#কাছে_কিবা_দূরে
#পর্ব-২২
(১৮+ কন্টেন্ট)
শ্বশুর বাড়ি এসে শুভ্র’র জ্বর হলো। অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজে বেশ ভালোমতোই জ্বর বাধিয়েছে। তানি ঘুম থেকে জেগে দেখলো শুভ্র কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুমিয়ে আছে। এমনিতে ও ঘুমায় পা সোজা করে, হাত একটা কপালে রেখে। তানি কী যেন ভেবে শুভ্র’র কপালে হাত রাখলো। হাত রেখেই চমকে উঠলো। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে অথচ সে দিব্যি ঘুমিয়ে আছে। তানি বিছানা থেকে নেমে পাতলা কম্বল বের করে গায়ে দিয়ে দিলো। দ্রুত হাত মুখ ধুয়ে নামাজ পড়ে জল পট্টি দেয়ার ব্যবস্থা করলো। আকাশ মেঘলা বলে ভোরের আলো ফুটতে সময় লাগছে। শুভ্র কপালে শীতল স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকানোর চেষ্টা করলো। আবছা আলোয় তানির উদ্বিগ্ন মুখ দেখতে পাচ্ছে। শুভ্র হাত বাড়িয়ে তানির একটা হাত ধরলো, কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
শুভ্র’র ঘুম ভেঙেছে অনেক বেলায়। ঘুম ভাঙার পর দেখলো মাথার চুল ভেজা। শরীর টা’ও বেশ ঝরঝরে লাগছে। তাসলিমা বেগম ঘরে ঢুকলেন৷ বললেন,
“এখন কেমন লাগছে শরীর বাবা?”
শুভ্র একটু হাসার চেষ্টা করলো। বলল, ভালো লাগছে।
“তানির কাছে শুনলাম তোমার অনেক জ্বর। তানির বাবা তো ডাক্তার আনতে গেছেন।”
শুভ্র ব্যস্ত গলায় বলল, আরে আন্টি সামান্য ঠান্ডা জ্বরে ডাক্তার আনতে হবে না। প্যারাসিটামল খেলের সেরে যাবে।
সেই সময় তানি ঘরে ঢুকলো। বলল,
“জ্বর অনেক কষ্টে নামানো হয়েছে। ডাক্তার ডাকলে তো আর মহাভারত অশুদ্ধ হচ্ছে না।”
শুভ্র তানির দিকে তাকালো। তানির মুখ থমথমে। খাবারের প্লেট নিয়ে এসেছে। তানির মা কাজের বাহানায় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। তানি সরাসরি শুভ্র’র দিকে তাকাচ্ছে না। অন্যদিকে তাকিয়েই বলল,
“আপনি কী একা একা ওয়াশরুম পর্যন্ত যেতে পারবেন? ”
“হ্যাঁ পারব।”
শুভ্র উঠে গেল। বেসিনে গিয়ে কল ছেড়ে চোখে, মুখে পানির ঝাপটা দিলো। মাথায় একটা সূক্ষ্ম যন্ত্রণাবোধ হচ্ছে। ওর অসুখ, বিসুখ কম হয়। কিন্তু যখন হয় তখন অনেকদিন ভুগতে হয়। এই মুহূর্তে মারাত্মক অসুখে পড়লে ব্যাপার টা বিশ্রী হয়ে যায়। একটা জায়গায় এসে এভাবে সবাইকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেললে ব্যাপার টা খারাপ দেখায়। শুভ্র হাত, মুখ ধুয়ে বিছানায় এসে বসলো। শীত শীত লাগতে শুরু করছে। আবারও জ্বর বাড়ছে সম্ভবত। শুভ্র খাবারের প্লেট নিয়ে পরোটা একটু ছিড়ে মুখে দিলো। খেতে বিস্বাদ লাগছে। তবুও জোর করে খাওয়ার চেষ্টা করলো।
তানি আড়চোখে দেখছে শুভ্র খাবার মুখে দিয়ে চোখ মুখ কুচকে ফেলছে। জ্বর বাড়ছে কি না সেটাও বুঝতে পারছে না। তানি জিজ্ঞেস করলো,
“আপনার শরীর এখন কেমন লাগছে? ”
শুভ্র বলল, এই তো ভালো।
“খেতে খারাপ লাগছে।”
“খেতে ইচ্ছে করছে না।”
“তাহলে রেখে দিন। জোর করে খেতে হবে না। আমি আপনি জন্য কফি নিয়ে আসছি।”
“আচ্ছা।”
তানির কফি নিয়ে ঘরে আসতে সময় লাগলো দুই মিনিট। তানির মা কফি বানিয়ে রেখেছিল। ঘরে ফিরতেই দেখলো শুভ্র বমি করছে। তানি মগ টা রেখে শুভ্র’কে ধরতে গেল। শুভ্র দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু লাভ হলো না। তানির গায়েই বমি করে দিলো। শুভ্র অসহায় চোখে তানির দিকে তাকিয়ে রইলো। তানি খেয়াল করে বলল, কোনো ব্যাপার না। আপনি ইচ্ছে করে তো করেন নি।
*****
শুভ্র’র জ্বর বেড়েছে। জ্বরে সারারাত ছটফট করে। এই সময়টা’তে তানি একটু ঘুমায় না। কখনো জল পট্টি দিয়ে দেয়, কখনো মাথায় ম্যাসাজ করে দেয়। অসহ্য মাথা ব্যথায় তানি যখন ম্যাসাজ করে দেয় তখন শুভ্র আরামে চোখ বন্ধ করে রাখে। তানি অনেক সময় ধরে ম্যাসাজ করার ফলে হাত ব্যথা হয়ে গেলে শুভ্র’র ঘুম ভেঙে যায়। তানি একটুও বিরক্ত হয় না, এক মুহুর্তের জন্যেও শুভ্র’কে রেখে কোথাও যায় না। যদিও বা যায় তাহলে শুভ্র’র অস্থিরতা বেড়ে যায়।
শুভ্র’র জ্বর হওয়ার খবর শুনে অভ্র খুশি হলো। এই ধাক্কায় অন্তত দুজনের মান অভিমান ভাঙুক। প্রেম টা’ও হয়ে যাক। মাহফুজা টেনশন করছে খুব। প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করছে। তানির বাবা, মা আশ্বস্ত করেছে যেন চিন্তা না করে তবুও মাহফুজার টেনশন হয়। মা’য়ের টেনশন দেখে অভ্র বলল, তুমি এতো টেনশন কইরো না তো মা। ভাবী আছে সে সব সামলে নেবে। তবুও মাহফুজার টেনশন দূর হয় না। ভালোয় ভালোয় ছেলে মেয়ে দুটোর ঘরে আসার অপেক্ষায় থাকে।
***
শুভ্র ঘুমিয়ে আছে। তানির একটা হাত হাতের আঙুলে গুজে রেখে। তানি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। চুলের মাঝে আঙুল ঘোরাতে তানির একটুও খারাপ লাগছে না। বরং ভালো লাগছে। তানি মনে মনে বলল, আপনি সুস্থ হয়ে গেলে আমি আপনার সঙ্গে ঢাকা চলে যাব। আপনার বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার কোনো দরকার নেই। অনেক হয়েছে কানামাছি খেলা। এই আপনাকে কথা দিচ্ছি আর কোনোদিন ঝগড়া করব না।
শুভ্র গভীর ঘুমে মগ্ন। তানি বুড়ো আঙুল দিয়ে শুভ্র’র ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। যতবার শুভ্র’র কাছাকাছি এসেছে ততবারই ইচ্ছে হয়েছে ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু লজ্জা আর সংকোচে পারে নি। শুভ্র যে শয়তান টের পেলে সেটা নিয়ে লেগ পুলিং করতে থাকবে সবসময়। মুখে কোনো কিছু আটকায় না, দেখা গেল চা খেতে খেতে সেই গল্প সবাইকে শোনালো। ব্যাপার টা ভেবে তানি হেসে ফেলল।
তানি নিচু হয়ে শুভ্র’র ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। বুকের ভিতর দ্রিম দ্রিম আওয়াজ শুরু হয়েছে। এইটুকুতে তানির তৃষ্ণা মেটে নি। আরও একটু দুঃসাহস করে অনেক টা সময় নিয়ে চুমু খেল। শুভ্র চোখ খুলে তাকালো। হঠাৎ জেগে যাওয়ায় তানি ভয় পেয়ে চলে যেতে গেলে শুভ্র দু’হাতে জাপ্টে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। এই আদর তানির ফিরিয়ে দেবার সাধ্য নেই, তাই হতভম্ব ভাব কেটে গেলে নিজেও সাড়া দিতে শুরু করলো।
বিয়ের পাঁচমাস পর দুজন দুজনের গাঢ় সান্নিধ্যে এলো। এক কদম তানি এগিয়েছিল বলেই শুভ্র এতোটা সাহস করতে পেরেছিল। সম্পর্ক এমনই হওয়া উচিত। দু’তরফের একজন এগিয়ে গেলে অন্যজন কেও এগিয়ে আসতে হয়। শুভ্র’র প্রতিটি ছোঁয়ায় তানি ভালোবাসার স্পর্শ পেয়েছিল। তানির চোখের কোনে পানি এসে গেল। শুভ্র’র কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলেছিল, আমাকে আজ একটু বেশী করে ভালোবাসুন, যেন এই সুখেই মরন হয়। শুভ্র কিছু সময় গভীর চোখে তানির দিকে তাকিয়ে থেকে কপালের এক পাশে চুমু খেয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
তানির ঘুম ভাঙলো বেলা করে। শুভ্র পাশে নেই। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো সাড়ে আট টা বেজে গেছে। তানির খুব লজ্জা লাগলো গতরাতের ঘটনা ভেবে। ইশ কী বেহায়ার মতন আচরণ করেছে কাল! এবার কীভাবে শুভ্র’র সামনে দাঁড়াবে!
শুভ্র ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে। তানি শব্দ পেয়েই চোখ বন্ধ করে ফেলল। শুভ্র সেটা দেখেও ফেলল। বিছানায় এক পাশে বসে শুভ্র তানির দিকে কিছুসময় তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বস ফেলে বলল,
“তানি তোমার এক্টিং খুব খারাপ হচ্ছে। চোখের পাতা কাঁপছে। ”
লজ্জায় তানির মরে যেতে ইচ্ছে করলো। পৃথিবীর সবচেয়ে অসভ্য, বেহায়া, খারাপ মানুষটা ওর স্বামী হতে গেল!
শুভ্র আবারও বলল, তানি আমাকে আজ ঢাকা ফিরতে হবে। জ্বর টর যখন কমে গেছে তখন এবার ফিরে যাওয়া যাক। চুমু খেয়ে তো আর পেট ভরবে না। তাই চাকরিতে ফিরতে হবে। তুমি তাহলে কয়েকটা দিন বেড়াও কেমন! আমার জন্য তোমার বেড়ানোটা মাটি হলো।
সকাল টা সুন্দরভাবে শুরু হয়েছিল তানির। শুভ্র’র কথার কারনে মেজাজ টা বিগড়ে গেল।
চলবে…..