এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ২৭

0
1273

#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৭

লঞ্চ টার্মিনাল। সারিবদ্ধভাবে সাজানো লঞ্চগুলো। কয়েকটা ভিরেছে টার্মিনালে, কয়েকটা ভাসমান। অপূর্ব ভাই পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। উদ্বিগ্ন হয়ে বললাম, “অপূর্ব ভাই, আমরা নৌ পথে কোথায় যাচ্ছি?”

“ঢাকাতে।” সংক্ষিপ্ত জবাব। আমাদের বাড়ির লোকজন আমার জন্য চিন্তা করবে এতে সন্দেহ নেই। আপত্তি স্বরুপ কণ্ঠে বললাম, “না, আমি ঢাকাতে যাবো না। আপনি বাড়িতে ফিরে যান, আমিও আমার নিজের বাড়িতে ফিরে যাই।”

অপূর্ব ভাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। ভীত হলাম আমি। লঞ্চ তখন দূরে সরে যাচ্ছে ক্রমশ। উদ্দেশ্য গন্তব্যের পথে। অপূর্ব ভাই লাফ দিয়ে লঞ্চে উঠে গেলেন। ডান হাতের করতল মেলে আমাকে ইশারা করলেন লঞ্চে উঠতে। দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে হাত রাখলাম হাতে। লাফ দিয়ে লঞ্চে উঠলাম। লঞ্চে ভিড়। জেনারেল বা কেবিন কোনোটাই খালি নেই। জনগনে ভর্তি। সিঁড়ি পেরিয়ে ছাদে গেলাম। লোহার বেঞ্চিতে বসলাম দুজনে। লঞ্চ ততক্ষণে অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে। রেলিং থেকে নিচে উঁকি দিলাম। চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি নদীর জলে মিশে গেল। অন্য এক ফোঁটা গড়িয়ে পড়তেই অপূর্ব ভাই ধরে ফেললেন। অস্বাভাবিক গলায় বলেন, “তুই কি আমার সাথে যেতে চাইছিস না আরু?”

উল্টো সুরে‌ বললাম, “দাদি জান আমার জন্য চিন্তা করছেন অপূর্ব ভাই। আমার সন্ধান না পেলে আবুল চাচার উপর বিপদ নেমে আসবে। তার চাকরিটাও চলে যেতে পারে। প্লীজ ফিরে চলুন।”

অপূর্ব ভাই উঠে চলে গেলেন। দোতলা অতিক্রম করে আসার সময় একটা ক্যান্টিন নজরে পড়েছিল। নিশ্চয়ই খেতে গেছেন। হাতটা মাথার নিচে রেখে হেলান দিলাম। মামাদের বাড়ি থেকে টার্মিনাল পর্যন্ত হেঁটে এসেছি বিধায় পায়ের পাতা ব্যথা করছে, হাঁটু ব্যথা করছে, টাকনুও যোগ হয়েছে সাথে। অপূর্ব ভাই দুই কাপ চা নিয়ে ফিরে এলেন। ওয়ান টাইম চায়ের কাপ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। কাপটা এগিয়ে দিয়ে বলেন, “সকাল থেকে না খেয়ে আছিস। দুপুর গড়িয়ে গেছে। খেয়ে নে, ফ্লাটে যাওয়ার আগে পেটে আর কিছু পড়বো না। টাকা নেই, যা আছে ভাড়ায় চলে যাবে।”

ভেংচি দিলাম। নদীর দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে গাছ রোপণ করা। দখিনা বাতাসে দুলছে গাছের পাতা। হিম হয়ে গেছে চা টুকু। পেটে ক্ষুধা লেগেছে। গম্ভীর গলায় বললাম, “এই পানিটুকু খেলে ক্ষুধা শেষ হবে?”

“আমি কি বলেছি, যে চিনির পানিটুকু খা? বিস্কুট এনেছি সাথে। নে।” বলেই কাগজে পেঁচানো দু’টো বিস্কুট এগিয়ে দিল। আমি নিজ মনে খেতে লাগলাম। শরীরটা ভালো লাগছে না। অপূর্ব ভাইয়ের গায়ে হেলান দিয়ে বসে রইলাম। কত কত মানুষ নিজেদের মতো ছবি তুলছে। ইচ্ছে করছে একটু শুতে কিন্তু তার উপায় নেই। কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নিলাম। ক্লান্ত শরীর নিয়ে অবিলম্বে ঘুমিছে গেলাম হৃদমাঝারে।

সূর্য ডুবেছে। আকাশের বুকে চাঁদ উঁকি দিয়েছে। মিটিমিটি তাঁরা জ্বলছে। লঞ্চ যখন জঙ্গল পেরিয়ে ছুটে যাচ্ছিল নিজ গন্তব্যে তখন পথ আটকে দাঁড়াল বড়ো একটা জাহাজ। লঞ্চের সাথে সংঘর্ষ হতেই অপূর্ব ভাইয়ের বুক থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম নিচে। সবকিছু বুঝে উঠার আগেই নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটল। চারপাশে তাকিয়ে সবকিছু দেখছি। অপূর্ব ভাইও হতভম্ব হয়েছেন। আমাকে না তুলে লঞ্চের রেলিং দিয়ে উঁকি দিলেন বাইরে। চিন্তিত হয়ে বলেন, “এরা কারা? মুখোশ পড়ে আছে কেন?”

‌ঘুম ঘুম ঝাপসা চোখে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বললাম, “কে মুখোশ পড়ে আছে বাইরে। আমরা তো লঞ্চে?”

অপূর্ব ভাইয়ের জবাব না পেয়ে আমি নিজেই উঠে গেলাম। পাশ থেকে উঁকি দিয়ে দেখলাম মু/খো/শধারী কতজন লোক জাহাজে করে লঞ্চ আটকে আছেন। কয়েকজন উঠেছেন ইতোমধ্যে। অ/স্ত্রও হাতে দেখা যাচ্ছে। অপূর্ব ভাইয়ের হাতটা খামচে ধরে বললাম, “ওরা কারা অপূর্ব ভাই। আমি সিনেমাতে দেখেছি, এরা আসলে ডা/কা/ত। নৌ পথে ডা/কা/ত। আবার কী হবে।”

“কিছু হবে না, শান্ত হ।”

দলবল বেঁধে লঞ্চে ঢুকল তারা। আমরা দুজনে উপরে ঘাপটি দিয়ে বসে আছি। নিঃশব্দে কেঁদে চলেছি আমি। হেঁচকি উঠে গেছে। অপূর্ব ভাই ফিসফিস করে শান্তনা দিয়ে চলেছেন। কিছু হবেনা। কিন্তু আমার বাচ্চা মন তা শুনতে নারাজ। কিছুক্ষণ পেরিয়ে যেতেই পায়ের ছোপ ছোপ শব্দ শুনতে পেলাম। টর্চ জ্বেলে আটজন মু/খো/শধারী হাজির হলো অচিরে। হুম/কি দিয়ে সবাইকে নিয়ে গেল নিচে। ব/ন্দু/ক নিয়ে চায়চারি করছে লঞ্চের অভ্যান্তরীণ জুড়ে। লু/ট/পাট করে নিল যাত্রীদের টাকা পয়সা গহনাঘাঁটি। চলে যাওয়ার সময় এক পর্যায়ে তারা আমার দিকে তাকালো এক জন। উচ্চ স্বরে চ্যাঁচিয়ে বলে, “ওস্তাদ, ওস্তাদ। বোরখা পড়া মাইয়াডারে দেহেন। কী সুন্দর, এককারে চান্দের লাহান।”

সবাই আমার দিকে তাকাল। নিকাব বাড়িতে খুলে রেখে এসেছি। যার দরুন মুখশ্রী প্রদর্শিত। প্রধান লোকটা আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, “সুন্দর। কিন্তু নিয়ে কী করব? এই বস্তা বস্তা টাকা পয়সা গুনতে গুনতে রাত পোহাবে। সাথে নিয়ে কী করব?”

আরেকজন বলে, “ওস্তাদ, লইয়া লন। টাকা পয়সা গোনার পর বসে থাকমু নি? শরীরডাও তো কিছু চায়। এমন সুন্দর মাইয়া হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না।”

লোকটা কিছুক্ষণ ভেবে সম্মতি দিয়ে বলেন, “নিয়ে তাড়াতাড়ি চল। আমাদের এক জায়গায় বেশিক্ষণ থাকা নিরাপদ নয়। এতক্ষণে পু/লি/শে খবর চলে গেছে। যখন তখন হাজির হয়ে যাবে।”

তিনজন লোক আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমি অপূর্ব ভাইয়ের পেছনে লুকিয়ে গেলাম। তিনজনের একজনের অপূর্ব ভাইকে ধা/ক্কা দিলেন। অপূর্ব ভাই ছিটকে পড়লেন নিচে। আমার হাত ধরে চললেন তারা। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম আমি। অপূর্ব ভাই নতজানু হয়ে বললেন, “প্লীজ ওকে ছেড়ে দিন। ওর কিছু হয়ে গেলে আমাদের দুই পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।”

অপূর্ব ভাইকে আরও একটা ধাক্কা দিলেন। তিনি এবার আর ক্ষান্ত থাকতে পারলেন না। সর্বশক্তি দিয়ে আ/ঘা/ত করল একজনকে। ক্ষেপে গেল ডাকাত দল। হাতের ত/লো/য়ার দিয়ে আ/ঘা/ত করল অপূর্ব ভাইয়ের কাঁধে। অপূর্ব ভাই সরে গেলেন, তবুও কাঁধে লাগল। শার্ট ছিঁড়ে রক্ত গড়াতে লাগল। সবাই মিলে একত্রে আ/ক্র/ম/ণ করল। সবার হাত থেকে বাঁচতে অপূর্ব ভাই ঝাঁপ দিলেন পানিতে। চিৎকার করে উঠলাম, “অপূর্ব ভাই…”

শেষ রক্ষা হলো না। দুটি মানুষের ব/লিদান হওয়ার কথা ভেবেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। অজানা আমার ভবিষ্যৎ।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
রেসপন্স করার অনুরোধ রইল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here