গল্পের নাম : বৃষ্টি_থামার_পরে পর্ব ৩৭ : অপেক্ষা

0
1903

গল্পের নাম : বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ৩৭ : অপেক্ষা
লেখিকা : #Lucky_Nova

“ম..মানে? মিহি কোথায়? কি করেছিস তুই ওর সাথে?”
“ওকে ওর বাসায় রেখে এসেছি।” চাবিটা পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে শান্ত গলায় বলল এরিক।
“What? Why?” চোখ মুখ কুচকে অবিশ্বাস্য স্বরে প্রশ্ন করলো এরোন।
“দরকার ছিল তাই!”
এরোন চরমভাবে ক্ষেপল। দাঁতে দাঁত চিপে দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করল। বলল,”দরজা খোল। জলদি। এখনি।”
“আমার কথা এখন চুপচাপ আগে শুনবি তারপর আমি ভেবে দেখবো দরজা খুলব কি খুলব না।” সহজ গলায় বলল এরিক।
এরোন কানে নিল না। সে বারংবার দরজায় আঘাত করেই যেতে লাগল।
“তুই খুলবি না? দরজা ভাঙবো আমি? তোর এত সাহস কী করে হয়?”
“তোর এত সাহস কি করে হয় আমাদের পরিবারের সম্মান নিয়ে খেলার?”
এরোন রাগে গজগজ করতে করতে বলল, “মানে?”
“ওর বাবা যদি আজ সত্যিই ঝামেলা করতে আসতো তখন কী করতি? না, না, এক মিনিট! ওর বাবা ঝামেলা করতে আসবেই বা কেন? কারণ তার মেয়েকে জোর করা হচ্ছে তাই তো?! কিন্তু তুই বলছিস তোর মনে হয় মিহি তোর সাথেই থাকতে চায়৷ সে বদলাচ্ছে। যদি সে বদলায়ই তাহলে সে নিজেই ফিরবে৷ তোর ওর বাবাকে বুঝতে হবে না। মিহি নিজেই বুঝিয়ে পড়িয়ে তবেই আসবে। কারণ ওর বাবার এই ভুল ভাঙা দরকার যে তার মেয়ে রাজি না। শুধু শুধু আমাদের পরিবারটা কেন ধকল সহ্য করবে? ওই লোক সত্যিই যদি আসতো? ধরে নে মিহিকে তুই জোর করেই বা মিহির মত নিয়েই রাখতি। কিন্তু বাহিরের মানুষরা কি মনে করতো? একটা ছোটখাটো হাঙ্গামা তো হতোই! বাবা মা কি দোষ করেছে যে তোর ওই ##@**# শ্বশুরের জন্য সমাজে তারা ছোট হয়ে যাবে? তাই আমি দিয়ে এসেছি যাতে এমনটা না হয়। মিহি নিজেই এবার ওর বাবাকে বুঝিয়ে তারপর আসবে।”
এরোন হয়তো বুঝলো এরিক কি বলতে চাচ্ছে। তাই স্বর নামিয়ে থমথমে গলায় বলল, “আমাকে বললে আমিই মিহিকে নিয়ে গিয়ে বুঝাতে ওর বাবাকে…।”
এরিক এরোনকে থামিয়ে দিয়ে ঝামটা মেরে বলল, “কেন? তুই এই কয়েক দিনে বুঝাস নি? ওই খাচ্চর ব্যাটা বুঝছে? মিহি নিজের মুখে কিছু না বলা অব্দি এখন বুঝবেও না। আমি চাই মিহি তোর চাপাচাপিতে না, নিজ ইচ্ছায় বলুক ও তোর কাছে ফিরতে চায়। এজন্যই ওকে একা পাঠানো। নাহলে আমি যতদূর বুঝেছি মায়ের কাছ থেকে শুনে, তুই মিহির সাথে করে বুঝাতে গেলে ওই ব্যাটা নির্ঘাত বলতো তুই মিহিকে ব্ল্যাকমেইল করে বুঝিয়ে নিয়ে এসেছিস। তাই যা করার মিহি একা করবে।”
“ও একা কীভাবে করবে? ও তো..!”
“ও-ই পারবে। ওর বাবা ওর থেকে শুনলে তবেই দমে যাবে। তাই দয়া করে ওখানে যাওয়ার কথা ভুলে যা। আর আমার বিশ্বাস মিহি ফিরে আসবে।”
এরোন সব বুঝতে পারছে কিন্তু তাও অস্থির অস্থির লাগছে ওর। অজানা আতঙ্কে বুকটা হু হু করছে। দম বন্ধ লাগছে। আচ্ছা, মিহি যদি না আসে? ভেবেই ওর হাঁসফাঁস লাগছে খুব।
“তুই শুধু ফোনটা দে। আমি একটু ওর সাথে কথা বলবো।” যথেষ্ট স্বাভাবিক ভাবে বলার চেষ্টা করেও স্বর কেঁপে কেঁপে উঠলো এরোনের।
ওপাশ থেকে কোনো সারা শব্দ এলো না। তাই এরোন বিচলিত হয়ে পুনরায় বলল,”আমি ত যেতে চাচ্ছি না। শুধু কথা বলবো একবার।”
“না।” নাকচ করে দিলো এরিক।
“কী না? দিতে বলছি না?” শশব্যস্ত হয়ে উঠলো এরোন।
“এত পাগল কিভাবে হলি বল তো? তাও এমন একটা মেয়ের জন্য যে কি না অনুভূতিশূন্য?”
“ও অনুভূতি শূন্য না। প্রথম থেকেই আমি জোর করেছি ওকে। ওর বাবার সাথে ওর সম্পর্কটাও খারাপ করে দিয়েছিলাম আমি। ভালোবাসেনা, বিয়ে করবে না বলার পরও ওকে বিয়ে করেছি। ওর তো সময় লাগবে বুঝতে।” অস্থির কণ্ঠে বুঝাতে চাইলো এরোন।
এরিক চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। ‘লাভ ইজ ব্লাইন্ড’ এ কথা যে বলেছিল সে মনে হয় ঠিকই বলেছিল। সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিচ্ছে। বাহ!
“কই? খোল আর ফোনটা দে!”
“ফোন করলে তো আবার সেই একই বিষয় হয়ে যাবে। তুই কি চাস না ও নিজ ইচ্ছায় আসুক? কি বুঝালাম এতক্ষণ? একটু ধৈর্য ধর। এসে যাবে দুই তিনদিনে।” বিরক্ত হয়ে বলল এরিক।
“দুই তিনদিন মানে?” বিস্ফোরিত গলায় বলল এরোন।
“দুই তিন দিন মানে মাত্র আটচল্লিশ থেকে বাহাত্তর ঘন্টা। সবুরে মেওয়া ফলে। বাবা মার সম্মানের কথা ভেবে অপেক্ষা কর। সাথে আমার নাকও ডুববে।” নির্দেশনা দিতে লাগলো এরিক।

এরোন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে দরজায় কপাল ঠেকিয়ে দিলো। এখনি অসহ্য রকমের অনুভূতি হচ্ছে। আরো নাকি দুইদিন? কীভাবে পারবে ও। আর মিহি সত্যিই আসবে তো? যদি না আসে!
“তোকে এভাবে কষ্ট দিতে আমারো ভাল লাগছে না। একটু অপেক্ষা কর। ও আসবে।” আশ্বস্ত করে বলল এরিক।
এসব শুনেও তো এরোনের মন শান্ত হচ্ছে না। মিহিকে কাছে না পাওয়া অব্দি শান্ত হবেও না।
“তোকে রুম থেকে বের করার রিস্ক আমি নিতে চাচ্ছি না। মিহির কাছে ছুটতে পারিস। বিশ্বাস নেই। তাই বন্ধ ঘরেই থাক। বিছানার বালিশের নিচে তোর জামাকাপড় আর তোয়ালে আছে। শাওয়ার নিলে, নে। আর এক কোনায় যে টেবিল, ওটাতে দুপুরের ভাত ঢেকে রাখা আছে। দেবদাস হয়ে না খেয়ে পড়ে থাকিস না। তাহলে..”
“যদি ওর বাবা আসতে না দেয়?” আশঙ্কাজনক কন্ঠে বলে উঠল এরোন।
“তাহলে তোর আবার বিয়ে দেবো। ধুমধাম করে।”
“ফালতু কথা কম বলবি।” রেগে গেলে এরোন।
“বেশি ভাবছিস তুই। ওই ব্যাটাকে বুঝিয়ে পড়িয়ে আসতে হবে ওকে। তোর চক্করে সকাল থেকে না খাওয়া আমি। যাইহোক, বালিশের নিচে তোর বউয়ের একটা শাড়ি রেখে দিয়েছি আমি। বেশি মিস করলে ওটা গায়ে জড়িয়ে বসে থাক। তাতে যদি একটু শান্তি শান্তি ফিল পাস!” কাটখোট্টা গলায় বলল এরিক।
এরোন দাঁত কিড়মিড়ালো।
“শোন তোকে কিন্তু আরেকটা কাজ করতে হবে।”
“মানে? কি কাজ?” ভ্রু কুচকে ফেলল এরোন।
এরিক বলল, “বলছি।”

?
নিজের বিছানায় থম মেরে বসে আছে মিহি। অনেক সময় ধরেই বসে আছে। ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে। উদ্ভ্রান্তের মতো লাগছে। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না। খুব অসহ্য লাগছে।
আচ্ছা, এরোন কেন আসছে না এখনো? ও কি জানে এরিক এভাবে দিয়ে গেছে? নাকি জানেই না? আর জানলে আসছে না কেন?
মিহি নামলো বিছানা থেকে। পায়চারি শুরু করলো ঘরময়।
এক একটা মুহূর্ত তিক্ত লাগছে। মাথায় ওই একটাই প্রশ্ন, এত সময় হয়ে যাচ্ছে তাও সে আসছে না কেন?
“তুই কি খাবি না?”
হালকা চমকে উঠলো মিহি।
দিপালি শক্তপোক্ত মুখে তাকিয়ে আছেন দরজার কাছে।
“হ্যাঁ মানে… পরে। এখন খিদে নেই।” দৃষ্টি এড়িয়ে ইনিয়েবিনিয়ে বলল মিহি।
মিহির শুকনো মুখ, উদাসীন ভাব দেখে কিছু বুঝতে বাকি রইল না দিপালির। তিনি ভরাট গলায় বললেন,”তোর বাবা কিন্তু ভাবে এই বিয়েতে তুই খুশি না। মানে এখনো রাজি না। তুই সত্যিই খুশি কিনা বা রাজি কিনা তা তুই-ই ভালো জানিস। তোর মন যেটা বলে সেটা কর। তুই রাজি থাকলে তোর বাবা বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। তাই যা ভাবার দেরি হবার আগে ভাব। ছেলেটা কিন্তু তোকে অনেক ভালোবাসে।”
শেষোক্ত কথাটা মন মস্তিষ্কে নাড়া দিলো মিহির। অশান্ত মন যেন আরো অশান্ত হয়ে উঠল। সে তো এখানে ফিরে আসতে চায় নি। সে ত থাকতেই চেয়েছিলো।
“খেতে আয়। বিকেল হয়ে গেল।” বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন তিনি।
মিহি গেল না। খিদেই তো পাচ্ছে না।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমে এসেছে। অন্ধকার ঘরে ড্রিম লাইট জ্বলছে। ছমছমে নিস্তব্ধ ঘরটায় অস্বস্তি, অস্থিরতা নিয়ে এপাশ ওপাশ করছে মিহি। এরোন এখনো আসে নি। এত সময়ে ত চলে আসার কথা। তাহলে কেন আসছে না এখনো!
মিহি উঠে বসে চঞ্চল চাহনিতে বারান্দার দিকে তাকালো। বারান্দা তো খোলাই আছে। তাহলে? তাহলে আসে না কেন?
তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে ভিতরটায়। সহ্য করা যাচ্ছে না একদম। কান্না পাচ্ছে খুব।
সামলাতে না পেরে একপর্যায়ে কেঁদেই ফেলল মিহি। বিড়বিড়িয়ে বলে উঠল, “আসেন না কেন আপনি? আমি ত অপেক্ষা করছি।”

অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ভোর হয়ে এলো।
আশ্চর্যজনক ভাবে সে সত্যিই আসলো না।
কিছু হয় নি তো?
ধড়ফড়িয়ে উঠলো মিহি। এটা তো মাথাতেই আসে নি। দুশ্চিন্তায় পরে গেল ও।
এখন? কি করে জানবে এরোনের খবর?
ফোন! হ্যাঁ, ফোন করলেই তো হয়।
পরক্ষণেই ওর মনে পড়ল ফোন তো এরোনের বাসাতেই রেখে এসেছে। তাহলে এখন?
মায়ের ফোনে ত নম্বর থাকার কথা। অবশ্যই থাকবে।
মিহি দ্রুত উঠে বেরিয়ে গেল মায়ের রুমের উদ্দেশ্যে।
দরজার সামনে এসেই বুঝলো মা বাবা দুজনেই ঘুমোচ্ছে। ঘুমোনোরই কথা। পাঁচটা বাজে হয়তো। একটু অপেক্ষা করবে! কিন্তু অপেক্ষা করার মতো তর যে সইছে না।
তাও নিজের রুমে ফিরে গেল মিহি। কিন্তু অপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। সহ্যই করা যাচ্ছে না।
মিহি পুনরায় গেল ওর মায়ের ফোনটা আনতে। এবার সে দরজার নক করলো।
কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করতেই দিপালি ঘুম ঘুম চোখ ডলে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন।
“তুই? এত সকালে? কী হয়েছে?” কন্ঠে ঈষৎ বিরক্তি দিপালির।
“মা ফোনটা একটু দেও না।”
“কার? আমার?”
“হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি।” তাড়া দিয়ে বলল মিহি।
দিপালি সন্দিহান চোখে তাকিয়ে এগিয়ে গেলেন ফোনের দিকে। এনে দিলেন মিহির হাতে।
মিহি ফোন হাতে পেয়ে আর দাঁড়ালো না। নিজের রুমের দিকে দ্রুতপদে এগিয়ে গেল।
“আরে বলে তো যা কি হয়েছে?” আহাজারি করে বললেন দিপালি।
জোয়েল সাহেবও উঠে বসেছেন ততক্ষণে।
“কী হয়েছে?” জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
“জানি না।” খর্খরে স্বরে বলে বেরিয়ে গেলেন দিপালি।
তিনি স্বামীর উপর গতকাল থেকেই অসম্ভবভাবে ক্ষিপ্ত।

মিহি দেরি না করেই ফোন করল এরোনের ফোন নম্বরে। রিং বাজার অপেক্ষায় ব্যাকুল হয়ে উঠল। কিন্তু রিং হলো না। ফোন বন্ধ বলছে।
মিহি এবার বেশিই উদ্ধিগ্ন হয়ে উঠল।
ফোন বন্ধ কেন থাকবে? সে ঠিক থাকলে এতসময়ে অবশ্যই আসতো। তাহলে কি সত্যিই কিছু হয়েছে তার? খারাপ কিছু না তো? আতঙ্কিত হয়ে উঠল মিহি।
আবার ফোন দিলো। এবারো বন্ধ। কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে গেল গাল বেয়ে। ভয়ে বুকটাও দুরুদুরু করছে। উনি ঠিক আছেন তো?

“কী হয়েছে বলবি তো কিছু?” দিপালি ঢুকলেন মিহির ঘরে।
মিহিকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে বললেন,”কিরে?”
মিহি শব্দ করে কেঁদে ফেলল।
দিপালি চমকালেন।
“কী হয়েছে? কাঁদছিস কেন?” উৎকণ্ঠাপূর্ণ গলায় বললেন তিনি।
মিহি জড়িয়ে ধরলো ওর মাকে। কান্নার বেগ আরো বাড়লো।
“আশ্চর্য! না বললে বুঝবো কীভাবে? শরীর খারাপ লাগছে? কিরে বল?” আতঙ্কিত গলাতে বললেন দিপালি। মিহিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে চাইতেই আরো আঁকড়ে ধরল মিহি।
“বলবি তো!” আহাজারি করে উঠলেন দিপালি।
মিহি হিঁচকি তুলতে তুলতে বলল, “উ..উনি এখনো আসেন নি। ফ..ফোনও বন্ধ। উনি কখনো দেরি করেন না। এত সময়ে অবশ্যই আসতেন। আজ আসছে না। কী হয়েছে ওনার? কেন আসে না? ফোনও কেন ধরছেন না!”
হাউমাউ করে কেঁদে উঠল মিহি।
দিপালি হাঁফ ছাড়লেন। কটাক্ষ করে বললেন, “আসবে কেন? আর তোর ফোনই বা কেন ধরবে? ছেড়ে চলে এসেছিস না? তাহলে ওর কিছু হলেও বা তোর কী?”
মিহি তাও কাঁদতে লাগল।
দিপালি ওকে জড়িয়ে রেখেই ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকালেন। জোয়েল সাহেব হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
দিপালি তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে মিহিকে বললেন, “আমি আগেই বলেছিলাম নিজের মনের কথা শুনতে। ছেড়েছুড়ে চলে এলি কোন আক্কেলে?”
“আ…আমি আসতে চাই নি। একদম আসতে চাই নি।” ফুপিয়ে উঠল মিহি।
“সব তোর বাপের জন্য। বলি, ওটা কি তোর বাপের সংসার? নাকি তোর? তোরই তো! তাহলে? তুই যেটা চাস সেটাই করবি। এখনি ফিরে যাবি। আমিও দেখি তোকে কে আটকায়!” কথাগুলো বলে জোয়েল সাহেবের দিকে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করলেন দিপালি।
জোয়েল সাহেব বুঝলেন তাকেই খোটা মেরে কথা বলা হচ্ছে।
“কাঁদিস না। এখনি যা। তোর বাপকে আমি বুঝে নেবো। বড়টার নাহয় সংসারে সমস্যা। তোর স্বামী সংসার সবই তো ভালো। আর এখন তুইও রাজি। তাহলে ছাড়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।” মিহিকে ছাড়িয়ে নিয়ে চোখের জল মুছে দিলেন দিপালি।
চোখ মুখ ফুলে গেছে এটুকু সময়ের মধ্যেই।
“ফ্রেস হয়ে চলে যা।”
মিহি দেরি করল না। মাথা নেড়ে সায় দিয়ে দ্রুত ফ্রেস হতে ঢুকে পড়লো।
দিপালি শক্ত চাহনিতে তাকালেন দরজার দিকে।
জোয়েল সাহেব থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। যদিও মুখের রঙ ফ্যাকাসে। হওয়ারই কথা।
“নিজ চোক্ষে দেখেছ আর শুনেছও। মিহি থাকতে চায় এরোনের সাথে। দয়া করে আর বাগড়া দিও না। মেনে নেও এখন।”
দিপালের কথার মাঝখানেই মিহি বেরিয়ে এলো ফ্রেস হয়ে। বের হয়েই বাবার দিকে চোখ পড়লো ওর। একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো ও।
বাবা যেতে না দিলে? এটা তো মাথাতেই আসে নি। চিন্তা করেই মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল মিহির।
দিপালি মিহির কাছে এগিয়ে গিয়ে নিম্ন স্বরে বুঝিয়ে বললেন, “নিজের মুখেই বাবাকে বল যে তুই নিজ ইচ্ছার যেতে চাস। তাহলেই তো হয়ে যায়।”
মিহি অগোছালো দৃষ্টিতে তাকালো জোয়েল সাহেবের দিকে। তিনিও তাকিয়ে আছেন। গম্ভীরমুখে।
মিহি সাহস যুগিয়ে চোখ নামিয়ে ইতস্তত করে আস্তে করে বলতে লাগল,”ব..বাবা আ..আমি…নিজেই ফিরতে চাই। ক..কিন্তু অবশ্যই তোমার অনুমতি নিয়েই…।”
“আমি অনুমতি না দিলে?” মিহির কথার মাঝেই থমথমে মুখে বললেন জোয়েল সাহেব।
ছ্যাৎ করে উঠলো মিহির বুক। বজ্রহতের ন্যায় তাকালো সে।
দিপালি চোখমুখ বাজেভাবে কুচকে দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাকালেন স্বামীর দিকে। কর্কশভাবে বললেন,”কী সব বলছো তুমি?”
“তুমি চুপ করো। মাঝখানে কথা বলবা না।” শান্ত গলায় ধমকালেন জোয়েল সাহেব। তারপর মিহির দিকে তাকালেন।
ভিজে এলো মিহির চোখ। অসহায়ের মত তাকালো সে। সময় নিয়ে অনেক কষ্টে ভাঙা গলায় বলল,”তুমি যা চাও সেটাই হবে।”
চোখে জল চলে আসতেই মাথা নুয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো ও৷
থমকে গেলেন দিপালি। ভয়ানক রেগে কিছু বলার আগেই জোয়েল সাহেব বললেন,”যাও।”
মিহি চোখ তুললো। ছলছল করা বিস্ময় পূর্ণ চোখে তাকালো নিজের বাবার দিকে।
তার বাবা সত্যিই যেতে বলেছে! চোখমুখে মুহূর্তেই প্রফুল্লতা দেখা গেল মিহির।
দিপালির মুখেও বিস্ময়ের হাসি।
মিহি এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ওর বাবাকে।
জোয়েল সাহেব সুক্ষ্মভাবে হেসে মাথায় হাত রাখলেন মেয়ের।

(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here