গুছিয়ে রাখা আবেগ পর্ব ১২

0
510

#গুছিয়ে_রাখা_আবেগ
#পর্ব_১২
#আজরিনা_জ্যামি

চিরকুট টা পরেই আবরারের বুক টা ধক করে উঠলো। ও বলল,,

“সুভাসিনী তো আমায় ভুল ভাবছে । আমি তো শুধু মেয়েটাকে একটা পড়া দেখিয়ে দিচ্ছিলাম। এই ছোট বিষয়েই সুভাসিনীর এত অভিমান। না এই মেয়ে তো দেখছি খুব অভিমানী। যেটা তার মানে তারই অন্য কাউকে সে সহ্য করবে না। এসব কি ভাবছি আমি না না এসব ঠিক না। আবেগে গা ভাসিয়ে দেওয়ার কোন মানেই হয় না। না এই মেয়ে তো অন্য পথে এগুচ্ছে একে থামাতে হবে। নাহলে দু’জনেই ভুল পথে যাবো। কিন্তু কে এই মেয়ে সেটা জানা এখন আমার জন্য ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেভাবেই হোক মেয়েটাকে বের করতে হবে।”

ও ভাবতে লাগলো কিভাবে বের করা যায়। কিন্তু সেরকম কিছুই মাথায় এলো না। তখনি আফরিন আবরারের রুমে নক করলো,,,

“ভাইয়া আসবো?

“ভাইয়ের ঘরে আসবি আবার পারমিশন লাগবে নাকি।”

“সবারই প্রাইভেসি আছে না তাই এটা ম্যানার্স।”

“এই বয়স কতো তোর এত প্রাইভেসি প্রাইভেসি করছিস।”

“আমি ক্লাস টেনে পড়ি ঠিক আছে। আমি বড় হয়ে গেছি।”

“বাজে না বকে বলে ফেল কি বলবি।”

“আমাকে এই অংক বুঝিয়ে দাও বুঝতে পারছি না।”

আবরার ওকে অংক বুঝিয়ে দিল তারপর আফরিন বলল,,

“ভাইয়া আজ একটা মেয়েকে তোমার সাথে দেখলাম মনে হলো। মেয়েটা কে গো! না মানে তুমি অন্য কিছু মনে করো না। তুমি তো সহজে মেয়েদের সাথে মিশো না তাই বললাম আর কি!”

“ও ঐ মেয়েটা আমার সাথে পরে একটা পড়ার এর টপিক বুঝেছিল না বলে বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম।”

“পড়ার টপিক নাকি অন্যকিছু আছে।”

“শুধু পড়ার টপিকই রে বাবা। এর আগে এ মেয়ের সাথে কোন দিন দেখেছিস। যারেই দ্যাখ শুধু ভুল বুঝে।”

“তোমায় আবার কে ভুল বুঝলো।”

এ কথা শুনে আবরার বুঝতে পারল ও কি বলে ফেলেছে তাই বলল,,

“ও কিছু না তুই এখন যা ।”

__________________

পরের দিন সকালে স্কুলে গিয়ে ও একটা চকলেট আর চিরকুট পেল। অবশ্য এটা একটা দশ বছরের বাচ্চা ছেলে দিয়েছে। ও জিজ্ঞেস করল কে দিয়েছে ছেলেটা কোন কথা না বলেই চলে গেল। ও চিরকুট টা খুশি মনে খুললো চিরকুট এ লেখা ছিল,,,

“অভিমানী সুভাসিনী! অভিমান করলেও সময় সাপেক্ষ সে আপনার দায়িত্বের ভার বুঝতে পারে তাই আপাতত অভিমান ক্যানসেল। তবে একটা কথা জানতে ইচ্ছে করে,,
আচ্ছা আপনি আমায় চোখের মায়ায় পড়েছেন কি? আমায় নিয়ে আমার কল্পলোকের গল্পকথা বানিয়েছেন কি। নাকি আজও বিভীষিকার মতো আপনার কাছে রয়েছি।
ওহ হো আমি তো ভুলেই গেছি,
আমার আর আপনার তো দেখাই হয় নি কভু তাই না। নাকি দেখা হয়েও আমি আপনার অচেনা।

~ইতি সুভাসিনী

চিরকুট টা পড়ে আবরারের মুখে হাসি ফুটে উঠল। আর বলল,,

“কে তুমি বিভীষিকা নাকি তুমি মরিচিকা যার কাছে গেলেই হাড়িয়ে যাবে। নাকি রয়ে যাবে আমার হয়ে। তুমি তো আমার কাছে মরিচিকার মতোই।

না না এ আমি কি ভাবছি। আমি কি তার মায়ায় জরিয়ে গেছি কিন্তু আমি তো জরাতে চাই না। ”

তখনি নিবিড় এসে আবরারের কাঁধে হাত রেখে বলল,,

“কিরে একা একা কি বলছিস কি জরাতে চাস না।। তোর হাতে কি চিরকুট তার মানে সুভাসিনীর চিরকুট।”

“হুম তার চিরকুট।”

“তার চিরকুট পেয়েও তুই কেন বিরস মুখে আছিস।”

“সে ভুল করছে নিবিড়। আমার মনে হচ্ছে সে আবেগে গা ভাসিয়ে ভুল করছে। আর ভুল পথেও যাচ্ছে। আমার ঠিক হয় নি এগুলো সায় দেওয়া। আমার আগেই এগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত ছিল। মেয়েটা ভুল পথে যাচ্ছে।”

নিবিড় কিছু বললো না। ওরা চলে গেল । এদিকে আরুহি তো ভিশন খুশি হুট করেই আজ তার মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠেছে। আবার হুট করেই মনটা খারাপ হচ্ছে। ও নিজেই বুঝতে পারছে না ওর মনটা খারাপ না ভালো হুট করে ভালোলাগাও কাজ করছে আবার হারানোর ভয় ও হচ্ছে। ও আনমনেই বলে উঠলো,,

Tujhe pane ki khawish
Tere Jane ka Darr
Iss dilko sukhun
Mil Jaye Agar

Kahani nhi mujhe
Tu Chahiye
Tujh sa nhi
Bas Tu Chahiye

“কিরে বিরহের কি বলছিস ?

রোজার কথায় আরুহি ওর দিকে তাকালো আর বললো,,

“জানিনা রোজ হুট করেই ভয় আর ভালোলাগা যুক্ত হয়েছে। কেমন যেন লাগছে মনে হচ্ছে আমি তাকে হাড়িয়ে ফেলবো। সে আমার না। অবশ্য সে আমার হতেও পারে না। কিরকম যেন অস্থির লাগছে আমি কিছু হাড়িয়ে ফেলছি। আচ্ছা রোজা তোর কি মনে হয় এখন আমার ওনার সাথে কথা বলা উচিত।”

আফরিন আর রোজা আরুহির অবস্থা বুঝতে পারলো। কিন্তু কিসের এত অস্থিরতা কাল পর্যন্তও সব ঠিক ছিল। তখনি ওর কাছে সেই দশ বছরের বাচ্চা ছেলেটা এসে বলল,,

“আপা আপনারে সেই ভাইয়া টা এই টা দিছে। আমি ওনাকে বলি নাই তারে চিরকুট টা আপনি দিছেন। সেও বলছে সে জানতে চায় না। আমি যেন আপনারে খালি এই চিঠিডা দেই। তবে আরেকটা কথা কইছে আমারে এই চিঠিতে ভাই যা বলছে তাই করতে এর যেনো হেরফের না হয়। নাইলে কইছে আমারে দেখলেই পিডাই বো। ”

“কি এই কথা বলেছে?”

“হ আপা এই কথাই কইছে। ভাইয়া যা কইবো শুইনেন নাইলে আমারে মারবো । আমি মার খাইবার চাইনা।”

“তুমি মার খাবে ও না। এখন যাও আর এই নাও এই টাকা দিয়ে কিছু খেয়ে নিও।”

“আচ্ছা আপা ধন্যবাদ।”

ছেলেটা চলে গেল। ও যেতেই আরুহি বলল,,

“দেখেছিস নিশি তোর ভাই কিরকম হিটলার। বলেছে না শুনলে ছেলেটাকে মারবে।”

“সব তোর জন্যই তো তোর জন্য ভাইয়া সবসময় টেনশনে থাকে। কাল কি বলেছে জানিস তোকে খুজে বের করা তার জন্য নাকি ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন।এখন বেশি কথা না বলে দ্যাখ চিরকুট এ কি লিখেছে।”

“কি! আমাকে বের করা ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই জন্যই তো এই ছেলেটাকে ধরেছে। না আমারো মনে হয় তার সামনে যাওয়া উচিৎ। এভাবে আর কতোদিন লুকিয়ে চিরকুট দেব। তাছাড়া তোর ভাই তো বিরক্ত ও হতে পারে।”

ও চিরকুট টা খুললো তাতে লেখা,,

শুনো মেয়ে সুভাসিনী,
অনেক হয়েছে লুকোচুরি।
এই অধমরে দেখা দেন এইক্ষনে,
না হলে যে কি অনর্থ হবে কে জানে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে তোমার সনে,
যা বলতে চাই তোমার সামনে ।

আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। অনেক হয়েছে লুকোচুরি আর না। কাল তিন নাম্বার ক্লাসের সময় আমার ক্লাস নেই। ঐ সময়টায় তুমি আমরা বন্ধুরা যেখানে আড্ডা দেই তার পেছনে একটা আম গাছ আছে ওখানে আসবে। না আসার দুঃসাহস করো না মেয়ে তুমি তো জানোই আমি খারাপ
না আসলে খবর আছে। সেখানেই যা কথা বলার বলবো।

~ নিশান

চিরকুট পড়ে আরুহি পুরো থ হয়ে গেছে । আফরিন আর রোজা আরুহির মুখ দেখে মিটি মিটি হাসছে আফরিন বলল,,

“কিরে আরুহি তোর না খুব সাহস তাহলে এখন মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন?”

“তোর ভাই আমাকে থ্রেট দিল এটাই ভাবছি। দেখেছিস তোর ভাই কতো বড় হিটলার মেয়েদের সাথে কেমন আচরণ করতে হয় তাও জানে না। আমাকে থ্রেট দিল না আসলে খবর আছে। আরে আমাকে চিনতে পারবে কিভাবে যে আমার খবর করবে। এক মিনিট এক মিনিট এই নিশি তোর ভাই বুঝতে পারে নি তো আমিই সুভাসিনী।

এ কথা শুনে তিনজনের মনেই ভয় ঢুকে গেল। কিন্তু এটা দেখে আরেকজনের খুব খুশি লাগছে। এতদিন ওরা মজা নিয়েছে আজ ও নিচ্ছে। তিনজন এ অনেক কথাবার্তার পর সিদ্ধান্ত নিল আরুহি যাবে আর ও যে আবরার কে পছন্দ করে না শুধু পছন্দ না এতদিনে ভালোবাসেও ফেলেছে সেটাও জানাবে।

_____________________

রাতে আরুহি কিছুই করতে পারছে না। আরহাম এগুলো ভালোই খেয়াল করেছে রাতে আরহাম আরুহির রুমে এসে দেখলো আরুহি আনমনে কিছু একটা ভাবছে। ও আওয়াজ দিল,,

“বোনু!!!,

“হুম।”

“কি ভাবছিস!”

“আচ্ছা ভাইয়া ভালোবাসা কি পাপ?”

এ কথা শুনে আরহাম অনেক অবাক হলো। তারমানে তার বোন কি কাউকে ভালোবাসে? যদিও আরহাম গত ছয় মাসের অনেক কিছুই লক্ষ করেছে তার বোনের আনমনা ভাব হুটহাট মুচকি হাসা। আরহাম বলল,,

“ভালোবাসা পাপ না যদি সেটা খারাপ দিকে না যায়।”

“কারো অগোচরে কাউকে ভালোবাসা যায় ভাইয়া।’

“যায় তো খুব করে যায়। কারো অগোচরে কাউকে পাগলের মতো ভালোবাসা যায়। যে কাউকে ভালোবাসা যায় ভালোবাসা একটি পবিত্র অনুভূতি। তবে হ্যা ভালোবাসার শর্ত হচ্ছে অপর জনের এক্সপেক্টেশন না রাখা। ভালোবাসলেই যে তাকে পেতে হবে এমন কোন কথা নেই। যদিও মানুষ টা তোমার কাছে না থাকে তবুও সেই মানুষটার ভালো থাকাতেই ভালোবাসার স্বার্থকতা। ভালোবাসায় চাওয়া পাওয়া থাকবে না,না থাকবে স্বার্থ।”

আরহামের কথায় আরুহি ওর দিকে তাকালো। তখন আরহাম জিজ্ঞেস করল,,

“আমার বোন কি কাউকে ভালোবেসেছে?”

‘ভালোবাসি কি না বলতে পারবো না। তবে এটার শুরু কবে? কখন? কোথায় ? কিভাবে হয়েছে বলতে পারবো না।”

“ভালোবাসা কখনো বলে কয়ে আসে না হুট করে হয়ে যায়। একমাত্র ভালোবাসারই এমন একটা জিনিস যার ওপর কন্ট্রোল নিজের কাছে থাকে না। তবে তোর সাথে যেটা হয়েছে আমি বলবো তোর বয়স টাই এর জন্য দায়ী। সব কিশোর কিশোরীর জন্য এই অধ্যায় টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে বলা হয় আবেগের বয়স এই সময় বেশিরভাগ কিশোর কিশোরী ভুল করে বসে। তবে আমার বিশ্বাস আছে আমার বোন এই ভুল টা করলেও শুধরে নিতে পারবে। এখন বল তো ঠিক কি হয়েছে। প্রথম থেকে বলবি।”

আরুহি প্রথম থেকে আরহাম কে সব ঘটনা খুলে বললো। সব শুনে আরহাম একটু চিন্তিত হলেও বলল,,

“তা কাল দেখা হলে আবরার কে কি বলবি?”

“যা আমার ভেতরে আছে তাকে নিয়ে সব বলে দেব। ফলাফল যাই হোক না কেন?

“আচ্ছা ঠিক আছে কালকের জন্য বেস্ট অফ লাক।”

__________________

রাতে আরুহি বা আবরারের কারোরই ঘুম হলো না। আবরার ভাবছে কি করে সুভাসিনীকে বোঝাবে আর আরুহি ভাবছে কিভাবে বলবে আর শুনে আবরার কি রিয়্যাক্ট করবে। দুজনেই নির্ঘুম রাত পার করলো কিন্তু আলাদা কারনে হয়তো বা একই কারনে।

পরের দিন সকাল হতেই আরুহির অস্থিরতা আরো বেড়ে গেল। কোন রকমে খেয়ে স্কুলে এলো। এসেই দেখতে পেল আফরিন আর রোজার ওর জন্য অপেক্ষা করছে। ওরাও নানা ভাবে আরুহিকে মনোবল বাড়ালো ওদের দেখে মনে হচ্ছে আরুহি আবরারের সাথে দেখা করতে না যুদ্ধ করতে যাচ্ছে। অবশ্য এরকম কিছু যুদ্ধের থেকে কম কিসে। আরুহি আম গাছের পেছনে গিয়ে দেখলো আবরার আগে থাকতেই দাঁড়িয়ে আছে। ও গিয়ে পাশে দাঁড়ালো আবরার ওর উপস্থিতি বুঝে বলল,,

“আমি জানতাম আপনি আসবেন আরুহি সরি সুভাসিনী।”

এ কথা শুনে আরুহি অবাক হলো তারমানে সত্যি আবরার আগে থেকেই সব জানতো। আরুহি সেসব কিছু না ভেবে বলল,,

“মিস্টার আপনার জন্য আমি আজকের জন্য আরেকটা চিরকুট লিখেছি দেখবেন!”

“হুম দেখবো তো অবশ্যই! শেষ চিরকুট কি না।”

‘মানে?”

“কিছু না আপনি দিন তবে আমিও আজ আপনাকে একটা চিরকুট দিব।”

“আপনি আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলছেন না কেন?”

“তাকিয়ে যদি আর ফেরাতে না পারি তাই ঐ রিস্ক নিচ্ছি না।”

“আপনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারছি না।’

“আপনি আপনার চিরকুট দিন বাকি কিছু বুঝতে হবে না।”

আরুহি চিরকুট এগিয়ে দিল আবরার চিরকুট নিয়ে খুলে পরতে লাগলো,,

“আমি বোধহয় আপনাকে ভালোবাসি নিশান।” বোধহয় কেন বললাম জানেন আমি নিজেই জানি না এটা ভালোলাগা না ভালোবাসা । কখন কিভাবে কি হলো আমি জানি না তবে হুট করেই আপনাকে ভালো লাগতে শুরু করেছে‌। মাঝে মাঝে আপনার কথা ভেবে আমার ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে উঠে। সবথেকে বড় কথা আমি বোধহয় আপনাকে চাই নিশান।”

এটা দেখেও আবরারের মুখের কোন ভাবান্তর হলো না ও বোধহয় জানতো এরকম কিছু একটা হবে। ও কিছু না বলে একটা চিরকুট এগিয়ে দিল। আরুহি এসব কিছু বুঝতে পারলো না। ও খুশি মনে চিরকুট খুললো তাতে লেখা,,

“শুনো সুভাসিনী তুমি আমার খুবই অপছন্দের একজন মানুষ। এতদিন জানতাম না তুমি কে তাই কিছু বুঝতে পারছিলাম না। তোমার চিরকুট গুলো আমায় ভারি বিরক্ত করে। তাছাড়া আগে থেকেই এই আরুহি নামক মানুষটিকে আমার পছন্দ নয়।”

আরুহির চোখটা ছলছল করে উঠলো। ও মুখ দিয়ে বলল,,

“আমি আপনাকে ভালোবাসি নিশান!”

এতক্ষন আবরার মৌন থাকলেও এখন আর থাকলো না। এখন বলে উঠলো,,

“আমি আপনাকে ভালোবাসি না আরুহি। সবথেকে বড় কথা এগুলো আপনার সব আবেগ সব মোহ। এটাকে ভালোবাসা বলে না আপনার বয়সি বা কতো এখন আপনি ভালোবাসার কথা বলছেন। এই বয়সে সবাই এরকম ভুল করেই থাকে আপনার ও হয়েছে।”

“এটা আবেগ নয় নিশান আবেগ বা মোহ হলে দু মাসেই শেষ হয়ে যেত। একটা বছর লাগতো না।”

“এই বয়স টা খুব খারাপ আরুহি এই বয়সে নেওয়া কোন সিদ্ধান্ত কারো সুখ বয়ে আনতে পারে না। তাছাড়া আপনি এখনো নাবালিকা আপনার বোঝার ক্ষমতা নেই।”

“ভালোবাসা বয়স দেখে আসে না ভালোবাসা হয়ে যায় নিশান।”

“আমি আপনাকে ভালোবাসি না সুভাসিনী। সবথেকে বড় কথা আমি আপনাকে চাই না। আপনাকে আমার পছন্দ নয়। শুনতে পেয়েছেন আপনাকে আমার পছন্দ নয়। আশা করি সব উত্তর পেয়ে গেছেন। পারলে আমার সামনে আসবেন না সুভাসিনী।

এ কথা শুনে আরুহি যেন থমকে গেল। কালকের আরহামের বলা কথা গুলো মনে পড়লো। ও মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলো,,

“ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন!”

এ কথা শুনে আবরার যেন অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেল। আরুহি বিরবির করে বলল,,

“আজ এখানেই সুভাসিনীর মৃত্যু হলো।”

ব্যস এইটুকু বলেই ওখান থেকে চলে এলো। একবার ফিরেও তাকালো না। তাকালে হয়তো দেখতে পেত একজোড়া ভেজাচোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। না ও ভালোবাসার জন্য বেহায়া হয় নি। ও বাস্তবকে মেনে নিয়ে এগিয়েছে। ও নিজেকেই শান্তনা দিয়েছে এটা ওর আবেগের বয়সে করা ভুল। লোকে ঠিকই বলে এই বয়সটা খারাপ। এই বয়সে কেউ সিদ্ধান্ত নিয়ে সুখী হতে পারে না।

আরুহি আর কাদেনি ও ব্যাগ আনতে গেল। আফরিন আর রোজা ওর জন্যই অপেক্ষা করছিল। ও যেতেই ওরা জিজ্ঞেস করলো কি বলেছে আবরার? ও শুধু বলল,,

“আজ থেকে সুভাসিনী মারা গেছে। তোরা এই টপিক নিয়ে কখনো আমার সামনে কিছু বলবি না নাহলে তোদের বন্ধুকে হাড়িয়ে ফেলবি।”

আর কিছু না বলেই আরুহি ব্যাগ নিয়ে হাঁটা ধরলো। আফরিন আর রোজা বুঝতে পারল কিছু তো একটা হয়েছেই। না এখনি ওদের বান্ধবী কে সামলাতে হবে নাহলে কিছু একটা করে দিতে পারে। ওরা দৌড়ে বান্ধবী কে জরিয়ে ধরলো। আরুহি কিছু না বলে কেঁদে দিল। কিছুক্ষণ পর বলল,,

“সে সুভাসিনী কে পছন্দ করে না। সে সুভাসিনীকে চায় না। আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে তোরা প্লিজ আমাকে এখান একা ছেড়ে দিস না। নাহলে আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না।”

আফরিন আর রোজা ওকে একটা জায়গায় বসালো। আরুহি কাদলো প্রায় দশ মিনিট পর ও এক বোতল পানি নিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললো ও আবার এসে বসলো। আফরিন আর রোজা ওর দুই হাত ধরে বলল,,

“আমরা আছি তো তোর পাশে!”

“বন্ধুরা পাশে থাকলেই হবে আর কি চাই।”

“ভাইয়া কি বলেছে তোকে?”

“কিছুই বলে নি বাস্তবতা চোখের সামনে তুলে ধরেছে। শুনে নিশি ভুত এই নিয়ে তোর ভাইকেও কিছু বলবি না। তার টপিক বাদ সাথে সুভাসিনীরও আজ থেকে এই টপিকে কোন কথা হবে না। আমরা আগে যেমন ছিলাম এখনও তাই থাকবো। মনে করবি এই সুভাসিনী আমাদের মাঝে ছিলই না কোন দিন। মনে থাকবে গার্লস?”

“ইয়েস ক্যাপ্টেন!”

এটা শুনে আরুহি হাসলো সাথে রোজারাও হাসলো। কিন্তু ওঁরা ভালো করেই বুঝতে পারছে এই হাসির পেছনে লুকানো কষ্টগুলো হাজার হোক বেস্ট ফ্রেন্ড। ওরা দুজন আরুহিকে জরিয়ে ধরলো।

______________________

ওদিকে আবরার পানির দিকে তাকিয়ে আছে। ইমান আর নিবিড় পেছনে দাঁড়ানো হুট করে ইমান বলল,,

“ফিরিয়ে দেওয়ায় কষ্টই যখন পাবি তাহলে ফিরিয়ে দিলি কেন?”

‘কিছু সময় পরিস্থিতি আমাদের হাতে থাকে না। আমার মতে সবসময় পরিস্থিতি বুঝেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। তাছাড়া কারো ভালোর জন্য যদি নিজেকে আর তাকে কষ্টে ফেলতে হয় তাহলে সে কষ্ট নিতে আমি প্রস্তুত।”

“বুঝলাম না!”

“এত বুঝতে হবে না। সুভাসিনীর টপিক আজ এখানেই শেষ। এ নিয়ে তোদের মুখে যেন কোন কথা না শুনি।”

_________________

আরুহি ভাইকে সব জানায় ওর ভাই ও ওকে বোঝায় সময় দিতে থাকে। আরুহি তারপর থেকে আবরার কে একেবারে এড়িয়ে চলে। হুট হাট সামনে পড়ে গেলেও ও ওখান থেকে চলে যায়। এই জন্যই আবরার ও আরুহির থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে। কিন্তু আবরার টের পায় ওকে দেখলেই আরুহির চোখ ভিজে উঠে।

সেদিনের দুই মাস পরই আরুহিকে আর দেখা যায় না। কেউ কোন খোঁজ খবর দিতে পারে না। এমনকি রোজারাও এ সম্পর্কে কিছু জানে না। হুট করেই আরহাম আর আরুহি উধাও হয়ে যায়। তার কয়েকদিন পরেই আরুহি রোজা আর আফরিনের সাথে যোগাযোগ করে আর জানায় ওরা লন্ডনে চলে গেছে।

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। অতীত শেষ ওদের। লাভস্টোরি টা কেমন লাগলো জানাবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here