#ক্যানভাস_
লেখনীতে : তামান্না আক্তার তানু
পর্ব : (১২)
মেঘ যেখানেই যায় কেউ না কেউ মেঘকে ঠিকই ফলো করে। মেঘ নিজের কাছে থাকা স্কেচের সবগুলো পিক ফোন থেকে বের করে দেখালো। শ্রাবণ এদের কাউকেই চিনে না। শ্রাবণ বুঝে উঠতে পারছে না, কে আছে যে মেঘের ক্ষতি করতে চায়? যে মেঘের ক্ষতি করতে গিয়ে আজ একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে শাস্তি পেতে হলো। কেউ তো আছেই যে আড়ালে থেকে গেইম খেলছে। যেই হোক তাঁর সামনে বলুক, কেন মেঘের ক্ষতি করতে চাইছে? আর কেনই-বা মেঘের ক্ষতি করতে গিয়ে আজ সামির ক্ষতি করলো? শ্রাবণ মেঘকে বলল,
_আজ থেকে বাসার বাইরে বের হতে হলে আমাকে বলবে। যেখানে যাবে আমি তোমাকে নিয়ে যাব। কোনো দরকার নেই একা-একা বাইরে বের হওয়ার।
_কিন্তু তোমার অফিস!
_সেটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাবে না তুমি, আমার অফিস আমি সামলে নিব। এমনকি এখন থেকে তোমাকে সামলানোর দায়িত্বও আমার। এখনি বাসায় যাবে। এসো…
_সামি তো,
শ্রাবণ সামির পাশে বসে। সামির হাত ধরে সামিকে বলল,
_তোমার যদি কোনো অসুবিধা হয় আমাদের জানিও, আমি যেকোনো টাইমে এসে তোমাকে সময় দিব। রাত্রিও আমার সাথে আসবে। তবে এইভাবে একা আর আসবে না। তুমি নিজের যত্ন নিও। আন্টি, আংকেল তো আছেনই।
_তোমরা যাও, আমি এখন ঠিক আছি।
_হুম, আল্লাহ হাফেজ।
_আল্লাহ হাফেজ।
শ্রাবণ মেঘকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। সামির বাবা-মাকে একটু সান্ত্বনা দিয়ে ইরা আর মেঘকে নিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা দিলো। পুরোটা রাস্তা ইরা শ্রাবণের মাথার পোকা ঝেড়েছে। বিভিন্নভাবে শ্রাবণকে জ্বালিয়েছে। উল্টো পাল্টা প্রশ্ন করে শ্রাবণের মাথাটাই পুরো খারাপ করে দিচ্ছে। শ্রাবণ ও কম কিসে? সেও তাঁর কথার দ্বারা ইরাকে শাসিয়েছে। ইরার সাথেই শ্রাবণ বেশি বকবক করেছে। মেঘের সাথে কথা বলার চান্সই ইরা দেয়নি। আর দিলেই কি হবে? মেঘ মুখকানা এমন ভাবে ফুলিয়ে রেখে যে শ্রাবণের উপর কত রাগ! যা দেখে শ্রাবণ ভয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি। কি করবে শ্রাবণ? সে তো নিজেই প্রচুর ডিপ্রেশনে আছে। একদিকে আনিকার চলে যাওয়া, মেঘের সাথে হুটহাট এনগেজড হয়ে যাওয়া। যতবার মেঘকে কাছে টানে ততবারই কোনো না কোনো ভাবে মেঘকে কষ্ট দিয়ে ফেলে। এখন আবার নতুন ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত এইভাবেই মেঘকে চোখে চোখে রাখতে হবে। যেকোনো দিন মেঘের উপর এটাক করবে কেউ, এটা শ্রাবণ বেশ বুঝে নিয়েছে। কেউ না কেউ আছে যে মেঘের খুব করে ক্ষতি করতে চাইছে।
২৮!!
মেঘদের বাসার ভেতরের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিল শ্রাবণ। বাসার ভেতরে প্রবেশ করেনি, এখন যদি মেঘদের বাসায় উঠে তাহলে নিজের বাসায় যেতে আরো রাত হয়ে যাবে। এইজন্য আর অপেক্ষা না করে গাড়িটা ঘুরিয়ে নেয় শ্রাবণ। মেঘ গাড়ি থেকে নেমে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ইরা দৌঁড়ে ভেতরে চলে গেলে শ্রাবণ গাড়িটা পিছন দিক থেকে হালকা সরিয়ে মেঘের কাছে আনে। তারপর মেঘকে বলল,
_ভেতরে যাও, রাতে ফোন করবো। আজ যদি ফোন বন্ধ পাই, আমি নিজেও জানি না তাঁর রাগ কার দিকে প্রয়োগ করবো। চুপচাপ ডিনার করে মোবাইল অন করে রাখো। ঠিক দু’ঘণ্টা পর আমি কল করবো।
_হুম।
_ভেতরে যাও।
_যাচ্ছি তো।
মেঘ হালকা চিৎকার কথাটা বলেই দ্রুত ভেতরে চলে যায়। শ্রাবণ মুচকি হেসে ড্রাইভ করতে করতে মেঘদের বাসার সীমানা ত্যাগ করে। মেঘ ভেতরে এসে হাতের ব্যাগটা বিছানায় ফেলেই রাগে সারাঘর মাথায় তুলে ফেলেছে। ওর এই রাগ দেখে সবাই বোকা বনে গেল। হুট করে এইভাবে রেগে যাওয়ার তো কোনো কারণ নেই! তাহলে রাগলো কেন এই মেয়ে? মেঘের বাবা-মা দু’জনই মেঘকে শান্ত করতে ব্যর্থ। ইরাকে বললে ইরা মেঘকে শান্ত্ব করতে গেলে মেঘ ইরার উপর রাগ দেখাচ্ছে। সামনে যা পাচ্ছে তাই চুড়ে মারছে। মেঘের বাবা-মা এসব দেখে একটু ভয় পেয়ে যান। ইরার থেকে জানতে চান মেঘের এইভাবে রিয়েক্ট করার কারণ কী? ইরা ঠোঁট দিয়ে বুঝালো সে কিছু জানে না। ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়েই ফুলদানিটা তুলে আছাড় মারলো। নিজের চুল টানতে টানতে বলল,
_কত বড় সাহস আমার স্বাধীনতা বন্ধ করে দিচ্ছে? কী দায়িত্ব ওনার? নিজের হবু বউয়ের প্রতি সামান্যতম কেয়ারিং নেই আর আসছেন ওনি আমাকে সেইফ করতে! গুষ্টি কিলাই তোমার। আমি তো একা বের হবোই। দরকার পড়লে কাল থেকে নওরিনকেও সাথে নিবো না, তাও তোমার মতো পাষাণকে আমার সাথে যেতে বলব না। ইডিয়েট…
মেঘের মুখে এসব শুনে সবাই উচ্চস্বরে হাসা শুরু করে। মেঘ মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে সবাই হাসছে। ওদের হাসি মেঘের রাগ আরো বাড়িয়ে দেয়। বকবক করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। মেঘের মা ইরার দিকে তাকিয়ে বললেন,
_এই ব্যাপার! শ্রাবণ নিশ্চয়ই শাসিয়েছে।
_আর বলো না। ভাইয়া জাস্ট এটা বলেছে, যেখানে যাবে সেখানে ভাইয়া নিজেই মেঘকে পৌঁছে দিবে, সেটা শুনেই মহারানীর এত অভিমান।
_শ্রাবণ পৌঁছে দিলে তো ভালোই হবে। এতো কষ্ট করে রোজ রোজ আর ওর জন্য চিন্তা করতে হবে না।
_হ্যাঁ, ভাইয়া এটাই বলেছে। মেঘ তো ভাইয়ার সামনে ভেজা বিড়াল ছিলো, বাসায় এসে এখন রাগ দেখাচ্ছে।
_এই রাগ কিছুসময় পর মিটে যাবে। তুই মেঘকে নিয়ে নিচে আয়, আমি টেবিলে খাবার দিতে বলছি।
_আচ্ছা।
ইরা বিছানায় বসে বসে মেঘের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুসময় পর মেঘ ইরার পাশে বসে। ইরা মেঘকে দেখে হালকা কাশি দিয়ে বলল,
_ভাইয়া তো তোকে সেইফ করার জন্যই এটা বলেছে, এর জন্য তোর এতো রাগ দেখানো উচিৎ না।
_ইরা আমি চাই শ্রাবণ আমার কাছাকাছি থাকুক, কিন্তু; ও আমার কাছে থেকেও বারবার আনিকার সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলে, তুই বল এতো কষ্ট আমি সইবো কী করে! ওর কি কমন সেন্স নেই? নিজের হবু বউয়ের সামনে বারবার এক্স গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা তুলে ধরে। ও বুঝে না এতে আমার কষ্ট হয়।
_ভাইয়া তো চেষ্টা করছে। এখন তুই যদি এইভাবে ভাইয়াকে ইগনোর করিস তাহলে তো ভাইয়া আরো বেশি কষ্ট পাবে।
_ওকে ইগনোর করাই উচিৎ।
_মেঘ! এইভাবে তুই বলছিস! তাহলে ভেবে দেখ, তোর আর আনিকার মধ্যে পার্থক্যটা রইল কোথায়?
_মানে!
_মানে আনিকা নিজের স্বার্থের জন্য ভাইয়াকে কাজে লাগিয়েছে এটা আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি। কিন্তু যে তুই ভাইয়াকে এতো ভালোবাসিস, সেই তুই কীভাবে ভাইয়াকে ইগনোর করার কথা চিন্তা করিস!
_আমি কী করবো ইরা?
_আজ ভাইয়ার সাথে কথা বল, এইভাবে রাগ দেখিয়ে আর কষ্ট দিসনা। ভাইয়া এমনিতেই ডিপ্রেশনে আছে। তোর উচিত এই সময় ভাইয়ার পাশে থাকা। ভাইয়ার একাকিত্বের সঙ্গী হওয়া। তুই ছাড়া এখন আর ভাইয়াকে কেউ বুঝবে না মেঘ।
_আমি চেষ্টা করবো।
_এখন খায় খেতে যাবো। বড়মা খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে।
_চল।
মেঘ, ইরা দুজনেই একসাথে নিচে গেল। চুপচাপ খাবার শেষ করল মেঘ। কোনো কথাই বলেনি। কিছু বললেই এখন সবাই হাসাহাসি করবে এটা মেঘ বেশ বুঝতে পারছে। তাই লক্ষী মেয়ের মতো খাওয়া দাওয়া শেষ করল। খাবার শেষে ইরা আর মেঘ একসাথে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিল। মেঘ ফোন হাতে নিয়ে বারবার চেক করছে। অপেক্ষা করছে কারো কলের। অপেক্ষা করছে কারো মিষ্টি কন্ঠে কিছু শোনার। অপেক্ষা করছে শ্রাবণের জন্য। মেঘের এমন কাণ্ড দেখে ইরা মুখ টিপে হাসছে। ইরা মেঘকে বলল,
_অপেক্ষা না করে তুই নিজেই ফোন করে নে।
_আমি মোটেও অপেক্ষা করছি না।
_তাই! তাহলে বারবার ফোনের দিকে তাকিয়ে কী দেখছিস?
_আমি তো টাইম দেখছিলাম।
_এতো বড় ঘণ্টাওয়ালা ঘড়ি রুমে থাকতে তোর মোবাইলের টাইম খোঁজা লাগে। বাহ্! বেশ অবাক হলাম!
_অবাক হওয়ার কী আছে। আমার যেখানে টাইম দেখতে মন চাইবে আমি সেখানেই দেখবো। হোক সেটা ঘড়ি কিংবা মোবাইল।
_আজ্ঞে মহারানী, আপনার ইচ্ছা। আমি ঘুমালাম, গুড নাইট।
_হুহ্।
ইরা অন্যপাশে মুখ ফিরিয়ে ঘুমোতে গেল। মেঘ ফোনের দিকে আবার সময়ের দিকে তাকায়। রাত প্রায় ১১ টা। এতক্ষণে শ্রাবণের ফ্রি হয়ে যাওয়ার কথা। তাহলে এখনও ফোন করছে না কেন? দু’ঘণ্টা পর ফোন করার কথা অথচ তিনঘণ্টা ফেরিয়ে গেছে শ্রাবণ এখনও ফোন করেনি। মেঘ সময় গুনতে গুনতে শ্রাবণের নাম্বারে ডায়াল করলো। ঠিক একই সময়ে শ্রাবণও মেঘের নাম্বারে ডায়াল করে। উভয়দিক থেকে সংঘর্ষ হওয়ার দুজনের নাম্বারই দুজন ওয়েটিং এ পেলো। ফোন কেটে আবার ডায়াল করলে, আবারও একই বিপত্তি। মেঘ রাগে এইবার ফোনটাই হাত থেকে রেখে দেয়। পাঁচ মিনিট পর বেজে উঠে মেঘের ফোন। মেঘ ফোন হাতে নিয়ে দেখে শ্রাবণের নাম্বার। তাড়াতাড়ি রিসিভ করে শ্রাবণকে বলল,
_কার সাথে কথা বলছিলে?
_আমি! আগে এটা বলো তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?
_আমি তো কারো সাথেই কথা বলিনি, পাঁচ মিনিট আগে তোমার নাম্বারে ডায়াল করে ওয়েটিংয়ে পেলাম।
_আমিও তাই পেয়েছি, ভাবলাম হয়তো কারো সাথে কথা বলছো।
_আমিও তাই ভেবেছি, তারমানে আমরা একই সময়ে দুজন দুজনকে ফোনে ট্রাই করছিলাম। দেখেছো কত মিল আমাদের।
_হুহ্, রাগ কমেছে।
_কীসের রাগ?
_ওমা! কাল রাতে ফোন বন্ধ করে দিলে। আজ সারাদিন কোনো খোঁজ নেই। রেগে না থাকলে কেউ কারো সাথে এমন ব্যবহার করে।
_রাগ করবো কেন? আমি তো এমনি ফোন বন্ধ করে রেখেছিলাম।
_এমনি এমনি না কি আনিকার জন্য?
_
_প্লিজ রাত্রি আমাকে কিছুদিন সময় দাও, আমি তো চেষ্টা করছি আনিকাকে ভুলতে।
_থাক আর মনের উপর জোর কাটানোর দরকার নেই। যেদিন আপনা-আপনি আনিকাকে ভুলতে পারবে সেদিনই আমার জন্য টান জন্মাবে তার আগে নয়।
_আমি জোর কাটাচ্ছি না,
_আমি জানি, বাদ দাও। আমি এসব নিয়ে ভাবছি না। আমি অন্য একটা ব্যাপার নিয়ে টেনশনে আছি।
_কী ব্যাপারে?
_আজ সামির উপর কারা এ্যাটাক করল? কে আছে যে আমার ক্ষতি করতে গিয়ে আজ সামিকে এতো বড় বিপদে ঠেলে দিলো!
_এসব ভেবো না। আমি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আগে এটা বলো, তোমার শত্রু কারা কারা?
_আমার কোনো শত্রু নেই, কারণ আমি শিওর আমি জেনে শুনে কারো ক্ষতি করিনি।
_জেনে শুনে করোনি, কিন্তু গোপনে?
_গোপনে কার ক্ষতি করেছি আমি!
_ভেবে দেখো, যদি কোনো উত্তর পাও আমাকে বলো, আমি সেই অনুযায়ী এগিয়ে যাবো। কোনো ক্লু না পেলে কীভাবে বুঝবো কে তোমার ক্ষতি চায়?
_হুম।
শ্রাবণ আর মেঘ রাত জেগে অনেক খুঁনসুটি করেছে। মেঘ হাসিঠাট্টার মাঝে শ্রাবণকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছে যাতে শ্রাবণ সবসময় হাসির মাঝে ডুবে থেকে আনিকার দেওয়া কষ্ট ভুলতে সক্ষম হয়। সারারাত কাটে অসাধারণ একটা অনুভূতিকে সঙ্গী করে।
২৯!!
সকালবেলা নাশতা করেই মেঘ নওরিনকে ফোন করে বের হয় হাসপাতালে যাবে বলে। হঠাৎ মনে পড়ে শ্রাবণের বলা কথাগুলো। সাথে সাথে শ্রাবণকে ফোন করে মেঘ। শ্রাবণ অফিসে যাওয়ার পথে মেঘকে এসে পিক করে নেয়। তারপর মেঘকে হাসপাতালে রেখে নিজে চলে যায় অফিসের কাজে। মেঘ হাসপাতালে গিয়ে আদনান আর নওরিনকে একসাথে দেখে বেশ অবাক হয়। সামির পাশে সামির মা বসে আছেন। নওরিন আর আদনান সামির সাথে গল্প করছে। সামি আগের থেকে মুটামুটি একটু সুস্থ। মাথার ব্যান্ডেজ খুলে কাটা জায়গায় অল্প মলম লাগিয়ে দিয়েছে। পেটে এখনও সেলাই। মেঘ কেবিনে ঢুকতেই নওরিন মেঘের কাছে যায়। মেঘ আদনানকে দেখে বলল,
_আদনান ভাই আপনি এখানে!
_হ্যাঁ, আসতেই হলো। আপনার বান্ধবী ফোন করে বলল সামির এক্সিডেন্ট হয়েছে। তাই সামিকে দেখাটা প্রয়োজন মনে করে চলে এলাম।
_ওহ, আমি আরো ভাবলাম দুজনে মনে হয় একসাথে এসেছো।
_না, নওরিন আগেই এসেছে। আমি পরে এসেছি।
মেঘ সামির কাছে এগিয়ে যায়। সামির মাকে সালাম করে সামির শরীরের কথা জানতে চাইছে। ডক্টর আরো এক সপ্তাহ রেস্ট নিতে বলেছেন। সেলাই কাটার পরে ডিসচার্জ করা হবে। এই এক সপ্তাহ সামিকে হাসপাতালেই থাকতে হবে। সামির এক সপ্তাহ এখানে থাকা নিয়ে বেশ আপত্তি। মানতেই চায়না সে অসুস্থ। তাঁর এখানে থাকলে আর্টের অসুবিধা হবে। আর বেশিদিন নেই জেলা কমপিটিশনের। এইভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে পড়ে থাকলে কীভাবে কমপিটিশনে এ্যাটেন্ড করবে। মেঘ, নওরিন, আদনান সবাই মিলে সামিকে বুঝালে সামি এক সপ্তাহ এখানে থাকতে রাজী হয়। নয়তো সামিকে বুঝানো খুব মুশকিল ছিলো।
সামির সাথে অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়ে মেঘ হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পড়ে। এইটাইমে শ্রাবণ মিটিংয়ে আছে। ফোন করে ডিস্টার্ব করা যাবেনা। নওরিন আর আদনান অনেক আগেই চলে গেছে। মেঘ একটু দেরীতেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়েছে। শ্রাবণের জরুরি মিটিং দেখে মেঘ আর শ্রাবণকে ডিস্টার্ব করেনি। একাই বাসায় আসার পথে রওয়ানা দেয়। হাসপাতালের নিচের রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে মেঘ গাড়ি থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো গাড়ির থামছেনা দেখে মেঘ এদিক-সেদিক হাটাহাটি করছে সময় পার করার জন্য।
মেঘ একটা রিকশা থামিয়ে সেটাতে উঠে বাসায় আসার জন্য। একটা সময় কালো রঙের একটা গাড়ি মেঘের রিকশা ক্রস করে যায়। ভেতর থেকে কেউ একজন মাথা বের করে মেঘকে ওয়ার্নিং দেয়। মেঘ বেশ অবাক হয়। চেহারাটা ভালো করে দেখতে পায়নি কারণ একটা নোহা গাড়ির গতির সাথে রিকশার গতি সামান্য। এক নিমিশেই চেহারাটা আড়াল হয়ে যায়। মেঘ মনেমনে ভাবলো কোনো ক্ষতি না করে সোজা ওয়ার্নিং দিলো৷ পিছনে তাকাতেই পুকিশের সাইরেন দেওয়া গাড়ি দেখতে পেয়ে মেঘ শিওর হয়, পুলিশের জন্যই আজ শুধু ওয়ার্নিং দিলো; নয়তো এক্ষুণি বিপদ হয়ে যেত। ভয়ে ভয়ে মেঘ রিকশা চালককে রিকশা সাবধানে চালাতে বলে।
কয়েকমিনিট পর বাসার সামনে এসে তাড়াতাড়ি রিকশার ভাড়া মিটিয়ে দ্রুত বাসার গেইটের ভেতরে ঢুকে মেঘ। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বুকে হাত দেয় মেঘ। এখনও বুকটা ধড়ফড় করছে। মনে হচ্ছে কেউ মেঘের ভেতর থেকে প্রাণটা কেড়ে নিতে এসেছে। মেঘ দ্রুত বাসার ভেতরে যায়। রুমে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে আর ভাবছে “এরা কারা! কেন-ই বা আমাকে এইভাবে ফলো করছে?”
চলবে…
ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।