গল্পের নাম : বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ৪০: বৃষ্টি
লেখিকা: #Lucky_Nova
রীতিমতো সবাইকে চমকে দিয়ে জোয়েল সাহেব আর দিপালি সকাল সকাল এরোনের বাড়িতে চলে এসেছেন। প্রথমে সবাই খানিক ঘাবড়ে গিয়েছিল। ভেবেছিল আবার কিনা মত বদলে বলে বসে, মিহিকে নিয়ে যেতে এসেছি।
কিন্তু সেসব ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। তেমন কিছুই বললেন না জোয়েল সাহেব। বরং নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিকঠাক করতে এসেছেন। অর্থাৎ তার পক্ষ থেকে মেয়ের খুশিতেই তার খুশি।
তবে দুই পরিবার থেকেই অনুষ্ঠানিকভাবে একবার বিয়েটা হোক সেটা চান তিনি।
এতে এই পরিবারও খুশির সাথে রাজি হলেন।
তাই সেভাবেই আয়োজন করার ব্যবস্থার কথা চলল।
তবে সমস্যা বেধে গেল মিহিকে নিয়ে যাওয়ার কথা নিয়ে। বিয়ে হবার আগ পর্যন্ত মিহিকে বাবার বাড়িতে থাকতে হবে। এটা শুনেই নাকচ করে দিল এরোন।
“থাক। বিয়ে তো একবার হয়েছেই। আর লাগবে না।” বিরক্ত হলেও নম্রতার সাথেই বলল এরোন।
মিহি লজ্জায় মাথা নুয়ে নিলো।
হেসে ফেললেন আরোহী আর দিপালি। খুকখুক করে কাশলেন রুহুল সাহেব।
“লাগবে৷ কেউ সেভাবে জানেই নি যে তোর বিয়ে হয়েছে। রীতিনীতি আছে না?” বললেন আরোহী।
“সব ঠিক আছে। কিন্তু এখানে থেকে বিয়েটা হবে। মানে মিহি এখানেই থাকবে।”
সবাই আবারো হেসে ফেলল। যেন কমেডি মুভি চলছে। কিন্তু এরোনের বিরক্তি, অস্বস্তি, অসহ্য সব একসাথে লাগছে।
“বিয়ের আগে মেয়ে বাবার বাড়িতেই তো থাকবে। এটাই নিয়ম। মাত্র সাতদিনের ব্যাপার। এর মধ্যেই ছোটখাটো করে সব আয়োজন।” স্বাভাবিক ভাবে বললেন জোয়েল সাহেব।
এরোন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। এই লোক বলেছে মানে নিয়ে তবেই যাবে। সেটা বুঝতে আর বাকি নেই এরোনের।
ও বুঝে পায় না যে এই শ্বশুরের কি কাজ নেই! খালি বউটাকে নিয়ে টানাটানি করতে চায়! কে দিলো হঠাৎ এই ফালতু বিয়ের বুদ্ধি! বউকে নাকি বাপের বাড়ি থাকা লাগবে! যত্তসব।
“তাহলে বেশ! এই কথাই রইলো।” প্রসন্ন মুখে বললেন রুহুল সাহেব।
“হ্যাঁ। তাহলে আমরা আজই মিহিকে একবারে নিয়ে যেতে চাই।” জোয়েল সাহেবের এই কথায় থমকে গেল এরোন।
“আজই মানে?” বলে উঠল এরোন।
“আজ যাবার সময় নিয়ে যাব।” সহজ গলায় বললেন জোয়েল সাহেব।
“কিন্তু বিয়ে তো এখনো সাতদিন দেরি, তাহলে একদিন আগে নিলেই তো হয়।” উত্তেজনা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল এরোন।
এরোনকে চোখ রাঙালেন আরোহী।
“থামবি তুই? এমন করছিস যেন সাত বছরের জন্য নিয়ে যাচ্ছে!”
পুনরায় হেসে উঠল সবাই। অতিষ্ঠ হয়ে উঠল এরোন। পারলে মিহিকে নিয়ে কোথাও চলেই যায় ও।
মিহি নিজেও যেতে চায় না। কিন্তু এরোনের এমন কথাগুলোতে লজ্জায় পড়ে যাচ্ছে ও। লোকটা বড়দের সামনেও কীভাবে বলে যাচ্ছে এসব কথা।
শেষ অব্দি নিয়ে যাওয়ার বিষয়টা পাক্কা হয়েই গেল। এরোন চাইলেও মিহিকে রাখতে পারবে না। কারণ পুরো পরিবারের বিপক্ষে গিয়ে মিহিকে রাখা সম্ভবও না।
মিহির সাথে আলাদা কথা বলাও সম্ভব হচ্ছে না। সকালের থেকে সারাক্ষণ আরোহীদের সাথেই ছিল মিহি। বিয়ের শাড়ি গহনা দেখানো আর বিভিন্ন আলোচনার চক্করে এরোনের কাছে ইচ্ছা থাকলেও যেতে পারে নি মিহি। দিপালির সাথে আরোহীর রুমটাতেই বসে থাকতে হচ্ছে।
এক পর্যায়ে আর না পেরে এরোন সরাসরি আরোহীর ঘরে এসে সোজাসুজিই মিহিকে টেনে নিয়ে গেল। বলল, “কথা আছে একটু।”
ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটলো যে আরোহী আর দিপালি চেয়ে রইলেন হা করে।
এভাবে নিয়ে আসায় মিহি লজ্জায় আরক্ত হয়ে গেল।
রুমে এসে বলল, “আপনার কি কখনো হুঁশজ্ঞান হবে না? মা ছিল এমনকি..।”
“তুমি আমার কথা না ভেবে সবসময় অন্যদের নিয়ে এত ভাবো কেন?” চোখ রাঙালো এরোন।
চুপসে গেল মিহির মুখ।
“তোমার বাবার সমস্যা কী আমি বুঝি না! চাইলেই এই বাড়ি থেকে বিয়েটা হতে পারে। আমরা আগে থেকেই বিবাহিত। এখন আরো দশবার বিয়ে দিক সমস্যা না, কিন্তু আলাদা কেন থাকতে হবে?!” অতিষ্ঠ হয়ে বলল এরোন।
মিহি ঠোঁট চিপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করল। কিন্তু সেটা দৃষ্টি এড়ালো না এরোনের।
আরো রাগলো সে।
“মজা পাচ্ছ তুমি?”
মিহি মুখ চুপসিয়ে দ্রুত না সূচক মাথা নাড়লো।
“তোমাকে দেখে তো মনে হয় বেশ আনন্দ পাচ্ছ!” কাটখোট্টা গলায় বলল এরোন। মুখে গুমোট ভাব ছেয়ে গেল তার।
মিহি মুচকি হেসে তাকালো। এগিয়ে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো এরোনকে। একটু শান্ত হলো এরোন। সেও জড়িয়ে ধরলো মিহিকে। দুটি হৃদয় এক হয়ে গেল পুনরায়।
তবে এক মিনিটও বোধ হয় হতে পারলো না। তার আগেই নিচ থেকে ডাক পরলো।
বিরক্তিতে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল এরোন।
মিহি দ্রুত হাত আলগা করে সরে আসতে চাইল। শশব্যস্তভাবে বলল,”ছাড়ুন৷ কেউ আসবে।”
“সবাই নিচে। আসবে না। আরেকটু থাকো প্লিজ।”
“বিয়ে হয়ে গেলে সারাজীবন পাবেন। এখন ছাড়েন দয়া করে। অপেক্ষা করছে সবাই। কি মনে করবে?”
“তোমার খালি বাকিদের চিন্তা।” হতাশ হয়ে বলে মিহিকে ছাড়ল এরোন।
মিহি চোখের দিকে তাকালো কিছুক্ষণ। তারপর হঠাৎই এরোনের শার্টের কলার ধরে টেনে অধরে আলতো ভালোবাসার উষ্ণ স্পর্শ এঁকে দিলো।
এরোন বিস্মিত হয়ে গেল কয়েক মুহূর্তের জন্য। মৃদু হেসে মিহিকে কাছে টানতে চাওয়ার আগেই মিহি হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো ওকে।
বিমূঢ় হয়ে তাকালো এরোন। মিহি দুষ্টুমি মাখা হাসি হেসে পিছাতে পিছাতে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
হাসিটা এরোনের বুকে গেঁথে গেল একদম। হেসে ফেলল সেও।
?
অতঃপর তারা নিয়ে গেল মিহিকে। শেষে অবশ্য এরোন বলেছিল ও গাড়ি করে পৌঁছে দিক। কিন্তু জোয়েল সাহেব বললেন তারা নাকি গাড়ি নিয়েই এসেছেন। অর্থাৎ আর দরকার নেই।
সবাই-ই মিটমিটিয়ে হাসছিল। সবাই এসবে আনন্দ পাচ্ছে মনে হয়। এদের সবারকে বউয়ের থেকে আলাদা করে রাখা উচিত।
মিহি চলে যাবার পর সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ভালো লাগছে না কিছুই। এখনো এক ঘণ্টাও হয়ে নি এর মধ্যেই অস্থির লাগছে। তার উপর এখনো নাকি সাত দিন।
“কি হয়েছে? দেবদাস হয়ে আছিস যে?”
এরোন সোফার পিছনে মাথা হেলিয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। এরিকের গলা শুনে শুধু একবার তাকালো।
“তুই আজ এত তাড়াতাড়ি ফিরলি যে?” সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললেন আরোহী। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।
“ম্যাচ শেষ তাই।” হাসিমুখে বলল এরিক। তারপর এরোনকে উদ্দেশ্য করে চোখ বাঁকিয়ে বলল,”তোর কি হয়েছে? মিহি এখনো ক্ষমা করে নি?”
এরোন কড়া চোখে তাকালো একবার। গতরাতে ওর কথা শুনতে গিয়েই মিহি প্রচন্ড রেগে গিয়েছিল। যদিও পরে সব ঠিকই হয়েছে। এজন্যই কিছু বলল না এরোন।
“ওর বউকে নিয়ে গেছে।” হাসি চেপে বললেন আরোহী।
এরোন সরু চোখে তাকালো মায়ের দিকে।
“ম..মানে?” চমকালো এরিক। ভয়াবহ ব্যাপার। সামান্য নাটকে কি তাহলে বিস্তর প্রভাব পড়লো! মিহি কিনা রেগে মেগে চলেই গেল!
“মিহির বাবা আবার বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব জানিয়েছেন। আবার বিয়ে হবে তোর ভাইয়ের।”
কথাটা কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে বুঝে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল এরিক। তাও ভালো।
“এজন্যই দেবদাস হয়ে গেছে তাই তো?” ভ্রু উঁচু করতে করতে বলল এরিক।
এরোন তাকালো সরু চোখে।
“যাক ভালো। একটা বড়সড় পার্টি হচ্ছে শেষ পর্যন্ত।” বলল এরিক।
“মাত্র সাত দিন। এই সাত দিন তোর টো টো করা বন্ধ। হেল্প করবি আমাকে।” আদেশের সুরে বললেন আরোহী।
মুখটা ছোট হয়ে গেল এরিকের। তাও কিছু করার নেই। সাত দিনে এতো বড় আয়োজন করাও যে সহজ নয়। সাহায্য তো করাই লাগবে।
আরোহী কী কী করবে সে নিয়ে আলোচনা শুরু করলো। এরিক হাই তুলতে তুলতে শুনলেও এরোনের এসব কানেই যাচ্ছে না। এক পর্যায়ে এসে উঠে চলে গেল সে।
“আরে কই যাস! কথা শেষ হয় নি তো!” ভ্রুকুটি করে বলে এরোনের দিকে তাকালো আরোহী। এরোন থামলো না। চলে গেল উপরে।
“বাদ দেও, মা। ও এমনিও কোনো কাজে আসবে না। বউয়ের শোকে কাতর প্রায়। সব আমারই করা লাগবে।” হতাশ হওয়ার ভান করে বলল এরিক।
আরোহী গেস্টদের নাম তালিকাভুক্ত করে নিলেন। বিয়েতে খুব কাছের মানুষদেরই দাওয়াত করবেন। কারণ মাত্র সাতদিনে মিহির বাবা এত মানুষের আয়োজন করতে পারবে কিনা!
?
বাসায় পৌঁছাতেই বাসাভর্তি লোকজন পেল মিহি। পাড়া প্রতিবেশিসহ কাছের আত্মীয় স্বজন। অর্থাৎ জোয়েল সাহেব আগে থেকেই সবাইকে জানিয়ে তারপরই প্রস্তাব নিয়ে গেছেন।
মিহিকে দেখেই সবাই ঘিরে ধরলো। এপ্রশ্ন ওপ্রশ্ন করেই যেতে লাগল এরোনকে নিয়ে।
অনেকক্ষণ পর সবাইকে এড়িয়ে রুমে আসতে পারলো মিহি। এরোনকে ফোন দেওয়ার জন্যই সবাইকে ফেলে রুমে আসা। কিন্তু দুঃখের বিষয় এবারো ফোনটা এরোনের বাসাতেই রয়ে গেছে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মুখ দিয়ে বিরক্ত সূচক শব্দ করলো মিহি।
অর্নি ঢুকলো। দৌড়ে এগিয়ে এসে কোমড়ে হাত রেখে তদারকি করে বলল,”বাব্বা, মিহি দিদি! মাত্র দুদিন মায়ের সাথে মামা বাড়ি গেলাম আর এর মধ্যেই এত কিছু হয়ে গেল! ইস ভালো ভালো মোমেন্টেই আমি থাকতে পারি না। আবার নাকি সিনেমার মত কাহিনী হয়েছিল?”
মুখটা চোখ মুখ কুচকে কালো করে ফেলল অর্নি। আফসোস হচ্ছে তার।
মিহি বিহ্বল হয়ে বলল, “সিনেমার মত কাহিনী মানে?”
অর্নি একটু নাটকীয় ভঙ্গি করে জোয়েল সাহেবকে নকল করে বললেন, “আমার মেয়েকে আমি দেবো না। এ বিয়ে জোর করে হয়েছে। আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে।”
ফিক করে হেসে দিলো মিহি। অর্নিও পারে বটে!
“তুই কী করে জানলি এসব?”
“কাকি বলেছে। ইস আমি থাকলাম না কেন?” ঠোঁট উলটে ফেলল অর্নি।
মিহি ওর চুলগুলো অগোছালো করে দিয়ে কপট চোখ রাঙানি দিয়ে বলল,”বেশি পাকছিস দিন দিন।”
হাসলো অর্নি।
“চলো এখন হাতে মেহেদি দিয়ে দিবা আমাকে।”
“আজ নাকি?” অবাক হয়ে বলল মিহি।
“জানি আজ না। কিন্তু কাল পরশু তোমরা বড়রা দিবা। যার জন্য কোনোবার আমি দিতেই পারি না মেহেদি! সবাই বলে পরে পরে।” অভিযোগের কণ্ঠে বলেই মিহিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল অর্নি।
মিহি কিছু বলার সুযোগ অব্দি পেল না আর।
অনেক রাত পর্যন্তই হৈ-হুল্লোড় চললো। অর্নিকে মেহেদী দিতে গিয়ে আরো দশ বারোজন হাজির হয়ে গেল। এরা সবাই অর্নির বয়সের। না বললেই মন খারাপ করবে। তাই মিহি না করতে পারলো না। অগত্যা সবাইকে দিয়ে দিল।
মিহি বিছানায় গেল অনেক রাত করে। মেহেদি দিতে গিয়ে দুই হাত ব্যথা হয়ে গেছে ওর। খুব ক্লান্ত লাগছে শরীর।
এদিকে এরোনকেও ফোন করা হলো না। ইস, মায়ের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে এলেই হতো! কিন্তু এখন আর সম্ভব না। মা মাথা ব্যথার জন্য একটু আগেই শুয়ে পরেছেন। ও ঘরে বাবাও আছে। অন্য কারো ফোন জোগাড় করে ফোন দেওয়া যায়। কিন্তু এরোনের ফোন নম্বরই যে মুখস্থ নেই।
দমকা হাওয়া। সাথে ঝমঝম কল্লোল তুলছে বৃষ্টি।
বাতাসের দাপটে পর্দাটা উড়ছে লাগামহীন ভাবে। বৃষ্টির ছিটেফোঁটা এসে ঢুকছে ঘরটায়।
মিহি ড্রিমলাইট জ্বালিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে। শুকনো মুখে তাকিয়ে আছে বারান্দার দিকে।
মিহি নিজের সাথে কাউকে ঘুমাতে নেয় নি এটা ভেবেই যে এরোন আসবে। কিন্তু এই বৃষ্টির কারণে সে কী করে আসবে এখন? মুখটা মলিন হয়ে গেল মিহির। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বারান্দার দিকে। বিড়বিড়িয়ে বলল, “আমি খুব মিস করছি আপনাকে।”
রাত বাড়তেই বৃষ্টির ধারাও বাড়লো। মিহি অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর একটু চোখ বুজলো। যদিও ঘুম আসছে না৷ বারান্দা থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসে শরীর কেঁপে উঠছে ওর। তাও গায়ে একদমই কম্বল টানতে ইচ্ছে করছে না।
শীতে শিরশির করে উঠছে শরীর। এর মধ্যেই একটা ভেজা হিমশীতল হাতের স্পর্শ কেঁপে উঠলো মিহি। চোখ খুলে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেল।
নিঃশব্দে হাসলো এরোন। কয়েক ফোটা পানি গাল গড়িয়ে এসে পড়লো মিহির কপালে।
মিহি চট করে উঠে বসে চোখ ডলে নিলো।
হ্যাঁ এরোনই এসেছে। আগাগোড়া চোখ বুলিয়ে চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল মিহির। পুরো শরীর ভিজে একাকার।
মিহি উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে নিচু গলায় আহাজারি করে বলল, “আপনার মাথা ঠিক আছে? এভাবে ভিজেছেন কেন?”
মিহি এরোনের গালে গলায় হাত ছুয়ে দিতেই চমকে উঠল। হিমের মত ঠান্ডা।
“পুরো বরফ হয়ে গেছে আপনার গা।” আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে বলল মিহি।
মিহির এই উদগ্রীব, উৎকন্ঠা আর ব্যাকুল ভাব এরোনের খুব ভালো লাগছে। এরোন ঠোঁট এলিয়ে হেসে মিহির কথার বিপরীতে উদ্ভট একটা কথা বলে বসলো।
অন্য সময় হলে মিহি লাল হয়ে যেত। কিন্তু এখন এসব কথা কানে যাচ্ছে না। সে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের তোয়ালেটা খুঁজতে ব্যস্ত। দ্রুত চেয়ারের উপর থেকে সেটা এনে উদ্ধিগ্ন হয়ে বলল,”দেখি মাথা নোয়ান।”
এরোন ঠোঁটে ঠোঁট চিপে মাথা নুয়ে দিলো। মিহি দ্রুত মুছে দিতে দিতে ব্যস্ত গলায় বলল, “আপনাকে এভাবে কে আসতে বলেছে বলুন তো? এখন জ্বর আসলে?”
এরোন উওর দিলো না। চুপ করে মুগ্ধ চোখে মিহির ছটফটানি দেখতে লাগল। জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা থাকলেও পুরো শরীর ভেজা বলে সেটা করলো না এরোন। মিহির ঠান্ডা লেগে যাবে।
“এখন জলদি কাপড়গুলো খুলুন।” তাড়া দিয়ে বলল মিহি।
“ইচ্ছে করছে না।”
এরোনের এমন দায়সারা কথা শুনে চোখ পাকালো মিহি।
“অদ্ভুত! ইচ্ছে করছে না মানে কি?” বলতে বলতে মিহি নিজের হাতেই শার্টের বোতামগুলো খুলতে লাগল।
“আপনার কি কান্ডজ্ঞান নেই? এভাবে কেউ আসে?” তেজী গলায় বলল মিহি।
এরোন উওর দিলো না। মোহাচ্ছন্ন দৃষ্টিতে চেয়ে রইল মিহির দিকে।
মিহি গা থেকে শার্টটা খুলে ফেলে তোয়ালে দিয়ে গা মুছে দিতে দিতে বলল, “আমি আরেকটা শার্ট আনি আপনি গা মুছুন। নিন, তোয়ালে ধরুন।”
এরোন একদৃষ্টিতে তাকিয়েই রইল। তার নড়চড় নেই দেখে মিহি কপাল কুচকে তাকালো। চোখ রাঙিয়ে বলল, “হেয়ালি না করে চেঞ্জ করুন। ধরুন। কেন কথা শুনছেন না?”
এরোন নিঃশব্দে হেসে ধরলো তোয়ালেটা।
মিহি জলদি কাবার্ডের কাছে এগিয়ে গিয়ে আরেকটা শার্ট আর ট্রাউজার বের করলো।
এগিয়ে এসে এরোনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,”দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”
“জানো না কেন?”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো মিহি। লোকটার কি ঠান্ডা লাগে না নাকি! মশকরা করছে এখনো।
“উফ অসহ্য।” মিহি একপ্রকার ঠেলেই বাথরুমে পাঠালো এরোনকে।
‘পাগল একটা।’ বিড়বিড়িয়ে বলেই হাসলো মিহি।
মেঝেতেও পানি গড়াচ্ছে দেখে মিহি একটা অব্যবহৃত কাপড় দিয়ে চাপা দিয়ে ফেলল জায়গাটায়।
এরোন বেরিয়ে এলো মিনিট না পার হতেই। মিহি পিছনে ঘুরতে না ঘুরতেই হুট করে কোলে তুলল এরোন।
হালকা চমকালো মিহি।
এরোন ঘোর লাগা চোখে তাকালো মিহির দিকে। অন্যরকম স্বরে বলল, “ঠান্ডা লাগছে অনেক।”
মিহি চোখ নামিয়ে নিলো লজ্জায়।
অপ্রত্যাশিতভাবে তখনি নক পড়লো দরজায়।
মিহি সর্বোচ্চ চমকে উঠে তাকালো দরজার দিকে। এরোন বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে ফেলল।
চোর ধরা পড়লে মুখের যে অবস্থা হয় তেমন হয়ে গেল মিহির মুখ।
“এখন কী হবে?” দরজার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে উঠল মিহি।
(চলবে…)