খোঁজ পর্ব ৪

0
588

#খোঁজ চতুর্থ_পর্ব
লেখক মোঃ কামরুল হাসান

পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, অদিতির সাথে যে মেয়েটি বসে আছে আপনারা তাঁকে চিনতে পারছেন? আমি বললাম জ্বি, হ্যা! স্যার।

আমার যতোদূর মনে হচ্ছে এটা ওর বান্ধবী মিথিলা! ইন্সপেক্টর বললেন, শুধু অনুমানের উপর ভিত্তি করে কাউকে বিরক্ত করা বোধহয় ঠিক হবে না, মিস্টার সায়েম!

ভালো করে দেখে তারপর বলেন, কারণ এই বান্ধবীর হাত ধরেই কিন্তু আমাদের অদিতির কাছে পৌঁছাতে হবে। ভুল কাউকে সনাক্ত করে আসল জন না আবার হারিয়ে যায়? মিস্টার সায়েম আরও মনোযোগ দিয়ে দেখে নিন! কারণ এখানে কিন্তু মেয়েটার মুখ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আপনার অনুমান সঠিক নাও হতে পারে?

যদিও আমি ছবিটা দেখেই বুঝতে পেরেছি তবুও সঠিকভাবে তদন্তের স্বার্থে আরও একবার ভালো করে মনোযোগ দিয়ে দেখে নিলাম অদিতির সেই বান্ধবীর ছবিটি। তারপর অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললাম, আমার কোন স*ন্দেহ নেই এটা যে মিথিলা!

অফিসার হেসে বলেন তাহলে তো কথাই নেই! তা কি করে এতোটা শিওর হলেন? মেয়েটির মুখটা কিন্তু আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে!

আমি মিথিলার হাতের অনামিকায় পড়া আঙটিটা দেখিয়ে বললাম, ঐ আঙটি আমি তার সাথে সাক্ষাতের সময় দেখেছি। তখনো সেটা পড়েই আমার সাথে কথা বলেছিলো।

ঠিক আছে তবে লিটুর সাথে সেখানে গিয়ে দেখুন। আমি পুলিশের গাড়িতে চড়ে মিথিলাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে লিটু কলিং বেল টিপে দিলো। একটু পরে একজন মধ্যে বয়সী মহিলা এসে দরজাটা খুলে দিলো। তিনি হঠাৎ দরজা খুলে সামনেই পুলিশ দেখতে পেয়ে কিছুটা ভ*য় পেয়ে গেলেন।

কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কেন? কাকে খুঁজছেন? লিটু জিজ্ঞেস করে, আপনি কে? মহিলার চোখে মুখে তখনও ভয়ের চিহ্ন! জ্বি, আমি এই বাড়ির মালিকের স্ত্রী! তাহলে মিথিলা আপনার মেয়ে? লিটু হাতের লাঠির ইশারায় মহিলার হাতটা সরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে করতে জিজ্ঞেস করে। মহিলাটি জবাব দিলেন, হ্যা! মিথিলা আমারই মেয়ে!

তাঁকে একটু ডেকে দেন, তার সাথে কথা বলার আছে। মহিলা এবার ভ*য় ও উৎকন্ঠিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, কি করেছে মিথিলা? লিটু মহিলার কথার জবাব না দিয়ে বলে, এতো প্রশ্ন না করে তাকে ডাকুন! সে এলেই সব জানতে পারবেন।

কিন্তু মিথিলা তো বাড়িতে নেই স্যার! লিটু বিরক্ত হয়ে বলে, কোথায় গেছে আপনার মেয়ে? ওর এক বান্ধবী এসে অনেক ক্ষন আগে ডেকে নিয়ে গেলো। কয়দিন পরেই তো মিথিলার বিয়ে! তাই পুরোনো বান্ধবীরা সময় পেলেই ওর সাথে দেখা করতে আসছে। আমিও তাই বাঁধা দেই না।

তাহলে আপনার স্বামী কে একবার ডাকুন! তিনি তো বাড়িতে নেই। তিনি আবার কোথায় গেছেন? লিটু সামান্য রাগান্বিত কন্ঠে বলে, যাকে ডাকছি সেই দেখছি বাড়িতে নেই! ব্যাপারটা কি বলুন তো? মহিলা মনে হচ্ছে ভ*য় কিছুটা কাটিয়ে উঠেছেন। লিটুর কথার জবাব দিলেন, উনি মেয়ের বিয়ের কেনাকাটা করতে মার্কেটে গেছেন।

আপনারা একটু বসুন, তিনি হয়তো এখনই এসে পড়বে। আমি গিয়ে কিছু নাস্তা পানির ব্যাবস্থা করি। না, সে-সব কিছু করতে হবে না আপনাকে। আমরা এখানে বসে অপেক্ষা করছি। আপনার মেয়ের সাথে কথা বলেই চলে যাবো।

আমরা বসলাম। মিথিলার মা একটু দূরে দাঁড়িয়ে হয়তো তার স্বামীকে ফোন করে পুলিশের কথা জানাচ্ছেন। ফোন করা শেষ হলে তিনি লিটুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, আজ বাদে কাল আমার মেয়ের বিয়ে। এখন যদি বাড়িতে পুলিশের আনাগোনা শুরু হয় তবে যে বিয়েটা আর হবে না!

আমার বিশ্বাস মিথিলা কোন অপরাধ করতে পারে না স্যার। আপনারা কেন তবুও ওঁকে খুঁজে বাড়িতে চলে এলেন? আমার মাথায় ঢুকছে না কিছু! লিটু গম্ভীর কন্ঠে বললো, আপনার মেয়ে অপরাধী কি-না সেটা আমরাও ঠিক জানি না। কিন্তু একটা অপরাধের সাথে নিশ্চয়ই কোন না ভাবে সে জড়িয়ে গেছে। বাকিটা পরে বলা যাবে।

আর বাড়িতে পুলিশ আসার কারণে আপনার মেয়ের বিয়েতে যদি কোন সমস্যা হয়। তবে সেখানে আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের ডিউটি তো আমাদেরকে পালন করতেই হবে, না-কি?

মিথিলার মা বিরস মুখে জবাব দিলেন, হ্যা তাইতো! এমন সময় মিথিলার বাবা হাতে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। তিনিও ঘরের ভিতর পুলিশ দেখে কিছুটা চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা! কার কি হয়েছে?

লিটু উনাদের হয়তো আর বিচলিত করতে চাইছে না। তাই বললো, আপনার মেয়ে মিথিলার বান্ধবী অদিতির কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ-বিষয়ক কিছু কথা জিজ্ঞেস করার আছে মিথিলার সাথে।

লিটুর কথা শুনে ভদ্রলোক বললেন, সে তো আমাদের বাড়িতে অনেক দিন আগে একবার এসে ছিলো। এরপর আর তাকে দেখিনি। যতোদূর মনে হয় কয়েক বছর ধরে তাদের দুজনের মধ্যে তেমন কোন যোগাযোগও নেই! এখানে মিথিলার ভুমিকা কি?

লিটু হেসে বলে, ভুমিকা তো অবশ্যই একটা আছে। সেটাই তো আমরা খুঁজে দেখবো বলে এখানে এসেছি। নয়তো মিছিমিছি আমরা কেন কষ্ট করে আপনার ঘরের চৌকাঠ পেরুতে যাবো? ভদ্রলোক হাত কচলিয়ে বলেন, আমি ঠিক কিছু বুঝতে পারছি না স্যার!

দয়া করে একটু খুলে বলবেন কি? জ্বি হ্যা অবশ্যই। আপনি হাজার হলেও মিথিলার বাবা! সেটুকু জানার অধিকার আপনার আছে। অদিতি নিখোঁজ হওয়ার আগে আপনার মেয়ের সাথে সে দেখা করেছে। অথচ আপনার মেয়ে মিথিলা অদিতির স্বামী কে সোজাসাপটা জানিয়েছে, তাদের দুজনের মধ্যে কোন যোগাযোগ নেই! গত কয়েক দিনের মধ্যে তাদের দেখাও হয়নি।

লিটু গম্ভীর কন্ঠে বলে, নিশ্চয়ই জানেন।

সত্যি কথা চেপে রাখা ও গোপন করাও একটা অপরাধ? আশা করি বুঝতে পেরেছেন! এই কথা শুনে মিথিলার বাবা একেবারে চুপসে গেলেন। অনেকক্ষণ পরে তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, মেয়ের বিয়ের আগে এসব কি ঘটতে চলেছে? মেয়ের বিয়েটা কি শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু ভাবে হবে?

অনেক ক্ষন ধরে মিথিলার আসার অপেক্ষায় বসে রইলাম আমরা। কিন্তু মিথিলার আসবার কোন নামগন্ধ পর্যন্ত নেই। দেখতে দেখতে কয়েক ঘন্টা হয়ে গেছে। লিটু মিথিলার বাবার কাছে জিজ্ঞেস করে, আপনার মেয়ে কোথাও পালিয়ে গেল নাকি? এখন পর্যন্ত বাড়ি ফিরে এলো না সে!

মিথিলার বাবা লিটুর কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে বলে, এটা কি বলছেন স্যার! সে তো কোন অ*পরাধ করেনি। তবে শুধু শুধু পালিয়ে যাওয়ার কথা কেন বলছেন? তাহলে তাঁকে একটা ফোন করে তারাতাড়ি আসতে বলেন। অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে!

মিথিলার বাবা মেয়ে কে ফোন করলেন কিন্তু সেটা বন্ধ দেখাচ্ছে। তিনি লিটুর মুখের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইলেন। কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। লিটু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকাতেই তিনি চোখ নামিয়ে নিলেন। লিটু জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? ভদ্রলোক নিচু স্বরে বলে মিথিলার ফোনটা বন্ধ দেখাচ্ছে স্যার! মনে হচ্ছে মোবাইলে চার্জ নেই।

একথা শুনে লিটু উঠে পড়ে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে, বাড়িতে এলেই তাঁকে থানায় পাঠিয়ে দিবেন। আমরা আবার এলে পরিস্থিতি অন্য রকম হবে কিন্তু। কথাটা মনে রাখবেন। আমরা মিথিলাদের বাড়ি থেকে বেরুনোর সময় আমি খেয়াল করলাম, যেনো একটা লোক আমাদের উপর নজর রাখছে। কারণ লোকটা আমাদের দেখা মাত্র পত্রিকার পাতায় তার মুখটা ঢেকে নিলো।

পাশেই চায়ের দোকানে সে বসে আছে এখনো। যদিও আমার তেমনটা মনে হচ্ছে কিন্তু তবুও লিটু কে তা জনালাম না। ভাবলাম আমি হয়তো একটু বেশিই স*ন্দেহ প্রবণ হয়ে পড়ছি। মনোযোগ দিয়ে পত্রিকা পড়তে গিয়ে অনেকেরই তো মুখ ঢাকা পড়ে?

যাইহোক মিথিলার এমন ব্যাবহারে আমিও অবাক না হয়ে পারলাম না।

একে তো সে আমার কাছে মিথ্যা কথা বলেছে। দ্বিতীয়ত বাড়িতে পুলিশ আসার কারণে সে উধাও! ভাবছি মোবাইল বন্ধ করে কোথাও গিয়ে কি লুকিয়ে আছে সে?কিছুই বুঝতে পারলাম না। অদিতির নিখোঁজ হওয়ার পিছনে মিথিলার হাত আছে না-কি। আর অদিতি নিখোঁজ হলে মিথিলারই বা কি লাভ? আমি তো এখানে তার কোন লাভ দেখতে পাচ্ছি না।

পরের দিন সকালেই মিথিলার বাবা-মা দৌড়ে থানায় এসে বললেন, তাদের মেয়ে কে যেনো খোঁজে বের করা হয়। মিথিলার এমন করে নিখোঁজ হওয়ার কারণে ওর বাবা-মা একেবারে ভেঙে পড়েছে। পুলিশ অফিসার তাদেরকে বললেন, আপনার মেয়ে কে এমনিতেই আমরা খুঁজে বের করবো। কারণ সে এখন আমাদের সন্দেহের তালিকায় আছে।

আর এটাও মনে হচ্ছে মিথিলা নিজেই হয়তো কোন কারণে অদিতির নিখোঁজ হওয়ার জন্য দায়ী! মিথিলার বাবা মা কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে বলেন, তাদের মেয়ে কোনদিনও এমন কাজ করতে পারে না। নিশ্চয়ই মিথিলা নিজেই কোন বিপদে পড়ে গেছে। নয়তো সে কোনদিন বাড়ি ছেড়ে থাকেনি।

আর কোথাও গেলেও তাদের দুজনের মধ্যে কাউকে অবশ্যই জানাতো। যদি সে নিজের ইচ্ছেতে কোথাও গিয়ে লুকিয়ে থাকতো তবুও জানাতে ভুল করতো না। অফিসার একটুখানি হেসে বলে, হয়তো সে জানিয়েছে। কিন্তু আপনারা তা স্বীকার না করে একটা নাটক করছেন। নিজের মেয়ে কে নির্দোষ দাবী করার জন্য। এটা হতে পারে না কি?

মিথিলার বাবা অফিসারের কথা শুনে কি বলবে ভেবে পেলেন না। কতক্ষণ চুপ করে থাকার পরে বললেন, স্যার আমরা নেহায়াতই সাদামাটা স্বভাবের মানুষ। এই জীবনে কোন ঝগড়াঝাটি বা অন্য কোন ঝামেলায় কখনো জড়াইনি। আমার বিশ্বাস আমাদের সন্তানরাও তেমনি স্বভাবের। তারপরেও যদি মিথিলা কোন কারণে কিছু করে থাকে। সেটা সম্পূর্ণই আমাদের অজানা।

আমার আকুল আবেদন স্যার! মিথিলাকে আসামি হিসেবে হোক আর যেভাবেই হোক আপনারা দয়া করে খুঁজে বের করুন! আমি আর কিছু বলতে চাই না স্যার। এই কথা বলে, মিথিলার বাবা মা থানা থেকে চলে আসছিলেন। অফিসার পিছনে ডেকে বলে উঠেন, মিথিলার খোঁজ আমরা অবশ্যই করবো। কিন্তু আপনিও একটা কথা মনে রাখবেন। মিথিলার খোঁজ পাওয়া মাত্রই আমাদের জানাতে ভুল করবেন না যেনো?

ভদ্রলোক অফিসারের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে বলে, জ্বি, স্যার! তা তো অবশ্যই!

আজ কয়েক দিন ধরে মিথিলা কে পুলিশ অক্লান্ত ভাবে খোঁজ করে চলেছে কিন্তু তাঁকে কোথাও পাওয়া গেলো না।পুলিশও ঠিক মতো বোঝে উঠতে পারছে না, মিথিলার কি হতে পারে? অনেক খোঁজ খবর করে তারা জানতে পেরেছে অদিতি ও মিথিলার মধ্যে কখনো কোন কারণে কোন ধরনের ঝামেলা হয়নি।

এমনকি নিখোঁজ হওয়ার আগেও তাদের দুজনকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতোই দেখা গেছে। তবে কি কেউ মিথিলাকেও অ*প*হর*ণ করেছে? এদিকে মেয়েকে খোঁজে পাবার আশায় মিথিলার বাবা-মা প্রতিদিন কয়েক বার করে থানায় আসছে। কিন্তু পুলিশ না পারছে অদিতির খোঁজ দিতে আর না পারছে মিথিলার খোঁজ দিতে।

এদিকে আরেক কান্ড ঘটে গেলো, হঠাৎ করে কয়েক ঘন্টা ধরে মিথিলার বাবাকেও খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মোবাইলটাও বন্ধ হয়ে আছে। অনেক বার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

মিথিলার মা যখন এই কথা থানায় এসে জানলেন, তখন কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার বুঝতে পারছেনা উনার আবার কি হলো? তিনি অবাক হয়ে বলেন, এতো দেখছি নিখোঁজ হওয়ার লাইন লেগে গেছে!

চলবে,,,,, আপনার একটি মন্তব্য লেখক কে অনুপ্রেরণা যোগায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here