খোঁজ পর্ব ৬

0
480

#খোঁজ
৬ষ্ঠ_পর্ব
লেখক মোঃ কামরুল হাসান

লিটু মিথিলাকে চমকে উঠতে দেখে হেসে বলে, আহা! বিচলিত হবেন না, মিস মিথিলা! আমরা অদিতির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটা তদন্ত করতে গিয়ে সেই খাবারের হোটেল পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছি। আর সেই দোকানের সি সি ক্যামেরায় ধারণ কৃত ভিডিওতে আপনাদের দুই বান্ধবীকে একসাথে বসে থাকতে দেখা গেছে।

আচ্ছা এখন বলুন মিস মিথিলা! সেদিন সেই খাবারের দোকানে বসে আপনাদের দুই বান্ধবীর মধ্যে কি এমন গোপন আলোচনা হয়েছিলো? যার জন্য অদিতি আজ নিখোঁজ!

প্রশ্নটা শুনে মিথিলা একেবারে চুপসে গিয়ে কতক্ষণ চুপ করে রইলো। অফিসার বলে, আপনি এভাবে চুপ করে থাকলে আমরা কিন্তু ভেবে নেবো, এর পিছনে আপনার হাত আছে? আশা করি সেই রকম কোন কিছু যাতে না হয়। সামনেই আবার আপনার বিয়ে! বিয়েটা নির্বিঘ্নে সমাধ হোক সেটাই আমাদের চাওয়া।

মিথিলা এবার কিছুটা আশ্চর্য হয়ে জোরালো কন্ঠে বলে, আপনারা আমাকে স*ন্দেহ করছেন? অফিসার জবাব দেয়, আমাদের স*ন্দেহের লিষ্টটা একটুখানি বড়ই। এতে শুধু আপনি নন, আরও অনেকেই আছে। অফিসারের কথা শুনে মিথিলা মর্মাহত হলো।

অফিসার কয়েক বার জিজ্ঞেস করার পরে বললো, অদিতির নিষেধ আছে।তাই আমি বলতে পারছি না! লিটু হেসে বলে, যে বলতে নিষেধ করেছে। সে কিন্তু অনেক বড় বি*পদের মধ্যে রয়েছে। তা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়? তাই চুপ করে থাকার চেয়ে কথাটা বলে দিলেই হয়তো তার উপকার হতে পারে?

মিথিলা বলে, তবে আগে আমার বাবাকে খুঁজে বের করে আনুন! আমি তখন সব বলবো। তদন্ত অফিসার একটুখানি রাগান্বিত কন্ঠে বলে, আপনি বললেও আপনার বাবার খোঁজ করা হবে। আর না বললেও খোঁজ করা থেমে থাকবে না! অবশ্য এমন অন্যায় আবদার আপনি করতেও পারেন না, মিস মিথিলা!

মিথিলার মা সামনেই ছিলেন। তিনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, যা জানিস মা! সবকিছু তাদেরকে বলে দে! এমন তো হতে পারে, তোর একটা কথা কেসটার সুরাহার পথ সুগম করে তুলবে? তদন্ত অফিসার লিটু উনার কথায় মত প্রকাশ করে।

মিথিলা বলে, অদিতির সাথে মাঝখানে আমার অনেকদিন কোন যোগাযোগ ছিলো না। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন সে আমাকে ফোন করে বলে, দেখা করতে চায়। আমিও বলেছিলাম, ঠিক আছে বাসায় চলে আয় না! কিন্তু অদিতি বলে বাসায় নয়।সেখানে সমস্যা আছে।

যে কোন ফার্স্ট ফুডের দোকানে দেখা করতে চাই। আমিও আর অদিতির কথায় দ্বিমত প্রকাশ করিনি। যদিও বুঝতে পেরেছিলাম, নিশ্চয়ই কোন জরুরি অথচ গোপনীয় হবে কথাটা। তাই দেখা করি সেই দোকানে। অদিতি কে সেদিন কোন বিষয়ে খুব অস্থির ও চিন্তিত দেখাচ্ছিলো!

জিজ্ঞেস করলাম, কিরে তোর কি হয়েছে? তোকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে যে! অদিতি তখন আমার হাত ধরে বলে, সেই জন্যই আমি তোকে এখানে ডেকেছি। আমার একটা উপকার করতে পারবি? বুঝতে পারলাম না, অদিতি কি বলতে চাইছে! তাই জিজ্ঞেস করলাম, আমি তোর কি এমন উপকার করতে পারি?

অদিতি এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে দুদিনের জন্য আমার সাথে তোকে কক্সবাজার বাজার যেতে হবে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি কিন্তু কেন? হঠাৎ এমন করে সেখানে যাওয়ার কথা কেন বলছিস? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না!

অদিতি হঠাৎ দুফোঁটা চোখের জল ফেলে বলে, আমার অতি আপন একজন মানুষকে মুক্ত করে আনতে হবে। এমনকি সেই কাজটা অতি গোপনে করতে হবে। আর আমি একা যেতে ভ*য় পাচ্ছি! আমি অদিতির মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলাম, মুক্ত করে আনতে হবে মানে? কাকে মুক্ত করে আনতে হবে?

এটা তো পুলিশ কেইস! তোর বাবা-মা এমনকি তোর স্বামীকেও জানানো উচিৎ বিষয়টা! সে চমকে উঠে বলে, না,নাহ্! তা করা যাবে না। মা-বাবা কে হয়তো জানাতে পারতাম কিন্তু কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আর স্বামীকে জানাবো সেই মুখ আমার নেই! বুঝতেই পারছিস আমি কতোটা অসহায় ও দূর্বল হয়ে পড়েছি? হুম তা তো দেখতেই পাচ্ছি! কিন্তু আমি এখনই তোকে কথা দিতে পারছি না। আমি বললাম বিষয়টা আমাকে একটুখানি ভেবে দেখতে হবে। তারপর তোকে বলতে পারবো। যাবো কি যাবো না?

অদিতি তখন আমার হাত দুটি ধরে বলে, প্লিজ মিথিলা! আমার সামনে অন্য কোন রাস্তা থাকলে তোকে বলতাম না। আমিও বললাম আমার আজ বাদে কাল বিয়ে। কিছু বুঝতে পারছি না কি করবো? তোর আমাকে একটুখানি সময় দিতেই হবে। বুঝতেই পারছিস এখানে আমার একার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন! বাবা-মা দুজনেই বলে ঘুরে আয়! তবেই আমি তোর সাথে যেতে পারবো। আচ্ছা ঠিক আছে, তবে যদি না যাস তবে মনে করবি আমাদের দেখা হয়নি। আমি ওর কথায় সায় দিলাম। অদিতি কি যেনো একটু ভেবে তারপর বললো, আচ্ছা ঠিক আছে রাতের মধ্যে আমাকে জানাবি!

জিজ্ঞেস করলাম কার জন্য এতোটা অস্থির হয়ে উঠেছিস তুই? এই কথাটা অন্তত আমাকে বল! অদিতি বলে একটা বাচ্চা মেয়ে কে একজন নষ্ট মানুষের কাছ থেকে উদ্ধার করতে হবে! জিজ্ঞেস করলাম কে সেই মেয়ে? কিন্তু সে এই কথার কোন জবাব দিলো না অদিতি। বললো, আমার খুব তারাহুরো! রাতের মধ্যে কিন্তু আমাকে জানাবি! আচ্ছা ঠিক আছে। এই বলে আমরা দুজন দু’দিকে বেরিয়ে পড়ি।

পরে রাতে অদিতি আমাকে ফোন করলে আমি বলেছি আমার পক্ষে সম্ভব নয় রে! তুই কিছু মনে করিস না! অদিতি আমার কথা শুনে বললো, ঠিক আছে আমি বুঝতে পেরেছি মিথিলা। তোর সামনে বিয়ে তাই রিস্ক নিতে চাচ্ছিস না। সমস্যা নেই আমি একাই চেষ্টা করবো।কিন্তু একটা অনুরোধ করছি তোর কাছে। যেমন বলেছিলাম আমাদের দেখা হয়নি। সেই কথাটা মনে রাখিস! আমি শপথ করে বলেছি কেউ জানবে না সে কথা।

এরপর অদিতির সাথে আমার আর কোন যোগাযোগ হয়নি। লিটু চিন্তিত হয়ে বলে, কাহিনিটা ভালোই কিন্তু কোথাও একটু ফাঁক থেকে যাচ্ছে। যেমন অদিতি কেন একটা বাচ্চা কে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনের রিস্ক নিতে গেলো? দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যদিও নেয় তবে সে তার খুবই কাছের মানুষ! অথচ তার আত্মীয় স্বজনরা সেই সমন্ধে কেউ কিছু জানে না। এমনকি তার স্বামীর কাছেও কথাটা গোপন রেখেছে! কেন এমন করলো সে? যেখানে স্বামীকে নিয়ে যাওয়ার কথা। সেখানে সে বান্ধবীর কাছে সাহায্য চাইতে গেয়েছিলো!

পৃথিবীতে একমাত্র মা,ই পারে সন্তানের জন্য এমনভাবে জীবনের ঝুঁকি নিতে। কিন্তু অদিতির তো কোন সন্তানও নেই! তবে, আপনার কি মনে হয় মিস মিথিলা! বাচ্চা মেয়েটি কে হতে পারে?

লিটু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মিথিলার দিকে তাকিয়ে থাকে। লিটুর অমন কঠিন দৃষ্টির সামনে মিথিলা মাথা নিচু করে জবাব দেয়, আমার কোন ধারণা নেই স্যার! আমি অনেক জিজ্ঞেস করার পরে-ও অদিতি এর কোন জবাব আমাকে দেয়নি! আমিও আর জোর করিনি তাঁকে।

এবার লিটু আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা মিঃ সায়েম! আপনার কোন ধারণা আছে বাচ্চাটি কে হতে পারে? আমিও মনে মনে অবাক হয়ে ভাবছিলাম। কে এই বাচ্চা মেয়েটি! যার জন্য অদিতি এতোটা অস্থির হয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে মুক্ত করে আনতে গেছে? কিন্তু অনেক ভেবেও এর কোন সঠিক জবাব আমি পেলাম না। তাই লিটুর প্রশ্নের জবাবে বললাম, আমারও তেমন কোন ধারণা নেই।

তবে আমার শ্বাশুড়ি হয়তো বলতে পারবেন, বাচ্চাটির আসল পরিচয় কি? তাহলে কাল আপনার শ্বাশুড়ির কাছে যেতে হচ্ছে। আমি বললাম, জ্বি তাই ভালো!

বাড়ির পথে আসতে আসতে আমি অনেক ভেবেছি। মেয়েটা অদিতির এমন কে হয়? যার জন্য সে অনেক বড় বি*পদের মধ্যে যেতেও পিছ পা হয়নি? এমন কোন মেয়ের কথা অদিতি তো কখনও আমার কাছে বলেনি! তবে বাচ্চা মেয়েটি কে? তার আসল পরিচয়ই বা কি?

এরমধ্যেই অদিতির একটা ছবি কক্সবাজারের আসেপাশে থানা গুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হলো। এবং বাসস্ট্যান্ড গুলোতে পুলিশের লোকজন খোঁজ করতে শুরু করলো। পুলিশের মারফতে সেই ছবি এখন কক্সবাজারের বিভিন্ন থানার আনাচে কানাচে হাতে হাতে ঘুরতে লাগলো। তাৎক্ষণিকভাবে অদিতির কোন খোঁজ পাওয়া না গেলেও, তারা উৎসাহ নিয়ে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে।

পরদিন লিটুর সাথে আমি আমার শ্বশুর বাড়িতে শ্বাশুড়ির সাথে দেখা করতে গেলাম। আমার শ্বাশুড়ি আমার সাথে পুলিশ দেখে কিছুটা অবাক হলেন। আমাকে তাই তিনি আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে রাগান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তারা কি আমার বাড়ি সার্চ করতে এখানে এসেছে?

আমি সোজাসাপটা জবাব দিলাম, তা কেন হবে! তবে কেন এসেছে তারা আমার বাড়িতে? আমিও উনার কথা শুনে জিজ্ঞেস করলাম, যে কারনেই এসে থাকুক! আপনি কেন বিচলিত হচ্ছেন? আপনি তো অপরাধী নন! অফিসার আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করে চলে যাবে। আপনার ভ*য়ের কোন কারণ নেই!

আমার শ্বাশুড়ি মনে হলো আমাকে শুনিয়ে বললেন, আমি কেন ভ*য় পাবো? একে তো তারা আমার মেয়েটার খোঁজ এখন পর্যন্ত বের করতে পারলো না! তার উপর আমাকে প্রশ্নবাণে ক্ষতবিক্ষত করতে এখানে এসেছে! আপনার মেয়ের খোঁজ যেনো অতি শীঘ্রই পাওয়া যায় সেই কারণে কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে হবে আপনাকে। তারা সে জন্যই এখানে এসেছে!

আমি আমার শ্বাশুড়ি কে নিয়ে লিটুর সামনে গিয়ে বললাম, উনি আপনার সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন। লিটু হেসে জবাব দেয়, ঠিক আছে। আমরা আপনার মেয়ের খানিকটা খোঁজ পেয়েছি কিন্তু সেটা সত্যি কি-না এখনো বুঝতে পারছি না?

আমার শ্বাশুড়ি এই কথা শুনে কৌতুহল ভরা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, কোথায় পাওয়া গেছে আমার মেয়ের খোঁজ? জ্বি, জানতে পেরেছি কক্সবাজারের কোথাও আছে আপনার মেয়ে! আমার শ্বাশুড়ি লিটুর কথা শুনে বিরবির করে বলে কক্সবাজারে? কিন্তু আমি তো সেখানে ফোন করে দেখেছি। অদিতি তো সেখানে যায়নি! আমি ও লিটু দুজনেই এই কথায় অবাক হয়ে উনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম।

লিটু জিজ্ঞেস করে, আপনি কিভাবে জানতে পারলেন আপনার মেয়ে কক্সবাজারে যেতে পারে? আমার শ্বাশুড়ি কথাটা বলে হয়তো বেকায়দায় পড়ে গেলেন। তবুও যখন অর্ধেক কথা বলে ফেলেছেন, তখন তো আর বাকিটা বলতেই হয়?

তিনি জবাব দিলেন, সেখানে আমার এক ছোট ভাই থাকে। লিটু জিজ্ঞেস করে কতদিন ধরে সে সেখানে থাকে? অনেক দিন ধরেই সে সেখানে থাকে। কি করেন আপনার ভাই? জ্বি, একটা হোটেল আছে তার!

লিটু আমার দিকে তাকিয়ে তারপর শ্বাশুড়ির দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করে, তবে তো মনে হচ্ছে অদিতি সেখানে অনেকবারই গেছে? জ্বি, স্যার! অদিতি অনেক দিন আগে সেখানে মোটামুটি কিছু দিন ছিলো।

আমি কথাটা শুনে ভীষণ অবাক হলাম। অদিতি কক্সবাজারে কিছুদিন ছিলো অথচ কোনদিন সেখানকার কোন কথা বলেনি আমাকে। কত কথাই তো তার সাথে আমার হয়েছে।

লিটু বলে, তাহলে মোটকথা অদিতির কাছে কক্সবাজার নতুন শহর নয়! তবে তো সেখানে তার নিখোঁজ হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কম! মানে পথ ভুলে হারিয়ে যাওয়া যাকে বলে। একটা কথা ছাড়া! সেটা হলো সে স্বইচ্ছায় অথবা নিজের অনিচ্ছায় যদি লুকিয়ে না থাকে?

লিটু আমার শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলে, চিন্তা করবেন না। অতি শীঘ্রই আপনার মেয়ের খোঁজ পেয়ে যাবো আমরা!

আপনি শুধু আমার একটা প্রশ্নের জবাব দিলেই অনেক সহজ হবে আমাদের কাজ। আমার শ্বাশুড়ি জিজ্ঞেস করে, কি কথা জানতে চান বলুন?

লিটু একটু কেশে নিয়ে বলে, আমরা জানতে পেরেছি। অদিতি একটা বাচ্চা মেয়ে কে মুক্ত করে আনতে সেখানে গেছে। আপনি চিনেন সেই বাচ্চা মেয়েটি কে? কথাটা শুনে আমার শ্বাশুড়ি চমকে উঠে জিজ্ঞেস করে, বাচ্চা মেয়ে! অনেকক্ষণ নিরবে থাকার পরে তিনি বললেন, নাহ্! আমি চিনি না, তেমন কোন মেয়ে কে!

এমন সময় লিটুর মোবাইলটা বেজে উঠে। ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে কেউ একজন বললো, বিমানবন্দরের কাছেই একটা দোকানের সামনে অদিতি মেডামের ছবি সি সি ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। লিটু উঠে পড়ে বলে, আমাদের মনে হচ্ছে এখন কক্সবাজার যেতে হবে।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here