গল্প- #অন্যরকম_বসন্ত পর্ব- ১

0
2634

মা হুট করেই বললেন, আজ রিতির বিয়ে। রিতি তো অবাক, বিয়ে মানে! “মাত্র অনার্স শেষ করলাম, একটা লম্বা ব্রেক নেওয়া হলো না, কোথাও আলাদা ভাবে ঘুরতে যাওয়া হলো না, নিজের ক্যারিয়ার গুছাতে পারলাম না,এখনি বিয়ে কীসের? হ্যাঁ, কীসের বিয়ে?”
মা ধমকালেন, “সেসবের আমি কী জানি? তোর বাবাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর। খবরদার, আমার সাথে চেঁচাতে আসবি না একদম।”
বাবার ঘরে গিয়ে রিতি দেখল, বাবার ছোট বেলাকার বন্ধু শফিক আংকেল এসেছেন। দু’জনে মিলে জমিয়ে তাস খেলছেন। আংকেলের সামনে তো বাবাকে আর ধমক দেওয়া যায় না, তাই রিতি ডাকলো,
“একটু এদিকে এসো তো বাবা। কথা আছে।”
“কী বলবি এখানেই বল না। দেখছিস তো আমি খেলছি।” বাবা বেজায় বিরক্ত হলেন। রিতি গমগমে গলায় বলল,
“মা বলল, আজ নাকি আমার বিয়ে! এসব কী বাবা?”
বাবা খেলা থামিয়ে এবার একটু হাসলেন। রিতিকে হাত ইশারায় কাছে ডেকে পাশে বসালেন। বললেন,
“একটা সময় পর সব মেয়েরাই বাবা-মায়ের গৃহ ত্যাগ করে। সেটা তো জানিসই মা। ভেবে নে তোরও সময় এসে গেছে।”
“তাই বলে এরকম হুট করে? কোনো প্রিপারেশনের প্রয়োজন নেই? আর পাত্রই বা কে?”
এইবার কথা বললেন শফিক আংকেল।
“পাত্র কে তুমি চেনো না। আমার একমাত্র ছেলে, সাদিক।”
“সাদিক ভাই!” রিতি বিস্ময়ে বোবা বনে গেল।

সাদিক ভাই গুণে গুণে সাত বছরের বড় রিতির চেয়ে। অথচ বয়স যেন সেই সাত-আট বছরের কিশোরের কোটায় আঁটকে রয়েছে। যে ছেলে এখনো পাশের বাসার বাড়ি থেকে আম চুরি করে খায়, আম চুরির অপরাধে রাস্তায় কান ধরে পঞ্চাশ বার উঠবস করে, আবার বেহায়ার মতো বলে,
“আমি কী আরও পঞ্চাশ বার কান ধরে উঠবস করব আংকেল? তবুও আমাকে দুটো আম দিয়েন। আপনার গাছের আম গুলো দারুণ মিষ্টি!” সেই ছেলে আর যাইহোক, স্বাভাবিক মস্তিষ্কের কিছুতেই হতে পারে না। আর এরকম একটা গাছ বলদের সঙ্গে রিতিকে আজীবন কাটিয়ে দিতে হবে? এ কী সম্ভব? রিতি কাঁদোকাঁদো মুখ করে উঠে চলে এলো। বাবা আর আংকেল আবার খেলায় মনোযোগ দিলেন।

দুপুরে খাবারের পর ভাতঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো রিতি। মা তখনি এসে গোপন সংবাদের ন্যায় বললেন, “জামাই এসেছে রিতি। বিয়ের আগে তোর সাথে একটু আলাদাভাবে কথা বলতে চায়।”
“জামাই টা কে?”
“কেন রে? সাদিকের কথা বলছি।”
রিতি চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“বিয়েটা কী হয়ে গেছে মা?”
“হয়নি, কিন্তু হতে কতক্ষণ?এইতো সন্ধ্যের পর কাজী এলে তিন কবুল পড়লেই তো বিয়ে শেষ।”
“মা এরকম একজন মাথা পাগল লোকের সঙ্গে আমার বিয়ে কী করে দিচ্ছো তোমরা? তোমাদের কী এতটুকু দয়ামায়া হচ্ছে না আমার উপর? নাকি তোমাদেরও মাথা খারাপ হয়ে গেছে?” রিতির রাগ লাগলো খুব।
মা ধমকের সুরে বললেন,
“চড় দিয়ে একদম থ্যাতা করে ফেকবো। জামাইকে পাগল বলছিস! তুই নিজে কী স্বাভাবিক? শোন রিতি, তোর ভালোর জন্যেই বিয়েটা দিচ্ছি। বিয়ের পর রাতে ভূত দেখার বাজে অভ্যাস টা তোর কেটে যাবে দেখিস।”
রিতি বিড়বিড় করে বলল,
“তুমি আমাকে আস্তো এক ভূতের হাতে তুলে দিচ্ছো মা। আমার যদি একটা প্রেম ট্রেম থাকতো,আমি এক্ষুনি পালিয়ে যেতাম মা। এক্ষুনি..”

মা বেরিয়ে যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সাদিক ভাই রুমে প্রবেশ করলেন। নত মস্তকে, যেন মাথাটা ঘাড় থেকে খুলে চলে আসবে এক্ষুনি। পুরুষ মানুষের এত লজ্জা ভিত্তিহীন। রিতির রাগে এবার পিত্তি জ্বলতে শুরু করল।
“কে..কেমন আছো রিতি?” প্রশ্ন করেই খিকখিক করে হাসলেন সাদিক ভাই। রিতির মনে হলো, এরচেয়ে বাজে এবং বিশ্রী হাসি সে তার পুরো জীবনে আর একটিও দেখেনি। রিতি অশান্ত মনে বিড়বিড় করে বলল, “আপনার কারণে আমি ভালো নেই সাদিক ভাই।” কিন্তু মুখে বলল, “আমাকে বিয়ে করতে চান আপনি?”
সাদিক ভাই প্রশ্ন শুনে কয়েক গুণ বেশি লজ্জা লজ্জা ভাব করল। মাথাটা আরও নিচে নামিয়ে এদিক ওদিকে অভিনয় করে মাথা দোলালো। তারপর মেয়েদের মতোন অস্পষ্ট স্বরে হালকা গলায় জবাব দিলো, “হুঁ..”
রিতির গলা শুকিয়ে এলো। একে এক মিনিটই সহ্য হচ্ছে না, সারাবছর কী করে একই ছাদের তলায় বসবাস করবে!
“কেন চান?” কঠিন গলায় প্রশ্ন করে রিতি।
সাদিক ভাই আহ্লাদী স্বরে ফটাফট জবাব দিলো, “কারণ তুমি সুন্দর রিতি।”
রিতি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।
“বাহ! কী দারুণ লজিক আপনার! আমি সুন্দর তাই আমাকে বিবাহ করিতে প্রস্তুত আপনি? চমৎকার। তা সাদিক ভাই, আপনি কী জানেন, আমার এই সৌন্দর্য খুবই অল্প সময়ের জন্য। একটা সময়ে আমি বুড়ো হয়ে যাবো। আমার চেহারায় ভাঁজ আসবে। আমাকে দেখতে অসুন্দর লাগবে। তখন কী করবেন আপনি? ছেড়ে চলে যাবেন?”
সাদিক ভাই চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা চুলকালো। বহুত কষ্টে নিজের রাগটাকে সামলে রেখে রিতি বলল, “শুনুন সাদিক ভাই, আপনাকে একটা ভালো উপদেশ দেই। মিশরের মেয়েরা সবচাইতে বেশি সুন্দর হয়। আমি শুনেছি এটা। ওরা বুড়ো হয়ে গেলেও সুন্দর থাকে। ওদের রূপ লাবণ্য কখনোই কমে না। আপনি আপনার বাবা’কে গিয়ে বলবেন, আপনি আমাকে নয়, মিশরের কাউকে বিয়ে করতে চান যে সর্বদা সুন্দর থাকবে। কী বুঝতে পারলেন তো?”
সাদিক ভাই ‘হ্যাঁ’ ভঙ্গিতে মাথা দোলালো।
“আর আংকেল যদি রাজী না হয়, তাহলে আপনি জোরাজুরি করবেন। বলবেন যে, আপনি বিষ খাবেন দরকার হলে তবুও আমাকে বিয়ে করবেন না। ওকে?”
সাদিক ভাই হতভম্ব গলায় বলল, “আমি বিষ খেয়ে ফেলবো?”
“আহারে! সত্যি সত্যি কে খেতে বলছে? এটা একটা টোটকা জাস্ট। যাতে আপনার প্ল্যান সাকসেসফুল হয়। ওকে?”
সাদিক ভাই দোনোমোনো করে উঠে চলে গেলেন। রিতি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই গাছ বলদকে যে যা বোঝাবে, তাই বুঝে বসে থাকবে। এর সাথে কী করে সংসার করা যায়!
সাদিক ভাই তার বাবা’কে কী বলল বা বোঝালো কে জানে, তবে সন্ধ্যের পর হওয়া বিয়েটা বিকেল শেষ না হতেই হয়ে গেল। কাজীর সামনে কাঁদতে কাঁদতে তিন কবুল বলল রিতি। শ্বশুর বাড়ি আসার সময় একটুও কাঁদলো না সে। বোঝা হয়ে গিয়েছিল রিতি,তাই জন্যে এত দ্রুত তাকে যার তার সঙ্গে গছিয়ে দেওয়া হলো! রিতিও সিদ্ধান্ত নিলো, আর যাবে না বাবার বাড়ি। বাবার বাড়ি বলতে তার কিছু নেই। এই পৃথিবীতে তার আপন বলতে কেউই নেই…

সাদিক ভাইয়ের ঘরে তাকে বসিয়ে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই রিতির একমাত্র ননদ সাথী মেরুন কাতান নিয়ে রুমে ঢুকলো। রিতি ও’কে দেখেই চেঁচালো, “আমি পরব না শাড়ি টারি। এই বিয়েও আমি মানি না।”
“কিন্তু বাবা পরতে বলল যে ভাবী!”
“বলুক।”
রিতি অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। দরজায় তখনই শফিক আংকেল এসে দাঁড়ালেন। সাথীকে চলে আসতে বললেন। রিতিকে একা থাকতে দিলেন। রিতি চাদর খামচে চুপচাপ বসে রইলো। এক দৌড়ে কোথাও পালিয়ে যেতে পারলে বাঁচতো সে…
দরজায় কারো অবয়ব টের পেয়ে রিতি মুখ তুলে তাকাল। দেখল নতমস্তকে সাদিক ভাই এসে দাঁড়িয়েছেন। তার চোখ ভর্তি পানি।
“এই, আপনি এদিকে আসেন। আপনি কী বলেছেন আংকেল কে? তারপরও আমাদের বিয়েটা হলো কেন?” নিজের রাগ কোনোক্রমেই আঁটকে রাখতে পারল না রিতি। সাদিক ভাই ধমক খেয়ে কাইকুই করে বললেন, “আমার কী দোষ রিতি! আমি তো বলেছিলাম, আমাকে মিশরের মেয়ে এনে দাও। আমি রিতিকে বিয়ে করব না।”
“তারপর?”
“বাবা আমাকে ঠাস করে চড় মারলেন।”
“আংকেল আপনাকে চড় মারলেন?”
“হুঁ, তারপর বললেন, তোমাকে না বিয়ে করলে তোমার চৌদ্দ গুষ্টি কে বিয়ে করতে হবে। আমিও ভেবে দেখলাম, চৌদ্দ গুষ্টির থেকে তোমাকে একা বিয়ে করা সোজা। ওত টাকাও নেই আমার। চৌদ্দ গুষ্টিকে খাওয়াবো কী! তাই তোমাকেই বিয়েটা করে ফেললাম। তুমি খুশি হওনি রিতি?”
রিতি রাগ চেঁপে ফোঁসফোঁস করে বলল, “হুম, আমি অনেক খুশি হয়েছি। এত যে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। এবার যান আপনি… আমাকে উদ্ধার করুন। পাগল জানি কোথাকার!!”
সাদিক ভাই ভ্রু কুঁচকে বললেন, “আমাকে তোমার কাছে পাগল মনে হয় রিতি? তাকাও তো আমার দিকে। বলো, আমি পাগলের মতো?”
রিতি একটু নিভলো। পরিপূর্ণ দৃষ্টি মেলে সাদিক ভাইয়ের দিকে তাকাতে গিয়ে আরেক দফায় হতভম্ব হলো। হাফ প্যান্টের সাথে লেডিস স্যান্ডেল, নিশ্চয়ই সাথীর! একটা কটকটে গোলাপী রংয়ের টি-শার্ট। বাম হাতে আবার ভীষণ সুন্দর দেখতে ঘড়ি লাগিয়েছে। এ পাগল নয়, রিতি পাগল! রিতির মাথায় গন্ডগোল!
রিতি এক আকাশ বোঝাই অভিমান চাপিয়ে এদিক ওদিক মাথা দোলাতে দোলাতে বলল, “না সাদিক ভাই। আপনি মোটেও পাগল নন। আপনার মতো সুন্দর মানুষই হয় না! কত্ত পরিপাটি! আসুন, আপনার সাথে হাত মেলাই আমি। আপনার মতো লোকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ধন্য করি জীবনটা।”
সাদিক ভাই সত্যি সত্যি হাত খানা বাড়িয়ে ধরলেন। রিতি এবার শব্দ করেই কেঁদে উঠল। কোনো রকমে হাত দিয়ে মুখ চেপে অনুরোধের স্বরে বলল, “আমাকে একটু একা থাকতে দিন সাদিক ভাই। আমার ভালো লাগছে না কারো উপস্থিতি..”
বিনাবাক্য ব্যয়ে সাদিক ভাই প্রস্থান করলেন। বিয়ে নিয়ে কত্ত স্বপ্ন ছিল রিতির! রাজপুত্রের ন্যায় কেউ এসে তাকে হীরার আংটি পরিয়ে বিয়ের জন্য প্রপোজ করবে। তার ব্যক্তিত্ব হবে এমন, রিতি মিনিটে মিনিটে শুধু ক্রাশ খাবে। তার কথায় হবে মুগ্ধ, ভালোবাসায় বিভোর হয়ে থাকবে। এই জন্যে জীবনে একটা প্রেমও করল না রিতি। অথচ কোন ঘোড়ার ডিম জুটলো তার কপালে! কষ্টে, দুঃখে রিতি বুক ফাটিয়ে বাকিটা সময় চুপচাপ কেঁদেই গেল…

রাতের বেলা খেতে ডাকা হলে রিতি গেল না। ঘুমের ভান ধরে শুয়ে রইলো। সাথী ব্যর্থ চিত্তে রুম ত্যাগ করলে রিতি পুরোপুরি ভাবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল কী ফেলল না, ওমনি সাদিক ভাই হাজির হলেন। রিতি স্তব্ধ হয়ে গেল। অফ হোয়াইটের ভেতর মেরুন কালারের দারুণ দেখতে একটা শেরওয়ানি পরেছেন সাদিক ভাই। বুকের মাঝটায় দুটো বোতাম খোলা। রোমশ বুকটা উঁকি দিচ্ছে। রিতি ঢোক গিললো। লোকটি নিঃসন্দেহে সুপুরুষ, কিন্তু এত আলাভোলা গোছের হলে চলে কী করে! হুট করে সাদিক ভাইয়ের মাথায় লাল রঙের ক্যাপ দেখে রিতির সমস্ত উত্তেজনা থমকে গেল। বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। শেরওয়ানির সঙ্গে মাথায় ক্যাপ! এই লোক জাস্ট একটা অসম্ভব!!

সাদিক ভাই-ই প্রথমে কথা বললেন, “আমি জানতাম তুমি ঘুমাওনি রিতি।”
রিতি জবাব না দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।
“তুমি এমন গোমড়া পেঁচি কেন রিতি? একটু হাসি নেই মুখে। সারাক্ষণ এক আকাশ বরষা মুখে নিয়ে থাকছো। কেন রিতি?”
রিতির বুকে কামড় লাগলো। যাক, কেউ তো অন্তত তার দুঃখের কথাগুলো জানতে চাইলো! রিতি ভাবলো, সাদিক ভাইকে ভেতরের কথাগুলো শেয়ার করবে। সময় চেয়ে নিবে। সাদিক ভাই কে শেখালে সেও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। রিতি আগ্রহী মনোভাব নিয়ে সাদিক ভাইয়ের মুখের দিকে তাকাতেই সাদিক ভাই বললেন, “আমার এক বন্ধু ছিল রিতি। জনি নাম করে। ও তোমার মতো সারাক্ষণ মুখ অন্ধকার করে বসে থাকতো। অনেক জেদী ছিল! খিটখিটে মেজাজ। আমরা কেউ ওর সঙ্গে মিশতাম না আর। পরে শুনেছিলাম, ও’কে জ্বিনে ধরেছিল রিতি। এই কারণে ও ওমন করতো। আমার এখন মনে হচ্ছে, তোমাকেও জ্বিনে ধরেছে রিতি। এসব আছর করা ভীষণ খারাপ! আমি বরং বাবার সাথে গিয়ে কথা বলি। একটা হুজুর টুজুর…”
রিতি আর শুনতে চাইলো না। কানে হাত চেপে আর্তনাদের স্বরে চেঁচালো সে।
“জাস্ট স্টপ! স্টপ ইট! আমাকে জ্বিনে ধরেছে? আপনি নিজেই তো একটা জ্বিন। আমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। আর একটাও ফালতু কথা না। বললে আপনার গলা টিপতে দুইবারও ভাববো না বলে দিচ্ছি!”
সাদিক ভাই হাসলেন, রিতির রাগ চড়লো। সে ভেবেছিল কোথায় এই পাঠাটাকে নিজের দুঃখ, কষ্ট গুলো শেয়ার করবে! কিন্তু নাহ… এই বলদ বলদই থাকুক। এর চালাক হবার কোনো প্রয়োজন নেই। রিতির দরকার নেই সাদিক ভাইকে। একটা চাকরি পেলেই এই বাড়ি থেকে হাওয়া হয়ে যাবে সে। কেউ খুঁজে পাবে না… কেউ না!

রিতি শুয়ে পড়ল। সাদিক ভাই একা একা ভুজুর ভুজুর করলেন কতক্ষণ। রিতি সব শুনেও না শোনার ভান করলো। গাঢ় গাঢ় নিঃশ্বাস ফেলল, যেন সে ঘুমিয়ে গেছে। এক সময়ে সাদিক ভাই নিজের পটরপটর বন্ধ করে শুয়ে পড়লেন রিতির পাশ ঘেঁষে। রিতির দমবন্ধ দশা। সাদিক ভাই কী স্বামীর অধিকার চাইবে? চাইলেও রিতি দিবে না। সব কিছু এত সোজা? হাতের মোয়া নাকি!
কিন্তু রিতিকে নিশ্চিন্ত করে দিয়ে সাদিক ভাই ঘুমিয়ে পড়লেন। রিতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। সাদিক ভাই গাঢ় ঘুমে তলিয়ে গেলেও রিতি দু’চোখের পাতা একত্র করতে পারল না। বুক ভেঙে কান্না আসছে তার। সে নিরবে চাপা দীর্ঘশ্বাস মেশানো কান্না কেঁদে গেল। ভোরের দিকে চোখ জোড়া ভারী হয়ে বুঁজে আসতে চাইলো বারংবার। রিতি নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়ল। সেই ঘুম অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। শেষ রাতের দিকে একটা বিকট দুর্গন্ধে নাকে চেপে বসতেই রিতি ধড়মড়িয়ে জেগে উঠল। গন্ধের উৎস কোথা থেকে আসছে তা বুঝতে পেরে সে তৎক্ষনাৎ বিছানা ছেড়ে নেমে পড়ল। একবার পেছন ঘুরে ঘুমন্ত সাদিক ভাইয়ের দিকে তাকাল, ঠিক তখনি দ্বিতীয় দফায় গ্যাস নির্গমন করল সাদিক ভাই। রিতি আলো-আঁধারির বারান্দায় উপস্থিত হয়ে দরজা ভেতর থেকে আঁটকে দিয়ে দেয়াল ঘেঁষে মেঝেতে বসে পড়ল। একটা মানুষ কী করে এত কুৎসিত ভাবে গ্যাস ছাড়তে পারে! যখন তার পাশে আরও একজন ঘুমিয়ে রয়েছে সেটি জানার পরও! ভেবে পেল না রিতি। বাহিরে তখনো পুরোপুরিভাবে আলো ফোঁটেনি। অন্ধকারের কুয়াশা… রিতি সেদিকে তাকিয়ে রাগ-দুঃখের তেতো মিশ্রণ নিয়ে কাঁদতে শুরু করল।

(চলবে)
গল্প- #অন্যরকম_বসন্ত
পর্ব- ১
লেখিকা- #অলিন্দ্রিয়া_রুহি
[গল্পটা প্রতিদিন দেওয়ার চেষ্টা করব। মাঝে মাঝে একটু গ্যাপ যেতে পারে। এবং এটি একটি রম্য গল্প হবে। আশা করি,সবার ভালো লাগবে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here