গল্পের নাম : বৃষ্টি_থামার_পরে পর্ব ৩৮ : অভিমান

0
1916

গল্পের নাম : বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ৩৮ : অভিমান
লেখিকা : #Lucky_Nova

“এখন তো তোমার ওনাদের সাথে আবার কথা বলা উচিত। নিজে গিয়ে। তারা এসেছিল পরে ত কী কী বলে কয়ে বিদায় করে দিলে! শুকনো মুখে।” কটাক্ষ করে বললেন দিপালি।
মিহি চোখ মুছে সরে দাঁড়ালো।
“আমি খেয়ে যেতেই বলেছিলাম। না খেয়ে গেলে আমার কী দোষ? আর আমার মেয়ের সাথে তো অন্যায় হয়েছে। সেই তুলনায় তো ভালো ব্যবহারই দিয়েছি। কোনো রকম বাজে কথাও বলি নি।” উওর দিলেন জোয়েল সাহেব।
“দেখেছিস? তোর বাবার কথার ধরণ দেখেছিস? তারা তো সামান্য হলেও অপমানিত বোধ করেছেন। সে তুমি যতই ভালো ব্যবহারই করো না কেন! পুলিশ টুলিশের কথাও বলেছ তুমি।”
“আরে! আমার মেয়েকে ধরে বেঁধে রাখতে চাইলে আমাকে ত পুলিশের সাহায্যই নিতে হবে, তাই না?”
“এত ভালো পরিবার তাও ভরসা হলো না?”
“যেখানে আমার মেয়েকে জোর জবরদস্তি করা হয় সেখানে যে যতই ভালো হোক আমার যায় আসে না। আমার মেয়ে যদি থাকতে না চাইতো তাহলে আমি সত্যিই পুলিশ নিয়েই যেতাম।”
চোখ বড়সড় করে তাকালো মিহি।
দিপালি মুখ লটকিয়ে বললেন,”তো এখন? এখন মন বদলালে কেন?
“ও রাজি তাই।” কপাল কুচকে বললেন জোয়েল সাহেব।
দিপালি আরো কিছু বলতেন কিন্তু মিহি থামিয়ে দিয়ে মোলায়েম গলায় বলল, “হয়েছে। থামো তোমরা।”

?
মিহির পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেলা বারোটা বেজে গেল। পুরো রাস্তা ছটফটিয়ে শেষ হয়ে গেছে ও। অদ্ভুত অদ্ভুত সব চিন্তা ঘুড়ছিল মন মস্তিষ্কে। অবশেষে দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই বুক ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে।
মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ফেলে কলিং বেল দিলো মিহি। নীল ওড়নার প্রান্তভাগ হাতে চেপে ধরে অপেক্ষা করতে লাগল সে।
অবশেষে একটু সময় অপেক্ষা করতেই দরজা খুলে গেল। এরিক খুলল। একগাল হাসি দিলো সে। প্রচন্ড অবাক হওয়ার ভান করে বলল,”ওমা, তুমি!”
অপ্রস্তুত হয়ে গেল মিহি।
“সত্যিই কি চলে এসেছো?” চোখের পলক ঝাপরিয়ে জিজ্ঞেস করল এরিক।
এদিক ওদিক তাকাতে লাগল মিহি। হালকা করে মাথা নাড়ল একবার। এত অস্বস্তিতে ফেলছে কেন এই লোক!
“তোমার বাবা? রাজি সে?” হাস্যোজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল এরিক।

উফ! এই প্রশ্ন গুলো কি পরে করা যায় না নাকি? আগে ভিতরে তো যেতে দেবে!
“হ্যাঁ রাজি।” অস্থির হয়ে বলেই ভিতরে দেখার চেষ্টা করতে লাগল মিহি। ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল ও।
এরোন কোথায়? নেই? নাকি?
জানার জন্য তো ভিতরে যেতে হবে। কিন্তু এরিকও ত সরছে না। একদম দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে।
“বাহ তাহলে ত সব ঠিক ঠাক! তুমিও রাজি?” ভ্রু উঁচু করে নামালো এরিক।
মিহির এবার বিরক্ত লাগছে। কতবার বলবে এক কথা! হাঁসফাঁস করতে করতে মাথা নাড়লো মিহি। ওর উদ্দেশ্য ভিতরে যাওয়া। এরোনকে দেখা। কিন্তু এরিক কেন রাস্তা আটকে আছে কে জানে!
এরিক যে বুঝতে পারছে না, তা নয়। সে বুঝেও না বোঝার ভান ধরে আছে। এরোনকে এই মেয়েটা এতদিন কম জ্বালায় নি। একটু হলেও ত সেটার শোধ তুলতে হবে।
এরিক মিহিকে ভিতরে আসার জন্য বলে ভিতরে ঢুকে পড়লো।
মিহিও পিছু পিছু ঢুকলো। এপাশ থেকে ওপাশ চোখ বুলিয়ে নিলো। নাহ, এরোন নিচে নেই। তবে বাকিরা সবাই ড্রয়িং রুমেই আছে।
মিহিকে দেখে খুশি হয়ে উঠে এলেন আরোহী। সবাই যেন ওর আসার অপেক্ষাই করছিল।
মিহি মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই আরোহী জড়িয়ে ধরলেন মিহিকে। আনন্দিত কণ্ঠে বললেন,”খুব খুব খুশি হয়েছি জানো! কালই কেন আসলে না বলো তো। অপেক্ষা করেছি সবাই। সাথে কত চিন্তাও হচ্ছিলো!”
মিহি মৃদু হাসলো। আলতো করে জড়িয়ে ধরলো আরোহীকে।
রুহুল সাহেব স্বাভাবিক মুখে তাকিয়ে রইলেন। এরিক তার সামনে গিয়ে ভ্রু উঁচু করে নামালো।
অর্থাৎ, ‘দেখছ! বলেছিলাম না কাজ হবে? শুধু শুধু আমার প্লানকে ফালতু বলো!’
মিহি আরোহীকে ছেড়ে দাঁড়ালো। তিনি হাসিমুখে বললেন,”যাও গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেও। তারপর খেতে আসো।”
মিহি প্রত্যুত্তরে হাসার চেষ্টা করলো।
আচ্ছা কেউ এরোনের কথা বলছে না কেন? সবার ব্যবহারে তো মনে হচ্ছে এরোনের কিছু হয় নি। সে সুস্থ। তাহলে এখন অব্দি সামনে আসছে না কেন? নাকি সে বাসায় নেই? মিহি পুনরায় হালকা ভাবে চোখ বুলিয়ে নিলো।
এরিক সবই লক্ষ্য করছে। আর মনে মনে যা বোঝার বুঝেও যাচ্ছে।

মিহি জিজ্ঞেস যে করবে সেটা করতেও লজ্জা লাগছে। তাই জিজ্ঞেস করলো না। ভাবলো রুমেই হয়তো পাওয়া যাবে তাকে।
মিহি উঠে গেল উপরে। ব্যকুলতার সহিত সোজা এরোনের ঘরে এলো ও।
কিন্তু সে ত নেই!
সুক্ষ্ম হাসিটা মিলিয়ে গেল মিহির। ঘরের ভিতর, বারান্দা, বাথরুম সব তন্নতন্ন করে খুঁজলো ও। কিন্তু ঘরের কোথাও এরোন নেই।
উতলা হয়ে বেরিয়ে অন্য রুম গুলোতে ঢুকে খুঁজতে লাগল মিহি।
“কিছু খুঁজছো?”
হালকা চকিত হয়ে পিছনে ঘুরলো মিহি। এরিক প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
“কী?”
“ন..না মানে…।” আমতা আমতা করতে লাগল মিহি।
“ওহ বুঝেছি! তুমি অন্য রুমে থাকতে চাইছ তো!” ভনিতা করে বলল এরিক।
ভ্রু কুচকে ফেলল মিহি।
“থাকো সমস্যা নেই। যে রুম ভালো লাগে সেই রুমেই থাকো। কেউ জ্বালাবে না।”
এই লোক বলে কী! অন্য রুমে কেন থাকবে ও!
“রুম বাছাই করে ফ্রেশ হয়ে আসো। দুপুরের খাবার রেডি।” বলে চলে গেল এরিক।
মিহির মুখটা কুচকে গেল। সবাই সব বলছে শুধু এরোনের কথাই বলছে না।
মিহি বাকি রুম গুলোতেও উঁকিঝুঁকি মারলো। নেই সে। অতিরিক্ত অধৈর্য হয়ে উঠল মিহি।
বাসায় একদমই নেই! নাকি গতকাল সকালের পরে আর ফিরেই আসে নি সে! কিন্তু বলেছিল যে দুপুরেই ফিরে আসবে। তাহলে?
কোথায় আপনি? সামনে কেন আসছেন না? মনে মনে বিড়বিড়ালো মিহি।
ম্লানমুখে ফিরে এলো এরোনের রুমে। উদাস হয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর ভাবলো আরোহীর থেকেই জেনে নিলেই ত হয়!
তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে এলো ও। এবারো সবাই আছে, এরোন ছাড়া। মুখটা আবার মলিনতায় ছেয়ে গেল মিহির।
এগিয়ে এসে বসলো একটা চেয়ারে। আরোহী খাবার প্লেট সাজিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে।
মিহির দিকে একটা প্লেট ঠেলে দিয়ে বললেন, “খাওয়া শুরু করো।”
মিহি আশেপাশে আরেক বার চোখ বুলিয়ে নিলো।
অদ্ভুত তো! এরোনকে ছাড়াই সবাই খেতে বসে যাচ্ছে। সে আসবে কখন?
মিহি এবার আর না থাকতে পেরে সরাসরি জিজ্ঞেস করে বসলো,”উনি কোথায়?”
সবাই তাকালো মিহির দিকে।
হুট করে এভাবে জিজ্ঞেস করায় মিহি নিজেই একটু লজ্জায় পরে গেল। বিব্রতবোধ করে মাথা নিচু করলো ও।
মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো সবাই। তারা সবাই যে একটা ছোটখাটো ফ্যামিলি ড্রামা করছে সেটার কিছুই টের পেল না মিহি।
উওরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল সে।
“বাহিরে গেছে একটু৷ সকালের দিকে।” বলল এরিক।
“বাহিরে!” বিড়বিড়িয়ে আওড়ালো মিহি।
“কী যেন কাজ আছে। আশা করি বিকেলেই চলে আসবে।” হাসিমুখে বলল এরিক।
মিহি কিছু ভাবনায় ব্যস্ত হয়ে গেল। এরোন তারমানে ইচ্ছে করেই যান নি ওর কাছে! এমনকি ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছিল! কিন্তু উনি তো এমন নন।
চিন্তা করেই ফ্যাকাসে হয়ে গেল মিহির মুখ।
মিহি খাচ্ছে না দেখে আরোহী বললেন,”আরে, খাচ্ছ না কেন? খাও খাও।”
শত চেষ্টা করেও খেতে পারলো না মিহি। কিছুক্ষণ ভাত নেড়েচেড়ে, এক দু গাল মুখে দিয়ে উঠে গেল। সোজা রুমে চলে এলো ও। এখন শুধু বিকেলের অপেক্ষা। তাতে এখনো তিন চার ঘন্টা মতো বাকি!
অসহ্যকর অনুভূতি যেন। অভিমান হচ্ছে খুব।
লোকটার এত কি কাজ যে একবার খবর অব্দি নিলো না! আগে তো এমন ছিল না। একদিনের মধ্যে এত বদলে কীভাবে গেল সে?
মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো মিহি। আজ সে আসুক একবার।
অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে চোখ লেগে এলো মিহির। সারা রাত জেগে থাকার কারণেই ঘুমিয়ে পড়লো ও।

যখন চোখ খুলল তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে।
হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো মিহি।
দেয়াল ঘড়িতে সাড়ে সাতটা বাজে। এত সময় হয়ে গেছে। ইস! ঘুমিয়ে পড়লো কেন ও!
হন্তদন্ত করে বিছানা থেকে নামতেই দরজার কাছে এরোনকে দেখলো মিহি। নিমিষেই সব চিন্তা, অস্থিরতা, ব্যাকুলতা উধাও হলো মিহির। ঠোঁটে কোনে হাসি ফুটলো তার।
কিন্তু এরোন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। শান্ত চোখের চাহনিতে একপলক তাকিয়ে কাবার্ডের কাছে এগিয়ে গেল সে। কাবার্ড খুলে কিছু একটা করতে ব্যস্ত হয়ে গেল সে।

ভারি অবাক হলো মিহি। লোকটা কি ওকে দেখে নি নাকি? দেখেছে তো। তাহলে তাও এমন করছে কেন?

“আপনি কখন এসেছেন?” জিজ্ঞেস করল মিহি।
“সেটা জেনে তুমি কি করবা?” শীতল কণ্ঠে বলল এরোন।
হতভম্ব হয়ে গেল মিহি।
“ম..মানে..?”
এরোন আর উওর করলো না। কাবার্ড বন্ধ করে বেরিয়ে গেল।
মিহি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখতে লাগল। এমন কেন করছেন উনি?
মিহি দ্রুত দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। কিন্তু ততক্ষণে সে আবার চোখের আড়াল হয়ে গেছে।

উনি কি বাসায় চলে যাবার জন্য রাগ করেছেন? কিন্তু ও তো ইচ্ছে করে যায় নি। আচ্ছা, এরিক বলেছিল তো যে ও ইচ্ছে করে যায় নি? নাকি বলে নি? না বলে থাকলে ত বলতে হবে। নাহলে উনি নির্ঘাত ভুল বুঝবেন।
মিহিও দ্রুত নিচে নেমে গেল। কিন্তু সে আবার উধাও। নিচে কোথাও নেই।
আবার গেল কোথায় গেল সে?
মিহি বেরিয়ে গেল বাহিরে। বাগানের আশেপাশে খুঁজলো। কিন্তু সে কোথাও নেই। ভিতরে ভিতরে যন্ত্রণা হচ্ছে খুব। উনি একটু কথা বলার সময়টুকুও দিলেন না। কেমন ব্যবহার দিয়ে চলে গেলেন।
মিহি বিষাদময় মুখে ভিতরে ফিরে এলো।

একবারে রাতের খাবারের সময় টেবিলে পাওয়া গেল তাকে। তাও একবারো তাকালো পর্যন্ত না। এমনকি বসলোও না পাশে।
মিহি হতাশ চোখে তাকালো অনেকবার।
তাহলে কি সত্যিই রাগ করেছে? চোখমুখ দেখে তো তাই-ই মনে হয়।
খাওয়া শেষ না করেই উঠে গেল এরোন। সে উঠতে চলে যেতেই মিহিও হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়লো।
যদিও ওর প্লেটের ভাতের পরিমাণ আগের তুলনায় এক অংশও কমে নি। তাও অপ্রস্তুত হয়ে হেসে “খাওয়া শেষ” কথাটা বলে চট করে হাত ধুয়ে নিয়ে উপরে চলে গেল ও।
সবাই হাসতে লাগলো মিটমিটিয়ে।

এরোনের ঘরে ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই মিহি ঢুকলো। জলদি করে আসতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে সে। বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে এরোনের দিকে তাকালো ও।
সে ঘরের মধ্যেখানে দাঁড়িয়ে আছে। পিঠ ফিরিয়ে রেখেছে মিহির দিকে।
“আপনি কি রাগ করেছেন আমার উপর?”
“রাগ কেন করব?” আবার সেই শীতল কণ্ঠস্বর।
ফোন বের করে কিছু করতে ব্যস্ত হয়ে গেল সে।
“এমন কেন করছেন আপনি?” হতাশ চোখে তাকিয়ে বলতে বলতে দুইপা এগিয়ে গেল মিহি।
“কেমন করছি?” ফোনের দিকে তাকিয়েই থমথমে গলায় বলল এরোন।
“জানেন না কেমন করছেন? এভাবে কথা বলছেন কেন?” হালকা তেজের সাথে বলল মিহি৷ চোখ ভিজে এলো ওর।
এরোন চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। অসম্ভব কাজ করতে হচ্ছে যেন। এর চেয়ে কঠিন কাজ আর নেই।

মিহি আর নিতে পারছে না। হুহু করে উঠছে মনটা।
এরোনের এমন ব্যবহার খুবই অস্বাভাবিক লাগছে ওর। সে তো কখনই এভাবে কথা বলতো না। সবসময় ভালো ভাবেই কথা বলতো তাহলে হঠাৎ এমন কেন করছে?
“আসলাম।” বলতে বলতে ঢুকে পড়লো এরিক।
মিহি এরিকের আওয়াজ পেতেই একটু সরে দাঁড়ালো।
“ঘুমাতে যাবা না?” মিহিকে বলল এরিক।
মিহি আড়চোখে তাকালো একবার।
“গেস্টরুম খুঁজছিলা না দুপুরে নিজের জন্য।” হাসি চেপে বলল এরিক।
মিহি ভ্রুকুটি করলো।
এরিক প্রসস্থ করে হেসে বলল, “আমি আজ এখানে ঘুমাবো। ওর সাথে। তুমি তো এমনিও গেস্টরুমে ঘুমাও তাই আশা করি সমস্যাও হবে না। হেহে।”
বিস্ময়কর চাহনিতে তাকালো মিহি। কি বলছে এসব! ও কেন গেস্ট রুমে যাবে?
মিহি কিছু বলার আগেই এরোন ঘুরে তাকিয়ে বলল, “আর কিছু বলার আছে তোমার? না থাকলে ঘুমাতে যাও।”
এরোনের মুখে এমনটা কথা শুনে হতবাক হয়ে তাকালো মিহি। তার স্থির শীতল চোখে চোখ পড়লো ওর। এমন চাহনি আর ব্যবহারের কারণে এতসময়ের চাপা রাগ, ক্ষোভ, অভিমান সব চোখের জল হিসেবে গড়িয়ে পড়লো।
থমকে গেল এরোন।
মিহি চট করে চোখ মুছে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল ওই ঘর থেকে। নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতেই গেস্ট রুমে ঢুকে সজোরে বন্ধ করে দিল দরজা।

বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল এরিক, এরোন দুজনেই। বেশিই হয়ে গেল মনে হয়।
এরোন দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে চাইতেই পিছন থেকে ওর এক বাহু দুইহাতে টেনে ধরে দাঁড় করালো এরিক।
মেজাজ বিঘড়ে গেল এরোনের।
“কী সমস্যা তোর?”
“কই যাস তুই?” অবাক হয়ে বলল এরিক।
“তোর এসব ফালতু কথা আমি আর শুনবো না। তোর কথা শুনতে গিয়েই উল্টো কাঁদছে ও এখন। বলেছিলাম ও অন্যরকম। এসবে লাভ হবে না। হাত ছাড়।” বেজার গলার বলেই বাহু ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো এরোন।
“সব তো তোর দোষ। বলতে বলেছিলাম কী, আর বলেছিস কী? নাটক করতেও পারিস না?”
“আমার আর নাটকের দরকার নেই। ও নিজ ইচ্ছায় এসেছে এটাই অনেক। ও ওর সময় মতো ওর মনের কথা বলবে। হাত ছাড় জলদি।” কড়া চোখে তাকিয়ে বলল এরোন।
“এটুকুতেই গলে গেলে হবে? ওরে আগে নিজের মুখে স্বীকার করতে হবে যে ও তোকে ভালোবাসে। তোকে কম ভুগিয়েছে ও?” কটাক্ষ করে বলল এরিক।
“সেটা আমি বুঝবো। তুই হাত ছাড়বি নাকি বসাবো তোকে একটা?” তিরিক্ষি মেজাজে বলল এরোন।
চোখ গোলগোল হয়ে গেল এরিকের। হা হয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল, “বউয়ের জন্য ভাইকে মারবি?”
“এজন্যই তো ভালোভাবে ছাড়তে বলছি। ছাড়।” বলেই ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়েই বেরিয়ে গেল এরোন।
এরিক হেসে ফেলল।

এরোন গেস্টরুমটার সামনে এসে দ্রুত লক ঘুরাতেই খুলে গেল দরজা।
মিহি বিছানায় বসে কাঁদছিল। দরজা খোলার আওয়াজে দ্রুত চোখ মুছে তাকালো সেদিকে।
এরোনকে দেখে চোখ মুখ শক্ত উঠে দাঁড়িয়ে বলল,”এখানে কেন এসেছেন?”
ম্লান দৃষ্টিতে তাকালো এরোন। এটুকু সময়ে মুখ ফুলে গেছে মেয়েটার।
সে মিহির দিকে এগিয়ে যেতে চেয়ে বলল, “মিহি আমি…।”
তীব্র আক্রোশের সাথে চেতে উঠল মিহি।
“একদম কাছে আসবেন না। বের হন এখনি। বের হন।” বলেই তর্জনী তুলে বের হতে ইশারা করল মিহি।

এমন অগ্নিমূর্তি দেখে খানিক তব্দা খেয়ে গেল এরোন। প্রচন্ড ক্ষেপে গেছে মনে হয়।
“একটু শোনো আগে…।” বলে এরোন এগিয়ে আসতে চাইতেই দাঁতেদাঁত চিপল মিহি।
হাতের কাছের থাকা জগটা তুলে নিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলল,” কাছে আসলেই এটা ছুড়ে মারবো একদম।”
থমকে দাঁড়িয়ে গেল এরোন। এ আবার কোন মিহি?!

(চলবে…)

[নেক্সট পর্বে মনে হয়ে মার খাবে এরোন??]
[গাইজ নেক্সট পর্ব পাবেন মঙলবার ?। ভেবেছিলাম ক্লাস টেস্ট শেষ। কিন্তু না!
কেউ গল্পের জন্য প্যানপ্যান করবেন না। করলে মঙ্গলবার বাদ দিয়ে বুধবার দিব?। বুঝবেন মজা! আমি রেগুলার দিতাম এটা জানা আছে আপনাদের। হুদাই irregular দিচ্ছি না। তাই উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না৷ আমিও কিন্তু রেগে গেলে জগ ছুড়ে মারবো একদম?]
[গল্প আর বেশি নেই। এতদিনে ৩৮ পর্ব হয়ে গেছে? তাও শেষ করতে পারলাম না। আমারই বিরক্ত লাগছে। আর দুই-চার পর্বে কাহিনী খতম করবই করব। PROMISE?। গল্প বাড়াচ্ছি না তাও বেড়ে যাচ্ছে, ধুর।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here