#কে!!
#৬ষ্ঠ_পর্ব
নীতির ঠোঁটে গভীর স্পর্শ করে ধীর কন্ঠে বললো,
– বাবুইপাখি, তোমার চার হাতের সীমানায় আমি কাউকে আসতে দেবো না। তাতে যদি তোমাকে ফাঁসাতেও হয় তাতেও আমি রাজী। ধীরে ধীরে সবাই কে তোমার কাছ থেকে সরিয়ে দেবো। শুধু আমার বিচরণ হবে তোমার আশেপাশে, মস্তিষ্কে এবং মনের গহীনে। শুধু একটা নাম ই তুমি মনে রাখবে তা হলো কেবল মাত্র স্নিগ্ধ। এই স্নিগ্ধ ব্যাতীত কেউ তোমার চার সীমানায় আসবে না।
স্নিগ্ধ এর চোখমুখ যেনো আরো অস্থির হয়ে উঠলো। পাগলের মতো নীতিকে চুমু দিতে লাগলো। আবারো বলতে থাকে,
– আমি জানি তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে। ওই হাবীব কুত্তার বাচ্চাটা তোমাকে গরমের মাঝে না জানি কতোক্ষণ বসিয়ে রেখেছ। আমি বুঝতে পারি নি। ও এভাবে তোমাকে ধরে নিবে। আমিতো চেয়েছিলাম তোমার ওই আশিক নির্ভীককে ফাসিয়ে দিবো। কিন্তু পরে ভাবলাম তাতে তুমি ওর প্রতি আরো ঝুকে যাবে। আমি চাই তুমি আমাকে মনে রাখো। আমাকেই ভালোবাসো। তাই তো, এতো সুন্দর চালটা দিলাম। ধীরে ধীরে সবাই তোমাকে পাগল ভাববে। কেউ তোমাকে আপন করে নিবে না। তখন বাধ্য হয়ে আমার কাছেই আসতে হবে। জানো তোমাকে দেখলেই যেনো এক অদ্ভুত নেশা মনে জেকে বসে। ইচ্ছে হয় সবার কাছে থেকে আড়াল করে রাখি। খুব দ্রুত সেটা হবে। একে একে সবাইকে সরিয়ে দিবো দেখো। বাবুইপাখি, আমি না খারাপ না। আমি সত্যি খুন করতে চাই নি। কিন্তু কি করবো বলো। ও তোমার গায়ে হাত দিয়েছে। ইচ্ছে করছিলো ওর হাত কুচি কুচি করে ফেলতে। কিন্তু খুব অনুরোধ করলো বিধায় ছেড়ে দিলাম। আমি তোমার গায়ে আচ ও লাগতে দিবো না দেখো। ওই হাবীব কুত্তাটা যদি তোমার আশেপাশে ঘুর ঘুর করে ওকে লাশ বানিয়ে দিবো। আমি তোমাকে কখনো টাচ ও করতে দিবো না দেখো। দেখো তুমি দেখো।
কথাটা বলে তর্জনী আঙুল দিয়ে নীতি মুখে স্পঅর্শ করতে লাগলো। নীতির সারা মুখে আদর করতে লাগলো। হঠাৎ মুখে গরম নিঃশ্বাসের অনুভূতি হতেই নড়েচড়ে উঠে নীতি। ঘুমের আবেশে চোখ খুললেও কিছু বুঝার মতো মানষিক অবস্থাতে নেই সে। ঘাড়টা কাত করে বাঁকা হাসি হেসে স্নিগ্ধ বললো,
– তুমি ঘুমাও বাবুইপাখি। আমার জাল থেকে তুমি কখনোই ছুটতে পারবে না।
স্নিগ্ধর চোখ ভয়ংকর। তার চোখে আসক্তি স্পষ্ট। যেনো কোনো হিংস্র হায়েনা শিকার খুজে পাবার আনন্দ প্রকাশ করছে। নীতি তার হাতের মুঠোতে আটকে আছে। এ যে কাটাজালের একটা ফাঁদ। এই ফাঁদ ছাড়ানো কখনোই নীতির পক্ষে সম্ভব নয়। অনেকটা অসহায় খরগোশের মতো। যে কিনা হায়েনার ফাঁদে আটকেই যাচ্ছে, আটকেই যাচ্ছে। একটা গিট ছাড়ালেই আরেকটা। অনন্তকাল এই গিট আটকেই থাকবে।
নীতির রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই শালুক পথ আগলে ধরে। শালুকের দিকে কঠোর নজর দিতেই কাঁপা স্বরে বলে উঠে,
– আফাজানে আপনার কি ক্ষতি করছে, তার লগে এমন কেনো করতেছেন।
শালুকের কথায় চোখ মুখ খিচে গেলো স্নিগ্ধ এর। গলাটা শক্ত করে চেপে ধরলো। এ যেনো কোনো উম্মাদ। শালুকের দম বন্ধ হয়ে আসছে। স্নিগ্ধর জোরের সাথে সে কিছুতেই পেরে উঠছে না। মুখ ধীরে ধীরে লাল হতে লাগলো শালুকের। চোখগুলো বেরিয়ে যেতে লাগলো। দাঁতে দাত চেপে স্নিগ্ধ বললো,
– তোর বাচ্চা আর দাদী এখনো আমার কাছেই আছে। যদি তাদের উপরের টিকিট কাটাতে না চাস তাহলে যেমন সব কিছু চলছে সেভাবেই চলতে দে। আর যদি নিজের সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিস তো দেখবি।
বলেই গলাটা ছেড়ে দিলো শালুকের। শালুক গলায় হাত দিয়ে কাশতে লাগলো। আর একটু হলে হয়তো ঘাড়টাই ভেঙে যেতো। রোজ রাতে শালুক ই ঢুকতে দেয় এই লোকটাকে।তারপর আবার চামে চামে বের করে দেয়। বিগত দু সপ্তাহ ধরে স্নিগ্ধ প্রতি রাতে নীতির ঘরে আসছে। নীতিকে মন ভরে দেখছে। আর নীতি সেটাকে লুসিড ড্রিম ভেবে ভুলে যাচ্ছে। নীতির বাবা-মাকে স্লো ডোজে ঘুমের ঔষধ দেবার কারণে তারাও টের পাচ্ছে না।
নীতির বাসা থেকে এসে নিজের বাসায় আসে স্নিগ্ধ। তার রুমে ঢুকে লাইটটা লাগাতেই সারা ঘর আলোকিত হয়। সারা ঘরে কেবলমাত্র নীতির ছবি। নীতির প্রতিটা ছবি লুকিয়ে লুকিয়ে তোলা। তার পাশে একটি বোর্ড, যাতে কিছু ছবি টাঙ্গানো। তাতে দুজনের গায়ে ক্রস দেয়া। এখন আর একটি ছবি টাঙ্গিয়ে দিলো স্নিগ্ধ। চোখ তার চিকচিক করছে। হিসহিসিয়ে বলতে লাগলো,
– সবাই এক এক করে শেষ হবে। থাকবো কেবল আমি আর তুমি। হাহাহা
স্নিগ্ধর হাসিতে ঘর ময় কাঁপতে লাগলো। এ যেনো ভয়ানক হায়েনার হাসি। মানুষের পক্ষে এতো ভয়ানক হওয়া কি আদৌ সম্ভব!!!
বিকেল চারটা,
শুধু স্নিগ্ধকেই খুজে যাচ্ছে নীতির চোখ। লোকটা যেনো সম্বোহন করে ফেলেছে তাকে। আজ সারাদিন তাকে না দেখতে পেয়ে মনটা উথাল পাথাল করছে। এটা কেনো হচ্ছে সে নিজেও জানে না। শুধু এটা জানে লোকটাকে তার এখনই দেখতে হবে। কিন্তু লোকটা কি আদৌ ক্যাম্পাসে এসেছে? কে জানে?
– কাউকে খুজছিস নীতি? আজকাল তো তোকে একা পাওয়াই ভার
নির্ভীকের খোঁচা দিয়ে কথাটা শুনে পাশে ফিরে নীতি। নির্ভীকের চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে যেনো সে সারাটারাত ঘুমাতে পারে নি। নির্ভীকের এমন চেহারাটা একেবারেই নীতির ভালো লাগছে না। পরমূহুর্তে ভাবলো, হবেই না কেনো নিশ্চয় কাল রাত গার্লফ্রেন্ডের সাথে সারারাত কথা বলেছে। আচ্ছা আগেতো এতো প্রেমিক পুরুষ টাইপ ছিলো না নির্ভীক। তবে কি এই মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছে? নির্বিকার ভাবেই নীতি উত্তর দেয়,
– কেনো রে? আমি কি কাউকে খুজতে পারি না?
– না না খুজতে পারবি না কেনো? আজকাল স্যারদের সাথে তোরে রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় কি না?
নির্ভীকের এমন কথায় যেনো ছ্যাত করে জ্বলে উঠে নীতির আত্নসম্মান। বেশ চড়া গলায় জিজ্ঞেস করে,
– কথাটা ভালো ভাবে বল নির্ভীক। মুখ আছে বিধায় সেটাকে এভাবে অপব্যবহার করাটা হয়তো উচিত না।
– আমি কি ভুল কিছু বললাম? কাল সারাটা দিন তুই তার সাথেই ঘুরঘুর করেছিস। সে তোকে বাসায় পৌছে দেয়। একটাও কি মিথ্যে?
কেনো যেনো নির্ভীকের কথাগুলো বুকে ভোতা ছুরির মতো আঘাত দিচ্ছে। গলায় কথা আটকে যাচ্ছে। তাও কোনো মতে বললো,
– তুই যখন সারাদিন তোর গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকিস আমি কি একবারও তোকে কিছু বলি? নাকি তোর কোনো ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করি? কোনটা? হ্যা আমি স্নিগ্ধ স্যারের সাথে ঘুরি। আমার তাকে ভালোলাগে।
– কেনো কি সম্পর্ক তোর তার সাথে?
– সেটা তোকে বলতে আমি বাধ্য নই নির্ভীক। পরসু যখন আমাকে থানায় ধরে নিয়ে গিয়েছিলো ওই লোকটি আমাকে বাঁচিয়ে ছিলো। আমার যখন মনটা খারাপ ছিলো ওই লোকটি আমাকে সঙ্গ দিয়েছিলো। তুই কোথায় ছিলি নির্ভীক। তুই ছিলি না। সুতরাং আমি এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।
বলেই সেখান থেকে হাটা দিলো নীতি কেনো যেনো চোখ ভিজে আসছে। নির্ভীক তাকে আটকাতে চাইলেও কেনো যেনো পারলো না। সত্যি ই তো সে তো নীতির আশেপাশে ছিলো না। খন নীতির থাকে প্রয়োজন ছিলো। সে ছিল না। এই কথাটা ভাবতেই রাগটা আরো বাড়তে লাগলো নির্ভীকের। গাছের গুড়িতে একটা ঘুষি দিয়ে নিজের রাগকে সংবরণ করলো সে।
ক্যাম্পাসের পুকুরের কোনায় বসে আছে নীতি। নির্ভীকের কথাগুলো কানে বাজছে। এতোদিনের বন্ধুত্বের পর ও এভাবে কথা বলবে নির্ভীক এটা তার কল্পনার বাহিরে ছিলো। নিরিবিলি বসে যখন ভাবনার গহীনে তার বিচরণ তখন হঠাৎ…….
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি