কান্নাভেজা রাত পর্ব ৮

0
328

#কান্নাভেজা_রাত
#৮ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক



তারপর খুব দ্রুত কাঁপা কাঁপা হাতে ওর মাথার একপাশে গু*লিটা করি। সা*ইলেন্সার লাগানো ছিল পি*স্তলের মুখে। শব্দ হয়নি তেমন। কেমন ভোঁতা একটি শব্দ হলো।সাপ যেভাবে ছো*বল মারার আগে শিস্ করে শব্দ করে ঠিক ওরকম শব্দ হয়েছিল। তারপর আর কিছু জানি না ‌।ও গো*ঙাচ্ছিলো বিছানায় পড়ে।আমি ততোক্ষণে তার পকেট হাতড়ে চাবিগুলো নিয়ে নিই।এর একটা দিয়ে পেছনের দরজা খুলে বাইরে থেকে দরজাটা লক করে দেই। তারপর রাস্তায় নামতেই দেখি গাড়ি নিয়ে বসে আছে রাতুল।ও আমায় জিজ্ঞেস করে,কাজ হয়েছে?
আমি বলি হয়েছে।
সে আমার হাত ধরে টেনে গাড়িতে উঠায়।
তারপর জিজ্ঞেস করে পি*স্তল কোথায়?
আমি ওর হাতে এটা দেই।
চাবির কথা বললে, ওগুলোও দেই।
এইগুলো হাতে নেয়ার পর তার রূপ বদলে যায়।যে রাতুল আগে বোকার মতো থাকতো।কথা বললে যার গা কাঁপতো। তাকে দেখে হঠাৎ মনে হয়, সে আমার মৃত স্বামীর চেয়েও ভয়ংকর সাহসী কেউ। সে আমায় বলে, সে ইচ্ছে করলেই এক্ষুনি পুলিশে দিতে পারে আমায়। তার কাছে সব প্রমাণ আছে ।যে পি*স্তল দিয়ে গু*লি করা হয়েছে সেই পি*স্তল এখন তার কাছে। পি*স্তলে আমার হাতের ছাপ আছে।ঘরের সব চাবিচাবি।ওগুলোতে রক্তের দাগ।আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই।
আমি বলি, তুমি তো বলেছিলে ওকে মা*রলেই সব শেষ।আর কোন ভয় নেই। তুমি আমি মিলে সুন্দর জীবন গড়তে পারবো।
রাতুল বলে, অবশ্যই গড়বো।
সাহস দেয় আমায় সে। তারপর সে আমায় নিয়ে যায় তার পরিচিত একজনের বাসায়।জয় নাম ওর। ওখানে যাবার পর আমি বলি আমায় বিয়ে করতে। সে বলে গর্ভের বাচ্চাটা সমস্যা।এটা ন*ষ্ট করতে হবে।আমি রাজি হই না। সে বলে এটা না করলে আমায় বিয়ে করবে না। শেষমেষ আমার মাথায় কি এসেছিল কি জানি।আমি এই ভ*য়াবহ পা*পটা করি। সন্তান ন*ষ্ট করি। কিন্তু আমি আমার সব কথা রাখলেও সে তার কথা রাখেনি। আমাকে ইউজ করেছে শুধু।জয় দেখতাম আমার কাছে আসতে চাইতো। তখন রাতুল আমায় নিয়ে ওখান থেকে কেটে পড়ে। তাদের বাসায় নিয়ে আসে। এখানে এসে আমার হুঁশ ফিরে।আমি চমকে যাই এসে সব দেখে।ও যা যা বলেছিল এর সবকিছুই মিথ্যে।ও বলেছিলো ওর মা ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী। কিন্তু আমি এসে দেখি দিব্যি সুস্থ একজন মানুষ।’

সবকিছু শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই কেমন।কি বলবো আর। বলার মতো কিছু খুঁজে পাই না। এখানে মেহেরুনের দোষ কতোটুকু কিংবা গুণ কতোটুকু এসবের আগে আমার মনে পড়ে নিজের পরাধীনতার কথা। এই যে আমি পরাধীন এখানে।সবদিক থেকেই আটকে আছি। ইচ্ছে করলেই এখন বেরিয়ে যেতে পারি । দরজা আমার জন্য খোলা।গেট টপকেও যেতে পারবো।যাবার রাস্তা খোলা থাকলেও আমি যেতে পারছি না। ভয়ে। বাবাকে যদি কিছু করে ফেলে। আমারও মাঝেমধ্যে চিন্তা আসে, রাতুলকে মে*রে ফেলি। সে যে আমার স্বামী, একবারের জন্যও এই বিষয়টা মাথায় আসে না ‌। এরকম নোংরা কেউ স্বামী হবে কেন আমার! আমারও তো ইচ্ছে করে ওকে মে*রে শেষ করে দিয়ে নিজের পরাধীনতার শেষ করি। কিন্তু পারি না সাহসের অভাবে। মেহেরুন এটা পেরেছে।ও সাহসী তাই পেরেছে। কিন্তু একটা সমস্যা থেকে পেরিয়ে আরেকটা সমস্যায় এসে পড়েছে।
এরপর আমি ওকে জিজ্ঞেস করি,’ রাতুল, তোমায় দিয়ে এসব করালো কেন?’
মেহেরুন হাসলো।বললো,’এটা তো সিম্পল। তোমার এতোক্ষণে বুঝতে পারার কথা। নিজের পথ পরিষ্কার করেছে।ও বিরাট বুদ্ধিমান লোক। আমার স্বামীর ব্লাক বিজনেসটা দখল করেছে সে। সামান্য কর্মচারী থেকে দুদিনে মালিক বনে গেছে সে।কেউ জানে না এসব। তুমিও জানো না। ওর টাকা পয়সার কূল কিনারা নাই। কিন্তু এখনও সময় হয়নি বলে এসব প্রকাশ্যে আনতে পারছে না ‌। তার চিন্তা ভাবনা গুলো আমি বুঝতে পারি। আমার স্বামীও এরকম ছিল ‌।টাকা খরচ করে আস্তে আস্তে রাজনীতির মাঠে নামবে। নির্বাচন করবে।পদ পাবে। তারপর রাজার জীবন ভোগ করবে। সহজ হিসাব।’
আমি শুনে চমকে উঠলাম।
আমি ওকে বললাম,’ মেহেরুন, ওইদিন যে তুমি বললে, তোমার স্বামী রাতুল। কেন বলেছিলে আমায় এটা? রাতুল তো তোমায় বিয়েই করেনি।’
মেহেরুন হাসলো।বললো,’ এমনিই।মনের জেদ মিটিয়েছিলাম বলে ‌।দেখো, ওর মা সব জানে।ওর ছেলে আমায় বিয়ে না করেও জোর করে ভো*গ করছে। এখানে আটকে রেখেছে ভ*য় দেখিয়ে। তার মা এই নিয়ে কোন প্রতিবাদ করেনি ছেলের সঙ্গে।আমায় এসে কখনো সান্তনা দেয়নি। বরং আমায় সেও অ*ত্যাচার করে।’
আমি বললাম,’ তুমি কি করবে ভাবছো? সারা জীবন এভাবেই থাকবে?’
মেহেরুন বললো,’ জানি না। নিজেকে শে*ষ করতে চেয়েছিলাম ।এটা হয়নি। এখন অন্য কিছু ভাবছি। ‘
আমি বললাম,’ আবার এরকম কিছু করবে কি? ম*রতে চাইবে?’
মেহেরুন বললো,’ না। মৃ*ত্যু সহজ নয়। একবার ম*রতে চেয়ে বুঝেছি।কি কষ্ট মৃ*ত্যুর!’
আমি বললাম,’ মেহেরুন, জয়ের কথা বললে না তখন? ওই যে রাতুলের ছোট ভাই?’
মেহেরুন খানিক চমকালো।বললো,’ কেন? ওর নাম বললে কেন? ওকে চেনো নাকি তুমি? ‘
আমি বললাম,’ জয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলো রাতুল গতকাল।’
মেহেরুন তেমন আগ্রহ দেখালো না। সে শুধু বললো,’ ওহ্।’
হয়তো ও জানেই না তাকে নিয়ে কতো পরিকল্পনা করেছে জয়ের সঙ্গে রাতুল।
আমি নিজ থেকেই আগ্রহ দেখিয়ে বললাম,’ রাতুল কি বলেছে জানো?’
মেহেরুন বললো,’ কি? ‘
‘ তোমায় ওর হাতে তুলে দিবে।ও তোমায় ভো*গ করবে।’
মেহেরুন হাসলো।বললো,’ ভোগ্য পণ্য হয়ে গেছি তাহলে আমি। আমাকে ওর কাছে দিবে কেন? কি লাভ ওর কাছে দিয়ে?’
আমি সব বললাম। অ*স্ত্রের চালানের বিষয়টি বললাম।
মেহেরুন অনেক সময় ধরে চুপ করে রইলো। তারপর বললো,’ জেসি, বাঁচতে চাও তুমি? বাঁচার মতো করে বাঁচতে চাও?’
আমি বললাম,’ চাই।’
সে বললো,’ আমিও চাই।আমি আরেকটা খু*ন করবো। আগের মতো কারোর উপর ভরসা করে না।নিজে নিজেই করবো এটা। তারপর সোজা গিয়ে ধরা দিবো পুলিশের কাছে।’
আমি বললাম,’ কাকে খু*ন করবে তুমি?’
সে হাসলো।বললো,’ করবো একজনকে।’
আমি বললাম,’ আমায় বলবে না তুমি? রাতুলকে তাই না?’
মেহেরুন বললো,’ সময় হলেই জানবে। তুমি তো বাঁচতে চাও তাই না ? এখান থেকে বেরিয়ে যেতে চাও?’
আমি বললাম,’ চাই।’
সে বললো,’ তাহলে তুমি আমায় সাহায্য করবে।’
আমি বললাম,’ কিভাবে সাহায্য করবো? ‘
ভয়ে শিউরে উঠলো আমার শরীর। একটা আস্ত মানুষ মে*রে ফেলা।এটা কি সামান্য বিষয়? সে যতো খারাপই থাক, তাকে কি এভাবে মেরে ফেলা যায়?
আমি মেহেরুনকে বললাম,’ মেহেরুন, আমরা পুলিশকে জানাতে পারি বিষয়টা।ওরা ব্যবস্থা নিবে।আমরা নিজেরা এসব করবো কেন? আইন নিজের হাতে তুলে নিবো কেন?’
মেহেরুন হাসলো।বললো,’ ওদের তুমি কি ভাবো? পুলিশের সঙ্গে এদের যোগাযোগ নাই? অবশ্যই যোগাযোগ আছে ‌।মোটা অঙ্কের টাকা ঢালছে । পুলিশ দেখেও দেখছে না।তো তুমি ইনফর্ম করে কি করবে? কোনো ফল পাবে? উল্টো তুমি ফাঁ*সবে । নিজের জীবন হারাবে। নিজের বাবার জীবন শেষ করবে! তাছাড়া খু*ন তো তুমি নিজে করছো না।আমিই সব করবো। ‘
শুনে ভয়ে আমার শরীর মুষড়ে উঠলো।
ভাবলাম, এসব কিছুরই প্রয়োজন নাই। যেভাবেই আছি সেভাবেই ভালো।
কিন্তু ভেতরটা কেমন জানি ছটফট করছে।বন্দী পাখির মতো। এখানে এভাবে থাকতে আমার মোটেও ভালো লাগছে না। কেন জানি মনে হচ্ছে এখানে থাকলে আমার শিগগির দুর্দিন আসবে।মেহেরুনকে যেভাবে ওর স্বামী অন্যের বিছানায় পাঠাতো, আমাকেও হয়তো দুদিন পর পাঠাবে।রাতুলদের মতো লোকদের কাছে স্ত্রীরা সম্মানী কোন মানুষ নয়। এদের মনে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এসব কিছুই নেই।যা আছে তা লোভ। উচ্চাকাঙ্ক্ষা। এবং লাম্পট্য। এদের কাছে স্ত্রীরা শুধুমাত্র ভোগ্য পণ্য । মাঝেমধ্যে এদের ব্যবহার করে ক্ষমতার দু ধাপ উপরে উঠতে পারলে ব্যবহার করবে। এতে কি কিছু কমে যাবে নাকি ‌!
রাতুলের মতো লোকদের ভাবনা গুলো হয়তো এরকমই।
কিন্তু আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারি না।ভ*য়ের কারণে কি নিজের এই বন্দী দশাকেই মেনে নিবো আমি?
মেহেরুন বললো,’ কিছু একটা বলো।হেল্প করবে কি আমায়? এতে তো তোমারই লাভ। তুমি মুক্তি পাবে।’
আমি কোন উত্তর করতে পারিনি। ততোক্ষণে গেটে শব্দ হলো।রাতুলের মা আসছে।আমি কোন উত্তর না দিয়ে তাড়াহুড়ো করে ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম সোজা কিচেনে।

(গল্প শেষের দিকে -)

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here