কৃষ্ণময়ীর অলংকার পর্ব ২২

0
898

#কৃষ্ণময়ীর_অলংকার
#রাহনুমা_রাহা
#পর্বঃ২২

রাস্তার উল্টো পাশে রিকশা দাঁড়ানো দেখে তপা সামনের মানুষটিকে উপেক্ষা করেই এগিয়ে যেতে চাইল রিকশার কাছে। পলক তখনও আসে নি। তপা ব্যস্ত হয়ে কয়েক কদম ফেলতেই পেছন থেকে তার বাবা আজমল হোসেন ডেকে উঠলেন।
“তপা দাঁড়া মা।”
তপা দাঁড়ালো। একজন মানুষ এভাবে ডাকলে উপেক্ষা করা যায় না। যতই হোক সে অপছন্দের মানুষ বা দূরের মানুষ। এ তো স্বয়ং জন্মদাতা। দাঁড়ালেও পেছনে ফিরল না তপা। উল্টো হয়েই রইল।
আজমল হোসেন এগিয়ে এসে তপার সামনে দাঁড়ালো। বলল,
“ভাল আছিস মা?”
তপা তাচ্ছিল্য হেসে বিরবির করে বলল, “মা! হাস্যকর। বড়ই হাস্যকর।”
পরক্ষণেই কঠিন গলায় বলল,
“খারাপ থাকার কথা ছিল কি?”
আজমল হোসেন এ ব্যাপারে কিছু বললেন না আর। কথা ঘুরিয়ে বললেন,
“তোর মা অসুস্থ। ”
তপা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“মৃত মানুষ অসুস্থ হয় কি করে?”
“তোর নতুন মা।”
তপা খানিকটা উঁচু স্বরে বলল,
“খবরদার। ওই মহিলাকে মোটেই আমার মা বলে সম্মোধন করবেন না। সে কেবল আপনার স্ত্রী। আমার মা বহু আগেই আমাকে ছেড়ে, এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে।”
আজমল হোসেন চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
তপা পুনরায় বলল,
“আপনার স্ত্রী অসুস্থ তা শোনাতে আপনি নিশ্চয়ই এখানে আসেন নি। কেন এসেছেন সেটা বলে আমার রাস্তা ছাড়ুন।”
আজমল হোসেন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
“এ কি ভাষায় কথা বলছিস তুই আমার সাথে? আমি তোর বাবা।”
তপা তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“ভাগ্যিস মনে করালেন। আমার তো মনেই ছিল না।”
আজমল হোসেন রেগে গেলেও মুখ দেখে তা বোঝা গেল না। মৃদু আওয়াজে বললেন,
“বাড়ি চল। অনেক বাইরে বাইরে থাকা হয়েছে। আমার তো একটা কর্তব্য আছে। মেয়ে বড় হয়েছে। বিয়ে দিতে হবে। আমি তোর বিয়ে ঠিক করেছি।”
তপা যেন আকাশ থেকে পড়ল। কিঞ্চিৎ সময় পরেই শরীর কাঁপিয়ে হেসে উঠল।
মুখে হাসি নিয়েই বলল,
“আপনার কেন মনে হলো আপনি বলবেন আর আমি সুরসুর করে আপনার সাথে চলে যাব?”
আজমল হোসেন দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
“কারণ আমি তোর বাবা।”
তপা শক্ত গলায় বলল,
“সেটাই সবচেয়ে বড় দূর্ভাগ্য আমার। আমার ক্ষমতা থাকলে আপনার দেওয়া জীবন আমি বের করে দিতাম। আপনার যতটুকু রক্ত আমার শরীরে বইছে সবটুকু গুনে গুনে ফোটায় ফোটায় হিসেব করে বের করে দিতাম। কিন্তু আফসোস সেটা করতে গেলে আমার মায়ের অস্তিত্ব টুকুও বিলীন হয়ে যাবে। আমার ঘেন্না করে নিজের শরীরের রক্তের উপর। শুধুমাত্র তা আপনার থেকে পাওয়া বলে। তারপরও মনে হচ্ছে আপনার সাথে যাব আমি?”

তপার বলা কথাগুলো না শুনতে পেলেও পলক এসে তপার রাগান্বিত মুখশ্রী দেখতে পেল। অতিরিক্ত রাগের দরুন তপা কেঁপে কেঁপে উঠছে। পলক দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে তপার দুবাহু ধরে আগলে নিল। মুখ ঘুরিয়ে গালে হাত রেখে বলল,
“কি হয়েছে? শান্ত হও।”
তপা কিছু বলতে চাইলেও কথা জড়িয়ে গেল। মূলত পলক কে দেখে রাগের সাথে সাথে অদ্ভুত একটা অনূভুতি হচ্ছে তার। চাইতেও স্পষ্ট কিছু বলতে পারল না।
পলক মৃদু স্বরে বলল,
“আগে শান্ত হও। পরে শুনছি।”
পলক তপাকে রেখে পাশের দোকান থেকে পানি এনে দিল। তপা একটুখানি গলাধঃকরণ করে নিজেকে শান্ত করল।
পলক তপার গালে হাত রেখে বলল,
“এখন বলো কি হয়েছে?”
এতক্ষণ নীরবে সবটা পর্যবেক্ষণ করলেও এখন হুংকার ছাড়ল আজমল হোসেন। তপার কথাগুলো হজম করতে কিছুটা সময় লাগলো তার। তার আগেই কোত্থেকে পলক এসে ঝড়ের গতিতে এতকিছু করে ফেলল যে তিনি কথাই বলতে পারলেন না।
আজমল হোসেন শক্ত গলায় বললেন,
“আমার মেয়েকে ছোঁয়ার সাহস কি করে পাচ্ছো তুমি ছেলে?”
পলক চমকাল। মূহুর্তেই বুঝে গেল ইনি তপার বাবা। তার শ্বশুরমশাই। পলক কিছু বলার আগেই তপা মুচকি হাসল। পলক তপার দিকে তাকাল। তপা কে হাসতে দেখে আর কিছু বলল না। যা বলার সেই বলুক এটা ভেবে চুপ রইল।
তপা পলকের হাতে নিজের হাত রেখে বলল,
“আমার মা মারা যায় তখন আমার কত বছর আপনি জানেন?”
আজমল হোসেন কিছু বললেন না। তিনি হিসেব করতে ব্যস্ত। তপা তাচ্ছিল্য হাসল।
মলিন কণ্ঠে বলল,
” নয় বা দশ। মামার কাছে চলে গেছি সেই বয়সেই। কিন্তু সেদিনের পর আপনি খোঁজ নিয়েছিলেন আমার একবারও? মার খেয়ে রক্তাক্ত হয়ে বের হয়ে যাওয়ার পর আদৌ আমি বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি তার খেয়াল ছিল আপনার? ছিল না। আপনি তখন আপনার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে ব্যস্ত। ব্যস্ত নতুন সংসারে। কই আমি তো অভিযোগ করি নি কখনো। আপনার সংসারের এক কোণে আমি থাকতে চেয়েছিলাম। কারণ সেখানে আমার মায়ের ছোঁয়া ছিল। আমার মায়ের সাজানো সংসারে অন্য এক মহিলাকে দিব্যি জায়গা দিয়ে দিলেন। অথচ আমার জায়গা রান্নাঘরের কোণায়ও হলো না। মামার সাথে চলে যাওয়ার পরও আপনি একবার গিয়ে বলেন নি আপনার সাথে ফিরে আসতে। বলবেন কেন? আপনার নতুন সংসারে আমি ছিলাম উটকো ঝামেলা মাত্র। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত আমি ভয়ে সিটিয়ে থেকেছি।খারাপ ছোঁয়া সইতে না পেরে হাজার বার বাবা বাবা বলে চেঁচিয়েছি, কেঁদেছি । তখন কোথায় ছিলেন আপনি? কোথায় ছিল আপনার কর্তব্য? যখন ছোট্ট শরীরটা একটা নিরাপদ জায়গার অভাবে প্রতিরাতে ধুঁকে ধুঁকে মরছিল, তখন কোথায় ছিল আপনার কর্তব্য? বড় হয়েও যখন হায়েনার দৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারিনি। গুমরে গুমরে কেঁদেছি তখন কোথায় ছিলেন আপনি? কোথায় ছিল আপনার দায়িত্ব? আপনার স্ত্রীর আঁচলের তলায়? এখন আপনি কর্তব্য দেখাতে এসেছেন? বিয়ে দিতে এসেছেন? আমার স্বামীর ছোঁয়া নিয়ে আপনি প্রশ্ন তুলছেন? লজ্জা করছে না একবারও? আয়নায় নিজেকে দেখে ঘেন্না লাগে না আপনার? আমার ইচ্ছে করে জায়নামাজে বসে দু’হাত তুলে আল্লাহ কে বলি আপনার মত মানুষ কে যেন তিনি বাবা হওয়ার সুখ থেকে বঞ্চিত করে। কিন্তু করতে পারি না। কারণ কি জানেন? আমার শরীরে আপনার পঁচা রক্তের সাথে আমার মায়ের শুদ্ধতম রক্তও বইছে। আপনি যাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। যার ছোঁয়ার সাহস নিয়ে কথা বলছেন সে আমার স্বামী। আমার জীবনের একচ্ছত্র অধিকারী। বুঝতে পেরেছেন? নাকি আরও বুঝিয়ে বলতে হবে?”
আজমল হোসেন কিছুক্ষণ থম মেরে রইলেন।
পলক অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার কৃষ্ণময়ী এভাবে কথা বলতে পারে জানা ছিল না তার।

“অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে হয় না তপা।” গম্ভীর গলায় এহেন কথা শুনে তপা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বলল,
“কে অভিভাবক? আপনি? লজ্জা করছে না বলতে? যে সত্যিকারের অভিভাবক সে অনুমতি দিয়েছে। তার নামে আমার মা ডাকটা দুইবার উচ্চারিত হয়। সে আমার মামা। মামা ডাকতে যে দুইবার মা উচ্চারণ করতে হয় সেটা ঐ লোকটার কাছেই বুঝতে পেরেছি আমি। তাই অভিভাবক হওয়ার অধিকার একমাত্র তার। আপনি জন্মদাতা হয়েও যা পারেন নি তা তিনি মামা হয়েই করেছেন। তাই অভিভাবক হওয়াটা তারই সাজে।”

আজমল হোসেন কিছুক্ষণ নীরবে ভাবলেন। নরম গলায় বললেন,
“তুই একে ডিভোর্স দিয়ে দে। আমি যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছি তাকে বিয়ে কর। সারাজীবন আমার কাছে থাকতে পারবি।”
পলক রক্তচক্ষু করে তাকাল।
তপা চেঁচিয়ে উঠলো। বলল,
“খবরদার মিস্টার আজমল হোসেন। যা উচ্চারণ করেছেন তা শব্দ পর্যন্তই থাক। চাওয়াগুলো নিজের ভেতরেই কবর দিয়ে দিন।”
আজমল হোসেন পলকের দিকে একনজর তাকাল। পরক্ষণেই তপার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই ছেলেটা তোকে ভাল রাখতে পারবে না।”
তপা হাসল। তাচ্ছিল্যের হাসি। হাসতে হাসতেই বলল,
“তো কে রাখতে পারবে? আপনার পছন্দ করা ছেলে? তা কে সে?”
আজমল হোসেন যেন একটু সাহস পেলেন। দ্রুত বললেন,
“তোর নতুন মায়ের ভাইয়ের ছেলে। আমাদের সাথেই থাকে।”
“বাহ! নিজের ঔরসজাত সন্তানের আশ্রয় হতে পারলেন না। অন্যের সন্তানের দায়িত্ব ঠিকই নিতে পারছেন। আপনাকে তো বাঁধিয়ে রাখার মত পিতা মনে হচ্ছে। ইচ্ছে করছে বাঁধিয়ে রাখতে। আফসোস আমার সেই ক্ষমতা নেই।”
আজমল হোসেন তাড়া দিয়ে বললেন,
“করবি বিয়ে? দিবি একে ডিভোর্স?”
তপা পলকের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
” আপনার বউয়ের বিয়ের সম্মন্ধ এসছে। আপনি কিছু বলুন মিস্টার তাজওয়ার।”
পলক নীরবে হাসল। কিছু বলল না। কেবল দেখতে থাকল একের পর এক ঘটনা। শ্রবণ করতে থাকল বিষাক্ত উক্তিগুলো।

“তা কোন স্বার্থ লুকিয়ে আছে এই বিয়ে ঠিক করার পেছনে? আর কে বলেছে আমি আপনার কাছে থাকতে চাই? আমি তো আপনার মুখও দর্শন করতে চাই না। নিজের উপর ঘেন্না হয় আমার। পিতার জায়গায় আপনার নামটা বসাতে আমার চরম লজ্জা হয়। মন চায় খাতা ছিড়েখুঁড়ে, কলম ভেঙেচুরে চলে যাই। যেখানে কেউ জানতে চাইবে না কোন বিশ্বাসঘাতকের রক্ত বইছে আমার শরীরে।”
আজমল হোসেন অবাক চোখে তাকাল। একক্ষণ শান্ত কণ্ঠে কথা বললেও এখন দ্রুত তপার কণ্ঠের স্বর পরিবর্তন হচ্ছে। তীব্র হচ্ছে কণ্ঠনালীর ঝাঁঝ।
পলক বাবা মেয়ের মাঝে কথা বলতে চাইছে না। কিন্তু এখন আর উপায় না পেয়ে তপার দুবাহুতে হাত রেখে বলল,
“অনেক কথা হয়ে গেছে। আর নয়। চলো বাসায় যাবে।”

আজমল হোসেনের দিকে ফিরে মৃদু হেসে ঠান্ডা গলায় বলল,
“শ্বশুর মশাই চাইলে সুস্থ সবল মন নিয়ে একদিন মেয়ের সামনে আসবেন। প্রয়োজনে আমি নিয়ে আসব আমার বাড়িতে। মন ভরে দোয়া করে যাবেন। কিন্তু ভুলেও ডিভোর্স নিয়ে আর মাথা খাটাবেন না। আমি কিন্তু মোটেও ভালো মানুষ নই। বিশ্বাস না হলে মেয়েকে জিজ্ঞেস করে নিবেন। আসছি। ভালো থাকুন।”

পলক যেতে চাইলেও তপা ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। আজমল হোসেন তখনো অবাক চোখে পলকের দিকে তাকিয়ে। শান্ত গলায় কি সুন্দর শাসিয়ে গেল ছেলেটা। হজম করতে সময় লাগছে।
পলকের দিকে তাকিয়ে তপা মৃদু স্বরে বলল,
“আপনি বাইকের কাছে যান আমি দু’মিনিটে আসছি।”
পলক মাথা নেড়ে চলে গেল।
তপা শান্ত কণ্ঠে বলল,
“আমি জানিনা আমার মা কি করে মারা গেল। এত দুঃখের মাঝেও যে মানুষটা প্রাণ খুলে হাসতে পারতো সে কখনো হার্ট অ্যাটাকে এত দ্রুত মারা যেতে পারে না। আমি জানিনা আপনিই দায়ী কিনা আমার মা হারানোর জন্য। সরাসরি দায়ী না হলেও আপনিই দায়ী আমার কাছে। আপনার জন্যই আজ আমি এতিম। আমি চাইব আপনি আর কখনো আমার সামনে না আসুন। আমি কখনো জানতে চাইনি আপনার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান, আপনার ঔরসজাত সন্তান আমার থেকে বয়সে বড় কি করে হলো। কখনো জানতে চাইনি দিনের পর দিন কি নিয়ে আপনার আমার মায়ের সাথে ঝগড়া হতো। কখনো জানতে চাইনি কেন কারণে অকারণে আমার মায়ের গায়ে হাত তুলতেন আপনি। এটাও জানতে চাইনি কেন আমার মা তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী কে সহ্য করতে পারতো না। সে কি আগেই বুঝতে পেরেছিল তার মৃত্যুর মাস যেতে না যেতেই আপনি তার বান্ধবীকে বিয়ে করে নিয়ে আসবেন। দিয়ে দিবেন তার সাজানো সংসার। নাকি বিয়ের পাঠটা আগেই চুকিয়ে নিয়ে ছিলেন মিস্টার আজমল হোসেন? না আমি কোনো কৈফিয়ত চাই না। চাওয়ার দরকারও নেই। আর না আছে এসব শোনার চাহিদা। শুধু এতটুকু জেনে রাখুন। আমার মায়ের সাথে সাথে আমার বাবাটাও মরে গেছে। আমার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে একজন বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক। সে আমার বাবা নয়, হতে পারে না। তাই দয়া করে আমার সামনে এসে ভাল মানুষ সাজার নাটকটা করবেন না। বাবা হওয়ারও চেষ্টা করবেন না। আজ থেকে আমি মনে প্রাণে চাইব আপনার মত মানুষ কে যেন আল্লাহ বাবা হওয়ার সুখ থেকে বঞ্চিত করেন। সারাজীবন হাহাকার করায় একটা বার বাবা ডাক শোনার জন্য।”

তাজমহল পেরিয়ে উপরে যাওয়ার সিঁড়িতে পা বাড়াতেই পলক মৃদু স্বরে ডাকল,
“তিয়াশা।”
তপা পেছন ফিরল। পলকের সামনে গিয়ে বলল,
“বলুন।”
পলক আমতা আমতা করল। কিঞ্চিৎ সময় পর নিচু গলায় বলল,
“আজ এখানে থেকে যাবে?”
তপা মৃদু হেসে বলল,
“তাজমহলে?”
পলক মাথা নাড়াল।
“ফ্রেশ হয়ে আসি?”
পলক আবার মাথা নাড়াল। তবে এবার সম্মতি জানাতে নয়। বরং অসম্মতি জানিয়েছে সে।
তপা হাসল। বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে। জামা কাপড় নিয়ে আসি? তাছাড়া আরও প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আনতে হবে। আপনার মেইল কসমেটিকস তো আমি ব্যবহার করতে পারব না। যাব?”
পলক সম্মতি সূচক চাহনিতে তাকা। তপাও গটগট করে হেঁটে চলে গেল চিলেকোঠায়।

মিনিট পাঁচেক পর তপা হাতে দুটো শপিং ব্যাগ নিয়ে তাজমহলে প্রবেশ করল। ভাঙা পা নিয়ে যে রুমে থেকেছিল সে রুমের বিছানার উপর ব্যাগগুলো রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখল টেবিলে দুকাপ রঙচা। তপা মুচকি হাসল। ফুপিয়ে কান্নার দরুন মাথাটা ভার ভার লাগছে তার। চা টা ভীষণ দরকার ছিল। মনে মনে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চুমুক দিল চায়ের কাপে। ভাললাগায় চোখ বন্ধ করে ফেলল।
পলক এসে কাপ নিয়ে বিছানায় বসে বলল,
“তিয়াশা ঠিক আছ?”
তপা মৃদুস্বরে বলল,
“ঠিক না থাকার কথা ছিল?”
পলক কিছু বলল না। পরপর চুমুক দিল কাপে।
তপা পুনরায় বলল,
“এসব আমার গা সওয়া হয়ে গেছে। আর ভেঙে পড়ি না।”
পলক মৃদু স্বরে বলল,
“তবে কেঁদেছো কেন?”
তপা চোখের কোণে জল নিয়ে বলল,
“চোখ যে বাঁধা মানে না। কথা শোনে না। শুধু শুধু জল গড়িয়ে পরে। মিস্টার তাজওয়ার একটা কথা দেবেন আমায়?”
পলক ভ্রু কুঁচকে তাকাল। বলল,
“কি?”
তপা মৃদু হেসে বলল,
“আপনি ভাল বাবা হবেন। পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল বাবা। আমি মরে গেলেও।”
পলক করুণ গলায় বলল,
“আমি পাগল হয়ে যাব।”

তপা রান্নাঘরে টুংটাং আওয়াজ তুলে রান্না করতে ব্যস্ত। পেছন থেকে পলক একটা কাগজ এগিয়ে দিল। তপা আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
“কি?”
“নিজেই খুলে দেখো।”
তপা কাগজটা হাতে নিল। ভাজ খুলে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইল।
পলক আওয়াজ তুলে বলল,
“ক্যান আই কিস ইউ?”
তপার মনে পড়ে গেল প্রথম দিনের কিছু কথা। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল দুষ্টু হাসি। পলকের দিকে ফিরে দুষ্টু হেসে বলল,
“কোন ইয়ার?”
পলক মাথা চুলকে হাসল। বলল,
“ফার্স্ট ইয়ার। সবে এক সপ্তাহ আগে বিয়ে করেছি।”
তপা শব্দ করে হাসতে চেয়েও গিলে ফেলল হাসিটুকু। গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,
“কোথায় কিস করতে চান? গালে? নাকি ঠোঁটে?” বলেই ঠোঁট পাউট করে দেখাল।
পলক ঠোঁট কামড়ে হাসল। তপার হৃদয় কাঁপিয়ে দিতে নিচু হয়ে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“আপাদমস্তক।”

তপা চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলল। কাঁপতে লাগল সর্বাঙ্গ। দ্রুত পেছন ফিরে রান্নায় মনোযোগী হতে চেষ্টা করল। কাঁপা হাতে খুন্তি নাড়িয়ে যাচ্ছে অনবরত। পলক সেদিকে তাকিয়ে নীরবে হাসল। মেয়েটা এতটাই লজ্জা পেয়েছে যে বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। খালি কড়াইয়ে খুন্তি নাড়ছে।
তপা কে আরও একটু অপ্রস্তুত করতে পলক এগিয়ে গেল। গা ছুঁই ছুঁই করে দাঁড়াল। কানের কাছে ফু দিল। তপার গোটা শরীর কেঁপে উঠল। হাতদুটো মুঠো করে ধরল। পলক আরও একটু এগিয়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল কানের লতিতে। তপা বোধহয় ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। সরলো না পলক। পরপর ছুঁয়ে দিল কয়েকবার।
তপা অস্ফুটে কিছু বলতে চাইল। সেদিকে নজর দেওয়ার আগেই চোখ আঁটকে গেল তপার কানের খানিকটা নিচে। শ্যামবরণ ঘাড়ের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে খুচরো চুল। ফু দিয়ে সেগুলো সরিয়ে দিল। তপা আরও শক্ত হয়ে দাঁড়াল। কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগল বারবার। পলকের হয়তো মাথায় নেশা চড়ে গেছে। মুখ এগিয়ে নিয়ে ছোট ছোট করে চুমু একে দিল। পেটের উপর নিজের পুরুষালী শক্ত হাত চেপে টেনে মিশিয়ে নিল নিজের সাথে। তপা পলকের হাতের উপর হাত রেখে চেপে ধরল। পলক পুনরায় ঠোঁট ছোঁয়াতেই দৃঢ় করল হাতের বাঁধন। নখ বসে গেল ফর্সা হাতে। পলকের সেদিকে খেয়াল নেই। সে ব্যস্ত নিজের কর্মে। ছোট ছোট চুমু কিছুক্ষণেই পরিবর্তন হলো গভীর মাদকতায়। স্পর্শ গভীর থেকে গভীরতম হতেই তপা পেছন ফিরে ঝাপটে জড়িয়ে ধরল মানুষটাকে। মুখ লুকিয়ে ফেলল তার চওড়া বুকের গভীরে । আচমকা এমন হওয়ায় পলকের নেশা ছুটে গেল। ঘোর থেকে টেনে বের করে আনল নিজেকে। পরক্ষণেই তপার পিঠের উপর দৃঢ় করল নিজের দু’হাতের বাঁধন।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here