কালো হরিণ চোখ (পর্ব ২)

0
115

#কালো_হরিণ_চোখ (পর্ব ২)
নুসরাত জাহান লিজা

প্রিয়ম সেই অদ্ভুত সুন্দর চোখের মেয়েটার একটা ছবিও তুলেছিল দূর থেকে। অনুমতি ছাড়াই লুকিয়ে এই গর্হিত কাজ সে করেছিল আশ্চর্য মোহাচ্ছন্ন হয়ে। তার শাস্তিস্বরূপ সে পরে খেয়াল করেছে অতিরিক্ত উত্তেজনায় ক্যামেরার মুখের ক্যাপটাই সরানো হয়নি। তাই ছবিও ওঠেনি। যখন খেয়াল হয়েছে তখন মেয়েটা বেমালুম হাওয়া।

কী এক সন্তাপে সে পুড়েছিল তখন। মেয়েটা এক ঝলক দেখা দিয়ে হারিয়ে গেলেও অল্প বয়সের সেই আবেগের জোয়ার ওর মনের গহীন প্রকোষ্ঠে যেন চিরস্থায়ী হয়ে প্রোথিত আছে।

এরপর কত ছবি সে তুলেছে৷ কিন্তু যে ছবিটা ওর জীবনের সেরা ছবি হতে পারত, সেটাই এখন অব্দি অধরা রয়ে গেছে।

***
প্রকৃতি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে৷ আজ একটা প্রেজেন্টেশন আছে। সে শাড়ি পরে এসেছে। রথি বলল, “তুই কাজল দিস না কেন কখনো?”

“কাজলে আমাকে পেত্নীর মতো লাগে।”

“আমার ব্যাগে কাজল আছে, আয় দিয়ে দেই। একবার ট্রাই করে দেখ।”

“ধুর, আমার চোখে কাজল একেবারেই মানায় না। আমি এমনিতেই কমফোর্টেবল। সব সাজে তো সবাইকে মানায় না। ওটাও আমার জন্য নয়।”

“হয়েছে, যা দিতে হবে না। তোর প্রিপারেশন কেমন? আমার তো প্রত্যেকবার টেনশনে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়।”

“টেনশনের কিছু নেই। শোন, যাবি, কনফিডেন্টলি বলবি, যদি কিছু প্রশ্ন করে উত্তর দিয়ে চলে আসবি। শেষ।”

“ন্যাচার শোনার জন্য তৈরি হ। কাওসার স্যারের প্রেজেন্টেশন।”

“ভাল্লাগে না। খুব বিরক্ত লাগে। আমি কি উনাকে গরু বলি? উনার নামের মধ্যে তো ‘কাউ’ আছে।”

দুই বন্ধু হেসে ফেলল। প্রকৃতি ভীষণ অকপট সবকিছুতে। জড়তা নেই একফোঁটা। ওর নাম আর ওর গাছ নিয়ে কেউ উল্টোপাল্টা কথা বললে সে ভীষণ রেগে যায়। এবং বেশিরভাগ সময় প্রকাশও করে ফেলে রাগটা। কাউকে তোয়াক্কা করে না খুব একটা। উনি স্যার বলে কিছু বলতে পারে না৷

প্রকৃতি নামটা বাবার দেয়া। ঘণ সবুজ অরণ্য নেশার মতো তাকে টানত এককালে। হুটহাট নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন, বনজঙ্গল ঘুরে একদিন ফিরে আসতেন গৃহে। এখন বয়স সায় দেয় না বলে আর যেতে পারেন না। সেই প্রকৃতি প্রেম থেকেই একমাত্র কণ্যার নাম দিয়েছিলেন ‘প্রকৃতি’। আদর করে ডাকেন প্রকৃতি কণ্যা।

প্রকৃতি নিজের নামের স্বার্থকতা রাখতেই কিনা কে জানে, সে-ও গাছপালা ভীষণ ভালোবাসে। বাড়ির আশেপাশে আনোয়ার সাহেবের লাগানো গাছ আছে৷ তবে ছাদেরগুলো বেশিরভাগ ওর নিজের লাগানো। সে ভীষণ যত্নে এর পরিচর্যা করে। মা অবশ্য ওদের এই বৃক্ষপ্রেম আর অরণ্য প্রেমে তিতিবিরক্ত।

নিজেকে নিয়েও প্রকৃতির কোনো কুণ্ঠা নেই। ওর দিকে কেউ একবার তাকিয়ে আবার ঘুরে তাকাবে, বা দশজনের মধ্যে সে-ই নজর কাড়বে এমন সে একেবারে নয়। সাদামাটা দেখতে, বুদ্ধিদীপ্ত চোখ আর মায়া মায়া মুখাবয়বে সে নিজেকে রাখে খুব পরিপাটি করে।

যারা ওর সাথে সবসময় কথা বলে, মেশে তারা ওকে ভীষণ পছন্দ করে। ওর সহজাত আচরণ, জড়তাহীন অভিব্যাক্তি আর নিজের উপরে আত্মবিশ্বাস তাদের নজর কাড়ে ঠিকই।

চোখ কাজল দিলে ভালো লাগে না সে জানে, তাই কখনো দেয়া হয় না। এটা নিয়েও ওর কোনো মাথা ঘামানো নেই। প্রত্যেকের একটা নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে। সে তার মতো করেই সুন্দর। এটা প্রকৃতি বিশ্বাস করে।
……..
(ক্রমশ)

আজকের দিনটা কেটেছে নিজের মতো করে। সকালে স্কুলে গেছি, বই বিতরণ করা হয়েছে, বাচ্চাদের চোখে মুখে নতুন বই পাওয়ার যে উচ্ছ্বাস সেটা ভীষণ সুন্দর, এমন অকৃত্রিম আনন্দ দেখতে ভালো লাগে। এরপর সন্ধ্যায় কাজিনের জন্মদিনের প্রোগ্রাম ছিল। সেখান থেকে ফিরে এর বেশি লেখা সম্ভব হয়নি। খানিকটা এলেবেলেও হয়েছে। আগামী পর্বে পুষিয়ে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here