-নিতু, অপেক্ষা করতে পারবে না আর একটা বছর? তুহিনের কথা হোয়াটসঅ্যাপে ভেঙে ভেঙে আসে। নিতু যেন বুঝতে পারে না তুহিন কী বলতে চাইছে বুকের ভেতর কেমন একটা উথাল পাঠাল করে ওঠে। একটা বছর! তুহিন বুঝতে পারছে না আব্বা হার্টঅ্যাটাক করার পর থেকে নিতুর বিয়ে নিয়ে কেমন অস্থির হয়ে গেছেন।
সেই অনার্সের শুরু থেকে সম্পর্ক তুহিনের সাথে। কিন্তু
তুহিনের পক্ষে এই মুহুর্তে বিয়ে করা সম্ভব নয়। পরিবারকে ম্যানেজ করে স্টুডেন্ট ভিসায় ইউকে গিয়েছে বছর পার হয় নি! আরো এক বছর পরে আসবে বলছে, সেটাও অনিশ্চিত মনে হয় নিতুর! তবে তুহিন বলেছে যখন, নিশ্চয়ই আসবে!
নিতু অনিশ্চিত এই অপেক্ষায় থেকে লাইনটা কেটে দেয়!
পাঁচ বছরের সম্পর্ক, তুহিন এনগেজমেন্ট করে গেলেও হতো। তখন নানা ঝামেলায় নিতু প্রেশার দিতে চায় নি।
নিতুর ভাবী সিমি বিষয়টা জানতো, সে বারবার বলেছিল, নিতু এভাবে ছেড়ে দিও না৷ মন ঘুরতে সময় লাগে না৷ আকদ হয়ে থাক! কিন্তু নিতু আসলে তুহিনের এত ঝামেলার মধ্যে বিয়ের প্রেশার দিতে চায় নি।
নিতু, নিতু- বলে ভাবী ডাকছেন।
নিতু উঠে গিয়ে দাঁড়ালো। ভাবী কথা বলছেন আব্বার সাথে। নাকে নল জড়ানো আব্বাকে দেখলে নিতুর কেমন একটা লাগে! না পারতে এ ঘরে আসতে চায় না নিতু।
নিতু, রেহানকে মনে আছে তোমার? আমাদের বিয়েতে এসেছিল, আমার কাজিন!- ভাবী এক নাগারে বলে যায়।
-না, মনে নেই৷ সংক্ষেপ করে নিতু।
-আচ্ছা মনে থাকার কথাও না৷ তখন তো তেমন কেউ পরিচিত ছিলও না৷ একবারই হয়তো দেখেছ, ও অবশ্য গান গেয়েছিল হলুদে, মনে থাকার কথা।
-হুম।
-রেহানের জন্য মেয়ে খুজছিল খালামনি। আমার মায়ের খালাতো বোন হয় উনি।
-আচ্ছা।
-আমি তোমার কথা বলেছি খালামণিকে, মানে রেহানকে।
নিতু বুঝতে পারছে কি বলতে চাইছে ভাবী।
-আমি বলি কি, তুমি একটু দেখা করো। তারপর নাহয় সিদ্ধান্ত নিও!
নিতু বাবার সামনে সরাসরি “না” বলতে পারে না।
ভাবী হাত টেনে নিয়ে যায় নিতুকে।
নিতু শোনো, তোমার কথা আমি জানি। তোমার ভাইয়া বলেছে, তোমার তো কমপক্ষে এক দেড় বছর সময় লাগবে। আর রেহানেরও একটা ইস্যু আছে।
নিতু অবাক হয়ে বলল, কি ইস্যু?
ওর গার্লফ্রেন্ডকে ওর মা মানতে চাইছে না। রেহানকে জোর করছে বিয়ে করার জন্য। তাই ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মায়ের পছন্দে বিয়ে করে বছরখানেক পরে ডিভোর্স নিয়ে নিবে!মাকে বোঝাবে সায়রা ছাড়া কেউ ওকে সুখী করতে পারবে না।
-তুমি কীভাবে জানলে ভাবী!
-রেহানই বলেছে।
-এমন কি সত্যি হয়! ওর গার্লফ্রেন্ড কেন অপেক্ষা করবে, এটা মেনে নিবে?
-সেটা ওর ইস্যু! তুমি ভেবে দেখো! এর চাইতে ভালো সমাধান আর হয় না তোমার জন্য!
নিতু আকাশ-পাতাল ভাবনায় পড়ে যায়! এটা কী নাটক সিনেমা! জীবন কী এমন হয়! পরিস্থিতি সামাল দিতে এটা বেশ ভালো সমাধান কিন্তু তুহিন কি রাজী হবে! যদি রাজী না হয়! তাহলে কি হবে!
কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো, তুহিন সহজেই রাজী হয়ে গেল।
নিতু, আমি জানি কোন পরিস্থিতিতে তুমি এটা বলছ। আমি এত দূরে, চাইলেই তোমার পাশে দাঁড়াতে পারব না৷ তুমি একটু ম্যানেজ করো। আমি ফিরেই সব ঠিকঠাক করে নেব। আর আমাদের যোগাযোগ একদম বন্ধ হবে না।
এক অদ্ভুত শর্তে রেহান আর নিতুর বিয়ে হয়ে গেল খুবই অনাড়ম্বর ভাবে।
চলবে
শানজানা আলম
কেন আমি ডাকি তারে-১