#কাছে_কিবা_দূরে
#পর্ব-১১
বাড়িতে ফিরেই অভ্র’র তোপের মুখে পড়লো দুজন। অভ্র খোঁচা দিয়ে বলল, বাব্বাহ! কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়াচ্ছে!
শুভ্র বুঝতে না পেরে বলল, মানে?
অভ্র সোফায় আধশোয়া হয়ে শুয়েছিল। উঠে বসতে বসতে বলল, মানে হলো খিচুড়ি, মাংস ভুনা, ঘুরতে যাওয়া আরও কতো কী! আর আমরা এসবের কোনো কিছুই ভাগে পাচ্ছি না।
শুভ্র বলল, আচ্ছা তাই বুঝি! আর তোরা যে রাস্তায় রাস্তায় হাওয়া খেয়ে বেড়াস তার বেলায়?
আনিকা মাঝখানে বলে উঠলো, এই বড় ভাইয়া তুমি তো জানো না কী হইছে, ছোট ভাইয়া একটা হিরের নাকফুল কিনেছে। নিশ্চয়ই ইরা আপুকে দিবে।
শুভ্র ভ্রু উঁচিয়ে অভ্রর দিকে তাকালো। অভ্র চোখ পাকিয়ে আনিকাকে এমন ভাবে দেখলো যে এক্ষুনি খেয়ে ফেলবে। তানি মিটিমিটি হাসছিল আর দেখছিল। শুভ্র অভ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল, আচ্ছা এবার কী বলবি?
অভ্র আমতা আমতা করে বলল, কী বলব মানে? আমি আবার কী বলব!
“আমরা তো ডুবে ডুবে জল খাই আর তুমি তো জুস খাও তাই না?”
অভ্র হাতজোড় করে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ভাইয়া প্লিইইইজ! মা শুনতে পেলে কান ছিড়ে ফেলবে।
“তাহলে তো আরও বলব। সারাদিন আমার পিছনে লেগে থাকিস।”
অভ্র তানির দিকে তাকিয়ে বলল, ভাবী প্লিজ তুমি অন্তত আমার হয়ে দুয়েকটা কথা বলো। তানি হাসলো কিছু বলল না।
শুভ্র বলল, ও আর কী বলবে? ও তো আমার ই দলের।
অভ্র অভিযোগের সুরে তানিকে বলল, ভাবী এটা কিন্তু আনফেয়ার।
তানি বলল, সত্যিই তো। এটা কেমন কথা হলো! ও ওর গার্লফ্রেন্ড কে একটা গিফট দিয়েছে সেটার জন্য ওকে এভাবে কেন হেনস্তা করা হচ্ছে শুনি?
শুভ্র চোখ কপালে তুলে বলল, এরমধ্যে দল পাল্টে ফেললে?
“মোটেও না। আমি আগেই ভাইয়ার দলে ছিলাম। ”
আনিকা বলল, ভাবী ছোট ভাইয়ার দল করে কোনো লাভ নেই। ও একটা জোচ্চর ।
অভ্র আনিকার মাথায় চাটি মেরে বলল, যা ভাগ। বাড়াবাড়ি করলে তোর বিয়েতে কোনো কাজ করবো না।
আনিকা ভেংচি কেটে বলল, ইশ! উনি কাজ না করলে যেন আমার বিয়ে আটকে থাকবে।
শুভ্র হাসতে হাসতে বলল, আনু তোর বিয়ে তো অনেক পরের ব্যাপার। আমরা যদি দলে না থাকি তাহলে ওর বিয়ে হবে কি না জিজ্ঞেস কর?
অভ্র বলল, হুহ! আমার সাথে ভাবী আছে আর কাউকে দরকার নেই৷
শুভ্র আড়চোখে তানিকে দেখে বলল, আচ্ছা তা তোমার ভাবী যখন ইরার মা’র তোপের সামনে পড়বে তখন যেন আবার চোখের পানি আর নাকের সর্দি এক করে না ফেলে।
তানি কপট রাগ দেখিয়ে বলল, মোটেও আমি ভীতু না। আর আপনি ভাইয়া কে আর লেগপুলিং করবেন না।
শুভ্র বিস্মিত হবার ভান করে বলল, তুমি আমাকে বড় বড় চোখ দেখাচ্ছ! আজ আমি তোমাকে রিকশায় চড়ালাম, ফুচকা, আইসক্রিম খাওয়ালাম সব এর মধ্যে ভুলে গেছ! ছিঃ ছিঃ তানি। শেইম অন ইউ।
অভ্র লাফিয়ে উঠে বলল, ওয়াও! কী রোমান্টিক! আমরা কাবাবে হাড্ডি হবো বলে আমাদের জানায় ও নি।
তানি লজ্জা পেল।
শুভ্র বলল, রোমান্টিক না ছাই! আমার খেয়েদেয়ে আমার সঙ্গেই বাটপারি।
তানি অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বলল, ছিঃ ছিঃ খাইয়ে দাইয়ে আবার খোটাও দিচ্ছেন।
শুভ্র সেকথার পাত্তা দিলো না৷ বলল, যাদের পক্ষ করছ এরপর থেকে তাদের সাথে ঘুরতে যেও।
ঝগড়াঝাটি বন্ধ হলো মাহফুজার কারনে। মাহফুজা এসে বলল, কিরে তোরা সারাক্ষণ ঝগড়াঝাটি করিস।
তারপর তানির দিকে তাকিয়ে বলল, ভালো হয়েছে ঘুরতে গিয়েছিলি। সারাদিন তো একা একা ই থাকিস।
শুভ্র হাই তুলতে তুলতে বলল, আমি নিয়ে গিয়েছিলাম মা৷ ক্রেডিট আমাকে দাও৷
“হ্যাঁ এরপর থেকে ওকে একটু ঘুরতে টুরতে নিয়ে যাস। মেয়েটা একা একা থাকে বাসায়”।
অভ্র শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, হ্যাঁ ভাইয়া তো মঙ্গলবার ফ্রী ই থাকে। তাই না?
শুভ্র বলল, হ্যাঁ মাঝেমধ্যে একটু আধটু যদি ভালো মন্দ রেঁধে খাওয়ায় তাহলে নিয়ে যেতেই পারি।
তানি লজ্জা পেয়ে মাথানিচু করে ফেললেও বাকীরা সবাই হাসতে লাগলো। আনিকা বলল, ভাবী খিচুড়ি টা খুব ভালো ছিলো কিন্তু।
অভ্র ও তাল মিলিয়ে বলল, হ্যাঁ একদম ঝাক্কাস। ৷
******
রাতে ঘুমাতে যাবার সময় শুভ্র বলল,
“তানি একটা ব্যাপার ভেবে দেখলাম। তুমি সারাদিন বাসায় একা থাকো। নিশ্চয়ই বোরড হও! এই ব্যাপার টা তো আগে ভেবেই দেখিনি।”
তানি মৃদু হেসে বলল, আমার তো তেমন খারাপ লাগে না৷ রান্না করি, টিভি দেখি, বই পড়ি সময় কেটে যায়৷
“সেটা এখন কেটে যায়৷ প্রথম প্রথম সব ই মিষ্টি মধুর লাগে৷ তেতো হতে শুরু করে কিছুদিন গেলে৷ ”
“আরে না আমার অভ্যাস আছে। ছোট থেকেই আমার বাসায় থাকতে ভালো লাগতো”।
শুভ্র গম্ভীর হয়ে কিছু একটা ভাবলো তারপর বলল,
“একটা কথা বলব তানি?”
“হ্যাঁ বলুন”।
“মায়ের কাছে শুনেছি তুমি ঢাকা এসেছিলে একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে৷ তার মানে চাকরি করার মন মানসিকতা আছে। তুমি চাইলে চাকরি করতে পারো। আমার দিক থেকে আই মিন আমাদের দিক থেকে কোনো প্রবলেম নেই৷
তানি ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলল৷ তানির একাডেমি রেজাল্ট আহামরি না৷ রাজশাহী ইউনিভার্সিটি তে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করলেও রেজাল্টের বেহাল অবস্থা। অবশ্য এরজন্য তানি দায়ী না, দায়ী তানির পরিবার৷ চাকরি টা দরকার ছিলো নিজের জন্য। বাবার সংসারে থাকা, খাওয়া বাবদ ওকে টাকা দিতে হতো। ব্যাপার টা এমন না যে বাবা, মা চাইতো কিন্তু সংসারের গলগ্রহ হতে চায় নি তানি। এইজন্য টিউশন পড়িয়ে নিজের হাত খরচ সহ অন্যান্য খরচ যোগাড় করতো৷
শুভ্র ডেকে বলল, কী ভাবছ?
“আসলে তখন চাকরির দরকার ছিলো? ”
“এখন নেই বলছ”?
“না মানে..
“লিসেন তানি, আমার মনে হয় প্রতিটি মানুষের নিজের পা’য়ে দাঁড়ানো উচিত। তুমি অন্যকিছু মিন কোরো না, আমি তোমাকে ফোর্সও করছি না। তবুও ভেবে দেখো কিন্তু।”
তানি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললেও মনে মনে বলল, চাকরি করলে কী আর আপনার সঙ্গে মঙ্গলবার বিলাস করতে পারব! নাকি কাজের ছুতোয় আপনাকে মন ভরে দেখতে পারবো!
বিছানায় শুয়ে শুভ্র জিজ্ঞেস করলো,
“তানি ঘুমিয়েছ?”
“না। বলুন”
“একটা কথা বলোতো।”
“আজ রিকশায় বসে কাঁদছিলে কেন”?
তানি জবাব দিলো না৷
তানিকে চুপ থাকতে দেখে শুভ্র বলল, অনধিকার চর্চা করে ফেললাম বুঝি?
তানি বলল, না না৷ আসলে ওই সময় হঠাৎ কী হয়েছিল জানিনা। ”
“কারও কথা কী মনে পড়েছিল? ”
তানি অস্ফুটস্বরে বলল, হু।
“ওহ আমি ভাবলাম কী না কী৷ বাব্বা ভয় পেয়ে গেছিলাম। ”
“আপনি ভয় কেন পেয়েছিলেন?”
শুভ্র বলল, না মানে রিকশায় একটু ভুল করে তোমার হাত ধরেছিলাম। আসলে ভুলটা ইচ্ছাকৃত না। তোমার হাত টা নরম ছিলো তাই হয়তো ভুলটা হয়েছিল৷ ভেবেছি তুমি হয়তো রাগ করেছ।
তানি লজ্জায় লাল হয়ে গেল। লাইট বন্ধ থাকায় শুভ্র সেটা দেখতে পারলো না।
শুভ্র’র আবারও একটু শয়তানি করতে ইচ্ছে করলো৷ তানির লজ্জারাঙা মুখ টা দেখতে ইচ্ছে করলো। নিজের ইচ্ছেটাকে প্রাধান্য দিয়ে হাত বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিলো।
চলবে…..