কাঠগোলাপের সুবাস পর্ব ৪

0
1940

“সতীন”
“কাঠগোলাপের সুবাস”

৪.
ঘন্টার কাটার টিকটিক শব্দ জানান দিচ্ছে এখন রাত তিনটা বাজে। বাহিরে মৃদু মন্দ হাওয়া বইছে। বাতাসের ঝাপটায় গাছের পাতার নড়চড়ের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে স্পষ্ট। আকাশে মেঘ জমেছে। একটু পরেই হয়ত বৃষ্টি নামবে।

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি বারান্দার গ্রিল ভিজিয়ে দিয়ে গেলো। সেদিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে সাদ। বৃষ্টি তার খুব পছন্দের। কিন্তু এই মুহুর্তে সে তা উপভোগ করতে পারছে না। হুমায়রার কণ্ঠে ধ্যান ভাঙলো সাদের।

— “সে কি আপনার প্রেমিকা হয়?” ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বললো হুমায়রা।
— “না।”
— “তাহলে? কিসের সম্পর্ক আপনাদের?”
— “প্রথমে বন্ধুত্বের ছিলো। এরপর ফিয়্যান্সে।”

হুমায়রা আহত দৃষ্টিতে সাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
— “তাহলে উনাকে বিয়ে করেননি কেনো?”
— “খাদিজার একটা সমস্যা ছিলো। সে কখনো মা হতে পারবে না। সবসময় হীনমন্যতায় ভুগতো। অফিসের একটা অনুষ্ঠানে ওর সাথে আমার পরিচয় হয়। ওর সম্পর্কে জানার পর একটা ভালোলাগা তৈরি হয়। তারপর দুজনে মিউচুয়াল ভাবে সিদ্ধান্ত নিলাম এক বছর পর বিয়ে করবো। কিন্তু তার আগেই তুমি চলে এলে।”
— “আমাকে তাহলে বিয়ে না করতেন।”
— “আমার মায়ের তোমাকে পছন্দ হয়েছিলো বলে বিয়ে ঠিক করে। এদিকে রবিন তোমার সম্পর্কে এতোকিছু বলে আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছিলো। তাই রাগের বসে তোমাকে বিয়ে করে ফেলি।”
— “আমি না থাকলে এতোদিনে আপনারা বিয়ে করে নিতেন?”
— “তোমার আমার বিয়ে যেদিন হয়েছিলো সেদিনই খাদিজা আর আমি বিয়ের তারিখ ফিক্সড করি। এবং করেও নিতাম। কিন্তু তার আগেই…।”
— “তার আগেই আমি আপনাদের মাঝে চলে এসেছি?”
— “(—–)”

হুমায়রা দুইহাতে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে উঠে। নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছে। একটা কীট মনে হচ্ছে। যে সবসময় অন্যের সুখ নষ্ট করে। প্রথমে ভাইয়ের সুখ আর এখন এদের দুজনের মাঝে এসে….। হুমায়রা আঁচলে মুখ মুছে বললো,

— “জানেন আমার ভাবি বলেছিলো আমি এমন একটা জীব যে সবসময় অন্যের সুখে নজর লাগাই। এতোদিন বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু এখন মনে হয় ভাবি সত্যিই বলেছিলো।”
— “(—–)”
— “আপনি এখন কি চান?”
— “কি চাইবো?”
— “কিছুই কি চান না?”
— “(—-)”
— “আমি জানি আপনার কি চাই। সেদিন বলেছিলেন না, এই সম্পর্কের কোনো মানে হয়না। মুক্ত করে দিলেই সমস্যা মিটে যাবে। আপনি খাদিজা আপুকে বিয়ে করে নিন। আর আপনি আমাকে ডিভোর্স দিতে পার…..।”

হুমায়রা চোখ মুখ খিঁচে ফেলে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে। সাদ হুমায়রার হাত চেপে ধরে বললো,
— “অনেক বলেছো আর আমি শুনেছি। আর একটা কথাও শুনতে চাচ্ছি না। বলিনি আমি, আমি তোমাকে মন থেকে মেনে নিয়েছি? ভালোবাসি বলিনি? তাহলে এখন মুক্তির কথা কেনো আসছে? যখন বলেছি তখন পরিস্থিতি ভিন্ন ছিলো এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আর একবার ওই শব্দটা মুখে আনলে একদম গেঢ়ে ফেলবো। ইডিয়ট…।”

হুমায়ার মুখটা লাল হয়ে গেছে। থাপ্পড়ের আঘাতে দুই আঙুলের দাগ বসে গেছে। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদে মেয়েটা। সাদ হুমায়রার আঘাতের জায়গায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,

— “চুপ। আর কেঁদো না। আমি কি বলেছি আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো? আমার আরো তিনটা বিবি থাকলেও তুমি আমার কাছে আমার লাজুকরাণীই থাকবে।”
— “আপনি উনাকে ছেড়ে দিবেন?”
— “হুম! আপাতত ওটাই ভাবছি।”
হুমায়রা মাথা তুলে সাদকে বললো,
— “উনাকে ছেড়ে না দিয়ে আপনি মাসনা করে নিন।”
— “এটা কি বলছো তুমি। এটা কি সম্ভব?”
— “হ্যাঁ সম্ভব। উনার সাপোর্টের প্রয়োজন। আর আপনি যেহেতু আগে থেকেই চেয়েছেন তাহলে এখন সেই কাজ করলে সমস্যা কি?”
— “ধুর কি যে বলোনা। মানুষ একজন সামলাতে পারেনা। আর আমি দুইজন কিভাবে সামলাবো?”
— “আপনার বিবিদের সাথে আপনি সংসার করবেন নাকি মানুষ সংসার করবে?”
— “এভাবে বলছো কেনো?”
— “কিভাবে বলেছি?”
— “রেগে।”
— “বেশি রেগে?”
— “হুম..!”
— “ভালো হয়েছে। হুহ…! আর আপনি যে আমাকে চড় মেরেছেন সেটা?”
— “তুমি যে আমাকে ছেড়ে যাবার কথা বললে সেটা?”
— “ওটা তো আমি….।”
— “একদম চিবিয়ে ফেলবো যদি আরেকবার ভুল করে ওই শব্দটা মুখে আনো।”
— “উউম…! আচ্ছা ছাড়ুন।”

হুমায়রা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় গড়িয়ে পরলো। সাদ অপর পাশে বসে বললো,

— “এই মেয়ে..!”
— “জ্বী।”
— “খুব ব্যাথা পেয়েছো তখন?”
— “না। আরাম পেয়েছি। এতোই আরাম পেয়েছি যে চোখে পানি চলে এসেছে।”
— “দুঃখিত। তখন তোমার মুখে ওই কথাটা শুনে রাগ উঠে গেছিলো।”
— “আপনি উনাকে বিয়ে করে নিন।”
সাদ হুমায়রার পাশে শুয়ে হুমায়রার দিকে ফিরে বললো,
— “ব্যাপারটা কেমন দেখায় না?”
— “কেমন দেখায়?”
— “ওসব বাদ দাও।”
— “উনার সাহায্যের প্রয়োজন। উনার দায়িত্ব নিবে এমন কাউকে প্রয়োজন। আপনি সেই দায়িত্ব নিয়ে নিন।”

সাদ হুমায়রাকে টেনে এনে নিজের ডান বাহুর উপর শুইয়ে দিয়ে বললো,
— “মাসনার সব আদেশ নিষেধ জানো তো?”
— “হুম জানি। তাইতো বলছি আপনাকে।”
— “আমি যদি সমতা করতে না পারি? জানো তো আমার অবস্থা কেয়ামতের দিন কেমন হবে?”
— “আমার পুরো বিশ্বাস আছে আপনি সেটা পারবেন।”
— “মনটা যদি একজনের দিকে ঝুকে যায়?”
— “মন একজনের দিকে ঝুকে যাওয়ার পরেও যে আল্লাহর ভয়ে বিবিদের মাঝে সমতা রাখে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন সেটা কি আপনি জানেন না?”
— “হুম জানি।”
— “দেখুন উনি কখনো মা হতে পারবেন না। এই ফিতনাময় সমাজে উনি মাহরাম পুরুষ ছাড়া কিভাবে চলবে? মানছি উনার ভাই বা বাবা আছেন। কিন্তু একজন নারীর স্বামী সাপোর্টার হিসেবে থাকা আর বাবা -ভাই সাপোর্টার হিসেবে থাকার চেয়ে উত্তম নয়?”
— “হুম…। এটা ঠিক বলেছো। আর ওর বাবা-ভাই নেই। ওরা তিন বোন। সবার বিয়ে হয়েছে শুধু ওর এই সমস্যাটার কারণে বিয়ে হয়নি এখনো।”
— “তাহলে আপনার আরো আগে উনাকে হালাল করে নেয়া উচিত। এভাবে একাকী না থেকে উনি আপনার মাসনা হয়ে গেলে সেই একাকীত্ব ঘুচবে। বুঝতে পারছেন আপনি?”
— “হুম বুঝেছি। কিন্তু সমাজ কি বলবে? পাড়া প্রতিবেশী কি বলবে? সবাই তো চরিত্রহীন ট্যাগ দিবে। বলবে কুমারী বউ থাকতেও আবার বিয়ে করেছে তার মানে চরিত্র ঠিক নেই। বলবে না বলো?”

হুমায়রা রেগে গেছে। ফট করে উঠে বসলো। ক্ষোভ নিয়ে বললো,

—“এই সমাজের মানুষের কথা বলছেন আপনি? আপনি জানেন বর্তমানে বাংলাদেশে একজন ছেলের বিপরীতে তিনজন নারী জন্ম নিচ্ছে। যদি সব পুরুষ একজন নারীকে বিয়ে করে তাহলে বাকি নারীদের কি হবে? বাকিরা কই যাবে? সমাজ ওদের ব্যবস্থা নিবে? আচ্ছা ওদের সব দায়িত্ব, চাহিদা পূরণ করলো। তারপর? ওদের যে জৈবিক চাহিদা আছে সেটার কি হবে? ওরা কি পাব্লিক প্রোপার্টি হবে? আমি নিশ্চয়ই চাইবো না আমার বোন পাব্লিক প্রোপার্টি হোক। আপনিও নিশ্চয়ই চাইবেন না আপনার বোন পাব্লিক প্রোপার্টি হোক। এই সমাজের মানুষের মস্তিষ্ক পচে গেছে। অন্তরটা দুর্গন্ধে ভরে গেছে। ঈমাণ নষ্ট হয়ে গেছে। আল্লাহভীতি তো নাই বললেই চলে। আর রাসূলের সুন্নাহর প্রতি ভালোবাসা তো এদের একেবারেই নেই। এরা একজন বিবাহিত পুরুষের পরকিয়া সাবলীল ভাবে মেনে নিতে পারে। কিন্তু যখন সে নিজের চরিত্রের হেফাজতের জন্য মাসনা-সুলাসা-রুবায়া করবে তখনই এদের গা জ্বলে উঠবে। আসলে এদের সমস্যা ওই পুরুষ বা তার একাধিক বিয়ের সাথে নয়। তাদের মূল সমস্যা হচ্ছে ইসলামের এই সুন্দর বিধানের সাথে। যদি এই সুন্দর বিধান সমাজে প্রচলিত থাকে তাহলে তো তারা ওইসব নিষিদ্ধ পল্লী চালু করতে পারবে না। নারীদের পণ্য এবং ভোগের বস্তু বানাতে পারবে না। তাই তারা আল্লাহর বিধানটাকে সমাজে নেগেটিভ ভাবে প্রচার করেছে।”

সাদ ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে উঠে বসলো। হুমায়রাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বললো,

— “ওকে কুল। এতো হাইপার হচ্ছো কেনো? আমি তো বুঝেছি ব্যাপারটা। এবং আমি এটা নিয়ে ভাবছি।”
— “বেশি রেগে গেছিলাম?”
— “জ্বী। একদম টমেটোর মতো লাগছিলো। একটা কামড় দিতে মন চেয়েছিলো। কিন্তু তুমি যে হট হয়ে গেছিলে আমাকে না পুড়েই ফেলো।”
— “একদম দুষ্টামি করবেন না। আপনি অনেক পচা। আমাকে আগে এসব ব্যাপার জানান নি কেনো? আমার নিজেকে অনেক ছোট মনের মানুষ মনে হচ্ছে।”
— “তুমি কষ্ট পাবে বলে তোমাকে জানাই নি।”
— “আর এই যে, আমার স্বামী একজন বেগানা নারীকে হালাল করে না নিয়ে জেনা করছিলো তাতে মনে হয় আমি খুব সুখ পেয়েছি?”
— “আমি ব্যাপারটা সমাধানের চেষ্টা করছিলাম। খাদিজাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করছিলাম।”
— “আপনি উনাকে বিয়ে করে নিন। দেখুন আপনার সব ধরনের সামর্থ্যেই আছে। আর আল্লাহ একজন পুরুষকে সেই রকম যৌন শক্তি দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে করে সে চারজন নারীকে একসাথে সন্তুষ্ট রাখতে পারে। আপনার সামর্থ্য আছে বলেই আমি আপনাকে উৎসাহিত করছি। সামর্থ্য না থাকলে এটা কখনোই আপনার জন্য জায়েজ হতো না। আর আমিও এটা নিয়ে বলতাম না।”
— “হুম বুঝেছি। আমি আরেকটু ভেবে দেখি। শুধু ফ্যান্টাসীতে ভুগে আমি মাসনা করতে চাইনা। বিয়ে মানেই দায়িত্ব। দায়িত্ব মানেই চাপ। যার এই চাপ, দায়িত্ব নেয়ার সামর্থ্য আছে শুধু তার জন্যই একাধিক বিয়ে জায়িজ।”
— “ঠিকাছে ভাবুন। আপনি চাইলে ইস্তিখারা করতে পারেন। এতে আপনার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া আরো সহজ হবো।”
— “হুম। এটা ঠিক বলেছো। আমাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে হীনমন্যতায় না ভুগার জন্য আল্লাহ কত সহজ একটা নিয়মও দিয়েছেন আমাদের তাইনা? তারপরেও আমরা গাফেল, উদাসীন।”
— “হ্যাঁ। আসুন এবার শুয়ে পরি।”

সাদ শুতেই হুমায়রা সাদের ডানহাতের বাহুতে মাথা রেখে শুয়ে পরলো। একহাতে সাদের কোমড় জড়িয়ে ধরে রেখেছে। দুজনেই চুপচাপ। সাদ খুব ভাবছে ব্যাপারটা নিয়ে। এইদিকে হুমায়রা ভাবছে খাদিজাকে নিজের বোনের মতো করে গ্রহণ করে নিবে। একজন বড় বোন পাবে। যে তাকে আদর, শাসন, ভালোবাসবে। বেশ কিছুক্ষণ সময় পর সাদ বললো,

— “হুমায়রা পাখি।”
— “জ্বী।”
— “আমি দ্বিতীয় বিয়ে করলে তোমার খারাপ লাগবে না? মেয়েরা তো স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে চায়না। তোমার জেলাস হবে না যখন আমি দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে রাত্রিযাপন করবো। তাকে নিয়ে ঘুড়তে যাবো। খারাপ লাগবে না?”
— “সত্যিই বলতে খুবই খারাপ লাগবে। আর নারীর স্বভাবটাই এমন। স্বামীকে শেয়ার করতে চায়না। কিন্তু আমি এইটা থেকে আল্লাহ বিধান এবং তাঁর রাসূলের সুন্নাহকে আগে অগ্রাধিকার দিবো। আমার যতই কষ্ট হোক আমি আল্লাহর বিধানকে অমান্য করতে পারি না। আমি চাইবো না কোনো মেয়ে লাঞ্চিত হোক, অপদস্থ হোক। আমি স্বামীর ভাগ দিলে যদি একজন নারী তার সতীত্ব, সম্মান, মর্যাদা পায় তাহলে আমি আপত্তি করবো না। আল্লাহর কাছে বিশেষ ভাবে দোয়া করবো যাতে তিনি আমার হৃদয়টা প্রসারিত করে দেন। এবং হিংসাত্মক আচরণ গুলো লাঘব করে দেন।”

সাদ মায়াভরা চোখে হুমায়রার দিকে তাকিয়ে হুমায়রার কথা শুনছিলো। হুমায়রাকে নিজের আরেকটু কাছে টেনে নিলো। কপালে গভীরভাবে ঠোঁট স্পর্শ করালো।

— “সত্যিই তুমি আমাকে ধীরে ধীরে আরো আল্লাহপ্রেমী হতে সাহায্য করছো। আমি তোমাকে পেয়ে সত্যিই খুশি, যে আমার থেকে আল্লাহ এবং রাসূলের প্রতি আগে সম্মান প্রদর্শন করে। আল্লাহর আদেশ মাথা পেতে নেয়। আল্লাহ এবং রাসূলের আদেশ ‘শুনলাম এবং মানলাম’ -এর মাঝে কোনো বিতর্ক, যুক্তি আনেনি। সত্যিই আমি খুব ভাগ্যবান। আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। তিনি আমাকে তোমার মতো একজন সুহৃদয় নারীর সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন।”

হুমায়রা মুচকি হাসে। সাদের দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো। তারপর বললো,

— “সব প্রসংসা আল্লাহর। তিনি আমাকে এই ব্যাপারে আমার হৃদয়টা প্রসারিত করে দিয়েছেন।”
— “আমি কাল যোগাযোগ করবো খাদিজার পরিবারের সাথে। তবে আগে ইস্তিখারা করবো। রেজাল্ট যাই আসবে সেটাই অবনতচিত্তে মেনে নেবো।”

দুজনেই আবার চুপ হয়ে যায়। হুমায়রা সাদের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সাদ হুমায়রার চুলের ঘ্রাণ নিতে চুলে নাক ডোবায়। কিছুক্ষণ পর হুমায়রা বললো,

— “জানেন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন পৃথীবির শ্রেষ্ঠ একজন আদর্শ স্বামী। উনার বিবি আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআ’লা কিন্তু খুব জেলাস করতেন বাকি বিবিদের নিয়ে। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খাদিজা রাদিআল্লাহু আনহুর প্রসংশা করতেন আম্মাজান আয়েশা খুব জেলাস করতেন। একদিন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআ’লার ঘরে অবস্থারত অবস্থায় উনার আরেক বিবি সাফিয়া রান্না করা তরকারি পাঠালেন। আম্মাজান আয়েশা ঈর্ষাকাতর হয়ে সেই পাত্র ভেঙে ফেললেন। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই পাত্র কুড়াতে কুড়াতে ভৃত্যকে বললেন’ ‘তোমাদের মায়ের (আয়েশার) ঈর্ষা এসে গেছে।’ একবার আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআ’লা সওয়া রাদিআল্লাহু তাআ’লার গালে তরকারির ঝোল লাগিয়ে দিলেন। তিনি রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সওদা রাদিআল্লাহু আনহুকে বললেন তিনিও যেনো আয়েশার গালে ঝোল লাগিয়ে দেয়। দুজনে গালে ঝোল মাখামাখি করে হেসে ফেললেন। আবার যয়নব রাদিআল্লাহু তাআ’লা আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআ’লাকে কড়া কথা শোনান। আম্মাজান আয়েশাও যথাযথ জবাব দেন। সেদিন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আম্মাজান আয়েশার পক্ষ নিয়েছিলেন। আবার সাফিয়া রাদিআল্লাহু তাআ’লার খাটো ব্যাপারটা নিয়ে আম্মাজান আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআ’লা তীর্যক মন্তব্য করলেন। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফিয়ার পক্ষ নিয়েছিলেন। এবং আম্মাজান আয়েশাকে সর্তক করে বললেন, ‘আয়েশা তুমি যেই কথা বলেছো সেটা যদি সমুদ্রে পানিতে ছেড়ে দেয়া হতো তাহলে সমুদ্রের পানি দূষিত হয়ে যেতো।’ আরেকদিন ঘরে এসে দেখলেন আয়েশা রাঃ মাথা ব্যাথায় অতিষ্ঠ হয়ে বলছেন, “হায়! মাথা ব্যাথা।” রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মজা করে বললেন, “আয়েশা! বরং আমার মাথায় ব্যথা হয়েছে। তোমার কোন সমস্যা নেই। তুমি যদি আমার পূর্বে মারা যাও তবে আমি তোমার পাশে থাকব, তোমাকে গোসল দিব, তোমাকে কাফন পরাব এবং তোমার জানাযার সলাত আদায় করব।” আয়েশা রাঃ বললেন, “হু! আমি মারা যাই (আর সে রাতেই আপনি আমার ঘরে অন্য বিবিকে নিয়ে থাকেন।)” জবাব শুনে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেসে ফেললেন। এইযে, উনারা উম্মুল মুমিনুল হয়েও স্বামীর ব্যাপারে জেলাস হতেন। তারপরেও কিন্তু স্বামীকে আল্লাহর বিধান পালনের ক্ষেত্রে নিষেধ করেননি। উনারাই তো আমাদের আদর্শ। উনারাই আমাদের রোল মডেল। তাহলে আমি উম্মাতে মুহাম্মাদী হয়ে কিভাবে তাদের আদর্শের খিলাফ করি?”

সাদ হুমায়রার মুখে অজস্র চুমু একে দিলো। বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মুখটা উঁচু করে আবারো আজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিলো। হুমায়রা চোখ করে মুচকি হাসছে। সাদ মায়াবী কণ্ঠে বললো,

— “একজন নারী এতোটা মায়াবী কি করে হতে পারে? এতোটা মায়াবী বউটাকে আমি অন্যের কথায় কষ্ট দিয়েছি। আমার মায়াবীরাণী প্লিজ ক্ষমা করো আমায়। খুব গিলটি ফিল হচ্ছে।”
— “ওসব বাদ দিন তো। ওইসব দিন আমি আর মনে করতে চাইনা।”
— “আমাদের সমাজে বিয়েটা এতোই কঠিন যে, সেখানে মাসনা করা আরো সিরিয়াস বিষয়।”
— “হুম। সমাজ ধ্বংস হয়ে গেছে। সাথে ধ্বংস করেছে আমাদের যুবক-যুবতীদের।”
— “এই সমাজে বিয়ে কঠিন। অথচ জেনা-ব্যাভিচারকে কতটা সহজলভ্য করে দেয়া হয়েছে। তাই এখন কেউ চাইলেই সহজে বিয়ে করে চরিত্র হেফাজত করতে পারবে না।”
— “এই সমাজের ছেলেরা বিধবা/ডিভোর্সি বিয়ে করতে রাজি নয়; কিন্তু অন্যের বেস্টফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডে আপত্তি করে না।

এই সমাজের মেয়েরা সুযোগ্য কারো বৈধ মাসনা-সুলাসা-রুবায়া হতে রাজি নয়, কিন্তু পরকীয়াবাজ ও যিনা-ব্যাভিচারকারীর সংসার করতে রুচিতে বাধে না।

বলি কী, এমন সমাজের অশ্লীলতা ও পাপাচার রুখিবার সাধ্য কাহার!” (~জাফর বিপি)

_______________________
ফজরের আযান পরেছে একটু আগে। সাদ এখনো তার লাজুকরাণীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। হুমায়রা সেই কখন ঘুমিয়ে গেছে। ঘুম আসেনি সাদের। হুমায়রার কথাগুলো ভাবছিলো আর হুমায়রাকে দেখতে দেখতে সকাল হয়ে গেছে।

মসজিদে রওনা দেয়ার আগে হুমায়রাকে ডেকে দিয়ে গেলো সাদ। হুমায়রা নামাজ পড়ে, কুরআন তেলাওয়াত করে রান্নাঘরে গেলো। এক কাপ কফি নিয়ে উপরে উঠে এলো।

‘নবীজীর সংসার’ বইটা নিয়ে বারান্দার সোফায় আয়েশ করে বসলো। বই পড়ছে আর কফি খাচ্ছে। এমন সময় সাদ এলো। হুমায়রাকে এক নজর দেখে মুচকি হেসে রুমে এসে শুয়ে পরলো। রাতের বেলা একটুও ঘুম হয়নি।

.
দুপুরের দিকে হাসির শব্দে ঘুম ভাঙলো সাদের। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকিয়ে মুচকি হাসে। একহাতে মুখের পানি মুছে নিয়ে বললো,

— “আজ এতো ভালোবেসে ঘুম ভাঙানোর কারণ? ভালোবাসা চাই নাকি?”
— “কচু। জোহরের নামাজে যান।”

সাদ নামাজ পড়ে এসে হুমায়রার হাত ধরে বললো,

— “বউ আমার ইস্তিখারার রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে।”
— “আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে আর দেরি না করে শরিয়ত মোতাবেক মাসনা সেরে ফেলুন।”

সাদ হুমায়রাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

— “আমার খুব ভয় লাগছে। যদি আমি সমতা করতে না পারি? যদি একজনের দিকে ঝুকে পরি?”
— “রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিন্তু মনের দিক থেকে আম্মাজান আয়েশাকে একটু বেশি পছন্দ করতেন। কিন্তু তারপরেও তিনি কোনো বিবিকে অসম্মান, কষ্ট দেননি। সব বিবিরাই উনার কাছে রাণীর মতোন ছিলেন। আল্লাহ এবং তাকদীরে বিশ্বাস রাখুন। আমাদের তাকদীরে যা আছে সেটাই ঘটবে আমাদের সাথে। তবে আল্লাহ আমাদের নিরাশ করবেন না ইনশাআল্লাহ।”
— “আমি তোমার আমার ব্যাপারে সব জানিয়েই তারপর মাসনা করবো। যদি ওদের আপত্তি থাকে তাহলে আমি ফিরে আসবো।”
— “আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। সব সহজ হবে দেখবেন।”
— “ইনশাআল্লাহ।”

.
সাদ রুমে ঢুকে দেখলো খাদিজা খাটে বসে উদাস নয়নে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের নিচে কালি পরেছে। মুখটা শুকিয়ে গেছে। এই কয়েকদিনে কেমন হয়ে গেছে মেয়েটা। সাদের অন্তরটা মুচড়ে উঠে। এই মেয়েটা সমাজে কত অবহেলিত। কত পুরুষ দেখে গিয়ে বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। কতবার রিজেক্ট হয়েছে।

জীবনে সব সুখের আশা একেবারে ছেড়েই দিয়েছিলো। তখনই সাদের আগমন ঘটে তার জীবনে। খাদিজা প্রথমে মানতে চায়নি সাদকে। কারণ সে জানতো, তার মা না হতে পারার ব্যাপারে জানলে সাদও তাকে রিজেক্ট করবে। কিন্তু কিভাবে যেনো সাদ তাকে পছন্দ করে এবং বিয়ের স্বপ্ন দেখালো। তারপর আবার সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে।

— “এই বুড়ি শালিক…!”

খাদিজা চমকালো। চমকে তাকালো দরজার দিকে। খুব বেশিই অবাক হয়েছে। সে এই মুহুর্তে সাদকে একেবারেই আশা করেনি এখানে। খাদিজা ধরেই নিয়েছিলো সাদ আর কোনোদিন যোগাযোগ করবে না। তার জীবনে স্বামীর সুখ আসবে না। এসব ভেবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু এখন…? স্বপ্ন নয়তো? সাদ কি সত্যিই এসেছে?

— “এই বুড়ি শাকিল। এতো কি ভাবছো? আমি সত্যিই এসেছি। যাও বউ সাজো। আজই আমাদের বিয়ে।”
— “ভ্রম হচ্ছে আমার। দিনে দুপুরে এমন হিপনোটাইজ কি করে হয়ে গেলাম?” খাদিজা চোখ বন্ধ করে কপাল চাপড়ে বললো।

সাদ হেসে ফেলে। খাদিজার কপালে টোকা দিয়ে বললো,

— “হিপনোটাইজ হওনি। আমিই সত্যিই এসেছি।”
— “কেনো এসেছো?”
— “তোমাকে বউ করে নিতে।”
— “দয়া করছো আমাকে?”
— “না। দয়া করছি না। আমি তোমার দায়িত্ব নিতে চাই। তোমার মাথার উপরের ছায়া হতে চাই। এই সমাজের কু-দৃষ্টি, কু-মন্তব্য থেকে এই বুড়ি শালিকটাকে রক্ষা করতে চাই। তার ঢাল হতে চাই। কোনো আঘাত আসার আগে তার রক্ষাকবচ হতে চাই।”
খাদিজার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো। অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সাদের দিকে। সাদ গলা খাকাড়ি দিয়ে বললো,
— “তার আগে একটা ব্যাপার ক্লিয়ার করতে চাই। তুমি আমার মাসনা হচ্ছো। আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। তোমাকে সতীনের ঘর করতে হবে। সতীনের সাথেই থাকতে হবে। রাজি আছে? তোমার মায়ের আপত্তি নেই। এখন তোমার মত দাও।”

খাদিজা চোখ নামিয়ে নিলো। এমন সময় খাদিজার মা লিমা ঘরে ঢুকে বললো,

— “ওর আর কিসের মত চাইছো তুমি? ছোট দুটোর বিয়ে হয়ে গেছে। আর ওকে এখনো বিয়ে দিতে পারলাম না। বয়স তো আর কম হলো না। পয়ত্রিশ হয়েছে। এই বয়সে যে সতীনের ঘরে যাবে এটাই অনেক। তুমি ব্যবস্থা করো।”
— “আমি তাও খাদিজার মুখ থেকে শুনতে চাই।”

খাদিজা কিছু না বলে শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। সাদ বেরিয়ে গেলো আয়োজনের জন্য। ফিরে এলো চারজন পুরুষ নিয়ে। একজন কাজি, একজন খাদিজার মামা আর বাকি দুইজন সাদের বন্ধু।

খুব সাদামাটা ভাবেই বিয়েটা হয়ে গেলো। সাদ নিজেই সবাইকে খেজুর বিতরণ করলো। খাওয়া দাওয়া শেষে খাদিজাকে নিয়ে ফিরে আসার জন্য বেরিয়ে পরলো সাদ।

খাদিজা দরজার কাছে আসতেই লিমা বললো,

— “একবার ওই ঘরে পা রাখ। তারপর আমি তোকে সব ব্যবস্থা করে দিবো। ওই সংসার, সাদ সব তোরই হবে।”
— “মানে?”
— “তুই এতো মাথামোটা কেন বলতো? যা সাদের সাথে। আমি পরে সব বুঝিয়ে দিবো।”

খাদিজা রোবটের মতো মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো। তেমন একটা সাজেনি। হালকা গোলাপি একটা কাতান শাড়ি পরেছে। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর একটু কাজল দিয়েই সেজেছে।

গাড়ির কাচ নামিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলো খাদিজা। অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে তার। অবশেষে সেও কারো স্ত্রী হয়েছে। এই জীবনে কত লোকের চোখের খোরাক যে হয়েছে খাদিজা নিজেও জানেনা। পাত্রপক্ষ এলে খাদিজার রুপ দেখে ঠিকই পছন্দ করে। কিন্তু যখন শুনে সে আর মা হতে পারবে না তখনই বাঁকা চোখে তাকায়। কত পাত্রের কুরুচিপূর্ণ আবদার যে শুনতে হয়েছে। আজ শেষ মেশ এমন একজনের স্ত্রী হলো যে তাকে সম্মান করবে।

হালকা ঝাকুনিতে খাদিজা অনুভব করলো তার মাথাটা কেউ যত্নে কাধে রেখেছে। নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসলো খাদিজা। সাদ মুচকি হেসে বললো,

— “ঘুম হয়েছে? চলো এবার ভেতরে যাওয়া যাক।”

খাদিজা মাথা নাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো। বাড়িটার দিকে একবার তাকালো। খুব সুন্দর বাড়ি। এই প্রথমই এসেছে এখানে। এর আগে কখনো সাদের বাড়িতে আসেনি খাদিজা।

দরজার অপর প্রান্তে সতেরো বছর বয়সী একজন রুপবতী নারীকে দেখে খাদিজা চমকালো। এতক্ষণ ভুলেই গেছিলো যে সাদের আরেকজন স্ত্রী আছে। খাদিজা ভালো করে তাকালো হুমায়রার দিকে। হাসি-খুশি প্রাণবন্ত মেয়েটা। ঘরে সতীন আসলে কেউ এতোটা হাসি-খুশি থাকে খাদিজা এই প্রথম দেখলো।

হুমায়রা মিষ্টি হেসেই বরণ করলো খাদিজাকে। ভেতরে সোফায় বসালো। খাদিজা এবং সাদের হাতে নারিকেলের নাড়ু তুলে দিয়ে বললো,

— “মিষ্টির ব্যবস্থা করতে পারিনি। বাসায় নারিকেল ছিলো তাই দিয়েই এই অল্প সময়ে এটা করেছি। কিছু মনে করো না আপু।”
— “এইটাই যে করেছো তাতেই অনেক।” সাদ মিষ্টি হেসে বললো।

খাদিজা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো হুমায়রার দিকে। স্বামী সতীন নিয়ে বাড়ি ফিরেছে কোথায় ঝগড়া করবে। সেটা না করলে বরণ করে নিচ্ছে। খাদিজা যানপরানই অবাক হলো। একটা ভালোলাগাও মন জুড়ে ছেয়ে গেলো।

হুমায়রা নিজেই খাদিজাকে রুমে নিয়ে গেলো। হুমায়রার পাশের রুমেই খাদিজার জন্য একটা রুম সাজিয়েছে। যদিও ফুল নেই। তারপরেও খুব সুন্দর লাগছে। খাদিজাকে বসিয়ে দিয়ে একটা সুন্দর থেকে সূতির শাড়ি দিয়ে বললো,

— “এটা পরে নাও আপু। ভালো লাগবে।”

হুমায়রা ফিরে গিয়ে আবার এসে বললো, “তোমাকে এভাবেই বউ বউ লাগছে। খুব সুন্দর লাগছে।”

খাদিজা অজান্তেই মুচকি হেসে ফেললো। হুমায়রা চলে যেতেই খাদিজা অবাক হলো নিজের কাজে।

.
রাত দশটা।
হুমায়রা সাদকে ঠেলছে খাদিজার কাছে যাওয়ার জন্য। আর সাদ বাচ্চাদের মতো গুটিয়ে বসে রইলো হুমায়রার পাশে। হুমায়রা এবার রেগে বললো,

— “আপনি কি যাবেন? নাকি আমি রুম থেকে বেরিয়ে যাবো?”
— “তুমি খালি আমার সাথে রাগ দেখাও। এমন করো কেনো?”
— “আপনি আপুর কাছে না গিয়ে এখানে বসে আছেন কেনো? উনি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে বুঝতে পারছেন না?”
— “হুম হুম যাচ্ছি।”

সাদ উঠে রুমের বাহিরে এলো। হুমায়রা দরজায় দাঁড়িয়ে সাদের যাওয়ার দিকে তাকালো। সাদ ঘুড়ে হুমায়রার কপালে গভীর চুমু দিলো। খাদিজার রুমের দরজার সামনে এসে আবার তাকালো হুমায়রার দিকে। হুমায়রা রেগে ইশারা করলো ভেতরে যেতে। সাদ মাথা নিচু করে ভেতরে ঢুকে গেলো। সাদ যেতেই হুমায়রা দরজা লাগিয়ে দম ফাটানো হাসি হাসলো। সাদের এতক্ষণের আচরণে এতো হাসি আসছিলো যে, কোনোরকমে চেপে রেখেছিলো। হুমায়রা মনে মনে বললো,

— “উনি পারেও বটে। পুরোই বাচ্চাদের মতো আচরণ করেছে। যেনো মনে হচ্ছে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে।”

হুমায়রা বিছানায় গড়িয়ে পরে। খুব হাসলো। হাসি থামিয়ে বিছানা থেকে উঠে সাদের একটা শার্ট নিয়ে এলো কাবার্ড থেকে। নাকের কাছে এনে লম্বা শ্বাস নিলো। সাদের শার্ট জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো। একটু হলেও খারাপ লাগছে। হুমায়রা সবরের এবং সাহায্যের প্রার্থনা করলো আল্লাহর কাছে। উঠে দু’আকাত নামাজ পড়ে নিলো। এখন একদম হালকা লাগছে। সাদের শার্টটা জড়িয়ে ধরেই আবার শুয়ে পরলো। তলিয়ে গেলো ঘুমে।

চলবে,,,
® “নাহার।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here