“কাঠগোলাপের সুবাস”
৭.
ভোরের দিকে খাদিজা নামাজ পড়ে রুম থেকে বের হলো। হুমায়রার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখলো এখনো জায়নামাজে বসে আছে। খাদিজা দরজার কাছাকাছি এসে আবার সরে গেলো। রুমে চলে এসেছে। লজ্জা লাগছে আবার অস্থিরও লাগছে।
আসলে সে হুমায়রার কাছ থেকে জানতে চায় ও কি কি দোয়া পড়ছে। কিন্তু নিজের ভেতরের জড়তার কারণে পারছে না। নিজের উপর বিরক্ত হয়ে সাদের দিকে তাকালো। কি শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। খাদিজা বিরক্তিতে কপাল কুচকে ফেলেছে। সাদের শান্তির ঘুম নষ্ট করার জন্য দুষ্টামি বুদ্ধি মাথায় ভর করেছে। একটু বাঁকা হেসে গ্লাসে পানি নিয়ে সাদের মুখে মারতেই সাদ হচকচিয়ে উঠে বসে।
পাখির কিচিরমিচির ডাকের সাথে খাদিজার হাসির ঝংকার সাদের কাছে নুপুরের রিনঝিন শব্দের মতো লাগে। মুগ্ধ হয়ে তাকায় খাদিজার দিকে। ভোরের আবছা আলোয় খাদিজার হাসি হাসি মুখটা বেশ স্নিগ্ধ লাগছে। খাদিজা সাদের চুল আলতো টেনে বললো,
— “বেশ শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছিলে তাই একটু বিরক্ত করলাম সাদবাবু। যাও মসজিদে।”
— “আজ এতো খুশি কেনো?”
— “এমনি।”
খাদিজা দাঁড়িয়ে আছে বিধায় সাদের মুখটা খাদিজার পেট বরাবর রয়েছে। সাদও দুষ্টুমি করে মুখটা খাদিজার পেটে গুজে দিলো। খাদিজা কেঁপে উঠে। সরে আসতে চাইলেই সাদের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়। খাদিজা বললো,
— “ছা..ছাড়ো।”
সাদ খাদিজার কোমড় আরেকটু চেপে ধরে বললো,
— “এই বুড়ি এখন লজ্জা পাচ্ছো কেনো? এতোক্ষণ তো হাসছিলে।”
— “এমনি ছাড়ো। দেরি হচ্ছে কিন্তু।”
সাদ উঠে দাঁড়ায়। খাদিজার লজ্জামাখা ফর্সা মুখটায় গোলাপি আভা ফুটে উঠেছে। হুমায়রা খাদিজা দুজনে লম্বায় সমান সমান। দুজনেই সাদের বুক বরাবর এসে থেমেছে৷ সাদ আলতো হেসে ওয়াশরুমে চলে গেলো। খাদিজা এখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সাদের হাসিটা যেনো অন্তরে এক কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। এতোটা স্নিগ্ধ এবং মায়াবী এই হাসি।
— “আমার কথাই ভাবছিলে?”
খাদিজা লাফিয়ে উঠে। কান ধরে বললো,
— “এভাবে চুপিচুপি এসে ফিসফিস করলে ভয় পাবো না?”
— “তোমার কোন দিকটা বেশি ভালো লাগে জানো?”
— “কোনটা?”
— “তোমার ভীতু ফেসটা। যখন তুমি ভীতু হয়ে আমার দিকে তাকাও একটা হার্টবিট মিস হয়।”
খাদিজা লজ্জায় মুখ নামিয়ে ফেলে। সাদও মুচকি হাসে। খাদিজা মুখ তুলে বললো,
— “আর হুমায়রার কোন দিকটা ভালো লাগে?”
— “ওর লাজুক অঙ্গভঙ্গি। ওর লাজুকতায় একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। যেটা আমার কাছে নেশার মতো লাগে। যেমনটা লাগে তোমার ভীতু ফেসটা দেখলে।”
কথা বলতেই বলতেই সাদ এসে খাদিজার কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
— “এখন আবার মন খারাপ করে বসে থেকো না। তোমরা দুজনেই আমার স্ত্রী। দুজনের প্রসংসা করাই আমার জন্য বৈধ। বুঝলে টুনটুনি?”
খাদিজা হেসে ফেললো। সাদ ভ্রু কুচকে বললো,
— “তুমি হাসলে কেনো?”
— “তুমি যখন কিউট করে টুনটুনি বলে ডাকো তখন খুব হাসি পায় আমার।”
— “কেনো?”
— “তোমার ওই ডাকে হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হয়।”
— “তোমাকে আমি আল্লাহর জন্য ভালোবাসি আমার খাদু পাখি।”
খাদিজা মাথা তুলে সাদের দিকে তাকালো। সাদের ঠোঁটের কোণে সেই ঘায়েল করা হাসি। সাদ তুড়ি বাজাতেই খাদিজার চোখের পানি গড়িয়ে পরলো৷ সাদ আলতো হাতে সেই পানি মুছে দিয়ে বললো,
— “কাঁদছো কেনো?”
— “যেদিন প্রথম শুনলাম আমি মা হতে পারবো না সেদিন থেকেই ভালোবাসা পাবার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এরপর যেদিন প্রান্ত নামের ছেলেটা বিয়ের প্রস্তাব দিলো একটু একটু আশা জ্বলে উঠেছিলো। আবার সব আশা ধপ করে নিভে গেলো যখন কোনো এক পাত্রপক্ষ আমাকে রক্ষিতা হয়ে থাকার প্রস্তাব দিয়েছিলো৷ আমি কারো ভালোবাসা পাবো সেটা আমি কখনোই ভাবিনি। এখনও ভাবতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি। আর স্বপ্নের মাঝেই আমার প্রিয়তম এসে আমাকে ভালোবাসি বলছে।”
সাদ খাদিজার কপালে ভালোবেসে একটা উষ্ণ আদর দিলো। খাদিজা চোখ বুজে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। সাদের বুকে মাথা রেখে বললো,
— “আমায় একটু ভালোবাসা দিবে? শুধু একটু। পুরোটা চাইনা আমার। শুধু একটু ভালোবেসে বুকে আগলে রাখলেই হবে।”
— “আমার ভালোবাসা তোমার এবং হুমায়রার জন্যেই। আজকের পর থেকে আর নিজেকে ছোট ভাববে না। ঠিকাছে?”
— “হু..। আমি আর হুমায়রার সাথে দ্বন্দ্বে জড়াবো না। আমার জন্য শুধু দোয়া করো। যেনো আমি ওকে মেনে নিতে পারি।”
— “তুমি মন খুলে ওর সাথে একবার মিশে দেখো। তুমিও ওর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাবে। আর ওই পিচ্চিটা তো তোমার দিক থেকে একটু রেসপন্স পেতে চাইছে। তোমাকে বড় বোনের মতো ভালোবাসে, সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে।”
— “আমি চেষ্টা করছি সব মেনে নিতে।”
— “আল্লাহ সব সহজ করে দিবেন দেখো।”
— “হু..। যাও এখন। জামাত মিস হবে।”
খাদিজার কপালে আরো একবার আদর দিয়ে সাদ মসজিদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো। খাদিজা ফুপিয়ে কাঁদছে এখনো। সাথে একটা ভালোলাগাও কাজ করছে। সাদ তাকে ভালোবাসে এর চেয়ে খুশির আর কি হতে পারে?
বারান্দায় যেতেই চোখ পরলো কাঠগোলাপ গাছটার দিকে। খাদিজার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো বিষয়টা। কারণ গাছে কোনো পাতা নেই। আগাগোড়া পুরোটাই ঠুনকো। কিন্তু ফুল ফুটেছে। ফুলগুলো ভিষণ সুন্দর। খাদিজা ভাবলো একবার কাছ থেকে দেখবে গাছটা। এবং কাছ থেকেই ফুলের ঘ্রাণ নিবে। কাঠগোলাপ গাছ আগে কখনো দেখেনি খাদিজা।
বড় একটা হিজাব গায়ে চড়িয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। গুটিগুটি পায়ে সিড়ি দিয়ে নেমে মেইন ডোরের কাছে এসে দরজা খুলতেই সাদের সামনে পরে গেলো। খাদিজার অন্তর-আত্মা কেঁপে উঠে। কারণ একে তো সাদ এভাবে বাড়ি থেকে বের হওয়া পছন্দ করে না। আর দ্বিতীয়ত, হঠাৎ এভাবে সামনে পরায় চমকে গেছে।
সাদ ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো খাদিজার দিকে। তারপর গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
— “চুপিচুপি কোথায় যাচ্ছিলে?”
— “ব..বাগানে যাচ্ছিলাম।”
— “কেনো?”
— “একটা ফুলগাছ দেখেছি বাগানে। যেটা আগে কখনো দেখিনি। তাই যাচ্ছিলাম বাগানে।”
— “ওহ..!”
— “যাবো?”
— “আমার সাথে আসো।”
— “হুম।”
মেইন ডোর পেরিয়ে কিছুটা সামনে গিয়ে খাদিজা সাদের শার্টের কোণ টেনে ধরলো। সাদ ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো। খাদিজা ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
— “তোমার পিচ্চি বিবিকেও বলো আসতে।”
সাদ হেসে ফেললো খাদিজার এভাবে বলায়। নাকে হালকা টোকা দিয়ে ভেতরে গিয়ে হুমায়রাকে ডাকলো। হুমায়রাও বড় হিজাব পরে নিচে নেমে এলো। মেইন ডোরের বাহিরে খাদিজাকে দেখে মুচকি হাসলো।
— “আসসালামু আলাইকুম আপু।”
— “ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আমরা তো একই বাড়িতেই থাকি। সালাম দেয়ার কি প্রয়োজন?”
— “অধিক সালাম দিলে হৃদয়ের বক্রতা দূর হয় এবং ভালোবাসা বাড়ে।”
— “তাই?”
— “হু..!”
খাদিজা ইতস্তত করে বললো,
— “সম্পূর্ণ হাদিসটা আমাকে একটু বলবে?”
— “হ্যাঁ। অবশ্যই।”
হাটতে হাটতে তারা দুইজন সামনে এগিয়ে গেলো। সাদ দুজনের পেছন পেছন আসছে। দুজনকে এভাবে কথা বলতে দেখে মুচকি হাসলো। হুমায়রা বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে বললো,
— “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর তোমরা পরস্পরকে না ভালোবাসা পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দিবো না যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে? (তা হলো) তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও।” [১]
‘আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, ইসলামের কোন কাজটি শ্রেষ্ঠ?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি খাবার খাওয়াবে এবং তোমার পরিচিত-অপরিচিত সকলকে সালাম দিবে।” [২]।”
— “হুম বুঝেছি।”
হুমায়রা খাদিজাকে ঝাপটে ধরে বললো,
— “আপু তোমার মুখে তুই ডাক শুনতে ভীষণ ভালো লাগে। আমাকে তুই করে সম্বোধন করো হুম?”
খাদিজার ভীষণ লজ্জা লাগছে। আসলে এতোদিন খুব রুড বিহেভ করেছে হুমায়রার সাথে। আর আজ হুমায়রা এমন সুন্দর বিহেভ করায় নজর মিলাতে পারছে না। সাদ ওদের দুজনের সামনে এসে দাড়ালো। খাদিজা একবার সাদের দিকে তাকিয়ে নজর সরিয়ে নিলো। খাদিজার অবস্থা বুঝতে পেরে সাদ বললো,
— “আসো ফুল গাছগুলো দেখো।”
— “হুম।”
খাদিজা কাঠগোলাপ ফুল গাছের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সাদও পাশে দাঁড়িয়েছে। হুমায়রা অন্যপাশে দাঁড়িয়ে লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,
— “অনেক সুন্দর তাইনা?”
— “এই ফুলের নাম কি?”
— “কাঠগোলাপ।”
— “কাঠগোলাপের সুবাসে রাঙিয়ে দেবো তোমায়।”
সাদ মুচকি হাসলো। হুমায়রা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সাদ হেসে বললো,
— “আমার জন্য এই লাইন?”
— “না মানে আসলে…।”
— “হুম বুঝেছি। তবে লাইনটা ভালো লেগেছে।”
হুমায়রাও হেসে বললো,
— “হ্যাঁ আপু অনেক সুন্দর ছিলো লাইনটা।”
— “ফুলের ঘ্রাণটা অনেক সুন্দর তাই না?”
— “হ্যাঁ। এটা আমার খুব প্রিয় ফুল।”
— “আমারও খুব ভালো লেগেছে।”
_________________
খাদিজা শুয়ে শুয়ে ফেসবুকে লেকচার ভিডিও দেখছিলো তখন সাদ এসে খাদিজার পাশে বসে বললো,
— “কি করছো টুনটুনি?”
— “লেকচার ভিডিও দেখি।”
— “এদিকে দাও মোবাইল। তোমাকে একটা লেকচারের ভিডিও এনে দেই।”
খাদিজা মোবাইল এগিয়ে দিলো। সাদ সেই ভিডিও বের করে খাদিজা দিলো। খাদিজা ইয়ারফোন কানে লাগিয়ে মনোযোগ সহকারে শুনছে। সাদ দুষ্টুমি করে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। খাদিজা কেঁপে উঠে। ভিডিও পস করে সাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
— “যাও এখন। বিরক্ত করবে না।”
— “আমি বিরক্ত করছি?” গাল ফুলিয়ে বললো।
— “প্লিজ যাও না।”
— “কই যাবো?”
— “হু..হুমায়রার কাছে যাও।”
সাদ ঠোঁট বাকিয়ে বললো,
— “আগে হুমায়রার কাছে গেলে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যেতে। ছলে বলে আমাকে তোমার কাছে আটকে রাখতে। আর আজ নিজ থেকেই পাঠাচ্ছো। কি ব্যাপার?”
— “প্লিজ সাদ..! আমি..আমি একটু একা থাকতে চাই কিছুক্ষণ। প্লিজ..! আমার কথায় কষ্ট পেও না প্লিজ। আমি একটু নিজেকে সংশোধন করতে চাই।”
সাদ খাদিজার দিকে এগিয়ে এসে গালে হাত রেখে বললো,
— “দেখবে একদিন এমন দিন আসবে তোমরা দুজন বোনের থেকেও বেশি আপন হয়ে উঠবে। দোয়ার পাওয়ার খুব ব্যাপক।”
খাদিজা সাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
— “আমার জন্য দোয়া করো প্লিজ। আমার ভেতরের খারাপ সত্ত্বাটা আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। আমাকে একটু সময় দাও।”
— “যত ইচ্ছা সময় নাও। আর ভরসা রেখো আল্লাহর উপর। আল্লাহর গায়েবে শক্তির উপর। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
— “হু..!”
সাদ খাদিজার কপালে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেলো। খাদিজা সাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। তারপরেও নিজের মনকে শক্ত করে নিয়েছে। কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে শায়খকের লেকচার শুনায় মন দিলো।
বেশ খানিকটা শুনার পর ভিডিওতে শায়খ সব মুসল্লিকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো। প্রশ্নটা হলো ঈমান কি? কেউ উত্তর দিতে পারছে না। খাদিজা নিজেও নিজের মনকে প্রশ্ন করলো৷ কিন্তু কোনো উত্তর নেই।
[আপনার পাঠকরা একখানে একটু থামুন৷ এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন ঈমান কি? যদি উত্তর না পান তাহলে আল্লাহর কোনো বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তর্ক, যুক্তি দেয়ার কোনো অধিকার আপনার নেই।]
শায়খ হেসে বললো, ঈমান কি জিনিস সেটা বলতে পারছেন না আর আপনারা ইসলামের দোষ, ভুল ত্রুটি ধরছেন। কুরআনের বিধানের ভুল ত্রুটি ধরছেন। ভুল মানুষ করে আর দোষ পরে ইসলামের। ইসলাম তার জায়গা থেকে পারফেক্ট। মানুষ তার জায়গায় ঠিক নেই। নড়বড়ে। তার ভেতরের নফসটা দূষিত হয়ে গেছে। সেই দূষিত নফস দিয়ে সঠিক যাচাই বাছাই করবে এটা স্রেফ ড্রিমেই সম্ভব।
যাই হোক যা বলছিলাম কেউ কি নেই যে বলবে ঈমান কি? সবাই চুপ করে আছে। শায়খ হেসে বললো, সমস্যা নেই। আমিই বলছি৷
“উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআ’লা বলেন, আমরা সবাই একবার মসদিজে বসে ছিলাম। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বসে ছিলেন। সেই সময়ে একজন ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করলো। যার পরনে ছিলো ধবধবে সাদা জুব্বা, চুল কালো কুচকুচে। তার গায়ে সফরের কোনো চিহ্ন ছিলো না। সে এসেই নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বসলো তাশাহুদের ন্যায়। তার দুই হাত রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই উরুর উপর রাখলেন। তার দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিলো, ইয়া মুহাম্মদ আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ঈমান হল আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসুলগণের প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনবে, আর তাকদিরের ভালমন্দের প্রতি ঈমান রাখবে।'[৩] এটাকে হাদিসে জিব্রাইল বলা হয়। জুব্বা পরা সেই লোকটা ছিলো হযরত জিবরাইল আলাইহিসসালাম। যিনি মানুষের রুপে এসেছিলেন।
এই ছয়টি পিলারের উপর বিশ্বাসকে ঈমাণ বলে।
এবার আমি আপনাদের এখানে কিছু জিনিস এড করে দেই।
° যে ব্যক্তি এই ছয়টা বিষয়ের প্রতি মুখে স্বীকার করে, মনে বিশ্বাস করে এবং কাজে বাস্তবায়ন করে তাকে বলা হয় মু’মিন।
° যে ব্যাক্তি এই ছয়টা বিষয়ের প্রতি মুখে স্বীকার করে না, মনে বিশ্বাস করে না এবং কাজে বাস্তবায়ন করে না তাকে বলা হয় কাফের।
° যে ব্যাক্তি এই ছয়টা বিষয়ের প্রতি মুখে স্বীকার করে কিন্তু মনে বিশ্বাস করে না এবং মাঝে মাঝে কাজে বাস্তবায়ন করে আবার মাঝে মাঝে কাজে বাস্তবায়ন করে না, তাকে বলা হয় মুনাফেক।
° যে ব্যাক্তি এই ছয়টা বিষয়ের প্রতি মুখে স্বীকার করে, মনে বিশ্বাস করে কিন্তু কাজে বাস্তবায়ন করে না তাকে বলা হয় ফাসেক অথবা জালেম।
° যে ব্যাক্তি এই ছয়টা বিষয় মুখে স্বীকার করা, মনে বিশ্বাস করা এবং কাজে বাস্তবায়ন করা এই তিনটির মধ্যে যেকোনো একটি করে, পাশাপাশি শিরকও করে তাকে বলা হয় মুসরেক।
এবার আমাদের অবস্থা দেখুন। আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি পাশাপাশি শিরকে লিপ্ত আছি। আমরা মনে করি আল্লাহ আমাদের কোনো ওসিলার মাধ্যমে সাহায্য করবেন। তাই আমরা পীর, এই বাবা, সেই বাবার কাছে যাই, হুজুরের কাছে যাই, তাবিজ লাগাই আরো অনেক কিছু।
তারপর দেখুন ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস। এটা সম্পূর্ণ গায়েবে বিশ্বাস। কারণ ফেরেশতাদের দেখা যায়না, ল্যাবরেটরিতে প্রমাণ করা যায়না, তর্ক-যুক্তি দিয়ে তাদের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায়না। তাই আমাদের আধুনিক দেশের মানুষজন ফেরেশতাগণে বিশ্বাস করেনা। তারা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান নির্ভর। বিজ্ঞান যা বলে তাই তারা বিশ্বাস করে।
তারপর আসুন কিতাব সমূহের প্রতি বিশ্বাস। এখানে এসেই মুসলিম নারী-পুরুষরা ঈমান হারিয়েছে। তারা ভাবে এই কিতাব যথেষ্ট নয়। এখানে কিছু বিধান আছে অতিরিক্ত। এগুলো না করলেই পারতো। আল্লাহ কিছু বিধান বেশি বেশিই করে ফেলেছেন৷ যাই হোক। একটা কথা অবশ্যই বলি, ‘যারা আল্লাহর হারামকে হালাল করে এবং আল্লাহর হালালকে হারাম করে কোনো সন্দেহ নাই সে মুনাফেক৷’ এবং যারা ভাবে যে এই কিতাবে কিছু বিধান অতিরিক্ত দেয়া হয়েছে আল্লাহই ভালো জানেন তাদের কবরে কি অবস্থা হবে৷ আর কিতাবের আদেশ নিষেধ জীবনে বাস্তবায়ন করাকে তো আরো বিরক্তির সাথে দেখা হয়। দেখুন কুরআন কি বলছে,
‘আর যেসব লোক আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদানুযায়ী ফয়সালা করেনা তারাই কাফের।[৪]’
‘যেসব লোক আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদানুযায়ী ফয়সালা করেনা তারাই জালেম।'[৫]’
‘যেসব লোক আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদানুযায়ী ফয়সালা করেনা তারাই ফাসেক।'[৬]’
এবার আপনি বলুন আপনি কোন দলে আছেন? শায়খ হাসছেন। খাদিজা নিজেও থমকে গেলো। সে ভেবে দেখলো কিতাবের কিছু বিধান জীবনে বাস্তবায়ন করা তো বহুত দূর মুখে এবং অন্তরেও স্বীকার করতে চায়না। উদাহরণ সরুপ সে সাদের দ্বিতীয় বিবাহকেই ধরলো। খাদিজার হাত কেপে উঠলো। মনে মনে বললো, তারমানে আমি এতোদিন কাফের ছিলাম?
শায়খ আবার বললেন, দেখুন কুরআনে আল্লাহ এসব কাফের, জালেম, ফাসেকের ব্যাপারে শাস্তির বিধান কি দিয়েছেন ‘তাদের সমস্ত কৃতকর্মই বিনষ্ট হয়ে গেছে এবং তারা সর্বদা আগুনেই অবস্থান করবে।'[৭]
সারাজীবন অনেক অনেক আমল করলেন আপনি আর এদিকে একটা বিধানকে অমান্য করার কারণে আপনার সব আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে। হায়! দুর্ভাগ্য তাদের। কুরআনে বলা আছে,
‘তোমরা ওই মহিলার মতো হবে না, যে সারাদিন সূতা বুনে সন্ধ্যায় তা টুকরো টুকরো করে ফেলে।'[৮]’
“রাসূলগনের প্রতি বিশ্বাস৷ আমরা বিশ্বাস করি সব নবী-রাসূলকে। আমরা আমাদের প্রিয় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুব ভালোবাসি। তার সাথে আমরা রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর গিয়ে বিদাতও পালন করি। যেগুলোকে আমরা প্রিয় নবীর সুন্নাহ মনে করি।
বিদাত পালনকারী সম্পর্কে হাদিসে কি এসেছে দেখুন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ প্রত্যেক বিদআতীর তওবা ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিত রাখেন (গ্রহণ করেন না), যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার বিদআত বর্জন না করেছে।[৯]”
আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস এটা আমরা সকলেই করি। কিন্তু এখনকরা এডুকেটেড সোসাইটি এটা মানতে চায়না। এমনকি আধুনিক বিশ্বও নয়। তারা মনে করে মরে গেলে আবার কিভাবে উঠবো আমরা। তারা পুরুত্থানে বিশ্বাস করেনা। যেহেতু এটা সাইন্স দিয়ে প্রমাণ করা যায়না তাই এটাও বাতিল করেছে।
সবার শেষে হলো তাকদিরের ভালো মন্দের প্রতি বিশ্বাস। একজন মুসলিম উপরের পাঁচটার উপর অটল বিশ্বাস রাখলেও এখানে এসে ধসে পড়ে যায়। এখানে এসে তারা ঈমানটাকে নড়বড়ে করে ফেলে৷ আল্লাহ কুরআনে দুটো আয়াত উল্লেখ করেছেন।
‘তাকে যখন তার রব পরীক্ষা করেন, অতঃপর তাকে সম্মান দান করেন এবং অনুগ্রহ প্রদান করেন, তখন সে বলে, আমার রব আমাকে সম্মানিত করেছেন।'[১০]
‘আর যখন তিনি তাকে পরীক্ষা করেন, আর তার রিযিককে সংকুচিত করে দেন, তখন সে বলে, আমার রব আমাকে অপমানিত করেছেন।'[১১]
আল্লাহ যখন আমাদের মনের সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করে দেন তখন আমরা খুব খুশি থাকি। মানে আল্লাহ আমাকে কত ভালোবাসেন। তাইতো আমাকে এতোকিছু দান করেছেন। আমাকে কোনো বিপদে ফেলেননি। কিন্তু যখন কোনো কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটে যায়। বেশ সেরেছে। তখনই শুরু হয় আল্লাহ আমাদের দেখতে পারেন না, যত বিপদ শুধু আমাকেই দিচ্ছেন, দুনিয়ায় এতো মানুষ থাকতে আল্লাহর চোখে শুধু আমিই পরি, আল্লাহ আমার সাথে কেন এমন করলো ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু।
আমরা তো আল্লাহ আদেশ নিষেধ যথাযথভাবে পালন করিনা। তারপরেও যারা কিছুটা মানে তখন তাদের উপর পরীক্ষা এলে খুব কম সংখ্যক মানুষই ধৈর্য্য ধারণ করে। বাকিরা শেষের আয়াত নিয়ে পরে থাকে। তারা ভাবে আল্লাহ তাকে অপমানিত করছেন। হাহা। আবু মাসউদ নামের এক সাহাবী বলেন, ‘ যে ব্যক্তি কোনো বিপদে আক্রান্ত হয়ে নিজের কাপড় ছিড়ে ফেললো অথবা বুকে আঘাত করলো সে যেনো বর্ষা নিয়ে তার রবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইচ্ছা করলো।’
আপনার প্রিয় মানুষটার কথায় তো আপনি উঠেন বসেন৷ বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড, স্বামী, স্ত্রী অন্যান্য যারা আছেন তাদের কথার তো হেরফের করেন না। তার হ্যাঁ -তে হ্যাঁ মিলান। না-তে না। আপনার ভালো না লাগলেও প্রিয় ব্যক্তির কথায় সেই কাজ ঠিকই করেন। আপনার রব যখন তাঁর কথায় কিছু করতে বলে তখন কেনো এতো অবাধ্যতা করেন? আপনার কাছে ওই ব্যক্তিই বেশি শ্রেষ্ঠ? আর এতো তুচ্ছ আপনার রব আপনার কাছে? যিনি আপনার মনের বিপরীতে একটা আদেশ দিলে আপনার কষ্টে বুক ফেটে যায়। এতোই মূল্যহীন আপনার রব আপনার কাছে?
আচ্ছা এতোকিছুর মধ্যেও আল্লাহ আমাদেরকে আরো যা যা দিয়েছেন সেগুলোর শোকর কি আমরা আদায় করি কখনো? কখনোই করি না।
আপনার খুব কাছের একজন মানুষ আপনাকে একটা গিফট দিলে আপনি তার প্রসংশায় পঞ্চমুখ হয়ে যান। আর যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন সে আপনার কাছে গিফট দেয়া ব্যক্তির চেয়ে নিম্ন? একটা আলহামদুলিল্লাহ বলতে আপনার কষ্ট হয়। একটা সেজদা দিয়ে শোকর আদায় করতে কষ্ট হয় আপনার। এতো নাফরমানির পরেও আল্লাহ আপনাকে যেভাবে রেখেন তাতেও আপনার অভিযোগের শেষ নেই। আল্লাহ এইজন্য কুরআনে বলেছেন, ‘তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো।'[১২]’
খাদিজা মোবাইল বন্ধ করে রেখে দিলো৷ চোখ বন্ধ করতেই দুই চোখের কোণ দিয়ে চিকন আকারে পানি গড়িয়ে পরলো। নিজেকে নাফারমান বান্দা মনে হচ্ছে যে তার রবের কাছে একবারও শুকরিয়া আদায় করেনি। বিয়ের আগে এতো এতো কু-দৃষ্টি, কু-প্রস্তাবের পরেও আল্লাহ তাকে নিরাপদ রেখছেন। তার সম্ভ্রম রক্ষা করেছেন। তার সম্মান রক্ষা করেছেন। সেসবের শুকরিয়া, সেসবের জন্য আলহামদুলিল্লাহ বলা তো বহুত দূর সাদ কেনো তাকে মাসনা করলো হুমায়রাকে ওয়াহিদা করলো এসব নিয়েই অভিযোগের শেষ নেই।
এই সুশীল সভ্য সমাজের চেহরার পেছনে অসভ্য একটা সিস্টেম আছে সেই সিস্টেম থেকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছেন সাদের মাসনা করে। সেটার জন্যেও একবিন্দু শুকরিয়া আদায় করা হয়নি। যদি সারাদিনও সেজদায় পরে থাকা হয় তাহলেও কম হবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।
খাদিজা চোখ মুছে উঠে বসে। একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখলো সাদ সমতা করতে চাইছে। এবং হুমায়রাও সাদকে সাহায্য করছে। শুধু মাত্র তার কারণেই ঘরে অশান্তি হচ্ছে। খাদিজা ধরে ফেললো এই সমাজের বহুবিবাহতে সমস্যা কোথায়। স্বামী সমতা রক্ষা করতে চাইলেও স্ত্রীদের জন্য পারেনা। মাসনা ওয়াহিদাকে মানতে পারেনা। হিংসা করে৷ স্বামীকে তার কাছ থেকে সরিয়ে নিতে চায়। ওয়াহিদাও পরে একসময় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে। মূলত এই সমাজে মেয়েরাই মেয়েদের সহ্য করতে পারেনা৷ আর মেয়েদেরকে উসকে দেয়ার জন্য, তাদের ব্রেন তো ওয়াশড করা হয়েছে সো কল্ড ভালোবাসার সংজ্ঞা দিয়ে।
ভালোবাসার সংজ্ঞা মাথায় আসতেই খাদিজা মোবাইল হাতে নিলো। কাল রাতে সাদ বলেছিলো সময় পেলে একটু রিসার্চ করতে। খাদিজা এখন তাই করবে। অনেক ঘাটাঘাটির পর পেয়েও গেলো।
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে অধিক ভালোবাসবে, এটা অনিবার্য হয়ে যাবে যে সে ওই ব্যক্তি বা বস্তু দ্বারাই আঘাত পাবে।’
‘ যে ভালোবাসা আল্লাহর জন্য হয়না, সেটা হারিয়ে যায়।’
রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মু’মিন হবেনা যতক্ষন পর্যন্ত আমি তার নিকট তার সন্তান অপেক্ষা, তার পিতা অপেক্ষা এবং তার প্রিয় ব্যক্তি অপেক্ষা প্রিয় হই।’
শেষের একটা হাদিস জেনে খাদিজা একেবারেই মিইয়ে গেলো। নিজের প্রতি আপসোস হলো। হুমায়রাকেই সফল মনে হচ্ছে তার। নিজের অস্বস্তিকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হয়। আপসোস নামক যন্ত্রণা সারা শরীরে ছড়িয়ে গেলো। খাদিজা চিৎ হয়ে শুয়ে পরে। সাদের একটা কথা মনে পরে বারবার। আমরা যেই ভালোবাসার সংজ্ঞা জানি, নাটক, সিরিয়াল, মুভি, উপন্যাস, গল্প, কবিতা সব জায়গায় যে ভালোবাসার সংজ্ঞার উপর দাঁড়িয়ে আছে সেটা শিরকের উপর দাঁড়িয়ে আছে। আর এসব গান, মুভি, নাটক, উপন্যাস, কবিতা ধীরে ধীরে আমাদেরকে আল্লাহদ্রোহী করে দিয়েছে। অজান্তেই শিরকে লিপ্ত করে দিয়েছে।
কেয়ামতের কঠিন দিলে আল্লাহ সাত শ্রেণির মানুষকে তাঁর শীতল আরশের নিচে ছায়া দিবেন। তার মধ্যে এক শ্রেণির ব্যক্তি হলো তারা, ‘যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা করে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই ভালোবাসার উপর মিলিত হয়, এবং এই ভালোবাসার উপরই আলাদা হয় (মৃত্যু) তারা শীতল আরশের নিচে ছায়া পাবে।’ [১৩]’
প্রকৃত সফল তারাই যারা আখিরাতে সফল। সাদ ঠিক বলেছিলো খাদিজা তার মঞ্জিল সাদ পর্যন্ত ঠিক করে রেখেছে। এবং আজকের সমাজের অর্ধেকের বেশি নর-নারী তার মঞ্জিল তার প্রিয় মানুষটা পর্যন্তই ঠিক করে রেখেছে। তারা দুনিয়ায় ভালো থাকলেই আখিরাতে তারা ব্যর্থ৷ আজকের সমাজে হতাশা, বিষাদ, একাকিত্ব সবকিছুর মূলেই রয়েছে আধুনিক ভালোবাসার সংজ্ঞা। হাহা……
‘অতঃপর তাদেরকে বানাবো কুমারী, সোহাগীনি ও সমবয়সী, ডানদিকের লোকদের জন্য।’ [১৪]
কেয়ামতের দিন সব মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। ডানপন্থী, বামপন্থী, মধ্যপন্থী।
বামপন্থী জাহান্নামী। মধ্যপন্থী হলো তারা যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে। তাদেরকে আল্লাহ হূর দিবেন। আর ডানপন্থী হলো তারা যারা দুনিয়ায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভোগ, বিলাশ ছেড়ে দিয়েছে। তারা তাদের স্ত্রীকে জান্নাতে পাবে। তাদের স্ত্রীকে জান্নাতে কুমারী, সোহাগীনি, সমবয়সী করে দেয়া হবে।
সোহাগীনি ও প্রেমময়ী নারী দ্বারা বোঝানো হয়েছে সর্বোত্তম মেয়েসুলভ গুণাবলি থাকবে তাদের মাঝে। যারা কামনীয় স্বভাব ও বিনীত আচরণের অধিকারিনী, সদালাপী, নারীসুলভ আবেগ অনুভূতি সমৃদ্ধা, মনে প্ৰাণে স্বামীগত প্ৰাণ এবং স্বামীও যার প্রতি অনুরাগী।[১৫]
তারা চিরকাল জান্নাতে থাকবে। তাদের রুপ, লাবণ্য কখনো কমবে না। সঙ্গম-সহবাসের পর তারা আবার কুমারী হয়ে যাবে।
খাদিজার বুক ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। সে শুধুমাত্র দুনিয়া পর্যন্ত তার গন্তব্য ঠিক করেছিলো। যা কিছুদিন পরেই ফুরিয়ে যাবে৷ অন্যদিকে হুমায়রা জান্নাত পর্যন্ত সাদকে চেয়েছে যেই মায়া, ভালোবাসা কোনোদিন শেষ হবে না। কোনদিন না। তারা চিরকাল জান্নাতে একসাথে থাকবে। তখন তো জেলাস করেও লাভ হবে না। হিংসা করেও লাভ হবে না। কোনোকিছুতেই লাভ হবে না। যার আমল যত বেশি হবে, যে যত সহৃদয়বান হবে সেই সেদিন লাভবান হবে…….
চলবে,,
® ‘নাহার’
______________________________________
রেফারেন্স,
[১] মুসলিম ১/৭, নং ৫৪, আহমদ নং ১৪৩০
[২] বুঝারী (ফিতাহুল বারীসহ) ১/২৮, নং ২৭
[৩] সহীস মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ঈমান।
[৪] সূরা মায়িদাহ: ৪৪
[৫] সূরা মায়িদাহ: ৪৫
[৬] সূরা মায়িদাহ: ৪৭
[৭] সূরা তাওবাহ: ১৭
[৮] সূরা নাহল: ৯২
[৯] ত্বাবারানীর আওসাত্ব: ৪২০২
[১০] সূরা ফজর: ১৫
[১১] সূরা ফজর: ১৬
[১২] সূরা মুমিনুন: ৭৮
[১৩] বুখারি: ৬৬০, ১৪২৩
[১৪] সূরা ওয়াক্বিয়াহ: ৩৭,৩৮,৩৯
[১৫] কুরতুব, ইবনে কাসীর।
Vhi golpo lakchan. Na ki hadis…..dur bal bujlam na…..faltu……🤬🤬🤬🤬🤬🤬🤬