কেন আমি ডাকি তারে- পর্ব ১৪

0
806

কেন আমি ডাকি তারে -১৪

রেহান জিজ্ঞেস করল, নিতু শপিং করতে হবে?
নিতু অবাক হয়ে বলল, কিসের শপিং?

ট্যুরে যাচ্ছ, কিছু লাগবে না?

নিতুর হঠাৎ মনে পড়ল, বিয়ের জন্য সব পার্টি সু কেনা হয়েছে, ব্যাগও লাগবে। সেটা বের হয়ে নিজেই কিনে নিতে পারবে৷ রেহান কেন কিনে দিবে!

তাই নিতু বলল, আমি আমাদের বাসায় যাব একবার, তখন সব কিনে নিব।

রেহান বলল, কি লাগবে?

সেরকম কিছু না৷ নিতু অল্পতে কথা সারল।

রেহান অফিসের পরে একটা শপিং মলে ঢুকল। এই জায়গায় সায়রার সাথে এসেছে, ঢাকা শহরের সব শপিংমল সায়রার মুখস্থ।

রেহান নিজেই ঠিক করে নিলো, কয়েকটা টপস, ফ্রি সাইজ প্যান্ট যেটা নিতুকে মানাবে, ট্যুরে যাওয়ার মত ব্যাগ, স্যান্ডেল, নিজের জন্য কিছু টিশার্ট, শর্টস এগুলো নিয়ে নিবে৷ নিজের কেনাকাটায় বেশি সময় লাগল না। নিতুর জনঢ় কিনতেও সময় লাগল না, এটা না ওইটা এরকম বিষয় তে নেই৷ নিজের পছন্দ মত বেশ অনেকগুলো ড্রেস পারচেজ করে ফেলল রেহান। সব শেষে শাড়ির দোকানে এসে একটা স্কাই কালারের জামদানিতে চোখ আটকে গেল। রেহান সেটাও কিনে নিলো। সায়রা সব নিজেই পছন্দ করে, রেহান শুধু কার্ডটা দেয় বিল পে করার সময়। কিন্তু নিতুর জন্য ঘুরে ঘুরে কিনতে খুব ভালো লাগছিল।
বার বার চোখে ভাসছিল, এই পোশাকে কেমন লাগবে নিতুকে! মেয়েটার মনটা খারাপ, কয়েকদিনই আছে রেহানের কাছে, এরপর হয়তো আর যোগাযোগও থাকবে না। তুহিন স্বাভাবিক হলে হয়তো যোগাযোগ রাখত, কিন্তু মনে হয় না রাখতে দিবে।

নিতুকে এরকম করে বিয়ে করিয়ে অপেক্ষা করানোতে রাজী হওয়ার কারণ আছে যথেষ্ট। কারন নিতু এত মিষ্ঠি, ওর বিয়ে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই আটকে রাখতে হয়তো এটাই ভালো বুদ্ধি। রেহানেরও নিতুকে ভালো লেগেছে।

সব শেষ করে যখন পরিচিত ব্যাগের দোকানে গেল, ব্যাগ নেওয়ার পরে দোকানের কর্মচারী ছেলেটা বলল, ভাইয়া, আপা তো ব্যাগ নিল গতকালকে। আগে তো আপনি আসতেন, এই কয় মাস দেখি না আপনাকে!

রেহান বলল, কে সায়রা?

হুম। আরেক ভাইয়া আসছিল সাথে।

রেহান হেসে বলল, কোনো বন্ধুকে নিয়ে এসেছিল বোধহয়। জবে জয়েন করতেছে, তাই শপিং করে গেছে হয়তো।
এটা সায়রার জন্য না।

বুঝছি ভাইয়া!

দোকানি কি বুঝল সেই জানে। রেহান বুঝলো, সায়রার জীবন থেমে নেই৷ হয়তো অপেক্ষায়ও নেই। রেহান নিজেও কি পুরোপুরি সায়রাকে সময় দিয়েছে! কোনো ভাবে কি নিতুকে নিয়ে ভাবেনি! আজও তো নিতুর জন্যই আসা!

রেহানকে একগাদা শপিং করতে দেখে নিতু খুবই অবাক হলো।

-টপস, জুতা এভাবে কেনা যায়!

রেহান বলল, দেখো সাইজ ঠিক হয় কিনা।

নিতু বলল, সবই ঠিক আছে। রেহান মনে মনে হাসল। ঠিক না থাকার কোনো কারন নেই, দূরে দূরে থাকা হলেও বেশ কয়েকবার কাছাকাছি এসেছে নিতু! তাই নিতুর বিষয়ে এটুকু ধারনা করা খুব একটা কঠিন কাজ না।

গভীর রাতে নিতুর ফোন এলো, ঘুম ভাঙা চোখে নিতু তুহিনের ফোন দেখে বিছানায় বসেই রিসিভ করল।
উঠে গেল না।

নিতু, অন্ধকার কেন!

কারন আমি শুয়ে পড়েছি।

লাইট অন করো, তোমাকে দেখি। কতক্ষণ দেখি নি তোমাকে।

নিতু বলল, আমার ঘুম পাচ্ছে তুহিন৷ পরে কথা হবে।

নিতু, তুমি তো জানো এই সময় ছাড়া আমি সময় পাই না। তুমি জেগে থাকবে না! আশ্চর্য!

নিতু বলল, এখন না। পরে! বলে ফোন কেটে দিলো।

পাশে বসে রেহান সবই শুনলো। একটা স্বার্থপর ভালোলাগায় মন ভরে উঠল! কিন্তু কেন! নিতু তো তুহিনের কাছেই ফিরবে!

একটু পরে তুহিন আবার ফোন করল।

নিতু, আমি বলছি, তুমি আমার সাথে এখন কথা বলবে। ওঠো, উঠে গিয়ে লাইট অন করো।

মানে কি, বললাম না, আমি ঘুমাচ্ছি!

নিশ্চয়ই স্বামীকে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছ তাই না! জানি তো, এখন আর আমাকে প্রয়োজন নেই৷

তুহিন, ভদ্র ভাবে কথা বলা শিখে, তারপরে ফোন করবে। তার আগে নয়। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি মানে এটা নয় যে, তুমি আমাকে অপমান করবে। এবিউসিভ রিলেশন আমি সব সময় হেট করি। ইদানিং তুমি সেটাই করছ। আমি একবছরের জন্য বিয়ে করেছি। সময় শেষ হলে নিজের ব্যবস্থা নিজে করে নিব। তুমি চাইলেও নিজেকে যদি না বদলাও, আমি তোমার কাছে ফিরব না।

নিতু উত্তরের অপেক্ষা না করে ফোন কেটে দিলো।

কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। রেহান একটু পরে বলল, বসে থাকলে কি মাথা ঠান্ডা হবে! শুয়ে পড়ো।

নিতুর অস্থির লাগছে। কিছুই ভালো লাগছে না।

রেহান উঠে বসল৷

কাছে এসো, মাথায় হাত বুলিয়ে দিই!

নিতু বলল, রেহান, আপনি বারবার আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছেন, আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। শুয়ে পড়ুন।

নিতু অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পড়ল।

রেহানের মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল। তুহিনের উপরে রাগ নিতু তাকে দেখালো। বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো রেহান।

দুটো টান দিতেই নিতু দরজায় দাঁড়িয়ে বলল, সরি, ভেতরে আসুন।

তুমি যাও, আমি আসছি।

নিতু বারান্দায় গিয়ে রেহানের হাত থেকে সিগারেট নিয়ে গাছের টবে চেপে নিভিয়ে দিলো। এটা রেহানের খুবই অপছন্দের কাজ, কিন্তু নিতুর উপরে রাগ করতে পারছে না একদমই৷

চলুন।

রেহান হঠাৎ বারান্দায় অন্ধকারে নিতুকে বুকে টেনে নিলো।
ওর ঠোঁটে চুমু খেলো। অদ্ভুতভাবে নিতু বাঁধা দিলো না। ঠিক যেন ওর মন ও মস্তিষ্ক এটাই চাইছিল।

ঠিক কতটা সময় কেটে গেল দুজনের কেউই টের পেলো না। নিতু রেহানের আলিঙ্গন থেকে সরে গেল না।

রেহান নিতুকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। তারপর বেডসাইড সুইচটা অফ করে দিয়ে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলল, ঘুমাও।

নিতু রেহানকে সরতে দিলো না। ওকে আকড়ে ধরেই থাকল। কিছুক্ষণ পরে রেহান নিজের উষ্ণতায় নিতুকে ভাসিয়ে নিলো! পারস্পরিক বোঝাপড়ার এই সম্পর্কে কারোই মনে কোনো দ্বিধা তৈরি হলো না।

চলবে

শানজানা আলম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here