“ম্যাম আপনার মাকে দেখেছি আমি সে মরে যায় নি বেঁচে আছে । আমি নিজে দেখেছি তাকে? আমি,,”

লোকটা আরো কিছু বলবে তার আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। হয়তো এই কথাটুকু বলার জন্যই ওনার রুহ আটকে ছিল।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here