কে! ,পর্ব:৭+৮

0
3180

#কে!!

#৭ম_পর্ব

 

নির্ভীকের কথাগুলো কানে বাজছে। এতোদিনের বন্ধুত্বের পর ও এভাবে কথা বলবে নির্ভীক এটা তার কল্পনার বাহিরে ছিলো। নিরিবিলি বসে যখন ভাবনার গহীনে তার বিচরণ তখন হঠাৎ কেউ পেছন থেকে নীতির ঘাড়ে হাত রাখে। হতচকিয়ে পেছনে ফিরতেই দেখে স্নিগ্ধ দাঁড়িয়ে আছে। লোকটাকে দেখে যেনো মনে একটা প্রশান্তি কাজ করছে। এমন ও কি হয় যে চেনা মানুষগুলো ধীরে ধীরে অচেনা হয়ে যায় আর অচেনা মানুষগুলো বড্ড বেশি চেনা চেনা লাগছে। মুখে শান্ত হাসি একে পাশে বসতে স্নিগ্ধ বলতে লাগলো,

– ওগো নারী পাড়ি দিলে অক্ষির

সীমানা,

হৃদয়েতে এঁকে দিলে এ কোন ভাসনা?

ভালোবাসা কত যে,

মনে আশা বেধেছে,

হিয়া তারে চেয়েছে,

তারই গীতি গেয়েছে।

তারে ছাড়া দিগহারা ভাষা হারা অন্তর,

ভেবে তারে মনে মনে চলা মোর মন্থর।

 

স্নিগ্ধ এর ঠান্ডা গলার কবিতাটা চুপ করে শুনছিলো নীতি। স্নিগ্ধ এর গলায় যেনো অন্যরকম কোমলতা আছে। তার প্রতিটি লাইন যেনো মনে যেয়ে গাথছে নীতির। সেই সাথে এক আকাশ সমান সংশয় ও মনে বাসা বাধছে। কিসের এতো টান তার প্রতি স্নিগ্ধ এর। তাদের পরিচয় তো দু সপ্তাহ ও হয় নি তবে? অন্যমনস্ক হয়েই বলে উঠে সে,

– আমাদের সম্পর্কটা ঠিক কেমন? ছাত্রী- শিক্ষকের সম্পর্ক থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। আমরা কি তবে বন্ধু?

 

নীতির কথাটা শুনে বেশ শব্দ করেই হেসে উঠে স্নিগ্ধ। অবাক নয়নে স্নিগ্ধ এর হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে নীতি। কোনো প্রুরুষের হাসি কি এতোটা সুন্দর হয়? কে জানে হয় বুঝি!! নিজের হাসি থামিয়ে মুখটাকে বেশ সিরিয়াস করেই স্নিগ্ধ বলে,

– তোমার দিক থেকে যদি সেটা বন্ধুত্ব হয় তাতে আমার আপত্তি নেই। তবে আমার দিক থেকে এটা বন্ধুত্ব নয়। দেখো যদি একজন পূর্ণবয়স্ক ছেলেমেয়ের কথা চিন্তা করি তবে আমার আচারণ গুলো তোমার কাছে খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা দিয়ে দিবে। আমি যে তোমার থেকে অনেক বড় তাও নই। তোমাকে আমি কখনোই আমার স্টুডেন্ট হিসেবে দেখি নি। অনেকটা কাকতালীয় ব্যাপার, তোমাকে আমি প্রথম দেখেছি যখন তুমি অনার্সে পড়। লাভ এট ফার্স্ট সাইট যদি কিছু থাকে তবে সেটা তোমাকে দেখেই হয়। এর পর বাহিরে চলে যাবার কারণে তোমাকে খুজে পাওয়াটা আর হয় নি। যখন তোমাকে পেলাম তুমি তখন অলরেডি আমার স্টুডেন্ট। মানুষের মনটা বড্ড বেশি চঞ্চল, না পাওয়া জিনিসের প্রতি আকর্ষণ তাদের মারাত্নক। ঠিক তেমন তোমার প্রতি আমার ভালোলাগা এট্রাকশনটা দিন দিন বাড়তে বাড়তে মোহের রুপ নিয়েছে। এখন যদি তুমি এটাকে ভালোবাসা বলো তবে তাই।

 

মাথা নিচু করে স্নিগ্ধ এর কথাগুলো শুনছিলো নীতি। কি বলা উচিত ভেবে পাচ্ছিলো না। মেয়েদের চোখে নাকি কিছুই এড়ায় না। নীতি পাত্তা না দিলেও প্রথম দিন থেকেই স্নিগ্ধ এর চোখে তার প্রতি আকর্ষণ দেখতে পেয়েছে সে। আজ এভাবে সোজাসাপটা কথায় যেনো আরো দ্বিধার মাঝে পরে গেছে নীতি। নীতির নিস্তব্ধতা স্নিগ্ধ এর একদম ভালো লাগছে না। নীতির মস্তিষ্ক কিংবা মন নিজের আয়ত্তে সম্পূর্ণ আনতে এখনো সময় লাগবে। মানুষের মনের উপর নিজের কতৃত্ব ফলাতে হলে ধীরে ধীরে সেটাকে নিয়ের আয়ত্তে আনতে হয়। মন দূর্বল হলেও মস্তিষ্ক তখন যুক্তি দাড় করায়। সেই যুক্তির দেয়াল ভাঙ্গতে গেলে মনকে বশীকরণ প্রয়োজন। নীতির মন এখনো তার বশে আসে নি, শুধু দূর্বল হয়েছে কেবল। এবার আর প্রতিবারের মতো তাড়াহুড়ো করবে না স্নিগ্ধ। ধীরে ধীরে নীতিকে নিজে আয়ত্তে আনবে। মুখে হাসির রেখা টেনে কোমল কন্ঠে স্নিগ্ধ বলতে লাগলো,

– জরুরি নয় আমি তোমাকে ভালোবাসি বলে তোমাকেও আমায় ভালোবাসতে হবে। আমি না হয় তোমার বন্ধু হয়েই থাকলাম। তুমি সময় নেও।

 

বলেই পানিতে দৃষ্টি তাক করলো স্নিগ্ধ। নীতি এখনো নিজের সংশয় দূর করতে পারছে না। এটা ঠিক যে স্নিগ্ধ এর প্রতি এক রকম ভালোলাগা কাজ করছে তার। তবে সেটাকে ভালোবাসার নাম দিলে নিতান্ত বোকামি ছাড়া কিছুই হবে না। উফফ আর ভাবতে পারছে না। অনুভূতিগুলোর দাবানলের মাঝে বেশ ঘেটে ঘ হয়ে গেছে নীতি। বুক থেকে অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো নীতির। স্নিগ্ধ নিপুণ দৃষ্টিতে নীতির দিকে তাকিয়ে আছে। এবার খেলার গতি আরো বাড়াতে হবে। গন্তব্য সদূরে না হলেও খুব কাছেও নয়। খুব দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে নীতির অগোচরে, সূক্ষ্ণভাবে সকল কাজ করতে হবে তাকে। ধীরে ধীরে নীতির সকল সুতো তার হাতে চলে আসবে। তখন তার হাতের মুঠোয় থাকবে নীতি। নিজের খাচায় রেখে দিবে তার বাবুইপাখিকে। কেউ কেড়ে নিতে পারবে না তার মোহকে।

– হাসছেন যে, নিজে তো বেশ সোজা সাপটা কথা বলে দিলেন, মাঝে আমার মাথায় ঝট পাকিয়ে দিলেন। এখন হেসে যাচ্ছেন।

 

নীতির কথায় নিজের সাজানো মস্তিষ্ক থেকে বের হয় স্নিগ্ধ। মেয়েটি ডাগর ডাগর চোখে তার দিকে তালিয়ে আছে। খুব ভালো লাগে এই চোখ জোড়া স্নিগ্ধ এর। ইচ্ছে করে সারাদিন দেখতেই থাকতে। যেদিন নিজের প্রাসাদে নিয়ে যাবে তখন পুতুলের মতো সাজিয়ে রাখবে তাকে। মেয়েটাকে কেনো এতো ভালো লাগে নিজেও জানে না স্নিগ্ধ। মুচকি হাসি হেসে বললো,

– এভাবে নাক ফুলিয়ে থেকো না। খুপ করে খেয়ে নিবো

 

স্নিগ্ধ এর কথা শুনে চোখ সরিয়ে নিলো নীতি। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। লোকটার মুখে কি কিছুই বাধে না। ব্যাগটা কাধে নিয়ে উঠতে গেলেই স্নিগ্ধ জিজ্ঞেস করে,

– কোথায় যাচ্ছো?

– ওমা বাড়ি যাবো না?

– একা যাবা? সন্ধ্যা হয়ে আসছে?

– আপনার সময় আছে? মাষ্টার মানুষ বলে কথা

– তোমার জন্য আমার সময় অহরহ

– হাহা

 

নীতি খিলখিল করে হেসে উঠেছে। স্নিগ্ধ মোহ চোখে দেখে যাচ্ছে তাকে। কি অদ্ভুত লাগছে তার বাবুইপাখিকে।

” নারী কে জাদু করিলে গো যতই দেখি ততই আরো ভালোবাসতে ইচ্ছে করে”

 

মনে মনে কথাগুলো বলেই হাসিটা আরো প্রসস্থ হলো স্নিগ্ধ এর।

 

রাত ৮টা,

কেসটা যত ইজি ভেবেছিলো ততই পেছাচ্ছে। হাবীব মাথায় হাত দিয়ে বসে আসে। খুন হয়েছে অথচ খুনি যেনো হাওয়া হয়ে গেছে। ছেলে দুটোকে একই সময় খুন করা হয়েছে। অথচ কেনো যেনো মনে হচ্ছে দুটো খুন আলাদা আলাদা মানুষ করেছে। খুনের পদ্ধতি আলাদা। বুকে ছোড়া যখন মারা হয়েছে সেটা হাইট টা ভিন্ন। একজন খুন করার পর টর্চার করেছে মরার আগ অবধি তো। আরেকজন টর্চার করতে করতে খুন করেছে। অবাক ব্যাপার দুটো খুনের জায়গাতেই নীতির ব্লাড স্যাম্পল পাওয়া গেছে। কিছুতেই যেনো হিসেব মিলাতে পারছে না হাবীব। অবাককর ব্যাপার এইটা যে, নীতি তখন স্নিগ্ধ এর সাথে ছিলো। এবার শুরু থেকেই কেস টা নিয়ে ভাবতে হবে হাবীবকে। নতুন করে যদি কোনো সুত্র খুজে পাওয়া যায়। স্নিগ্ধ লোকটাকে কেনো জানি না সুবিধার মনে হচ্ছে না হাবীবের। এর কি কোনো সম্পর্ক আছে এই খুন গুলোর সাথে!! একজন টিচার কেনো খুন করতে যাবে? উফফ আর ভাবতে পারছে না হাবীব।

 

রাত ১১টা,

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে নির্ভীক। কেনো যেনো বিরক্ত লাগছে খুব। মনটা অশান্ত। নীতিকে স্নিগ্ধ এর গাড়িতে উঠতে দেখে বেশ মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কিছু করতেও পারছে না। নীতিকে তখন যা তা বলাটা ঠিক হয় নি। নীতি কষ্ট পেয়েছে এটা বুঝা যাচ্ছিলো। একবার চেয়েছিলো ক্ষমা চাইবে কিন্তু কি মনে করে সেটা চাওয়া হয় নি। এখন মনটা বেশ অসুস্থ অসুস্থ লাগছে। আগে কখনোই নীতির সাথে এমন ঝামেলা হয় নি। কেনো যেনো মনে নীতি তার থেকে বেশ দূরে চলে যাচ্ছে। আচ্ছা সে কি নীতিকে হারিয়ে ফেলবে!!

 

অপরদিকে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো নীতি। স্নিগ্ধ এর কথা গুলো যেনো মাথায় ঘুরছে। লজ্জাও লাগছে। কেনো লাগছে সেটা জানা নেই। তবুও লজ্জা লাগছে। এক মনোযোগে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকতে কিছু একটা চোখে পড়লো নীতির। অনেক খেয়াল করে দেখলে যা নজরে পড়লো…….

 

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

 

#কে!!

#৮ম_পর্ব

 

এক মনোযোগে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকতে কিছু একটা চোখে পড়লো নীতির। অনেক খেয়াল করে দেখলে যা নজরে পড়লো তা হলো একটি ছোট কালো বক্সের মতো কিছু একটা ফুলদানিগুলোর মাঝে রয়েছে। সন্দেহ হতেই তাড়াতাড়ি বক্সটির কাছে যায় নীতি। ফুলদানিগুলো সরাতেই যা চোখে পড়লো তা হলো, সেটা একটা ক্যামেরা। অনেকটা ছোট, খেয়াল না করলে কেউ বুঝতেই পারবে না। নীতির সারা শরীর যেনো ঠান্ডা হতে লাগলো, কপালে ঘাম জমতে লাগলো। তার রুমে ক্যামেরা রাখলোটা কে। যদি একটি ক্যামেরা থাকে তবে কি আরো ক্যামেরা আছে। তবে কি কেউ তার প্রতিটা মূহুর্ত ফলো করছে? কেউ লি তাকে প্রতিটা মূহুর্তে দেখছে। ব্যাপারটা ভাবতেই মাথাটা একমূহুর্তের জন্য ঝিম ধরে গেলো। মাথা যেনো কাজ করতে চাইছে না। হাতটা কাঁপছে নীতির। এই ব্যপারটা কাউকে বলাটা খুব দরকার। কিন্তু কাকে বলবে! বাবা-মা তাদের সময় কোথায়? নির্ভীক? তার ও যে খুব সময় আছে সেটাও না৷ তাহলে? স্নিগ্ধ? মনটা নিমিষেই শান্ত হয়ে গেলো নীতির। সে কালকেই স্নিগ্ধ এর সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে। কিন্তু তার আগে পুরো ঘরটা খুজা দরকার। আর কোথায় কোথায় ক্যামেরা লুকিয়ে আছে। অনেক খোজাখুজির মোট ৭টা ক্যামেরা বের করলো নীতি। তার রুমে কেউ এতোগুলো ক্যামেরা ফিট করবে অথচ ঘরের কেউ জানবে ও না!! তার বাবা মা কেউ ই বাসায় থাকেন না। যদি কেউ থাকে সে হলো শালুক। শালুক কি তবে অপরিচিত কাউকে বাসায় ঢুকতে দিয়েছিলো!! উফফফ, গা টা ছমছম করছে। কেউ তাকে প্রতিটা মূহুর্ত দেখছে ব্যাপারটা ভাবতেই ভয়গুলো যেনো গলার কাছে এসে পড়ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, মাথাটা হিম ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আর বুকের স্পন্দন যেনো কমে যাচ্ছে। এতোটা ভয় আগে কখনোই নীতি পায় নি। ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না নীতি। প্রতিটা ক্যামেরা বেশ ভালো করে সংরক্ষণ করলো সে। কাল সকালে বাসার সবাইকে জানাবে সে। এটা লুকানো মানে আরো বড় বিপদকে আহবান দেয়া, সে আর কোনো বিপদের মাঝে পড়তে চায় না____

 

সকাল ৮টা,

ডাইনিং টেবিলে আদনান সাহেব এবং ফারহানা বেগমের সাথে বসে রয়েছে নীতি। পিনপতন নীরবতা বিরাজমান। তাদের সামনে ক্যামেরা গুলো রাখা। নিজের মেয়ের রুমে এতোগুলো ক্যামেরা দেখে খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়েন তারা। ফারহানা বেগম তো বেশ ভীত গলায় জিজ্ঞেস করেন,

– তুমি কাল রাতেই কেনো এই কথাটা বললে না? এটা তো সাংঘাতিক ব্যাপার। না জানি লোকটার উদ্দেশ্য কি?

– তোমরা ব্যাস্ত থাকো সারাদিন। তাই তোমাদের রাতে ডিস্টার্ব করি নি।

 

মলিন কন্ঠেই কথাগুলো বললো নীতি। আদনান সাহেবের বুঝতে বাকি রইলো না যে নীতি তাদের কেনো জানায় নি। মেয়েটার উপর দিয়ে এই একটা সপ্তাহ কম ঝামেলাতো যায় নি। দু দু বার খুনের জন্য জেলে ইন্টারোগেশনের জন্য যেতে হয়েছে। এখন আবার কেউ তাকে ক্যামেরার ঘটনা। না জানি মেয়েটার মনের অবস্থাটা কেমন থাকবে। শালুক বেশ ভয়ে শিটিয়ে আছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে বলেছে, ডিশের লোক এসেছিলো লাইন ঠিক করতে সে তাকেই ঢুকতে দিয়েছে। যেহেতু খুব পুরোনো লোক এ বাড়ির তাই কেউ তাকে সন্দেহ ই করে নি। আদনান সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

– নীতি, আমরা একটু ভ্যাকেশনে যাই। একটু রিল্যাক্স ও হয়ে যাবে তোমার। এসব নিয়ে বেশি চিন্তা করো না। দরকার হলে আমরা বাসা চেঞ্জ করে ফেলবো। নো টেনশন

 

বাবার কথায় নীতির টেনশন একটু হলেও কমে। আসলেই একটা ব্রেকের খুব বেশি প্রয়োজন। এখন ব্রেকটা না পেলে হয়তো মাথাটা সত্যি নষ্ট হয়ে যাবে। আর টেনশন নেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই তার। এই প্রথম তার বাবা-মা উভয়ই নিজেদের বাদ দিয়ে তার ব্যাপারে চিন্তা করছে। ভালো লাগছে ব্যাপারটা। মুখে প্রশান্তির হাসি একে নীতি বলে,

– ওকে তবে সেন্ট মার্টিন যাবো। আমার এখন সাগরের কাছে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।

– যেটা তুমি ঠিক করবে তাই হবে।

 

আদনান সাহেব বেশ আনন্দিত স্বরে বললেন। মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসেন তিনি। কিন্তু টাকা কামাবার নেশায় পরিবারের থেকে বেশ আলাদা হয়ে গেছেন তিনি। ফারহানা বেগম ও সম্মতি জানালেন। কেননা এই ঝামেলা থেকে একটা ব্রেক নিলে মন্দ নয়। মেয়েটা ও একটু ভুলে থাকতে পারবে এই ঝামেলাগুলো। তারা কাল ই রওনা দিবে। অবশেষে অনেকদিন পর হলেও পরিবারের মতো ঘুরা হবে তাদের। নীতির বেশ আনন্দ লাগছে। মনে হচ্ছে ঝামেলা জন্য হলেও অবশেষে তার পরিবার তার সাথে আছে। আর কি চাই!!

 

সকাল ১১টা,

ক্যান্টিনে বন্ধুদের সাথে বসে আছে নির্ভীক। চোখ শুধু নীতিকে খুজছে। আফরা ক্যান্টিনে আসতেই তাকে জিজ্ঞেস করে উঠে,

– ওই নীতিকে দেখছিস?

– তুই তোর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে যাস নি?

 

আফরার খোচা খাওয়া কথায় বেশ চটে যায় নির্ভীক। বেশ খাকাড়ি গলায় বলে,

– কি শুরু করেছিস তোরা? আমি কি শুধু গার্লফ্রেন্ডের লগেই থাকি? আমার খেয়ে কি কাজের অভাব নাকি?

– নাহ এবারের টার সাথে বেশ ঢলাঢলি কি না তোর!

– আমার ব্রেকাপ হয়ে গেছে। এবার বলবি নীতি কোথায়?

– কেনো হুট করে ব্রেকাপ?

– আমার ইচ্ছে, ঝগড়া হয়েছে তাই আমিও ব্রেকাপ করে ফেলেছি। এতো সময় আমার নেই যে সারাদিন তাকে দিবো। তুই কি আদৌ নীতির খবর জানিস?

– ও আসে নি। সামনে এক সপ্তাহ ওকে খুজে পাবি না। ও যাচ্ছে সেন্ট মার্টিন।

– কেনো? হুট করে এই ডিসিশন?

– কেনো আবার? ওর ইচ্ছে। ওর খুব স্ট্রেসের মাঝে আছে। তাই স্ট্রেস রিলিজ করতে যাচ্ছে।

– আমাকে তো একবার বললো ও না

– বলে কি হবে? তুই কি ওকে সময় দিবি?

– কেনো দিবো না অবশ্যই দিবো। ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

 

নির্ভীকের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আফরা। শান্ত গলায় বলে,

– ও তোর শুধু ফ্রেন্ড হয়ে থাকতে চায় না, তুই যদি একটু বুঝতি। যাক গে। ব্যাপার না। থাক তুই আমি বাড়ি যাবো। আজ তো ক্লাস নেই। টাটা

 

আফরার কথাটা যেন কানে বাজছে নির্ভীকের। তবে কি আসলেই নীতি তাকে বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু ভাবে। কিন্তু সে তো স্নিগ্ধএর সাথে টাইম স্পেন্ড করে। নির্ভীককে যেনো ভুলেই গেছে সে। উফফ অনুভূতির এই জাল যেনো আরো বেশি গাঢ় হচ্ছে। ধুর!! ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে পড়লো নির্ভীক। এখন উদ্দেশ্য একটাই সেন্ট মার্টিন। নীতিকে সামনাসামনি জিজ্ঞেস করতে হবে।

 

দু দিন পর,

সাগরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীতি। নীতির মনটা আজ অনেকটাই ফুরফুরে। নীতি যখন সাগরের উত্তাল দেখতে ব্যাস্ত তখন…….

 

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here