কহিনুর পর্ব:২

0
302

#কহিনুর
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
পর্ব:২

ভোরবেলা চোখ খুঁলে নিজেকে বিছানায় একা আবিস্কার করলো অধরা। জুবায়ের নেই হয়তো উঠে গেছে। গতকাল রাতে ওরকম একটা অদ্ভুত কথা বলে লোকটা আর সাড়াশব্দ করেনি। চুপচাপ ঘুমিয়েছে। এই চুপ থাকাটা অধরার কাছে আরও বিরক্তিকর মনে হয়েছে। কথা বললে অন্তত কিছুটা হলেও জানা যাবে। ধাঁধার মানে হলো কাপড়ের ভাজে রাখা জিনিসপত্রগুলো দেখা দরকার। এই বাড়িতে যতগুলো কাজের লোক আছে তাঁর থেকে দ্বিগুণ রয়েছে সিসি ক‍্যামেরা। বেডরুমে ক‍‍্যামেরা থাকার সম্ভাবনা থাকার কথা না কিন্তু সাবধানের মার নেই। কথাগুলো ভেবে ও আশেপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে দেখে নিলো। পরনে আছে মায়ের দেওয়া কালো রঙের সুতি সিল্কের শাড়ি। যদিও অধরা শাড়ি পরে না গতকাল মায়ের কথা প্রচণ্ড মনে হওয়ার দরুন শাড়ি পরেছিল।জুবায়ের কখনও স্ত্রীর রূপের প্রশংসা করে না। ওর জন্য সাজার দরকার হয়না। অধরার বাবা মা ছিলেন বাঙ্গালী। এটা জার্মানির একটা শহর। অধরার জন্ম হয়েছে জার্মানিতে আসার পরে। ওর বাবা নওশাদ বারি ছিলেন প্রচণ্ড মেধাবী একজন মানুষ। পড়াশোনার খাতিরে পাড়ি জমিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে সুদূর জার্মানিতে। এখনে এসে স্বদেশি সহপাঠীর প্রেমে পড়ে তাঁকে বিয়ে করে ফেলেন। পড়াশোনা শেষে এখানেই থেকে গেলেন। উনি পেশায় ছিলেন একজন প্রফেসর। অধরা বাবা মায়ের থেকে ভালো বাংলা বলতে শিখেছিল। লেখাপড়া শেষ হওয়ার আগেই একদিন সুলতান পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব গেলো বাড়িতে। তাছাড়া অধরার বাবা চেয়েছিলেন মেয়ের বিয়ে যেনো কোনো বাঙ্গালী পরিবারে হয়। সুলতান জুবায়ের ফারুকীর পরিবার বাংলাদেশ থেকে এই শহরে বহুকাল আগে এসেছে। ওরা এখানকার স্থানীয়দের সঙ্গে মিলেমিশে গেছে। বোঝা কঠিন ওরা আগে বাঙ্গালী ছিল। এই অর্থসম্পদের পাহাড় এরা কিভাবে রপ্ত করেছে এটা সকলের অজানা। ভালো পরিবার থেকে প্রস্তাব পেয়ে প্রফেসর সাহেব আর অপেক্ষা করলেন না। বিয়ে পড়িয়ে দিলেন। আয়নার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছিল মেয়েটা। গতকাল জুবায়ের বলেছিল ও দু’টাকার মেয়ে। ওর সঙ্গে জুবায়ের ফারুকীর যায় না। স্বামীর থেকে এতবড় কথাটা শোনার পর শক্ত থাকা কঠিন। তবুও ওর তেমন রাগ হচ্ছে না। মনের মধ্যে শাশুড়ি মায়ের মৃত্যু নিয়ে নানারকম কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। আধরা অনমনে আয়নায় নিজের হাতটা রেখে চমকে উঠে হাত ফিরিয়ে নিলো। আবারও হাত ছোঁয়ালো। প্রচণ্ড ঘৃণাতে ওর বমি আসছে। একজন লোক কতটা নিকৃষ্ট হলে নিজের বেডরুমের আয়নায় মধ্যে ক‍্যামেরা লুকিয়ে রাখতে পারে ওর জানা নেই। প্রায় ও এই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ড্রেস ঠিকঠাক করে আবার কখনও চেঞ্জও করেছে। ড্রেসিং টেবিল থেকে বেড খুব ভালো করে দেখা যায়। অধরা দ্রুত বাথরুমে গিয়ে মুখে কয়েকবার পানির ঝাপটা দিয়ে আবারও চেক করতে আয়নায় হাত রাখলো। এখানে কিছু নেই ভেবে স্বস্তি পেলো। ভাবলো লোকটার মাথায় কি চলছে কে জানে। বাবা মা আর শাশুড়ির জন্য ওর প্রাণ কাঁদছে কিন্তু ওকে দুর্বল করছে না। ও যথেষ্ট শক্ত ধাচের মেয়ে। শুধু ফ‍্যাচ ফ‍্যাচ করে কাঁদলে সব সমস্যার সমাধান হবে না। এই বাড়ির রহস্য আর শাশুড়ির এভাবে সুইসাইডের কারণ ওকে বের করতে হবে। কথাগুলো ভেবে ও দ্রুত বেরিয়ে পড়লো। পূনরায় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখার সাহস ওর হলো না। হঠাৎ মনে হলো প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে। গতকাল দুপুরে শাশুড়ি মায়ের হাতে খেয়েছিল কথাটা ভেবেই ওর চোখ ভিজে উঠলো। আহা ভালো মানুষগুলোর সঙ্গেই বুঝি এমন হয়। অধরা বাইরে বের হতে গেলো কিন্তু হলো না ঝড়ের গতিতে জুবায়ের প্রবেশ করলো। আর ওকে টেনে নিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে ওর উপরে ঝাপিয়ে পড়লো। অধরা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। জুবায়ের ওর ডান গালে হাত রেখে কুটিল হেঁসে বলল,

> শেষবারের মতো তোমাকে স্পর্শ করছি। সত্যি কি জানো? তোমাকে স্পর্শ করতে আমার কেমন জানি অস্বস্তি আর ঘৃণা লাগে। তবুও এটা আমাকে করতে হয়েছে। মনের উপরে জোরজবরদস্তি করে তোমার সঙ্গে থেকেছি কতটা যন্ত্রণা হয়েছে সেটা শুধু আমি আর আমার হৃদয় জানে। তুমি তো কষ্ট পাওনি বরং বেশ উপভোগ করেছো। আমার ঐশ্বর্য আমার ভালোবাসা সবটা। এগুলো তোমার জন্য ছিল না। সবটা ছিল কহিনুরের জন্য।

জুবায়ের একদমে কথাগুলো বলে থামলো। অধরা বিস্মিত হয়ে লোকটার দিকে তাঁকিয়ে আছে। অপমান বোধ ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না এই লোকটা ওকে শুধু ব‍্যবহার করেছে। অধরা দ্রুত শপথ নিলো এদের পরিকল্পনা ও কিছুতেই সফল হতে দিবে না। দরকার হলে নিজেকে শেষ করে ফেলবে। কথাটা ভেবে ও জুবায়েরকে নিজের উপর থেকে সরানো চেষ্টা করলো যখন পারলো না তখন নাকমুখ কুচকে বিরক্তি নিয়ে বলল,

> আমি বোকার মতো ভাবতাম আপনি বুঝি কম কথা বলেন। স্ত্রী হিসেবে আমাকে আপনার ভেবেই কাছে টেনেছেন। কিন্তু না এসব তাহলে মুখোশ ছিল। মুখোশ উন্মোচন হচ্ছে আর মুখ দিয়ে খৈই ফুটছে। আমার প্রাণ থাকতে আমি আপনার কোনো পরিকল্পনা সফল হতে দিচ্ছি না। মনে রাখবেন আমি অবলা না।

জুবায়ের এক দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাঁকিয়ে ছিল এতক্ষণ। স্ত্রীর চোখে নিজের প্রতি ঘৃণা দেখে মুখটা সরল করে বলল,
> তুমি সত্যিই বোকা। আমি এতক্ষণ মজা করছিলাম। গতকাল এতকিছু বলেছি তাই ভাবলাম তোমাকে আরও একটু ঘাবড়ে দিয়ে মজা করি। আর আম্মা সুইসাইড করেছে বাবার উপরে রাগ করে। আসলে বাবা দু সপ্তাহ ধরে ছোট মায়ের কাছে আছেন এটা উনি মানতে পারছিলেন না। তুমি ওসব ভূলে যাও। ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করো। আমার কহিনুরের যেনো কোনো কষ্ট না হয়।
জুবায়ের কথাগুলো একদমে বলে অধরার কপালে চুমু দিয়ে উঠে বসলো। অধরা এই লোকটার মতিগতি বুঝতে হিমশিম খাচ্ছে। এই ভালো তো এই খারাপ। জুবায়ের ওকে সুযোগ দিলো না দ্রুত কোলে তুলে বেরিয়ে গেলো। ডাইনিং টেবিলে নানারকম সুস্বাদু খাবার আর ফলের সমাহার।গতকাল থেকে জুবায়েরের বাবা আর উনার দ্বিতীয় স্ত্রী এই বাড়িতে আছেন। ভদ্রমহিলা এখানকার স্থানীয়। ঠোঁটে লাল রঙের লিপস্টিক আর উন্মুক্ত ড্রেস বড্ড বেশি বেমানান লাগলেও কেউ বিষয়টা পাত্তা দিচ্ছে না। জুবায়ের ওকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে পড়লো। কেউ কারো দিয়ে তাঁকাচ্ছে না। নিরবে খাচ্ছে। জুবায়েরের বাবা আরমান ফারুকীর বয়সটা নিয়ে বেশ ঘাপলা আছে। তিরিশ বললেও মানা যায় আবার চল্লিশ বা পঞ্চাশ বললেও ভূল হবে না। লোকটা যথেষ্ট ইয়াং। অধরা সেদিকে বেশ ভালো করে লক্ষ করলো। একজন মানুষ গতকাল মারা গেছে কিন্তু এদের মধ্যে কোনো অনুতাপ বা দুঃখ নেই। অধরা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। জুবায়ের ওর মুখে খাবার তুলে ধরতেই ও আবারও চমকে উঠলো। গত এক বছরে এই প্রথমবার লোকটা ওর কাছাকাছি থেকে যত্ন নিচ্ছে। রাত ছাড়া তো লোকটাকে পাওয়া যায় না। মাঝেমাঝে রাতেও বাড়িতে ফিরে না। ওকে চমকে যেতে দেখে জুবায়ের ওষ্ঠে হাসি নিয়ে ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলো খেতে। অধরা দ্রুত খেয়ে নিলো। স্বামীর থেকে প্রাপ্ত এইটুকু সুখ হাতছাড়া করা বোকামি হবে। তাছাড়া পৃথিবীর সব স্ত্রী চাই তাঁর স্বামী তাঁকে কেয়ার করুক পাশে থেকে সাপোর্ট করুক। অধরা দ্বিধা ভূলে খাবার খেয়ে নিলো। জুবায়ের আবারও ওকে পূর্বের ন‍্যায় রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল,
> আজ থেকে তুমি রুমের বাইরে যাবে না। যদি অসাবধানতাবশত পড়ে যাও বা তোমার কোনো ক্ষতি হয়েছে তাহলে আমার কহিনুর কষ্ট পাবে। তুমি মা হয়ে সেটা কি সহ‍্য করতে পারবে?
অধরা মাথা নাড়িয়ে না বলল। জুবায়ের হাসি দিয়ে বলল,
> চুপচাপ ঘুমিয়ে যাও। আমি অফিসে যাচ্ছি। যখন যা দরকার হবে শুধু উচ্চারণ করবে সঙ্গে সঙ্গে হাজির হয়ে যাবে। ভালো থেকো।
জুবায়ের আর অপেক্ষা করলো না দ্রুত বেরিয়ে গেলো। অধরা শুয়ে ছিল ও যেতেই উঠে বসলো। শাশুড়ি মায়ের দেওয়া ধাঁধার মানে বের করতে হবে। বারবার কাগজ দেখা বিপদ ভেবে লাইনগুলো মনে রেখেছিল। আধরা ঠোঁট নাড়িয়ে শব্দহীন ভাবে উচ্চারণ করলো,
“বধির বোবা বলবে বাক‍্য ঝরবে তখন লাল র*ক্ত। ঊষা কালে খুঁলবে দুয়ার শান্ত হবে তিমির দুয়ার”।

প্রশ্ন জাগলো, বধির বোবা এই বাড়িতে ওর পাঁচটা ননদ আছে ওদেরকে মিন করে লেখা নাতো? এমতো হতে পারে এই বোবো মেয়েগুলো যখন কথা বলবে তখন অন‍্য কারো রক্ত ঝরবে? আর ঊষাকাল বলতে ভোরবেলা বুঝিয়েছে। অধরা লাফিয়ে উঠলো। ধাঁধার মানে সবটা না বুঝলেও শেষেই লাইনটা বুঝেছে। এই বাড়ির দরজা ভোরবেলায় খোঁলা থাকে যখন সবাই গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। মানে শাশুড়িমা ওকে এই বাড়ি থেকে পালানোর রাস্তা বলে গেছে। প্রথম লাইনটার মানে খুব জটিল। যারা জন্ম থেকে বোবা তাঁরা কিভাবে কথা বলবে? যদিওবা বলে তবে রক্ত কেনো ঝরবে? অধরা আর ভাবতে পারলো না। কাপড়ের ভাজে রাখা পুটলিটা বের করতে হলে সিসি ক‍্যামেরাটা বন্ধ করা জরুরি। কিভাবে সম্ভব কথাটা ভেবে ও ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। এলোমেলো ভেবে উঠে বসলো। চুপচাপ পড়ে থাকা মতো মেয়ে ও না। এলোমেলো কিছু ভেবে দ্রুত গোসল করতে বাথরুম চলে গেলো। গোসল শেষ করে টাওয়েল জড়িয়ে বেরিয়ে আসলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বাঁকা হাসলো। আজ ও খানেই চেঞ্জ করবে। পোশাক কয়েকটা বেশি এনেছে সেটা রাখার উত্তম জায়গা হিসেবে ড্রেসিং টেবিলের উপরে ঝুলিয়ে দিয়ে দ্রুত নিচে বসে পড়লো। তাড়াতাড়ি লাল পুটলিটা বের করে দেখে নিলো। সেখানে বেশ কিছু টাকা একটা লকেট দেওয়া চেইন। তাঁতে সুন্দর করে খোঁদাই করা কহিনুর। এক পাশে রাখা আছে ওর পাসপোর্ট। শাশুড়ি আম্মা যে আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিল বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। অধরার হাত পা থরথর করে কাঁপছে। চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। বারবার ধরা পড়ার ভয় করছে। ও আর বাকীটা দেখতে পারলো না। দ্রুত সেটা লুকিয়ে উঠে দাড়ালো। বাইরে থেকে ঠকঠক আওয়াজ আসছে। ওর দেরী দেখে জুবায়ের ভেতরে এসে ভ্রু কুচকে ফেলল। টাওয়েল পরে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে দেখে ওর মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এতক্ষণ লাগে কারো ড্রেস পরতে? তাছাড়া বাথরুম রেখে এখানে কেনো ড্রেস রাখতে হবে। জুবায়ের অফিসে ছিল। গাড়ি নিয়ে ছুটে এসেছে। আয়নার মধ্যে ক‍্যামেরা আছে মেয়েটা কোনরকম ঠিক পেয়েছে কি বুঝতে পারছে না। অধরা নিজের মতো লোশন নিয়ে হাত পায়ে ম‍‍্যাসাজ করতে ব‍্যস্ত। বুঝতে পেরেছে জুবায়ের ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অধরার ভয় করছে কিন্তু যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে হঠাৎ পাশ ফিরে চমকে উঠার ছলে নিজেকে দুহাতে আবৃত করে বলল,
> আপনি হুট করে চলে আসলে কেনো? আমি চেঞ্জ করবো তো।
জুবায়ের কথা বলল না। দ্রুত ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে ড্রেসগুলো এর মুখের উপরে ছুড়ে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
> এধরনের কাজকর্ম আমি পছন্দ করি না। দ্বিতীয়বার যেনো না দেখি। দ্রুত চেঞ্জ করে আসো খেতে হবে।

জুবায়ের ধাক্কা দিয়ে দরজা বন্ধ করে বিছানায় গিয়ে বসে পড়লো। মেয়েটা যথেষ্ট চালাক বুঝতে ওর বাকী নেই কিন্তু ও কি করতে চাইছে বোঝতে পারছে না।আর গতকাল মায়ের সঙ্গে ওর কি নিয়ে কথা হয়েছে জানা দরকার। না জানা পযর্ন্ত শান্ত হওয়া মুশকিল। এর মধ্যেই কাজের মেয়েটা খাবার দিয়ে গেলো। অধরা বাইরে আসতেই জুবায়ের চুপচাপ ওকে খেতে দিয়ে বের হলো। অধরা চুপচাপ খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। এই বাড়িতে ওর কোনো কাজ নেই। এতদিন শাশুড়ি সঙ্গে ছিল। একাকিত্ব অনুভব হয়নি। আজ হচ্ছে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। সারাদিন ধরে ঘুমিয়ে বসে দিন পার করলো। জুবায়ের আর আসেনি। সন্ধ্যার পরে ওর ঘুম ভাঙলো। চুপচাপ ফ্রেস হয়ে বাইরে উঁকি দিলো। ননদগুলোর সঙ্গে কথা বলবে ভেবে বাইরে আসতেই সিঁড়িতে কাজের মেয়েটা ওকে বাঁধা দিয়ে বলল,
> আপনার বাইরে যাওয়া নিষেধ। চলুন ঘরে যায়।
অধরার কথা মেয়েটা শুনলো না। এক প্রকার জোরজবরদস্তি করে রুমে এনে রেখে গেলো। কি অদ্ভুত।ওর মেজাজ খারাপ হচ্ছে। বাড়ির সকলের সঙ্গে মেলামেশা না করলে বুঝতে কিভাবে কার মনে কি চলছে।
☆☆☆☆☆☆
নিস্তব্ধ হলরুম চার‍দিকে অবছা অন্ধকার। সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে অধরা। খুব সাবধানে নামতে হচ্ছে। বিস্তির্ণ হলরুমে কয়েকজন মানুষের চাপা কান্নার আওয়াজ হচ্ছে। অধরা দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসলো। এতক্ষণ অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকলেও সামান্য আলোর ছিটা এসে সবটা পরিস্কার হয়েগেলো। অধরা চোখ বন্ধ করে খুঁলে একটা ঝটকা খেলো। সামনে ওর বাবা মা আর শাশুড়ি সেই সঙ্গে ওর শশুর মশাই বসে আছে। পায়ে লম্বা করে সিকল পরানো। তাদের শরীর থেকে র*ক্ত গড়িয়ে ফ্লোরে ছোটখাটো একটা স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। অসহায় ভাবে ওরা অধরার দিকে তাঁকিয়ে আছে। মনে হলো সবটা ওর মনের ভূল। সামনে থাকা তিনজন মারা গেছে কিন্তু ওর শশুর তো জীবিত। জীবিত লোক কিভাবে মৃত লোকদের সঙ্গে বন্দি থাকবে? অধরা ভাবতে পারলো না। রাতে ঘুমিয়েছিল হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। ফিসফিস আওয়াজ শুনে বাইরের চুপচাপ উঠে এসেছে। ওর ধ‍্যান ভাঙলো একটা আওয়াজ শুনে। বারবার উচ্চারিত হচ্ছে, পালিয়ে যাও। অধরা কান ধরে বাবা মায়ের দিকে ছুটে আসলো। কিন্তু ছুতে পারলো না। সিঁকল টেনে কেউ একজন সবাইকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো। অধরা চিৎকার করে জ্ঞান হারালো।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here