গল্পের নাম : বৃষ্টি_থামার_পরে পর্ব ২৬: ছোটোখাটো_নাটক

0
2014

গল্পের নাম : বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ২৬: ছোটোখাটো_নাটক
লেখিকা: #Lucky_Nova

ওকে থামাতে এরোন ওর দুই হাত চেপে ধরে বিছানায় মিশায়।
মিহি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই এরোন বলে, “চুপচাপ থাকো। নাহলে পস্তাতে হবে পরে তোমার। তখন আমার দোষ দিতে পারবা না।”
মিহি কানে তুলল না। মাথা তুলে আবার কামড় বসিয়ে দিলো এরোনের গলায়।
ধারলো দাঁত বসে গেল সেখানে।
“কি শুরু করেছ? মিহি, থামতে বলেছি তোমায়!”
মিহি পুনরায় মাথা বিছানায় মাথা রাখলো। চোখ পাকিয়ে তাকালো এরোনের দিকে। তারপর বলল,”একদম ঠিক করছি৷ তোর সাথে এটাই করা উচিত।”
এরোনের ভ্রু জোড়া আপনা আপনি কুচকে এলো। ‘আপনি’ থেকে এই মেয়ে ‘তুই’-তে চলে গেছে।
“তোকে আমি আজ কামড়েই খাবো। তারপর পালাবো।” দাঁত কিড়মিড় করে বলেই মিহি আবার মাথা তুলল।
সাথে সাথে উঠে বসে পড়লো এরোন। মিহিও নাছোড়বান্দা। জেদ যেন আজ পেয়ে বসেছে। সেও উঠে বসে বাহুতে দাঁত বসালো।
“আউচ! ড্যাম! তুমি কি বাচ্চা?” আহাজারি করে বিরক্তি নিয়ে বলল এরোন।
মিহি কামড়ে ধরেই আছে।
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস নিলো এরোন। এসব কি ভাই! এমন চললে আর বেঁচে থাকা লাগবে না।
গ্যারাকলে পরে বলে উঠল, “ওকে, ওকে, তুমি কি চাও বলো।”
মিহি মুখ তুলল। এরোন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কামড়ানো জায়গাটা বাহু ঘুরিয়ে দেখতে লাগল ও।
শার্টের উপর দিয়ে ভালো মতই দাঁত বসিয়েছে।
“বাসায় যাব আমি। আমাকে দিয়ে আসুন এখনি।” বাচ্চাদের মত বায়না ধরলো মিহি।
এরোন কামড়ানো জায়গাটা হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে মিহির দিকে চোখা দৃষ্টিতে তাকালো।
“সকালে। এখন ঘুমাও দয়া করে একটু।”
প্রস্তাবটা মিহির পছন্দ হলো না। তার দৃষ্টি সরু হয়ে এলো।
মিহির মতিগতি বুঝে ওঠার আগেই মিহি এগিয়ে গিয়ে আবার গলায় দাঁত বসালো।
কামড়টা বেশ জোরেই পরলো এবার। বেশ জোরেই চেঁচিয়ে উঠলো এরোন।
মিহির দুই বাহু ধরে সরালো ওকে। তারপর ব্যথায় চোখমুখ কুচকে কাঁটাকাঁটা গলায় বলল,”বলছি ত নিয়ে যাব। সকাল অব্দি অপেক্ষা করতে পারছ না?”
“এখনি যাব। নাহলে কামড়াবো একদম।”
“চুপ।” কপাল কুচকে ধমকে উঠলো এরোন।
মিহি বেশ ভালই ভড়কালো। মুখটা কাঁদোকাঁদো হয়ে গেল।
“আর একটা কামড় দিলে খবর খারাপ হবে তোমার।” শাসিয়ে বলে উঠল এরোন।
“তোর খবরো খারাপ করবো।” কাঁদোকাঁদো মুখটা ফুলিয়ে বলল মিহি।
মিহির কথাবার্তা, আচরণ আর মুখোভাব দেখে মৃদু হেসে ফেলল এরোন।
এরোনকে হাসতে দেখে মুখটা ফুলিয়ে চোখ কুচকে নিলো মিহি।
“আমার খবর খারাপ করেই ফেলেছো। এখন দয়া করে থামো। নাহলে ঘটিয়ে ফেলবো কিছু।”
মিহি একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল।
“নিয়ে যাব বলছি ত! এখন ঘুমাও।” আশ্বস্ত করে বলল এরোন।
“ঘুমাবো না। প্রতিশোধ বাকি।” আধো আধো গলায় বলেই মিহি আবার মুখ এগিয়ে নিলো। এরোন সাথে সাথে একহাত মিহির মাথার পিছনে নিয়ে অন্যহাতে ওর মুখ চেপে ধরল। চোখে চোখ রেখে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভরাট গলায় বলল,”আমি বেসামাল হয়ে যাই, এটা চাও তুমি?”
মিহি চোখ পিটপিটিয়ে চাইলো। কথাটার অর্থ বুঝে আসলো না যেন।
“না চাইলে এখনি চুপচাপ ঘুমাও।”
কথা শেষ হতে দেরি মিহির কামড় বসাতে দেরি না। সে মুখের উপরে রাখা হাতটাও কামড়ে দিল।
হাতটা জ্বলে গেলেও শব্দ করলো না এরোন। স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল মিহির দিকে।
তারপর হুট করে মিহির কোমড় আকড়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।
শিউরে উঠল মিহি। শিহরণ বয়ে গেল পুরো শরীরে। এরোন গভীরভাবে কয়েকবার অধর ছোঁয়াতেই মিহি দুইহাতে এরোনের পিঠ খামচে ধরলো। নিঃশ্বাস ভারি হয়ে এলো নিমিষেই। কেঁপে কেঁপে উঠে ঘনঘন শ্বাস নিতে লাগলো ও।

এরোন থামলো। মুখ সরিয়ে আবার চোখে চোখ রাখলো।স্থির সেই চোখের দৃষ্টি। কিন্তু ভিতরে ভিতরে যেন তোড়পাড় চলছে। আরো কাছে যেতে ইচ্ছে করছে।
মিহি এখনো হাঁপাচ্ছে। অদ্ভুত চাহনিতে চেয়ে আছে ও। এরোন সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করলো। নিজেকে সামলে নিয়ে পিঠ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে শুইয়ে দিলো মিহিকে।
“ঘুমাও চুপচাপ।” মিহির গায়ে চাদরটা টেনে দিয়ে উঠে গেল বিছানা ছেড়ে।

বারান্দার এসে চেয়ার গা এলিয়ে বসে মুখ ফুলিয়ে কতকগুলি নিঃশ্বাস বের করল। কাধ আর গলা জ্বলে যাচ্ছে। কিন্তু তাতে মোটেও খারাপ লাগছে না।খারাপ লাগছে অন্য অজানা কারণে। ভিতরটা কেমন যেন খালি খালি লাগছে।
বুক চিরে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল কয়েকটা।
নিজের ডান হাতটার দিকে তাকালো। দুই আঙুলে মিহির দাঁত বসে গেছে স্পষ্ট ভাবে। লক্ষ্য করে মলিন হাসলো এরোন।
কবে ঠিক হবে সব! মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে এলো। দৃষ্টি সরিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইল ও।

ঘন্টা খানিক পর রুম থেকে কিছু পরার আওয়াজ আসতেই এরোন ভ্রুকুটি করে মাথা তুলল। চোখ হালকা লেগে এসেছিলো। চোখ ডলে রুমে এসে ঢুকেই দেখলো মিহি বিছানার কোনায় আধশোয়া হয়ে নুয়ে আছে।
“মিহি? কি হয়েছে?” সন্দিহান চোখে তাকিয়ে এগিয়ে আসলো এরোন।
ওর পাশে বসে ওকে বসানোর চেষ্টা করতে না করতেই গলগলিয়ে বমি করে দিলো ও। বমি করে নিজের গা সহ এরোনের গাও ভাসিয়ে ফেলল। বিছানা আর মেঝেও বাদ পরেনি।
এটাই হয়তো বাকি ছিলো!
বমি করে এরোনের কাধে নেতিয়ে পরল মিহি।
“এই মিহি।” মিহির কাধ হালকা করে ঝাঁকালো এরোন।
তার সারা শব্দ নেই। সে চোখই খুলতে পারছে না।
এখন ত আরেক বিপদ।
মিহিকে চেঞ্জ করাবে কে! মহাচিন্তায় পরে গেল এরোন। নিজের কোল ভাসিয়ে ফেলেছে সে।
জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে কিছু একটা ভাবলো এরোন।
তারপর কোনমতে শুধু শাড়িটা খুলে প্লাস্টিকের মত চাদরে গা মুড়িয়ে দিলো মিহির। বমি করা জায়গাটা থেকে খানিক সরিয়ে শুইয়ে দিলো ওকে।
শাড়িটা মেঝের বমির উপর চাপা দিয়ে দম নিলো। এখন নিজেকে ফ্রেস হতে হবে। খুবই বাজে অবস্থা। গন্ধে গা গুলিয়ে যাচ্ছে যেন।

শাওয়ার নিয়ে বের হলো এরোন। এখনো গা গুলাচ্ছে। এদিকে রুমের অবস্থাও মারাত্মক। বাজে গন্ধ মৈ মৈ করছে। তাই ড্রেসিং টেবিল থেকে পারফিউম নিয়ে পুরো রুমে স্প্রে করলো এরোন। বিশেষ করে বিছানায় আর মেঝেতে।
এখন একটু ঠিক আছে। মুখ ফুলিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো এরোন। তাকালো মিহির দিকে।
এত সব ঘটিয়ে সে এখন শান্তিতে ঘুমোচ্ছে।
পারফিউমটা ড্রেসিং টেবিল রেখে আলমারির দিকে এগিয়ে গেল এরোন। একটা টি-শার্ট বের করে পরে নিলো।
বারান্দায় পা বাড়াতে গিয়েও থেমে গেল। কিছু একটা চিন্তা করে বিছানার দিকে ঘুরে তাকালো।
বাঁকা হেসে মনে মনে বলল, ‘ছোটোখাটো একটা নাটক করলে কেমন হয়!’

?
সকাল দশটার দিকে ঘুম ভাঙলো মিহির। চোখ পিটপিটিয়ে তাকানোর চেষ্টা করতেই ভ্রুদ্বয় বেশ কুচকে এলো ওর। মাথা প্রচন্ড ভার ভার লাগছে এখনো।
সময় নিয়ে পুরোপুরি চোখ মেললো ও। ঘরের লাইট বন্ধ। তবে বারান্দা থেকে ঝলমলে রোদে এসে ঢুকেছে।
প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল সামনের দিকে।
এটা কার ঘর! গতকাল ত ছাদে ছিলো। তারপর কি হলো? এখানে কিভাবে এলো!
ভাবতে ভাবতেই নড়েচড়ে চাদর সরিয়ে উঠে বসলো মিহি। কপাল একহাতে চেপে ধরে নিজের দিকে খেয়াল করতেই চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল ওর। ঝড়ের বেগে চাদর টেনে নিলো আবার।
শাড়ি! শাড়ি কই!
“মর্নিং।”
এরোনের স্বর শুনে চমকে হাতের বামে তাকালো মিহি। ইজি চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে সে। মুখে তার বাঁকা হাসি।

মিহি অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বসা অবস্থাতেই শরীরে চাদরটা আরো চেপে ধরে খানিক পিছালো। মুখ শুকিয়ে যেন কাঠ কাঠ অবস্থা।
“আ..আমি এখানে কেনো! কি করেছেন আপনি আমার সাথে?” চঞ্চল দৃষ্টিতে এক শ্বাসে প্রশ্ন করলো মিহি।
“মনে নেই তোমার?!” চেয়ারের হ্যান্ডেলে হাত ভাজ করে গাল ছুঁয়ে বলল এরোন। অবাক অবাক ভান ধরলো সে।
মিহি হকচকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। কি হয়েছিলো গত রাতে! শীতল শিহরণ বয়ে যেতে লাগল ওর শরীরে।
এরোন মুচকি হাসলো।
“গতকাল রাতটা অনেক সুন্দর ছিলো। অনেক।”
মিহি পীলে চমকে উঠল। চাদরটা আরো শক্ত করে চেপে ধরলো গায়ের সাথে।
“ম…মানে আপনি সত্যিই আমার…।” মিহি আর বলতে পারলো না। গা, হাত, পা শীতল হয়ে আসছে যেন।
“আপনি সত্যিই জঘন্য একটা লোক। কি করে পারলেন আপনি আমার…আমার সাথে এটা করতে!” তিক্ততার সাথে বলল মিহি।
“ভালো মত রি-কল করো। আমি কিছুই করি নি। সব তুমি করেছো।” গা ছাড়া ভাবে বলল এরোন।
দাঁত কিড়মিড় করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করল মিহি। লোকটা এত নির্লজ্জ! সব দোষ এখন ওকে দিচ্ছে!
“একদম সাধু সাজবেন না! আমাকে ওসব খাইয়েছিলেনই ত আপনি। যাতে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করে নিতে পারেন। জানিনা ভেবেছেন? অসভ্য, লুচ্চা লোক একটা।”
“তোমার তাই মনে হচ্ছে? এই দেখো কি করেছ তুমি গতকাল আমার সাথে!” নিষ্পাপ ভঙ্গিমায় বলে গলার দিকে ইশারা করলো এরোন।

মিহি থম মেরে গেল। চোখ একেবারে ছানাবড়া হয়ে গেল৷ বিমূঢ় হয়ে গেল সে।
“দেখেছো! এখন বলো, কে লুচ্চা আর কে অসভ্য?”
মিহি দ্রুত চোখ সরালো। বুক ধুকপুক করছে আবার। প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছে। জীবনেও এসব করতে পারে না ও!
“অসম্ভব। আমি জীবনও এসব করিনি। মিথ্যুক আপনি।” অন্যদিকে মুখ করে কোনোমতে বলল মিহি। গা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে।
“তাহলে কে করেছে কাপকেক?!” আকাশ থেকে পরে বলল এরোন।
মিহি কাচুমাচু হয়ে আরো চেপে বসলো। চোখ মুখের নিদারুণ অবস্থা। বিব্রত ভাব।
এরোন ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকালো।
“ফ্রেস হও যাও।” কথাটা বলে এরোন বারান্দায় পা বাড়ালো।
মিহি দেরি না করে অতিসত্ত্বর নিজেকে চাদরে পুরোপুরি জড়িয়ে নিয়ে সবেগে বাথরুমে ঢুকে পরল।

?
ড্রয়িং রুমে বিস্তর নীরাবতা। কেউ কোনো কথা বলছে না।
এরোনের বাবা রুহুল সাহেব থমথমে মুখে তাকিয়ে আছেন এরোনের দিকে।
আরোহীর কাছ থেকে ইতিমধ্যে সবই অবগত হয়েছেন তিনি। বাড়ি ফিরতেই আরোহী সব বলেছেন তাকে। তার পর পরই তিনি ড্রয়িংরুমে ডেকেছেন সবাইকে।
এরোন আর রুহুল সাহেব দুজনেই মুখোমুখি বসা। এরোনের মুখে চিন্তাভাব নেই। তবে মনে হালকা অস্থিরতা আছে। তবুও শান্ত ভঙ্গিতেই আছে সে।
আরোহী বসেছে রুহুল সাহেবের পাশে। হালকা চিন্তিত হয়ে কিছুক্ষণ ছেলে কিছুক্ষণ স্বামীর দিকে তাকাচ্ছেন তিনি।
মিহি আড়াআড়ি একটা সিংগেল সোফায় বসা। সে মাথা নিচু করে আছে। ওর ঠিক পিছনে পকেটে হাত গুজে দাড়িয়ে নিঃশব্দে চুংইগাম চিবুচ্ছে এরিক। সে নিশ্চিন্ত।
“কি করেছো তুমি?” থমথমে গলায় এরোনকে জিজ্ঞেস করলেন রুহুল সাহেব।
“বিয়ে করেছি।” সহজ গলায় উওর দিল এরোন।
রুহুল সাহেব ভ্রু কুচকে নিলেন৷ বললেন, “তুমি নাকি জোর করে তুলে এনে বিয়ে করেছো!”
এরোন সরু চোখে তাকালো ওর মায়ের দিকে।
“মায়ের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। সব বলেছে সে। বলবে না কেনো? এগুলো করলে কিভাবে তুমি?” হালকা গাঢ়তর স্বরে বললেন রুহুল সাহেব।
এরোন মুখ দিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলল। এত দিক সামলাতে সামলাতে কিনা পাগল হয়ে যেতে হয়।
“এখন চুপ কেনো? এটা করা কতটা অনুচিত তা জানোনা তুমি? এগুলো শিখিয়েছি তোমাকে!” রুষ্ট হয়ে বললেন রুহুল সাহেব।
“কথায় কথা বাড়বে৷ তাই এ বিষয়ে আর কথা না বললেই ভাল হবে!” একরোখা হয়ে বলল এরোন।
রুহুল সাহেবের মুখ আরো থমথমে হয়ে গেল।
“তোমার ছেলের কথা শুনেছো!” আরোহীকে বললেন তিনি।
“দোষ করলেই আমার ছেলে হয়ে যায়?! গুণ গান করার সময় ত তোমার ছেলে তোমার ছেলে করো!” চোখ রাঙানি দিলেন আরোহী।
রুহুল সাহেব খানিক বিরক্ত হলেন।

“মোট কথা আমি ওকে ছাড়ছি না। প্রশ্নই ওঠে না। যেভাবেই হোক বিয়ে তো হয়ে গেছেই। এখন ও আমার বউ। ওকে ছাড়তে পারবো না। আর ওকেও ছেড়ে যেতে দেব না। আর তাছাড়া ওর পরিবার মেনেই নিয়েছে।” গম্ভীর গলায় বলল এরোন।
রুহুল সাহেব ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন।
মিহি যেন লজ্জায় নুয়ে যাচ্ছে। ওর ইচ্ছে করছে এগিয়ে গিয়ে এরোনের মুখে টেপ লাগাতে। নিজের বাবা মায়ের সামনে কিভাবে এসব বলছে!
রুহুল সাহেব বিস্মিত ভাবের সাথে আরোহীর দিকে তাকালেন।
“তোমার ধাঁচই পেয়েছে। তোমার ছেলে বলে কথা!” বিড়বিড়িয়ে ফোড়ন কাটলেন আরোহী।
আরোহীর কথায় অপ্রস্তুত হয়ে গলা ঝাড়লেন রুহুল সাহেব। আর কথা বাড়ালেন না। কারণ যে অবস্থা দেখছেন তাতে কথা বাড়িয়ে লাভ হবে না। তাছাড়া এরা ছোটো থেকেই প্রচন্ড জেদী।
“যা ইচ্ছা করো। আমি কিছু জানিনা।” দায়সারাভাবে বলে উপরে উঠে গেলেন তিনি।

এরোন ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আরোহীকে বলল,”এত ডিটেইলস বলতে কে বলেছে!”
“ত বলব না? ভালো কাজ ত করিস নি!” কটাক্ষ করে বললেন আরোহী।
এরিক হাই তুলতে তুলতে বলল, “এত প্যানিক করার কি আছে মা! একগুঁয়ে পদ্ধতিতে ত আমিও বিয়ে করতে চাই না। জীবনে একটুঅকটু এডভেঞ্চার না থাকলে হয়!”
চোখ পাকালেন আরোহী।
এরিক মৃদু হেসে চুইংগাম চিবুতে চিবুতে উপরে উঠে গেল।
“তোর মত হচ্ছে দিন দিন।” এরোনকে বললেন আরোহী।
এরোন কপাল কুচকে তাকালো।
“যাইহোক আমি যাই ফ্রেস হই। বাহির থেকে এসেই গোলমিটিং!”
আরোহীও চলে গেলেন।
আরোহী যেতে মিহি আড়ষ্ট হয়ে বসে মাথা নুয়ে নিলো।সকাল থেকেই ও এড়িয়ে যাচ্ছে এরোনকে। সামনে পরতে চাচ্ছে না। কিন্তু এখন তার সামনেই একা পরে গেছে। ইচ্ছে ত করছে দ্রুত ছুটে পালাতে। কিন্তু হাত পা নড়ছে না ওর।

কিছুক্ষণ ইতস্তত করে অস্থিরতায় কাটানোর পর আড়চোখে এরোনের দিকে একবার চাইলো মিহি। ফলে যেটা চাচ্ছিলো না সেটাই হয়ে গেল। পরে গেল চোখে চোখ। সেকেন্ডের মধ্যে বুকের ভিতরটায় তোড়পাড় শুরু হলো যেন। মিহি এক মুহূর্তের জন্য দেরি না করে চোখ সরিয়ে নিলো। হাত পা যেন আবার শিউরে উঠছে।
মিহির হাঁসফাঁস দেখে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো এরোন। বলল, “লজ্জা পাচ্ছো?”

(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here