#খোঁজ ১১তম_পর্ব
লেখক মোঃ কামরুল হাসান
আমার শ্বাশুড়ির সাথে শেষ বোঝাপড়া করতে শ্বশুর বাড়ি যাবো বলে রেডি হচ্ছি। এমন সময় আমার মা এসে বললেন, তোর বাবা তোকে দেখা করতে বলেছেন। মায়ের হাত ধরে বললাম, মা আজকে নয়। আমি এখন একটা জরুরি কাজে বাইরে যাচ্ছি। মা আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন, তুই তাকে অনেক দিন ধরে ফাঁকি দিচ্ছিস! এমন করে তার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিস কেন? বললাম, কি করবো মা, তার সামনে গেলে হাজারটা কৈফিয়ত আমাকে দিতে হবে। তারচেয়ে পালিয়ে যাওয়াই ভালো! যাই বলিস না কেন তুই? তোর বাবাকে এমন করে ফাঁকি দেওয়া কিন্তু তোর মোটেই ঠিক হচ্ছে না, সায়েম!
তিনি কিন্তু মনে মনে তোর উপর ভীষণ রেগে আছেন। এতোদিন আমি তাঁকে নানান কথা বলে মানিয়ে রেখেছি। এখন কিন্তু আমি আর তাঁকে বোঝাতে পারছি না! তোর বাবাকে তো তুই চিনিস! কেমন রাগী মানুষ তিনি?
শুধু নিজের সন্তান বলে এতোদিন সহ্য করে আছেন। আমি আর তার সামনে তোর জন্য কিছু বলতে পারবোনা। কবে জানি তোর উপর রাগ করে তিনি আমাকেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন? আমি আর তোর কোন কথা বা অজুহাত শুনতে রাজি নই! তুই এখনি আমার সাথে চল, তোর বাবার সাথে দেখা করবি চল। তোর বাবা শুধু তোর সাথে কথা বলার জন্যই এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে বসে আছেন।
মা’কে অনেক করে বোঝালাম। কিন্তু মা আর আমার পক্ষে কোনরকম উকালতি করতে রাজি হলেন না। তাই বাধ্য হয়ে সিংহের মুখের সামনে আমাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাজির হতে হলো। আমি আমার বাবার সামনে পারতপক্ষে পড়তে রাজি নই। কারণ উনার সাথে আমার অনেক মতের পার্থক্য। তাই তিনি আমাকে সন্তান হিসেবে মোটেও পছন্দ করেন না!
কিন্তু নিজের ঔরসজাত সন্তান বলে ফেলতে পারেন না। এই জন্যেই কিছুটা রক্ষে! আমিও যে তাকে খুব একটা শ্রদ্ধা ভক্তি করি তাও কিন্তু নিশ্চিত করে বলতে পারি না! কারণ, এখন পর্যন্ত বাবার কোন কথার খুব একটা মূল্য আমি দেইনি। জানি না সন্তান হিসেবে এটা আমার জন্য কতোটা অনুচিত, আর কতোটা অপরাধ?
ছোট থেকেই দেখে আসছি আমার বাবা,আমার মায়ের কোন কথার কোন মূল্য কখনো দেয়নি। তবুও আমার মা তার সম্পূর্ণ অনুগত সেবিকা! দাঁড়িয়ে থাকতে বললে দাঁড়িয়ে থাকে। চলে যেতে বললে কোন দ্বিরুক্তি না করেই চলে যায়। গরীবের মেয়ে বলে চিরকাল আমার মা’কে তিনি কাজের মহিলার চাইতে বেশি সম্মান কোনদিনও দেননি। যেদিন থেকে এই জিনিসটা আমি বুঝতে শিখেছি, সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে বাবার সাথে আমার মতের পার্থক্য বা বিরোধ! তাই দুজনের মধ্যে সম্পর্কটাও তিক্ততায় ভরা!
আমার বাবা সৈয়দ শামসুল আলম! শহরের মোটামুটি ধনী লোকেদের একজন। অবশ্য বংশপরম্পরায় তারা মানে আমরা বনেদি পরিবার। তাই হয়তো উনার অহংকারটা একটু বেশিই! কিন্তু আমি নিজের বংশের অহমিকা থেকে বেরিয়ে এসে আমার মায়ের মতো হয়েছি।কিন্তু আমার আরও দুই ভাই বোন আছে। তারা মোটেও এমন নয়, তাদের রক্তে বংশের রক্তস্রোত ঠিক মতোই বইছে। তাই তাদের সাথেও আমার খুব একটা সখ্যতা কোন দিনও গড়ে উঠেনি।
আমাদের মোটামুটি কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। তার মধ্যে একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আছে। যেটার সকল দায় দায়িত্ব আমার উপর ন্যাস্ত আছে। কিন্তু কিছুদিন ধরে আমি অদিতির খোঁজ করতে গিয়ে সেখানে ঠিক মতো সময় দিতে পারছিলাম না। আর এই জন্যই আমার পিতা আলম সাহেব! আরও বেশি রেগে আছেন আমার উপর।
যদিও আমার অবর্তমানেও ফ্যাক্টরি ভালোভাবেই চলছে। আমার ছোট ভাই আমার উপর টেক্কা দিতে মানে, বাবার কাছে ভালো হতে দিবারাত্রি অক্লান্ত পরিশ্রমে সব কাজ নিজেই সামলিয়ে নিচ্ছেন। বাবার কথা অনুযায়ী আমি কোন দিক দিয়ে তার যোগ্য সন্তান হতে পারিনি। আমার ছোট ভাই সাঈদ যতোটা যোগ্য আর কি? সে বাবার চোখের মণি! আর আমি বলতে গেলে তার চোখের বালি! তাই আমি বারবার তার চক্ষুশূলের কারণ হই।
বাবার সামনে যেতে আমার ভীষণ অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। তবুও বাধ্য হয়ে যেতে হলো। তিনি রাজকীয় ড্রয়িং রুমের একটা সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে পত্রিকা পড়তে ব্যাস্ত আছেন। আমি তার সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করলাম, বাবা আমাকে ডেকেছেন? বাবা পত্রিকা থেকে মুখ না তোলেই বললেন, হুম! ইচ্ছে ছিলো না, তবুও ডাকতে বাধ্য হয়েছি! তোমাকে দিয়ে শান্তি পাবো সেই আশা আমি অবশ্য কখনো করিনা!
কিন্তু তবুও তুমি ইদানীং যা শুরু করেছো, তাতে আর চুপ করে বসে থাকতে পারছি না আমি! একজন বাবা হিসেবে এরচেয়ে বেশি কিছু আশা ছিলো তোমার কাছে। কিন্তু তুমি সেই ছোট থেকে বরাবরই আমাকে হতাশ করে চলেছো! আজও এর ব্যাতিক্রম ঘটেনি! যা মোটেও আমার কাম্য নয়। তবুও তুমি তাই কর!
নিজের সন্তান বলেই তোমার উপর একটা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব তুলে দিয়েছি আমি। আর তুমিও নিশ্চয়ই জানো, এই দায়িত্বটা কেবল বাবার ফ্যাক্টরি বলে পেয়েছো? নয়তো সেই ফ্যাক্টরির দারোয়ান হবার যোগ্যও তুমি নও! আমি মাথা নিচু করেই জবাব দিলাম, সাঈদ তো সব সামলে নিচ্ছে।
আমার কথা শুনে বাবা গর্জে উঠে জিজ্ঞেস করলেন, দায়িত্বটা আমি কার উপর দিয়েছিলাম, তোমার উপর নাকি সাঈদের উপর? জ্বি আমার উপর! তবে সাঈদ কেন এতোদিন ধরে তোমার দায়িত্ব পালন করবে? তুমি এমনকি দায়িত্ব পালন করছো?
যার জন্য দিনের পর দিন তোমার দায়িত্ব সাঈদকে পালন করতে হবে! তোমার কি কোনদিন দায়িত্ব জ্ঞান হবে না! আরে নিজের ছোট ভাই সাঈদ কে দেখেও কি তোমার মগজে কিছু ঢুকে না?
আজ থেকে যদি দায় দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে না পারো, তবে দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি দিবে।আর কখনো আমার সামনে এই মুখ নিয়ে আসবে না! আমি নিচু স্বরে জবাব দিলাম, আমার আর একটা কাজ আছে। সেটা সম্পূর্ণ করেই আমি আপনার সব কথা মাথা পেতে নেবো।
কেন, তোমার হঠাৎ এমন কি কাজ করা জরুরি হয়ে পড়লো? আমি জানি, আমার বাবা অদিতির নিখোঁজ হওয়ার কথা সম্পূর্ণই জানেন। কিন্তু তবুও তিনি আমার মুখ থেকে শুনতে চাইছেন।
তাই আমিও আর কথাটা গোপন না করে বললাম, অদিতির মায়ের সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে। তাই দেখা করতে তাদের বাড়িতে যেতে হবে।
এই কথা শুনেই বাবা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে জিজ্ঞেস করলেন, এই ছেলে! তোমার জীবনে অদিতি ছাড়া আর কোন কিছু নেই? একে তো নিজের মান মর্যাদা ভুলে গিয়ে বাবা-মায়ের অমতে বিয়ে করেছো! তার উপর তাকে নিয়ে তোমার আদিখ্যেতার শেষ নেই। মেয়েটা মারা গেছে! তবে আর তার পরিবারের সাথে তোমার এতো মাখামাখি করার কি আছে?
সেসব ভুলে গিয়ে আবার নতুন করে সংসার সাজাও! মনে রেখো অদিতির ফ্যামিলি কখনো আমাদের বরাবর ছিলো না। তাদের সাথে তোমার আত্মীয়তা করা সত্যিই হাস্যকর ও বোকামি হয়েছিল। ছি!ছি! শুনতেও লজ্জা করে। কোথায় না কোথায়, কার সাথে না কার সাথে গিয়ে এমন ভাবে মরেছে মেয়েটা? এখন সেই ভোগান্তি আমাদের কে ভুগতে হচ্ছে।
আমার ছেলের বউ বলে সমাজে আমার কতোটা সম্মানের হানি হয়েছে তুমি জানো? তোমার সাথে বিয়ে হবার আগেও তার চরিত্র খুব একটা ভালো ছিলো না। শুনেছি কোন এক গুন্ডা বদমাইস তার প্রেমিক ছিলো। আরও কত কি কেচ্ছা কাহিনির সীমা নেই। ছি!ছি! সমাজে মুখ দেখানোর আর উপায় রাখলে না,আমার! তুমি কি একেবারে মানসম্মান সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে বসলে নাকি? আমি তার সামনে আর কোন কথা বললাম না। সেই মুখ আমার অদিতি চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দিয়ে গেছে। বাবা আমাকে কিছুটা ধিক্কার দেওয়ার মতো করে বললেন।
বেশ অবাক হচ্ছি আমি! এতোকিছু ঘটে যাবার পরে-ও তুমি এখন আবার তাদের বাড়িতেই যেতে চাচ্ছো! সায়েম, তোমার কি মানসম্মান বোধ কোনদিন জাগ্রত হবে না? বাবার মুখে অদিতির সমন্ধে এমন কটু কথা শুনেও আমি কোন জবাব দিলাম না। কিন্তু কিছুদিন আগে হলেও আমি এনিয়ে বাবার সাথে তর্ক করতেও পিছুপা হতাম না।
কিন্তু আজ আর মনের মধ্যে তেমন সাহস নেই! অদিতির উপর তেমন বিশ্বাসও আজ আমার নেই। সবকিছুই কয়েকটি কথার জন্য একেবারে উলটপালট হয়ে গেছে! আমি তো বিশ্বাস করেছিলাম অদিতি কে। কিন্তু সে আমার সাথে করে গেছে শুধু ছলনা আর প্রতারণা!
তাই বাবাকে শেষ বারের মতো যাচ্ছি বলে, অনুরোধ করলাম। তিনি নাক সিটকে বললেন, তুমি মনে হচ্ছে আমার কথায় আর চলবে না? আমি অনুরোধ করে বললাম, এই শেষ বার বাবা! আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো আপনার অবাধ্য হবো না।
তিনি আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তা কি কারনে শ্বশুর বাড়ি যেতে চাইছো। আমি জানতে পারি কি? জ্বি জানতে পারেন। আজ আর আমার বলতে কোন দ্বিধা নেই! আমার শ্বাশুড়ির সাথে কিছু হিসাব কিতাব করার আছে।
বাবা হঠাৎ করেই হু হু করে হেসে উঠে বলেন, আমি আগেই জানতাম। তুমি যে পথে যাচ্ছো সেখানে তোমার জীবনের হিসাব কিতাব ঠিক থাকবে না। এখন আর হিসাব করে কি হবে? যা হবার তা হয়ে গেছে! তবুও যদি তুমি যেতে চাও! তবে যাও! আজ আর তোমাকে আমি বাঁধা দেবো না। তবে, এটাই কিন্তু শেষ বার। কথাটা মনের মধ্যে ভালো করে গেঁথে রেখো। আর যাওয়ার সময় আমার গাড়িটা নিয়ে যেও! জ্বি আমি রিক্সা আর বাসেই যেতে পারবো। যাও তোমার যেমন ইচ্ছে। এই কথা বলে বাবা পত্রিকার পাতায় মনোযোগ দিলেন।
আমি আর কিছু না বলে, বাবার কাছে অনুমতি নিয়ে চলে এলাম। বিকাল গড়িয়ে গেছে সন্ধ্যার একটু আগে আগে শ্বশুর বাড়িতে এসে পৌছালাম। তরু এসে দরজা খুলে দিয়ে অবাক হয়ে বলে, দুলাভাই! তরু আমার হাত ধরে বললো, আসেন, আসেন। তরুর উপর হঠাৎ আমার নজর পড়লো।
বলতে গেলে ওর আচরনই এর জন্য কিছুটা দায়ী! তরুকে আমি এর আগে এমন ভাবে কখনো দেখিনি। তরু দেখতে ঠিক অদিতির মতোই! কিন্তু সে যাইহোক, আমার হয়তো ওর দিকে এভাবে তাকানো ঠিক হলো না? বুঝতে পারছি নিজের অজান্তেই এমনটা হয়েছে আমার! তাই নিজেকে এরজন্য শাসন করতে ছাড়লাম না! তরুও অদিতি বেঁচে থাকতে কোনদিন এমন ঘনিষ্ঠ হয়নি আমার।
ড্রইং রুমে এসে বসেই জিজ্ঞেস করলাম তোমার আম্মা কোথায়? আমি উনাকে আশেপাশে কোথাও দেখতে পেলাম না। তাই বললাম, উনাকে একটু ডেকে দাও তো তরু! তরু হেসে জবাব দেয়, আম্মা তো বাড়িতে নেই দুলাভাই। জিজ্ঞেস করলাম তিনি কোথায় গেছেন এই অবেলায়? তরু হেসে জবাব দেয়, অবেলায় হবে কেন? তিনি তো দুদিন আগে কক্সবাজার গেছেন।
আমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি হঠাৎ আবার কেন কক্সবাজার গেলেন? সে আমি জানি না দুলাভাই! তবে যাওয়ার আগে বলে গেছেন তরু আমার মনটা ভালো নেই! ভাইয়ের কাছ থেকে একটু ঘুরে আসি। তুই সবাইকে একটু দেখে রাখিস। সবাই বলতে বাবাকে! ছোট তো মায়ের সাথেই গেছে! আমি আর বাবা এখন এই বাড়িতে পড়ে আছি।
আমি তো একা একা ভীষণ একঘেয়ে সময় কাটাচ্ছিলাম। আপনি চলে আসাতে দারুণ আনন্দ হবে। আমি বললাম, তাহলে আমি চলে যাই। তরু আমার কথা শুনে বলে উঠে, কিন্তু মা তো কালকে এসে পড়বে। আপনি কষ্ট করে আবার আসবেন? মনটাও ভালো নেই! আবার শরীরটাও ভীষণ ক্লান্ত লাগছিলো। তাই তরুর জোরাজোরিতে রাতে থেকেই গেলাম। চিন্তা করে দেখলাম কাল একেবারে শ্বাশুড়ির সাথে কথা বলেই যাবো।
রাতে খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে আছি। এমন সময় তরু লুডুর খেলার সরঞ্জাম নিয়ে এসে বলে, উঠুন দুলাভাই। কিছু ভালো লাগছে না আমার! দু’জন মিলে লুডু খেললে ভালো সময় কাটবে। আমি প্রথমে খেলতে অস্বীকার করলেও তরু শেষ পর্যন্ত আমাকে রাজি করিয়ে ছাড়লো।
কিন্তু খেলার শুরু হবার কিছুক্ষণ পর থেকেই খেয়াল করলাম। তরু খেলা সংক্রান্ত বিষয়কে পুঁজি করে বারবার আমার শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করছে। ব্যাপারটা মোটেও আমার কাছে ভালো লাগনো না। বুঝতে পারছি তরুর মধ্যে আমি অদিতির খোঁজ পেয়েছি। তাই আমাকে আরও সাবধান হতে হবে। নয়তো যেকোনো সময় যে কোন অঘটন ঘটে যেতে পারে?
তরু যে নিজেকে আমার কাছে বিলিয়ে দিতে চাইছে। তা বুঝতে আমার একটুও কষ্ট হলো না। আর আমি একজন শক্তসমর্থ পুরুষ মানুষ! আর এমন আহ্বান কোন সময় আমার মাথা নষ্ট করে দিবে, তাই নিয়ে ভয় হতে লাগলো। বুঝতে পারলাম এখনই একটা কিছু করতে হবে।
আর তরু যে এসব নিজে থেকে করছে না, সেটাও বুঝতে আমার খুব একটা অসুবিধা হলো না! এখানে নিশ্চয়ই আমার শ্বাশুড়ির ইশারা আছে? অদিতি মারা গেলেও তিনি আমাকে জামাই হিসাবে হারাতে রাজি নন! তাই ভেবে তরু কে বললাম, আর খেলবো না।
তরু আমার কথা শুনে হতাশ হয়ে বলে, ভেবেছিলাম দু’জন মিলে একটু আনন্দ করবো। আমি হেসে জবাব দিলাম, অন্য আরেক সময়। মন খারাপ করো না, তরু। আমার মাথাটা ভীষণ ব্যাথা করছে। তরু সত্যি মন খারাপ করেছে। মুখটা তার খানিকটা কালো হয়ে গেলো। বললো, ঠিক আছে আমি তাহলে এখন যাই!
তরু চলে গেলে দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ করেই বাবার বলা সেই কথাগুলো কানের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো। মেয়েটার স্বভাব চরিত্র বেশি ভালো ছিলো না! কোন গুন্ডা বদমাইস তার প্রেমিক ছিলো।
হঠাৎই লিটুর কথা গুলো মনে পড়ে গেল। সে বলেছে অদিতির এই বিষয়টা তারা চেপে গেছে। কারণ স্থানীয় সংবাদ পত্রে এই খবর ছাপা হলে কেসটার অনেক ক্ষতি হতে পারে। আমাকেও সে বারবার বলে দিয়েছে, আমি যেনো ভুলেও কখনো অদিতির সাথে আসলামের প্রেমের বিষয়টা কারও সাথে শেয়ার না করি।
লিটু অথবা আমি কেউ তো এ বিষয় নিয়ে কারও সাথে আলোচনা করিনি। তবে বাবা এসব কেমন করে জানতে পারলেন? তবে কি পুলিশের কোন কর্মকর্তার সাথে উনার যোগাযোগ আছে, না-কি আরও কিছু আছে এরমধ্যে?
হঠাৎই আমার চোখের ঘুম নষ্ট হয়ে গেল। বাবা কি তবে অদিতির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে আরও বেশি কিছু জানেন?
চলবে,,,,,