#গল্পকথারা
ওয়েডিং প্ল্যানার
9
নীতি এবারে ক্লান্তি মেশানো স্বরে বৈভবকে বললো
‘ ‘ আমি আর ফিরবো না ! তোমার ওয়েডিং প্ল্যানিং ভেস্তে গেল ! ‘ ‘
বৈভব করুণ ভাবে নীতিকে দেখে বললো
‘ ‘ আমিও তাই চাই যে তুমি না ফেরো ! আমি আসল হীরা চিনতে পারিনি কিন্তু ভাবতে পারিনি তুমিও আসল মানুষ চিনতে পারবে না ! ‘ ‘
‘ ‘ ওই যে বললে মানুষ ! ভুল তো মানুষ মাত্রেই হয় ! তুমি হীরা চিনতে পারোনি ! আমাকেও চিনতে পারোনি ! ঈশান হীরা ঠিক চিনেছিল কিন্তু আমাকে চিনতে পারেনি বা চেনার চেষ্টাও করেনি । ‘ ‘ শুকনো হেসে বললো নীতি । তার চোখের কোণায় তখনো কাজল ঘেঁটে চোখের জল লেগে আছে । সেই চোখের দিকে তাকিয়ে বৈভব বললো
‘ ‘ দেখো হয়তো এমন মানুষ তুমি পাবে যে তোমাকে চিনতে পারবে ! ‘ ‘
নীতি বৈভবের কথার আর কোনো উত্তর না দিয়ে গেটের বাইরে চলে গেল । আসলে তার আর কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না । তার এখন চুপচাপ কোথাও বসে থাকতে ইচ্ছা করছিল । নীতি রাতের অন্ধকারে হাঁটতে হাঁটতে একটা ফাঁকা পার্কে এলো ।
এবারে নীতির একটু শান্তি লাগছিল । যদিও তার বিয়ে ভেঙে গেছে তবু তার খারাপ না লেগে শান্তি লাগছিল । নীতি তার দুই পা ছড়িয়ে একটা পার্কের বেঞ্চে এসে চোখ বুঁজে বসলো । কতক্ষণ সে চোখ বুঁজেছিল জানেনা । তার সামনে যেন কেউ এসে দাঁড়ালো উপলব্ধি করে নীতি চোখ মেলে দেখলো তার সামনে ঈশানের সেক্রেটারী অদ্যুত মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে । নীতি অদ্যুতকে দেখে নিস্পৃহ ভাবে বললো
‘ ‘ আমাকে যদি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আসেন তাহলে আগেই বলে দেই আমি ফিরে যাবনা তুষার । আপনি ফিরে যান । আমি আর আপনার বসের হবু স্ত্রী নই । তাই আপনারও ডিউটি এখানে শেষ। ‘ ‘
অদ্যুত কিছু না বলে তখনো মাথা নীচু করে ছিল । হঠাৎ সে নীতির পায়ের কাছে বসে পড়ে তার সামনে এক জোড়া ফ্ল্যাট হিল স্যান্ডেল জুতো রেখে বললো
‘ ‘ পরে নিন ম্যাম নইলে ঠান্ডা লেগে যাবে । ‘ ‘
নীতি সামান্য হেসে বললো
‘ ‘ এখনো ম্যাম ! ‘ ‘
অদ্যুত আবার বললো
‘ ‘ ফিরে চলুন ম্যাম ! ‘ ‘
নীতি রেগে গিয়ে বললো
‘ ‘ বলেছি তো আমি আর ইশানের কাছে ফিরে যাবনা ! ‘ ‘
‘ ‘ ওখানে নয় । আপনার বাড়ীতে ফিরে চলুন ম্যাম ! সরি নীতি ! ‘ ‘
এই প্রথম অদ্যুতের মুখে নিজের নামটা শুনে এক অদ্ভুত ভালো লাগা মতো লাগলো নীতির । সে অদ্যুতকে বললো
‘ ‘ একটা শর্তে ফিরবো ! কালকে তোমাকে আমার সাথে এখানে আসতে হবে আর এই পার্কের সব রাইডগুলোতে চড়াতে হবে । বলো রাজী আছো ! ‘ ‘
অদ্যুত মাথা নামিয়েই বললো
‘ ‘ ঠিক আছে ! ‘ ‘
তখন নীতি অদ্যুতের থুতনি ধরে তার মুখ উপড়ে তুলে তার চোখে চোখ রেখে বললো
‘ ‘ কালকে এরকম ফর্মাল ড্রেসে আসবেনা কিন্তু ! ‘ ‘
অদ্যুত এবারে হেসে ফেলে বললো
‘ ‘ ঠিক আছে নীতি । ‘ ‘
নীতিও হাসি মুখে স্যান্ডেল পায়ে গলিয়ে অদ্যুতের হাত ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে চলতে পার্ক থেকে বেরিয়ে গেল । তাদের দূর থেকে হাত ধরাধরি করে যেতে দেখে আরেকজন হাসি মুখে নিজের মোবাইল বের করে তার অফিসে কল করে বললো
‘ ‘ ঈশানের সেক্রেটারী অদ্যুতের মোবাইল নম্বরটা জোগাড় করে আমাকে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব মেসেজ করে দাও ! ‘ ‘
মোবাইল পকেটে রেখে বৈভব ভাবছিল এই ওয়েডিং ভেস্তে গেছে তো কি হয়েছে এখন পরের ওয়েডিংয়ে ওয়েডিং প্ল্যানার হিসাবে তাকে যাতে নির্বাচন করা হয় তার ব্যবস্থা তাকে এখন থেকেই করতে হবে । বৈভবের ওয়েডিং প্ল্যানার হিসাবে রেকর্ড খুব ভালো । এবারে বৈভব জানে বিয়ের কার্ডের ওপরে কাদের নাম লেখা হবে ।
অদ্যুত ওয়েডস নীতি ।
বৈভব মনে মনে খুশি হলো এটা ভেবে যাক নীতিকে তাহলে যে ঠিকমতো চিনেছে সে নীতির জীবনে এসে গেছে । অদ্যুত নীতির হাতে হীরা দেখেনি , সে হীরার থেকেও দামী নীতির মন দেখে তাকে ভালোবেসেছে । যেটা সে আর ঈশান চিনতে পারেনি । তারা দুজনেই নীতিকে নয় তার হীরার আংটি আগে চিনতে গেছিল তাই আসল হীরাকে তারা মিস করেছে ।
___________
শেষ
………..