কেউ কথা রাখেনি ২

0
462

গল্পঃ কেউ কথা রাখে নি
পর্বঃ ০২
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)

আরাফ কসমেটিকসের দোকান দেওয়ার পর
থেকেই লাভের মুখ দেখতে থাকে। মোটামুটি আমাদের ব্যবসা ভালোই চলতে থাকে। আমিও গোপনে আমার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকি। আমার পড়াশোনার কথা শুধুমাত্র আরাফ
জানতো। রাতে আমি পড়তে বসতাম। যাতে কেউ টের না পায়।
বাড়ির সকলে জানলে আমাকে আর আস্ত রাখবে না। তবে সারাদিন সংসারের কাজ করে রাতে
পড়তে বসাটা অনেক কঠিন। ক্লান্তিতে ঘুম চলে আসে, ঘুম বাদ দিয়ে পড়ায় মন দেই। সত্যিকথা বলতে বিয়ের আগে পড়াশোনার জন্য এতো খাটুনি করি নি, এখন যতটা করছি।
মা একটা কথা প্রায়ই বলতো,
“সুযোগ থাকতে মানুষ কাজে লাগায় না, কিন্তু সুযোগ যখন থাকে না তখন মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করে।”

মায়ের কথাটা আজ মনে পড়ছে খুব। আমার অবস্থাও ঠিক এমনই হয়েছে।
.
কিন্তু এই গোপনে পড়াশোনা বেশিদিন চালাতে
পারি নি। একদিন গভীর রাতে পড়তে পড়তে
ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। বই-খাতা গোছাতে ভুলে গিয়েছিলাম। পরদিন সকালে উঠে ঘরের সব
কাজ করতে গিয়ে বই লুকানোর কথা ভুলে
যাই, ছোট ননদ তুলি দেখে ফেলে আমার বই-খাতাগুলো; দেখতে দেরী শ্বাশুড়ি মায়ের
কাছে কথা লাগাতে দেরী হয় না। আম্মা তো
আমার পড়ার খবর শুনে রেগে আগুন! যেখানে
তার ছেলে ম্যাট্রিক ফেল, সেখানে বউয়ের পড়াশোনা করা তো মারাত্মক অপরাধ। কোথায় গেল তার “মা” ডাক, আর কোথায় তার সুমধুর কথা! ইচ্ছেমত খারাপ খারাপ ভাষায় গালি-গালাজ করল আমাকে আর বই-খাতাগুলো চোখের সামনে আগুন ধরিয়ে দিল। বইগুলো পুড়তে দেখেও সাহস হলো না কিছু বলার। আমি কিছুই বললাম না, চুপচাপ চোখের জল ফেলতে লাগলাম।।
.
সন্ধ্যায় আরাফ বাড়ি এসে দেখে মিথিলার চোখ-মুখ ফোলা। আরাফ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারল হয়ত ওর মা মিথিলাকে বকেছে। মিথিলাকে জিজ্ঞেস করে,

— কি হয়েছে তোমার? চোখ-মুখ ফোলা কেনো? মা বকেছে?

–হুম, আমার বই-খাতাগুলো আম্মা পুড়িয়ে ফেলেছে।
বলে মিথিলা আবার কেঁদে দিল। আরাফ মিথিলার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,

–থাক মিথি, কেঁদো না। আমি তোমার বই-খাতা জোগাড় করে দিব। আমার এক বন্ধুর বোন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ওর বই,গাইড এনে দিব। তবে একটা শর্ত আছে।

–কি শর্ত?

— তুমি যত পড়তে চাও আমি পড়াব সেটা কেউ টের পাবে না। কিন্তু কথা দিতে হবে পড়াশোনা কমপ্লিট করার পর আমার সাথে বেইমানি করতে পারবা না। আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না।

–তুমি আমাকে নিয়ে এতো ভয় করছো আরাফ। আমি কি ছেড়ে যাওয়ার জন্য তোমার কাছে এসেছি?

আরাফ কিছুটা থতমত খেয়ে বলল,
–আরে না, আমি সেটা বলতে চাই নি। আমি জানি তুমি অনেক ভালো মেয়ে। কিন্তু একটা কথা কি জানো? প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে অনেকেই তার অতীতের ঘটনা মনে করে না। তখন নিজের চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করে। আমার এক চাচা দুইবছর প্রেমের করে বিয়ে করে। তার ওয়াইফ মানে আমার কাকি তখন ইন্টার সেকেন্ড পড়তো। কাকিকে সব রকমের সাপোর্ট দিয়ে মাস্টার্স পাশ করায়। এরপর কাকি চাকরি করার ইচ্ছা পোষণ করে। চাচা চাকরি করতেও অনুমতি দেয়। কাকি পরে হাইস্কুলে চাকরি পায়। পাওয়ার পরে কি হয়েছে জানো?

— না,জানি না আর জানতেও চাই না। কখনোই তোমায় ছেড়ে যাব না আরাফ। ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি তোমায়। তোমার জন্যই আমি আমার পরিবারকে ছেড়ে এসেছি। তুমি আমাকে সারাজীবন আগলে রেখো, এভাবেই ভালোবেসো।

–তা তো অবশ্যই প্রিয়তমা..
বলে আরাফ মিথির হাতে একটা চুমো দেয়।
.
.
সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার মধ্যে দিয়েই কেটে গেছে প্রায় আটমাস। আমি ক্লাস নাইন থেকে টেনে উঠেছি।
আমার পড়াশোনা চালিয়ে নিতে প্রচুর সাপোর্ট করেছে আরাফ। নাইনের বার্ষিক পরীক্ষার সময় আম্মাকে মেনেজ করে আমাদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে আরাফ। যাতে আমাদের বাড়িতে গিয়ে ভালোমত পরীক্ষা দিতে পারি। পরীক্ষার শুরু হওয়ার আগে আমাকে বাড়ির গেট থেকে নিয়ে যেত আবার পরীক্ষা শেষ হলে আমাকে আমাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতো। তবে কোনোদিন আমাদের বাড়িতে ঢুকত না।
সামনে এসএসসি পরীক্ষার টেস্ট পরীক্ষা। শ্বশুরবাড়িতেই লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ি। কিন্তু হঠাৎ একদিন জানতে পারি আমি মা হতে চলেছি।
একদিকে আমার পড়াশোনা করে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করা, অন্যদিকে আমার গর্ভে একজন বেড়ে উঠছে।
বয়সটাও আমার কম, যার কারনে সবকিছু হ্যান্ডেল করতে পারি না।

তাহলে কি আমি আমার পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে সংসারে মন দিব?

#চলবে?
#কেউ_কথা_রাখে_নি
#নিঝুম_জামান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here