কোন সুতোয় বাঁধবো ঘর পর্ব ১৫

0
229

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৫

‘আচ্ছা আপু,ষোল বছর বয়সে কি ভালোবাসা হয় না! এই বয়সে প্রেম করলে সবাই এটাকে আবেগ কেন বলে? এই যে আমার হৃদয় পুড়ছে, ভিষণ কষ্ট হচ্ছে, নিজেকে কেমন ছন্ন ছাড়া মনে হচ্ছে। আপু আমার আবেগ কবে শেষ হবে! এই আবেগ আমি সহ্য করতে পারছি না।
“লাবু আমি বলবো না এটা তোর আবেগ।একদিনেও কাউকে শত জনমের ভালোবাসা যায়। আর ষোড়শী প্রেম তো গভীর প্রেম৷ প্রথম অনূভুতি, প্রথম অনুভব। সে সব তো আবেগ হতে পারে না! তবে সময়টা ভুল, এই একটা ভুল তোর সারাজীবনের ক্ষত। তুই কখনো চাইলেও এই মানুষটাকে ভুলে যেতে পারবি না৷ এই প্রথম ভালোবাসা ভয়ংকর।জীবনে যত সুখ আসুক, হুটহাট জীবনের মোড়ে তাকে মনে পরবেই। প্রথম ভালোবাসা অপূর্ণ রয়ে যায়, বেশির ভাগ সময়।
‘আমি তো রাতুল কে ভুলতে পারছি না আপা। আমার কষ্ট হচ্ছে, ভিষণ কষ্ট। মনে হচ্ছে আমার শ্বাস বারবার আটকে আসছে!
‘তোর যদি ইচ্ছে হয় তাহলে তুই রিলেশন কন্টিনিউ কর। তবে মনে রাখি সূচনা যত মধুর সমাপ্তি ততই তেতো। আমি চাইনা তুই ঠিক আমার মত কষ্ট পাস। তবে সবার ভাগ্য এক হয় না৷ আমি ব্যার্থ হয়েছি বলে,তুই ব্যার্থ হবি, যদিও এমন কোন রুলস নেই।

ইরহা চলে আসলো, নওশাবা ঘুমিয়ে আছে, ওর নিষ্পাপ চেহারার দিকে তাকালে ক্ষনিকের জন্য সব কষ্ট ধুয়ে মুছে যায়। আলতো করে চুমু খেলো নওশাবার কপালে। আহনাফের জন্য কষ্ট হচ্ছে। এতোদিন পর দেখা হলো,অথচ স্মৃতিটুকু বিষাদ নিয়ে গেলো! কি করার ছিলো ইরহার! যাকে বলেছিলো ভালো থাকবে, তার সামনে নিজের দুঃখ বিলাস করবে! দুঃখ তো ব্যাক্তিগত এর ভাগ কাউকে দিতে নেই। আমি কেমন আছি, আমি কেমন থাকবো এটা কাউকে প্রভাবিত করবে না। কিন্তু আমি খারাপ আছি,কষ্টে আছি এটা শুনে কেউ সিমপ্যাথি দেখাবে আবার কেউ মজা লুটবে। তাই দুঃখ শুধু নিজের করে রাখতে হয়। যাকে ভালোবাসা দিতে পারিনি তাকে দুঃখের ভাগও দেবো না। ভেতরটা ঝলসে যাক,উপরের চকচকে রঙটা সবাই দেখুক৷ ইরহার ভাবনার মাঝেই ফোনটা বেজে উঠলো।ইরহা ভাবলে হয়তো রবিন কল করেছে, তাই রিসিভ করলো না। এভাবে তিনবার রিং হয়ে কে’টে যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে, অপরিচিত নাম্বার। ইরহা কল রিসিভ করে বারান্দায় যেয়ে সালাম দিলো।
“ওপাশ থেকে মিষ্টি পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসলো, ওয়া আলাইকুমুস সালাম পিচ্চি।
‘আপনাকে কে বললো আমি পিচ্চি? আজাইরা আলাপ অন্যকারো সাথে পারেন৷
‘রিলাক্স বাচ্চা মেয়ে এতো রাগ কিসের?
‘সেই কখন থেকে বাজে কথা বলেই যাচ্ছেন, আমি পিচ্চি! এক মেয়ের মা আমি। আর আমাকে বলেন পিচ্চি।আমার নাম্বার পেলেন কোথায়? আর একবার কল করে ডিস্টার্ব করলে আপনার খবর করে ছাড়বো। যত্তসব ফাউল লোক । বলেই কল কেটে দিলো ইরহা।
জারিফ বোকার মত ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আছে। এক মেয়ের মা! মানে তার ভাই বিবাহিত মেয়ের সাথে রিলেশন করে? এটা কি করে সম্ভব! আবার মনে মনে ভাবছে এখন বর্তমানে অনেক ছেলেরা এমন করে। কিন্তু এটাতো রাতুল কে করতে দেয়া যাবে না। মাত্র অনার্সে উঠলো, এই বয়সে এক বাচ্চার মাকে বিয়ে করবে! নাহহহ এটা কিছুতেই হতে দেয়া যাবে না। জরিফ মাথা ঠান্ডা করে আবার কল দিলো। সাথে সাথে রিসিভ, ইরহা কড়া গলায় কিছু বলবে,তার আগেই জারিফ বলে,সরি আপু। আসলে আপনার সাথে আমার জরুরি কথা ছিলো।এরজন্য একজনের কাছ থেকে নাম্বারটা নিয়ে কল করলাম।
‘আমার কোন ছেলের সাথে জরুরি কথা নেই।
জরিফ নিজের রাগ কনট্রোল করে বলে,আপু জীবন ম’রনের কথা প্লিজ মানা করবেন না।আপনার কোথাও আসতে হবে না,আপনি যেখানে বলবেন আমি সেখানে আসবো।
‘নাম কি আপনার?
‘ইমতিয়াজ আহসান জারিফ। পিতা জাকির আহসান।
‘আচ্ছা আগামীকাল সকাল দশটায় মাতুয়াইল শিশু হসপিটালের সামনে থাকবেন।
‘জ্বি আপু।ধন্যবাদ আমার কথা রাখার জন্য।
ইরহা কোন কথার উত্তর না দিয়ে কল কে’টে দিলো।

‘জারিফ বলে,করে তো একটা দুধের শিশুর সাথে প্রেম! ভাব দেখে মনে হয় মহারানী ভিক্টোরিয়া। একবার শুধু হাতের নাগালে পাই,তারপর বোঝাবো।
জারিফ আস্তে আস্তে পা ফেলে, রাতুলের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো।

রাতুলের দরজা খোলাই ছিলো পর্দার আড়াল থেকে জারিফ দৃষ্টি দিলো রাতুলের দিকে। রাতুল মোবাইলে কিছু একটা দেখছে বা করছে গভীর মনোযোগ দিয়ে।
রাতুলের রুপা নামে একটা ফেইক আইডি আছে সে আইডি দিয়ে লাবিবার আইডি ঘাটাঘাটি করছে। তিন মিনিট আগে লাবিবা একটা পোস্ট করেছে……
শেষ হয়ে যাচ্ছে আমাদের পথচলা….
তবু চিরসবুজ থাকবে আমাদের ভালোবাসা।
~~লাবু

রুপা স্যাড রিয়েক্ট দিয়ে কমেন্ট করলো। পথচলা শেষ হয়ে গেলে ভালোবাসা চিরসবুজ কিভাবে থাকে?
রাতুল অপেক্ষায় আছে কখন লাবিবা কমেন্টের রিপ্লাই করবে? রাতুলের ছোট বেলা থেকে গান গাওয়ার শখ৷ গিটার বাজানো শিখেছিলো। মাঝে, সাঝে টুং টাং সুর তুলে। নিজের গিটারটা হাতে নিয়ে টুংটাং সুর তুলে গাওয়া শুরু করলো…… রাগ কমলে ফোন করিস
আমি রাত জেগে তোর অপেক্ষায়।
তুই কেনো এমন করিস?
ফোন করবো না
আমি রেগে আছি বেজায়।
কথা জমলে ফোন করিস
আমি তারা গুনে লিখে রাখি মেঘের গায়।
বল কেন এত ভুল করিস
আমি গলছিনা কিছুতেই তোর কথায়,
তুই এতো সহজে শুধরে যাবি না জানি
তাই হতেই হয় আমাকে অভিমানী!
তোর ফোন না এলে ঘুম নামে না দু চোখে
তাই তখন থেকে বলেই চলেছি তোকে
রাগ কমলে ফোন করিস।
চোখের কোন কেমন ভিজে এলো। যখনি টুকটাক ঝগড়া হতো গানটা রেকর্ড করে লাবুর ইনবক্সে পাঠিয়ে দিতো। আজ কেন লাবু হুট করে সব শেষ করে দিলে!

জারিফ আড়াল থেকে দেখেই চলে আসলো। মনে, মনে ভাবলো থাক মেয়ে বড় হয়েছে তো কি হয়েছে,যেহেতু রাতুল সত্যিকারের ভালোবাসে, মেয়েটাকে রাজি করিয়ে ছাড়বে। ভালোবাসায় বয়স কিসের আবার! কিন্তু যদি মেয়েটার হ্যাসবেন্ড থাকে তখন কি করবো?

✨রবিন বাসায় এসেছে প্রায় রাত একটায়। শেফালী বেগম তখন গভীর ঘুমে।রবিন নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে দরজা খুলতে যেয়ে দেখে তার কাছে চাবি নেই। তারপর মনে পরলো এই দু’দিন সে জেলে ছিলো। চোখ বন্ধ করে, মনে, মনে কিছু একটা ভেবে দীর্ঘ শ্বাস নিলো। তারপর নিজের ফোন বের করে, লামাকে কল করলো।
লামা রিসিভ করে বলে,কি তোমার এক্স ওয়াইফ জায়গা দিলো না! ফিরে আসতেই হলো?
‘জান কি বলো তুমি! আমি তো বিজনেস ডিল করতে গিয়েছিলাম৷ আর এখন আমার বুদ্ধি সচল হয়ে গেছে, তোমার মত হট, স্পাইসি বউ ঘরে থাকতে ওই মেয়ের কাছে যাবো! তাহলে কি ওকে ছেড়ে তোমাকে বিয়ে করতাম?
‘তাহলে ঘটে বুদ্ধি এসেছে? দাঁড়াও দরজা খুলছি।
কিছু কিছু সময় মানুষ নিরব ঘাতক হয়ে উঠে। কিন্তু লামা সেটা বুঝতেই পারলো না।

রবিন ঘরে ঢুকতেই লামা বলে,তোমার সুবুদ্ধি উদয় হয়েছে অবশেষে।
রবিন লামাকে নিজের কাছে এনে, লামার কপালে পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলে,সুইটহার্ট মাঝে মাঝে বুদ্ধি ঘাস খেতে যায়। তাকে ফিরিয়ে এনেছে। এখন যা হবে ধীরে, ধীরে খুব নিরবে।
‘কি করবে?
‘তোমাকে ভালোবাসবো গভীর ভাবে ভালোবাসবো।
‘হুট করে তোমার কথাটা কেমন গায়ে কা’টা দিলো।এভাবে কেউ ভালোবাসার কথা বলে?
‘আচ্ছা জান তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
‘বোন আর মা। যদিও তোমাকে বিয়ে করেছি তাই তারা রেগে আছে আমার উপর।
‘রবিন কথাটা শুনে একটা মুচকি হাসি দিলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here