“কাঠগোলাপের সুবাস”
১১.
বাসায় ফিরে খাদিজা রুমে এসে বসে পরলো। কেমন যেনো লাগছে। হাতটা বারবার পেটে চলে যাচ্ছে। নিরবে চোখের ফেলছে। হুমায়রা এসে চটপট করে বললো,
— “আপু কোথায় গিয়েছিলে তুমি? ওহ ভুলেই গেছিলাম। তুমি তো হসপিটালে গিয়েছিলে। কি বলেছে ডাক্তার?”
খাদিজা নিরব। পলকহীন মেখের দিকে তাকিয়ে আছে। খাদিজাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে হুমায়রা হালকা ধাক্কা দিলো। খাদিজা ফিরতেই হুমায়রা ভাউ করে মৃদু চিৎকার দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠে। খাদিজা রেগে ধমক দিয়ে বললো,
— “সমস্যা কি তোমার? জ্বালাচ্ছো কেনো? নিজের রুমে যাও। বিরক্ত করবে না।”
এর আগে কখনো এভাবে ধমক দেয়নি খাদিজা। হুমায়রার চোখে পানি চলে এসেছে। ছলছল চোখে খাদিজার দিকে তাকিয়ে আছে। খাদিজা মুখ ফিরিয়ে নিলো। হুমায়রার বেশ অভিমান হলো। তাই অভিমানী হুমায়রা হালকা নাক টেনে উঠে দাঁড়িয়ে মিনমিন করে বললো,
— “দুঃখিত। আর বিরক্ত করবো না।”
হুমায়রার অভিমানী কণ্ঠ শুনে খাদিজার ঘোর কাটল। হুমায়রার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। নিজের ব্যবহারে আরো বেশি অবাক হয়। হুমায়রা চলে যেতে নিলেই খাদিজা খপ করে হাত ধরে টেনে কাছে বসিয়ে বলে,
— “সরি রে। আমার কি যেনো হলো তোকে হঠাৎ বকে দিলাম। প্লিজ অভিমান করিস না।”
হুমায়রার বেশ অভিমান হয়েছে। তাই মুখ ঘুড়িয়ে নিলো। খাদিজা মুচকি হেসে বললো,
— “হুমু পাখিটার অভিমান ভাঙাতে হলে কি কান ধরে উঠবস করতে হবে?”
— “হু!”
— “কিন্তু সমস্যা তো এক জায়গায়। হুমু পাখির সতীন তো হুমু পাখিকে একটা বাবু দিবে। এই অবস্থায় কিভাবে কান ধরে উঠবস করবে?”
হুমায়রা সাথে সাথে খাদিজার দিকে ফিরে জড়িয়ে ধরে বললো,
— “আপু তুমি আমাকে বকা দাও, মারো যা ইচ্ছা করো। কিন্তু আমাকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দিও না।”
— “এই যে কান ধরেছি। আর কখনো করবো না।”
হুমায়রা খাদিজার বুকে মাথা রেখে বললো,
— “আপু জানো আমার না আমার মায়ের কথা মনে নেই। বাবার কথাও মনে নেই। দেখতে কেমন ছিলো তারা দুজন কিছু মনে নেই। তাদের আদর কতটা পেয়েছি, কতটা আমায় ভালোবেসেছে সেটাও আমার মনে নেই। কিন্তু আমি যখন তোমার কাছে থাকি আর তুমি আমাকে ভালোবেসে খাইয়ে দাও, ঘুমের সময় চুলে বিলি কেটে দাও, চুলে তেল লাগিয়ে দাও, আমাকে গল্প শুনাও তখন মনে হয় মায়ের আদর বুঝি এরকমই হয়। আমি তখন ভুলে যাই দুনিয়াতে আমার মা নেই।”
খাদিজার চোখে পানি টলমল করছে। মা ছাড়া বড় হওয়া কতটা কষ্টের সেটা সেই জানে যে মাকে হারিয়েছে। খাদিজা হুমায়রাকে বুকের সাথে চেপে ধরে। কোনোদিন মা হতে পারবে না তাই হুমায়রাকে মায়ের মতো আদর দিয়ে যথেষ্ট আগলে রেখেছে। আর আজ সে মা হবে। আল্লাহ হয়ত অন্যরকম পরিকল্পনা করে রেখেছেন তার জন্য।
_________________
দেখতে দেখতে ছয়মাস পেরিয়ে গেলো খাদিজার প্র্যাগনেন্সির। এখন রিস্ক আরো বেড়েছে। কারণ খাদিজার গর্ভে টুইন বেবি। খাদিজা উপরে ভয় না পাওয়ার ভান করলেও ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছে। নিজের মৃত্যুর জন্য নয়। সন্তান দুটোকে দুনিয়ায় আনতে পারবে না কিনা সেজন্য ভয়। সাদের কোলে তুলে দিতে পারবে কিনা সেজন্য ভয় পাচ্ছে। খাদিজা ইতিমধ্যে বুঝে গেছে তার কিছু হয়ে গেলে সাদ নিজেকে সামলে নিলেও হুমায়রা নিজেকে সামলাতে পারবে না। মেয়েটা দিনদিন যেনো খাদিজার অস্ত্বিত্বের সাথে মিশে যাচ্ছে।
তাই খাদিজা এখন হুমায়রাকে সাথে নিয়ে ঘুমায়। আর সাদ রুমের সোফায় ঘুমায়। খাদিজা ভাবে যদি এই দিনগুলোই জীবনের শেষ দিন হয়ে থাকে। তাই এই দুইজন মানুষকে নিজের খুব কাছাকাছি রাখতে চায় শেষ সময়ে। হুমায়রা এবং সাদ কোনো কমতি রাখে না খাদিজার যত্নের। সাদকে এখনো জানাতে পারেনি তার সমস্যার কথা। সাদ জানলে ভেঙে পরবে।
খাদিজা আবার নিজের জন্য কিছুটা সময় চায় এই বাহানায় হুমায়রা এবং সাদকে একটা আলাদা স্পেস করে দেয়। হুমায়রা প্রথমে ভেবেছিলো খাদিজা মা হওয়ার কারণে সাদ খাদিজার দিকে ঝুকে পরবে। আবার সেই অবহেলিত জীবনে ফেরত যেতে হবে। একাকিত্বের জীবনে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু হুমায়য়াকে অবাক করে দিয়ে সাদ এরকম কিছুই করেনি। সে প্রথম থেকে যতটা দায়িত্বশীল ছিলো এখন আরো বেশি দায়িত্বশীল হয়ে উঠেছে।
.
নাস্তা খেয়ে হুমায়রা খাদিজাকে ধরে ধরে নিচে নামালো। সোফায় বসিয়ে দিয়ে হুমায়রা রান্নাঘরে গেছে রান্না করতে। খাদিজা বসে বসে কুরআন পড়ছিলো। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠে। হুমায়রা আসার আগেই খাদিজা উঠে দরজা খুলে দেখে তার মা দাঁড়িয়ে আছে। সাদও নিচে নেমে এলো। খাদিজা তার মাকে দেখেই রেগে গেলো। বললো,
— “এখানে আবার কেনো এসেছো?”
— “মা আমাকে মাফ করে দে। তোকে না দেখে থাকতে পারছিলাম না।”
— “নতুন কোন প্ল্যান নিয়ে এসেছো সেটা বলো। এসব কথা বাদ দাও।”
— “কোনো প্ল্যান নিয়ে আসিনি। আমি তোকে দেখতে এসেছি। তুই মা হবি আর আমাকে জানাস নি? কেনো রে?”
— “প্রয়োজন মনে করিনি।”
এমন চিৎকার চেচামেচি শুনে হুমায়রাও এলো। সাদ বললো,
— “খাদিজা উনাকে ভেতরে আসতে দাও। উনি হয়ত নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।”
— “ভুল? এটা ভুল ছিলো না। ইচ্ছাকৃত ছিলো।”
লিমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— “আচ্ছা মা মনে করো তো সেই দিনের কথা। যেদিন এক পাত্রপক্ষ আমাকে মিস্ট্রেস হয়ে থাকার অফার দিয়েছিলো। তুমি তাকে যা নয় তাই বলে বকে দিয়েছিলে। কেনো? কারণ তোমার মেয়ের সম্মান নষ্ট করতে চেয়েছিলো বলে। বাজে প্রস্তাব দিয়েছিলো বলে। আর সেই তুমিই কিনা ওই মেয়েটাকে কলঙ্কিত করতে চেয়েছিলে যে তোমার মেয়ের উপর দয়া করে তার স্বামীর ভাগ দিয়েছিলো। কিভাবে পারলে মা? বুক কাঁপলো না?”
— “মাফ করে দে আমায়। আমি রাণীর কুমন্ত্রণায় সাড়া দিয়ে ফেলেছিলাম।”
— “ওই মহিলা যেহেতু তোমার এতো আপন। তুমি ওই মহিলার কাছেই যাও।”
— “প্লিজ আমাকে চলে যেতে বলিস না। এতোদিন তোকে না দেখে থাকতে আমার কষ্ট হয়েছে। তুই আমার প্রথম সন্তান। যেদিন তুই দুনিয়ায় এসেছিলি তোকে কোলে নিয়ে কত যে খুশি হয়েছি সেটা শুধু আমিই জানি। বিয়ের দীর্ঘ নয় বছর পর তুই আমার কোল আলো করে এসেছিলি। সেই তোকে আমি এতোগুলো দিন না দেখে কাটিয়েছি। আমারও তো কষ্ট হয় তাইনা? ক্ষমা করা যায়না তোর এই অধম মাকে?”
খাদিজা মুখ ঘুড়িয়ে নিলো। নিশব্দে কেঁদে ফেলেছে। লিমা হুমায়রার কাছে গিয়ে বললো,
— “তুমি আমাকে মাফ করে দাও মা। আমি তোমার ভাবীর চক্রান্তে পরে গেছিলাম। আমি লজ্জিত। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।”
— “আন্টি এভাবে বলবেন না। আপনার প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই।”
সাদ খাদিজার কাছে গিয়ে বললো,
— “ক্ষমা করে দাও না। উনি অনুতপ্ত।”
বেশকিছু সময় পর খাদিজা তার মায়ের সাথে স্বাভাবিক হয়ে উঠলো। লিমা খাদিজাকে বলে দিচ্ছে কিভাবে করবে কিভাবে চলবে।
এতোকিছুর পরেও লিমার মনে সন্দেহ যদি হুমায়রা কোনো ক্ষতি করে। তাই হুমায়রাকে চোখে চোখে রাখে লিমা। কিন্তু তেমন কিছুই পায়নি। রাতেরবেলা খাদিজার সাথে কথা বলতে যাওয়ার জন্য লিমা রুমের কাছে এসে দেখলো হুমায়রা খাদিজার পায়ে তেল মালিশ করে দিচ্ছে। আরাম পেয়ে খাদিজা আরো গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। লিমা মনে মনে বললো,
— “আমার মেয়েটা সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থানে আছে।”
লিমা শান্তি পেলো। মুখে না বললেও মনে মনে হুমায়রার জন্য দোয়া করলো। পরেরদিনই লিমা চলে গেছে।
দেখতে দেখতে খাদিজার ডেলিভারির দিন চলে এসেছে। লিমা, হুমায়রা সব গুছিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেলো। খাদিজাকে নিয়ে এম্বুল্যান্স -এ করে সাদ আগেই চলে গেছে।
.
ডেলিভারির সময় ভিষণ ভয়ে পেয়ে যায় খাদিজা। সাদের হাত শক্ত করে ধরে কেঁদে ফেলে। হুমায়রা দম মেরে বসে আছে। সাদ অনেক বুঝিয়ে ডেলিভারি রুমে পাঠিয়েছে। প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই খাদিজার মনে আলাদা একটা শক্তি এসে ভর করে। চেহারার সামনে হুমায়রা এবং সাদের মুখটা ভেসে উঠে। এবার যেনো একটা এদৃশ্য শক্তি তাকে সাপোর্ট করছে।
— “হুমায়রা কোথায়?”
— “ওমাহ! আমি বাবুর বাবা আছি আমাকে দিচ্ছো না কেনো বাবুদেরকে কোলে নিতে? প্রথমেই সতীনকে খুজচ্ছো।”
— “চুপ করো৷ আর বলো হুমায়রা কই?”
— “তুমি গিয়ে খুজো তোমার সতীনকে। হুহ..!”
— “আমি উঠতে পারলে তোমাকে আর বলতাম না।”
হুমায়রা ভেতরে এসে বললো,
— “কি হয়েছে? ঝগড়া করছো কেনো তোমরা।”
— “আয় এদিকে। আমার বাবুদের আগে তুই কোলে নিবি।”
হুমায়রা তাড়াতাড়ি কাছে গেলো। খাদিজার দুইটা টুইন মেয়ে হয়েছে। হুমায়রা বিছানায় বসতেই কোলে নিলো দুজনকে।
— “দুইটা পুতুল হয়েছে তোমার আপু।”
— “তোর মতো হয়েছে। আর ওরা তোরও মেয়ে।”
— “সত্যিই? আমাকেও আম্মু ডাকবে।”
— “তো তুমি কি চাও খালাম্মা ডাকুক?” সাদ বললো।
সবাই হেসে ফেললো। হুমায়রা ভেঙচি দিয়ে বাবুদেরকে আদর করতে ব্যস্ত। এরপর সাদ এবং লিমা কোলে নিলো বাবুদের। খাদিজা হুমায়রার মাথায় হালকা চাপড় মেরে বললো,
— “কি ভাবছিস?”
— “ওদের নাম কি রাখা যায় সেটা ভাবছি। ওহ ভুলে গেছি। এক্ষুনি আসছি আমি।”
— “এই মেয়ে দাড়াও। আমিও আসছি।” সাদের গম্ভীর কণ্ঠস্বর পেয়ে হুমায়রা থেমে গেলো।
তারপর বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। লিমা নাতনিকে কোলে নিয়ে আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে সারামুখ। খাদিজা হেসে বললো,
— “কাঁদছো কেনো?”
— “আমার সেই ছোট্ট খাদিজা আজ ছোট্ট ছোট্ট দুটো সন্তান জন্ম দিয়েছে। ওদের কোলে নিতেই সেইদিনে কথা মনে পরে গেলো যেদিন প্রথম আমি তোকে কোলে নিয়েছিলাম। কি যে খুশি হয়েছিলাম আমি। আল্লাহর দরবারে কত যে শুকরিয়া জানিয়েছি।”
খাদিজা হেসে তার মাকে জড়িয়ে ধরলো। এরইমধ্যে সাদ, হুমায়রা ফিরে এলো। হাতে একটা প্যাকেট। হুমায়রা বাবুদের সামনে বসে প্যাকেট থেকে খেজুর মুখে দিয়ে চিবিয়ে ওদের মুখে দিলো। সাদকে বললো দুজনের কানে আযান দিতে। সাদ তাই করলো। হুমায়রা অনেক চিন্তা করে বললো,
— “আমি দুইটা নাম ঠিক করেছি।”
— “বল শুনি।”
— “রায়হান বিনতে আফরা নাওয়ার এবং রায়হান বিনতে জুহি তাবাসসুম। কেমন?” মাথা নিচু করে বললো হুমায়রা। সাদ বললো,
— “অর্থ তো খুবই সুন্দর।”
— “তাহলে এই দুইটাই থাক। কি বলো মা?” খাদিজা বললো।
— “হ্যাঁ আমারও পছন্দ হয়েছে।”
— “তাহলে সপ্তম দিনে আকিকা করে ফেলবো আমার রাজকন্যাদের ইনশাআল্লাহ।”
খাদিজাকে আগামীকাল ছাড়া হবে। তাই আজকে হসপিটালে থাকতে হবে। হুমায়রা ঠিক করলো সে থাকবে খাদিজার সাথে। সাদ চেয়েছিলো থাকতে কিন্তু খাদিজা নিজেই বললো হুমায়রা যেনো থাকে। সাদ একটু অভিমান করার ভান করে বললো,
— “আমার বাবুদের কাছে আমাকে থাকতে দিচ্ছো না এ কেমন বিচার?”
— “এটা দুই সতীনের বিচার।”
— “ওমাহ!”
— “আমার বাবুদের কাছে আমরা মায়েরাই থাকবো। তোমাকে দরকার নেই। ভাগো।”
সাদ আড়চোখে দুইজনের দিকে তাকালো। দুজন মুখ টিপে হাসছে। সাদ আর কিছু বললো না। আফরা এবং জুহির কপালে চুমু দিয়ে দুই বিবির উদ্দেশ্য বললো,
— “একটার দিকে আমি চলে আসবো।”
— “আপনার আসার দরকার নেই তো। আমি আপুকে দেখেশুনে রাখতে পারবো।” হুমায়রা বললো।
— “হ্যাঁ সাদ। তোমার আসার দরকার নেই। আমরা দুজন থাকতে পারবো।”
সাদ দুজনের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকাতেই দুজন থেমে গেলো। সাদ বললো,
— “হু আমাকে গায়রতহীন পুরুষ মনে করো? আমার দুই বউকে রেখে আমি আরাম করে বাসায় পরে থাকবো। কারো কথাই শুনছি না আমি। যতই পেটে পেটে বুদ্ধি পাকাও না কেনো আমাকে সরাতে পারবে না। দুজনের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে আমি সর্বদা নিয়োজিত।”
— “আমরা পেটে পেটে কোনো বুদ্ধি পাকাচ্ছি না।”
— “হু সেইজন্য নার্সকে দিয়ে আইস্ক্রিম আনিয়ে রেখেছো। আমি চলে গেলে যেনো খেতে পারো।” খাদিজার দিকে তাকিয়ে বললো, “তুমি না আজ বাচ্চা জন্ম দিলে? তুমিও আইস্ক্রিম খাওয়ার ধান্ধায় আছো?”
— “ত..তুমি ক..কিভাবে জানলে?”
— “আমাকে বোকা ভাবো?”
— “হুহ! শকুনের নজর।” হুমায়রা মুখ ভেঙিয়ে বললো।
— “যেই নজরই হোক। আমার নজর থেকে দুজন বাঁচতে পারবে না। তাই সব কুবুদ্ধি মাথা থেকে ফেলে দাও।”
লিমা বাহিরে বসে আছে। গ্লাসের ভেতরের দিকে তাকিয়ে দুই সতীনের কান্ড দেখছে। সাদ কিছু নাস্তা পানি আনতে গেছে দুজনের জন্য। খাদিজার বান্ধুবি নাজনীন খাদিজাকে দেখে এসে লিমার পাশে বসে বললো,
— “আন্টি এই মেয়েটা কি খাদিজার কোনো বান্ধুবি? নাকি কাজিন? আগে কখনো দেখিনি।”
— “ওরা দুজন সতীন।”
নাজনীন বিস্ফোরিত চোখে তাকালো লিমার দিকে। লিমা ওদের দুজনকে দেখছে আর মুচকি হাসছে। নাজনীন আবার তাকালো। দুইজন কি নিয়ে যেনো বেশ হাসাহাসি করছে। এদের তো কোনো এঙ্গেলে সতীন মনে হয়না। তাহলে। লিমা হেসে নাজনীনকে বললো,
— “দেখে মনে হচ্ছে না একই মায়ের গর্ভে জন্মানো দুজন বোন?”
— “হু!..”
— “ওদের চলাচল দেখলে মাঝে মাঝে আমি নিজেই কনফিউজড হয়ে যাই জানো।”
— “কেনো?”
— “মনে হয় এই দুটোকে আমি জন্ম দিয়েছি। অথবা এই দুটো অন্য কারো পেট থেকে জন্ম নিয়েছে। এতো মিল দুজনের মাঝে। অথচ দুজন দুই পথের বাসিন্দা ছিলো।”
— “সত্যিই আশ্চর্যজনক। এমন সম্পর্ক আমি কখনো দেখিনি।”
লিমা প্রশান্তির নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
— “আমিও কখনো দেখিনি।”
.
— “শুন এতো যে নিজের মেয়ে বলছিস তোকে দিয়ে আমি কি করাবো জানিস?”
— “কি করাবে?”
— “আমার বাবুদের হাগু মুতুর কাঁথা তোকে দিয়ে ধোঁয়াবো। মুহাহাহা।”
— “শুনো। এমন শয়তানি হাসি দিয়ে লাভ নেই। ওরা বড় হলে আমার কথাই শুনবে। তখন তোমাকে দিয়ে ওদের কাজ করাবো। হিহাহুহে।”
— “ইছ! কি বাজে হাসি তোর।”
— “লেগেছে নাকি? হিহাহুহুহি।”
— “এমন ভিলেনি হাসি দিয়ে লাভ নেই। তোকেই খাওয়াতে হবে, পরাতে হবে, রাতের বেলা ওদের দেখাশুনা করতে হবে। আর আমি নাক ডেকে ঘুমাবো।”
হুমায়রা জুহিকে কোলে নিলো। আফরা ঘুম। জুহিকে কোলে নিয়ে বুকের সাথে আলতো চেপে ধরে বললো,
— “আমি সব করবো। তাও এতটুকু কষ্ট পেতে দিবো না।”
— “হুহ..! দেখা যাবে।”
— “ওকে দেখে নিও।”
হুমায়রা জুহিকে আদর করতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। খাদিজা ওদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
— “আমি চাই তুই-ই ওদের মা হয়ে উঠ হুমু পাখি। যেদিন আমি থাকবো না সেদিন যেনো ওদের কারণে তুই নতুন করে আবার বাঁচতে শিখে যাস। তোকে নিয়ে খুব টেনশন হয় আমার। আমি না থাকলে কে তোকে আগলে রাখবে? সাদ তো কাজের জন্য বাহিরে যাবে। তখন এই ছোট্ট দুইটা পাখিই তোকে বাঁচিয়ে রাখবে।”
খাদিজা চোখের কোণের পানি মুছে নিলো হুমায়রার অজান্তে। হুমায়রা আর বাবুর কান্ড দেখছে। বাবুটার সাথে হুমায়রাও একদম বাবু হয়ে গেছে।
চলবে,,,
® “নাহার।”