গল্পের নামঃ বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ৩২: গল্প
লেখিকা: #Lucky_Nova
বারান্দার সামনে টাঙিয়ে রাখা পর্দা বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে দুলছে। তার ফাঁক দিয়ে আসা আধো আধো আলোতে অন্ধকারভাবটা কিছুটা কমে এসেছে।
মিহি বিছানার কোনে শুয়ে নিজের ধুক ধুক করে চলা হৃদস্পন্দন শুনছে। মুখটা লালাভ আভায় ছেয়ে গেছে তার।
এরোন পাশে এসে শুয়ে পরতেই ঢোক গিলল সে।
এরোন মিহির দিকে পাশ ফিরলো।
কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে ওর বাহু ধরে টেনে ঘুরালো ওকে নিজের দিকে।
মিহি হকচকিয়ে উঠলো।
এরোন গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বুকে টেনে আনলো ওকে।
মিহি নামানো চোখ পিটপিটিয়ে তাকিয়ে রইল।
এরোন স্থির গলায় বলল,”হেজিটেট না করে ঘুমাও।”
মিহি চেষ্টা করলো। কিন্তু ভিতরকার ধড়ফড়ানিতে অস্থির অস্থির লাগছে যেন। ঘুমই আসছে না।
এরোন আন্দাজ করতে পেরে বলল, “কী হয়েছে তোমার?
মিহি জড়থবু হয়ে নিশ্চুপ রইল। এরোন হাসলো।
মৃদুস্বরে বলল “গল্প শুনবা?”
মিহি অবাক হয়ে চোখ তুলে তাকালো।
এরোন গালের পাশের চুলগুলো সরিয়ে দিতে দিতে বলল, “শোনো তাহলে!”
মিহি চোখ নামালো।
“আমি একটা মেয়েকে প্রথম দেখাতেই কিভাবে ভালোবেসে ফেলেছি সেই গল্প। আমার কাপকেকের গল্প।”
মিহি হালকা থমকালো।
“প্রথম ওকে আমি স্টেডিয়ামের ক্যান্টিনে দেখেছিলাম। সেই প্রথম দেখাতেই সে আমার চেহারা আর শার্টের বারোটা বাজিয়ে দিল!”
মিহি ভ্রুকুটি করে তাকালো। সে জানে তার কথাই বলা হচ্ছে।
এরোন ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলল, “তবে এসবের সাথে সাথে আমার মনেরও সর্বনাশ করে দিল সে।”
মিহি দ্রুত চোখ নামালো। টিপটিপ করছে ভিতরটা আবার।
“তাই এসবের ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে চেয়ে বসলাম আমি। কিন্তু, সে পালিয়ে গেল।” বলতে বলতে এরোন ওর গালে হাত রাখল।
উষ্ণ স্পর্শে চোখ বন্ধ করে নিলো মিহি।
“তারপর থেকে স্টেডিয়ামে রোজ তাকে খুঁজলাম। রোজ। কিন্তু সে আর আসলো না। আমি তাও অপেক্ষা করলাম। তারপর অদ্ভুত ভাবেই তাকে একদিন খুঁজে পেয়ে গেলাম। সে নিজেই আবার এলো। আমাকে চিঠি দিলো। সেদিন থেকে শুরু হলো সবকিছু। আমি ধরতে পারলাম না কিছুই। মনে করলাম সব সত্যি। সত্যি মনে করেই তার সাথে নিজেকে জড়াতে চাইলাম। কতটা বোকা ছিলাম আমি।” হতাশ হয়ে স্বগতোক্তি করল এরোন।
মিহি পলক ফেলল না। স্থির দৃষ্টিতে এরোনের বুকের দিকে চেয়ে রইল। ভিতরে ভিতরে কেমন একটা হতে লাগল ওর।
এরোন ম্লান স্বরে বলতে লাগল, “কিছু না বুঝেই, না জেনেই তাকে আরো আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইলাম। তার সাথে আরো মিশলাম, জানার চেষ্টা করলাম। সেও সুযোগ দিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন সে হারিয়ে গেল। চোখের আড়াল হয়ে গেল। খুঁজেই পেলাম না। অনেক ঘাবড়ে গেলাম। অনেক। মনে হলো যেন হারিয়েই ফেললাম তাকে। দম বন্ধ হয়ে এলো একদম! সেই কয়েকটা দিনে আমি ভালোভাবেই টের পেয়ে গেলাম যে এই মেয়েকে ছাড়া আমার একদমই চলবে না। একদমই না। আমি তাকে ব্যস্ত হয়ে খুঁজতেই লাগলাম। কেউ বলতে পারল না তার বিষয়ে কিছু। এতে আরো ভয় হতে লাগল! কিন্তু অবশেষে একজনের থেকে জানলাম যে সে বাসায় চলে গেছে। দেরি না করেই সেদিনই তার কাছে গেলাম। খুঁজে বের করলাম। তাকে চোখের সামনে অক্ষত দেখলাম। দেখে আগের সব দুশ্চিন্তা নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। কিন্তু পরেরদিনই সব এলোমেলো হয়ে গেল। সব। জানলাম সে নাকি আমাকে ভালোই বাসে না। কোনদিনই বাসে নি। সব নাকি ভুল ছিল। নাটক ছিল। মিথ্যা ছিল। সে নিজের মুখেই বলল। কথাগুলো কাঁটার মত এসে বিঁধল। কিন্তু আমি তাও বিশ্বাস করলাম না। একদমই বিশ্বাস করলাম না। ভাবলাম রাগের বশে সে এমন বলছে। রাগ কমে গেলেই বলবে এগুলো কিছু ভুল ছিল না। সব সত্যি ছিল। কিন্তু সে এমনটা বললই না। শুধু আমাকে কষ্ট দেওয়ার মত কথা বলে যেতে লাগল। আমি তাও বিশ্বাস করতে চাইলাম না। মানতে পারলাম না। তাই তাকে আরো জোর করলাম। তুলে এনে বিয়ে করলাম। কিন্তু এতে সে আরো ঘৃণা করল আমাকে। এজন্য আমি তার পরিবারের সাথেও সব ঠিক করতে শতভাগ চেষ্টা করলাম। কিছুটা করেও ফেললাম। কিন্তু তারপরও সে একটুও ভালোবাসলো না। শুধু ছেড়ে যাওয়ার কথা, পালিয়ে যাওয়ার কথাই ভাবলো। কিন্তু আমি তাকে ধরে রাখার কথা ভাবলাম। এখনো ভাবি। ভবিষ্যতেও ভাববো। কারণ তাকে ছাড়া আমার চলবেই না।”
মিহি থম মেরে গেল। পলক ফেলল না। তীব্র অনুশোচনা হয়তো নাড়া দিল মন মস্তিষ্কে।
“এজন্য আমি তাকে ছাড়বো না। শেষ পর্যন্ত তার হাতটা ধরে রাখবো। তার ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করব।”
এরোন মিহির গাল থেকে হাত সরিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ওকে।
ধক করে উঠল মিহির ভিতরটা।
“কাপকেক!”
মিহি স্থির দৃষ্টিতে নিশ্চুপ রইল।
“ভালো না বাসলেও আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ।” আকুলতা জড়ানো কন্ঠে বলল সে।
মিহি অবাক হয়ে মাথা তুলল। চোখ পড়লো চোখে।
বিষাদগ্রস্ত সেই চাহনিতে।
মিহি চোখ সরিয়ে নিয়ে আলতো করে সাঁয় দিল।
ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো এরোনের। মুখ এগিয়ে নিয়ে গাঢ় করে চুমু খেল মিহির কপালে। কাছে টেনে নিয়ে আদুরে গলায় বলল,”ঘুমাও এখন।”
?
গোসল সেরে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো মিহি। ভিজে চুলগুলো একপাশের কাধে এনে তোয়ালে দিয়ে মুছতে লাগল সে। মুছতে মুছতেই চোখ পড়ল বাহিরে। সামনের বাগানটা তে।
চেয়ার টেবিল সাজানো সেখানে। গোলমিটিং বসছে হয়তো।
সেখানেরই একটা চেয়ারে বসে আছে এরোন। পরনে গাঢ় নীল শার্ট আর কালো জিন্স। হাতা ভাঁজ করা কেনুই অব্দি। মুখে স্বভাব সুলভ সেই হাসি। অর্নি আর ওর কতগুলো বান্ধবীও আছে সেখানে। যাদের সাথে আড্ডায় মশগুল হয়ে কাগজ দিয়ে কিছু বানাচ্ছে এরোন। অরিগামি হয়তো।
এক মেয়ে হঠাৎ এরোনের কাছ ঘেঁষে বসে পরলো। আর উৎসুক ভাবে দেখতে লাগল এরোন কিভাবে কাগজ দিয়ে পাখি বানাচ্ছে।
আসলে পাখি কম সে এরোনকেই দেখছে বেশি।
মিহি ভ্রুকুটি করল।
মেয়েটাকে চেনে মিহি। ওর নাম ধুতরা। বড্ড গায়ে পরা মেয়ে। বিবাহিত অবিবাহিত কোন পুরুষের সাথে ঘেঁষাঘেঁষিতে অসুবিধা নেই এই মেয়ের। পাক্কা বাহায়া! লজ্জা ছাড়া।
দেখতে দেখতেই সে এরোনের বানানো পাখিটা ধরে দেখার বাহানায় এরোনের হাত ছুঁয়ে দিল।
উপস্থিত কেউ তা বুঝলো না। কারণ কয়েক সেকেন্ডেই সব ঘটে গেল।
কিন্তু মিহি হা হয়ে গেল পুরোই। গা চিটচিট করে উঠল ওর।
‘লজ্জা ছাড়া মেয়ে!’ মনে মনে আওড়ালো মিহি।
সময় যাচ্ছে যত ততই মেয়েটার ছোঁয়াছুঁয়ি বাড়ছে। যা শুধু মাত্র মিহিই বুঝতে পারছে। তাও আবার অত দূর থেকে।
চুল মোছা আর হচ্ছে না তার। মহা বিরক্তিতে দেখছে সে ওই মেয়েটাকে।
‘আশ্চর্য! এই লোক বুঝতে পারছে না ওই মেয়েটা ছোঁয়ার ধান্দায় বার বার এমন করছে! নাকি ইচ্ছে করেই ছুঁতে দিচ্ছে!’ নাক মুখ কুচকে ফেলল মিহি।
রাগ হচ্ছে খুব। জ্বলে যাচ্ছে শরীর।
এই মেয়েকে অর্নি এবাড়িতে আনল কোন সাহসে! জঘন্য মেয়েটাকে এখনি বের করতে হবে।
মিহি জলদি তোয়ালেটা মেলে দিল বারান্দায়। তার নজর এখনো সামনের দিকে। হাসাহাসিতে মত্ত সবাই। বিশেষ করে ওই গা ঘেঁষা মেয়েটা। হাসির তালে পারলে এরোনের গায়ের মধ্যেই চলে যায়।
মিহি দেরি না করে নেমে এলো নিচে।
ছটফটিয়ে চিন্তা করতে লাগল কীভাবে বাগানটায় যাবে! আর গিয়েই বা কি বলবে!
আচমকা গিয়ে ওই মেয়েকে ধমকালে সবাই কি মনে করবে!
এখন উপায়!
পায়চারি শুরু করলো মিহি।
“কি হয়েছে?” দিপালি খুন্তি হাতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে জিজ্ঞেস করলেন।
মিহি চমকে তাকালো।
নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,”মা অর্নিকে একটু ডেকে দেও ত!”
“বাগানেই ত আছে। যা কথা বলে আয়।”
“তুমি একটু ডেকে আনো।”
“নিজে ডেকে নে৷ রান্না বসিয়েছি আমি।” বিরক্ত হয়ে বলেই তিনি খাবার টেবিল থেকে লবনের কৌটা নিয়ে আবার রান্নাঘরে ঢুকলেন।
মিহি পরে গেল ফ্যাসাদে। এত অসহ্য লাগছে। বিচলিত মুখে সে দ্রুত উপরে উঠে গেল আবার। বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। দাঁড়িয়েই মুখ কাঠকাঠ হয়ে গেল।
ওই মেয়ে এরোনের থেকে কিছু একটা বানানো শিখছে। আর সেই শেখার বাহানায় তাকে ছুঁচ্ছেও। পারিপার্শ্বিক দৃষ্টিতে তা স্বাভাবিক হলেও মিহির চোখে তা প্রচন্ড অস্বাভাবিক।
ওই মেয়ে কেন ছোঁবে! কার্টিসি নামক কিছু কি এই মেয়ের মধ্যে নেই নাকি!
অন্য মেয়েরা ত ভদ্র সভ্য হয়েই আছে।
এসব যে আর সহ্য করা যাচ্ছে না।
মিহি অবশেষে ইনিয়েবিনিয়ে গেল বাগানে। বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়াল সে। কেউ তাকে খেয়াল করছে না। সবার ধ্যান টেবিলের দিকে।
আর ওই মেয়ের ধ্যান এরোনের দিকে।
মিহি একটা রাগী নিঃশ্বাস ফেলে ডাকলো, “অর্নি।”
সবাই ঘুরে তাকালো ওর দিকে। এরোনও তাকালো।
চোখে চোখ পড়ল মিহির। দ্রুত চোখ সরালো মিহি। দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে এলো। ঝড় শুরু হয়ে গেল বুকের মধ্যে।
“কি?” হালকা বিরক্ত হলো অর্নি।
মিহি মুখ দিয়ে শ্বাস নিয়ে এলোমেলো দৃষ্টিতেই তাকালো অর্নির দিকে।
মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল,”শুনে যা একটু।”
অর্নি মুখ মলিন করলো।
ম্লান মুখে বলল, “এখন আবার কী মিহি দিদি? পরে শুনি না, প্লিজ?!”
মিহি ধমক দিতে চেয়েও পারল না। চোখে চোখ পরার পর থেকেই গা অসাড় হয়ে এসেছে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকাও যেন দায় হয়ে গেছে।
মিহি আরেকবার তাকালো এরোনের দিকে। সেও তাকিয়ে ছিল। তাই আবার দৃষ্টি গেঁথে গেল এক সুতোয়। স্বাভাবিক মুখে স্নিগ্ধ চাহনি তার।
পুনরায় চোখ সরালো মিহি। ঢোক গিলে পিছিয়ে গেল দুই পা। চলে গেল সেখান থেকে সে।
এরোন প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো।
তারপর অর্নিকে বলল, “যাও, দেখে আসো কি বলে।”
“লাগবে না জিজু। তুমি বানাও ত!” বলল অর্নি।
এরোন বুঝল অর্নি এখন যেতে চাচ্ছে না।
তাই মৃদু হেসে বলল,”তোমরা বানাতে থাকো আমি দেখে আসছি।”
এরোন উঠতে গেলেই অর্নি বলে বলে উঠল, “না, না জিজু। আমিই যাচ্ছি। তুমি বসো।”
তৎক্ষণাৎ ছুটলো অর্নি।
মিহি সোফাতে বসে হাঁসফাঁস করছিলো।
এর মধ্যেই অর্নি এসে দাঁড়ালো। তাড়া দিয়ে বলল, “বলো কী বলবে! তাড়াতাড়ি।”
মিহি আমতাআমতা করল।
“না মানে কি করছিস তুই? এতজনকে বাসায় নিয়ে এসেছিস!”
অর্নি মুখ লটকালো। বলল,”এটা বলতে?”
মিহি ভ্রু কুচকে বলল,”হ্যাঁ। এখনি সবাইকে বিদেয় করবি।”
“কেন?” অবাক হয়ে বলল অর্নি।
মিহি একটু থতমত খেয়ে গেল। তাও নিজেকে সামলে নিয়ে কড়া নজরে তাকিয়ে বলল,”যা বলছি সেটা কর। মুখে মুখে এত তর্ক করবি না। বেশি বেশি করছিস দিন দিন। আর ওই ধুতরা না ফুতরা! ওকে এ বাসায় এনেছিস কেন? জানিস না ও কেমন?”
“কেমন?” সংকুচিত চোখে প্রশ্ন করল অর্নি।
“যা বললাম সেটা কর।” কঠোর গলায় বলল মিহি।
অর্নির অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি মনে হলো এসব। তাও দাঁতেদাঁত চিপে বাগানের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল সে।
মিহি নিজের ব্যবহারে নিজেই অবাক হলো। অদ্ভুত ত! এমন কেন করছে ও!
চিন্তা করতে করতে উপরে উঠে গেল ও। বসলো নিজের বিছানায়।
নিজেকে নিজে বলল যে, মেয়েটা ভাল না তাই, হ্যাঁ তাই-ই ত। মেয়েটাকে এমনিই সহ্য হয়না। ছোট হয়ে এখনি এসব করলে পরে কী হবে! এজন্যই।
বাগান থেকে আবার হৈ হট্টগোলের শব্দ কানে আসতেই অবাক হলো মিহি। আশ্চর্য! এখনো যায়নি কেন ওরা?
মিহি এগিয়ে গেল বারান্দায়। হা হয়ে গেল মুখ।
বাহ! তারা পুনরায় নিজেদের কাজে ব্যস্ত!
ধুতরার দিকে চোখ পড়তেই অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল মিহি। এত অসভ্যতামি কোথায় শিখেছে এই মেয়ে! পরপুরুষের সাথে গা ঘেঁষছে!
আর এদিকে অর্নি আরেক জন! তাকে বকেঝকেও কিছু হলো না! দিন দিন সত্যিই অভদ্র হচ্ছে অর্নি। কথা কানে নেয় না।
চিন্তা করেই তেতে উঠল মিহি। পুনরায় নিচে নেমে গেল সে।
এরোনের ফোন আসায় একটু আগেই সে ফোন তুলে বাগানের অপর প্রান্তে চলে গেছে কথা বলতে।
এদিকে এরা গল্পে মত্ত।
হন্তদন্ত হয়ে সেখানে হাজির হলো মিহি। দাঁড়ালো অর্নির সামনে।
মিহিকে দেখে অর্নির মুখ পুনরায় শক্তপোক্ত হয়ে গেল।
মিহি একপলক ধুতরার দিকে তাকিয়ে তারপর চোখ পাকিয়ে অর্নিকে বলল,”কি বলেছিলাম তোকে? দিন দিন এমন লাগামছাড়া হচ্ছিস কীভাবে তুই? বন্ধ করতে বলেছিলাম না সব?! আর এই মেয়েটা এখনো আছে কেন?”
ধুতরার দিকেও চোখ পাকালো মিহি।
“মিহি দিদি কী শুরু করেছ তুমি? অসহ্য লাগছে আমার। যাও ত তুমি! যত্তসব।” ক্ষোভ নিয়ে বলল অর্নি।
অর্নির ব্যবহারের অবাক হয়ে গেল মিহি।
রেগে গিয়ে বলল, “মারব টেনে এক…!”
বলেই হাত তুলতেই সেই হাতটা ধরে নিল এরোন।
মিহি ভ্রুকুটি করে তাকালো সেদিকে।
“কি হয়েছে? এত রেগে যাচ্ছ কেন?” হতবাক হয়ে চেয়ে মিহিকে বলল এরোন।
“সেটাই জিজু! সকাল থেকে ক্যাচক্যাচ করছে। মাথা নষ্ট হয়ে গেছে মনে হয়।” অর্নির বলা কথায় মিটমিটিয়ে হেসে উঠল ওর বান্ধবীরা।
অগাধ অপমানিত বোধ হলো মিহির। দাঁতেদাঁত চিপল সে।
এবার থাপ্পড় একটা না দিলেই নয়। বড়দের সাথে এভাবে কেন কথা বলবে!
মিহি এরোনের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল, “হাত ছাড়ুন। ও বেশি বেড়েছে।”
এরোন এগিয়ে এসে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলল,”শান্ত হও। এমন কেন করছ তুমি?”
মিহির ধৈর্যের সীমা পেরিয়ে গেল যেন। অর্নিকে কিছু বলার বদলে কিনা উল্টো ওকেই বলছে শান্ত হও?
“ছাড়ুন হাত।” বলেই এক টানে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পিছিয়ে গেল মিহি। সাথে সাথেই পাশে থাকা কতকগুলি ইটের স্তুপের উপর পা বেধে ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে গেল সে।
ইটের উপর ডান কাত হয়ে পড়ায় ছিলে গেল জায়গায় জায়গায়।
থমকে গেল উপস্থিত সবাই।
এরোন বিচলিত হয়ে এগিয়ে এসে মিহিকে ধরে তুলতে চাইতেই মিহি নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে থমথমে গলায় বলল, “আমি একাই পারবো। ছাড়ুন।”
“একা পারবা না।” বলেই এক হাত কাধে জড়িয়ে নিয়ে কোলে তুললো ওকে।
হকচকিয়ে গেল মিহি।
উপস্থিত সবাইও হা হয়ে গেল।
মিহি নামাতে বলার কথা উচ্চারণ করার আগেই এরোন হাঁটা শুরু করল সদর দরজার দিকে।
মিহি চোখ নামিয়ে রইল। কপালে কিঞ্চিৎ ভাজ পড়ল। মুখ এখনো থমথমে। কারণ অর্নির বেয়াদবি ক্ষমা করার মত না, তাও এরোন থাপ্পড়টা মারতে দেয় নি। উল্টো ওকেই শান্ত হতে বলেছে!
এরোন বিছানায় এনে বসালো মিহিকে।
পাশে বসতে বসতে বলল,”কোথায় কোথায় লেগেছে দেখি?”
এরোন মিহির ডান হাত ধরে দেখতে চাইতেই হাত সরিয়ে নিল মিহি। কাঠকাঠ গলায় বলল,”আপনার দেখতে হবে না। আপনি নিচে গিয়ে যা করছিলেন তাই করুন।”
ভ্রু কুচকে গেল এরোনের।
“মানে? কী আবোল তাবোল বকছো! দেখি হাত দেখাও।”
“বললাম না লাগবে না।” মিহি একরোখা হয়ে হাত সরিয়ে নিল পুনরায়।
মেজাজ বিঘড়ে গেল এরোনের।
(চলবে..)