#এ_মন_মেলুক_পাখনা 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০৯
হাতের উপর পুরুষালি হাতের স্পর্শ পেতেই নিদ্রা ভঙ্গ হলো। অতিদ্রুত উঠে বসলাম। ঘুমের মাঝে অভ্র স্যারের হাতটা আমার হাতের উপর পড়ছে। একদম কর্ণার ঘেঁষে ঘুমিছে আছেন তিনি। আমার একপাশে অদ্রিতা, আরেকপাশে ঊষা ঘুমিয়ে আছে। নিজের অজান্তেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছি তার ঠিক নেই। বাম হাত দিয়ে ঊষাকে সরিয়ে নেমে গেলাম বিছানা থেকে। বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ানোর শেষ মুহুর্তে অভ্র স্যারের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো। হাতের উপর ঘুমিছে আছেন তিনি। মুখে তৈলাক্ততা ভেসে উঠেছে। চুলগুলো এলোমেলো, একদম সাদামাটা লাগছে। লাল রঙের টি শার্টটা পেটের কাছে কুঁচকে রয়েছে। সেখানে একটি কালো আঁচিল। লজ্জা পেলাম খানিকটা। এগিয়ে গেলাম দু’পা। একহাতে অভ্র স্যারের মাথা ঈষৎ উঁচু করে বালিশ নিচে দেওয়ার প্রচেষ্টা করলাম। বালিশটা রেখে সরে আসার প্রয়াস করতেই আমার খেলা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেল। অভ্র স্যার পাশ ফিরে শুয়ে পড়লেন। টান লাগল চুলে। হতভম্ব হলাম আমি। চুল ছাড়াতে ব্যস্ত হলাম নিঃশব্দে। এমন সময়ে প্রবেশ করল অগ্নি। অপ্রস্তুত গলায় বলে, “অভ্র উদিতা ঊষা কি ঘুম থেকে উঠেছে?”
অতঃপর আমাকে ঝুঁকে থাকতে দেখে বাক্য হারিয়ে ফেলল। সামলে বলে, “ক্যান্ডেল তুমি এখানে কী করছো?”
বাক্যটা এতটা ধারালো ছিল অভ্র স্যার, উদিতা, ঊষা উঠে বসল। আমিও চুলের রং টান থেকে মুক্তি পেলাম। তখনও ঝুঁকি ছিলাম। অভ্র স্যার উঠে বসতেই তার মাথা ঠেকল গিয়ে আমার মাথায়। তাল সামলাতে ব্যর্থ হয়ে ছিটকে গেলাম মেঝেতে। মাথা ঘষতে ঘষতে কাবু দৃষ্টিতে তাকালাম। অভ্র স্যার বললেন, “মোম আপনি আমার দিকে ঝুঁকে কী করছিলেন?”
“কী আর করব? বালিশটা দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। (অগ্নিকে উদ্দেশ্য করে) দেখছেন, আমি বিপদে আছি। দিলেন ফেলে। আমি উদিতা আর ঊষাকে ঘুম পাড়াতে এসেছিলাম। কখন নিজে ঘুমিয়ে পড়েছি, মনে নেই।”
অগ্নি বলেন, “আর অভ্র তুই? এভাবে একটা মেয়ের সাথে থাকলি?”
“ডোন্ট সাউট, ওকে। আমার ঘরে আমি কীভাবে থাকব, সেটা তুই নিশ্চয়ই বলে দিবি না? তবুও বলি, আমি সোফাতে শুয়েছিলাম। ঘুমের ঘোরে কখন বিছানায় শুয়েছি তার ঠিক নেই। আমাকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়। আমি তোর মতো চরিত্র/হী/ন নই। আমার স্ত্রী ছাড়া অনেক নারী সেটা বুঝেছে। আমার মেয়েদের তোর কাছে রাখতে ভয় করে।” অভ্র স্যার বিছানা ছেড়ে নিচে নামলেন। অভ্র স্যার আর অগ্নি দুজনের মাঝে অদৃশ্য এক দন্দের আভাস পেলাম। চরিত্রহী/ন বলতে কী বোঝালেন। আমতা আমতা করে বললাম, “মানে?”
কেউ জবাব দিল না। অভ্র স্যার উদিতা আর ঊষাকে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। চোখমুখে বিরক্তির ছাপ। অভ্র স্যার ওয়াশরুমে যেতেই পেছন থেকে অগ্নি তেজ দেখিয়ে বলে, “আমি তোর মতো সাধু নই। আর আমার চরিত্র কেমন, আমি জানি। জনে জনে তোকে সার্টিফিকেট দিতে হবে না।”
বলেই স্বজোরে টেবিলের উপর রাখা ফুলদানিটা ছুড়ে ফেলল। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। সংকোচ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। অভ্র স্যার ফের বেরিয়ে এলেন। উদিতা ঊষা দাঁত ব্রাশ করছে। ইতস্তত করে বলে, “আমাকে একটা সাহায্য করতে পারবেন মোম?”
অসহায় শোনালো কণ্ঠ।
“জি বলুন, স্যার। আমি চেষ্টা করব।”
“আজ আমাদের ফ্যাশন কম্পিটিশন। অনেক অনেক হাউজ জয়েন করবে। আমার বিরোধী দলে মিস্ টিনা যোগদান করেছে। চৌধুরী হাউজের মডেল হয়ে সে অংশ নিবে। একবার এই প্রতিযোগিতায় হেরে গেলে আমার হাউজের দুর্নাম হবে।” অভ্র স্যার বলতে বলতে হাতজোড় করলেন। নিজের কাজে লজ্জিত হলাম আমি। আমার জন্য তার অর্জিত সুনাম, নষ্ট হবে। বললাম, “কীভাবে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?”
“ম্যানেজার সাহেব আমাকে এটা বলতেই এসেছিলেন। আমি টিনার সাথে গতরাতে কথা বলেছি। আপনি যদি তার কাছে ক্ষমা চান। তাহলে সে আবার ফিরে আসবে। এইটুকু করবেন?”
“আপনি তার ঠিকানা দিন। আমি তার কাছে ক্ষমা চেয়ে আসবো।” অভ্র স্যার একটা কার্ড এগিয়ে দিলেন। মডেলের ভিজিটিং কার্ড। কার্ডটা নিয়ে রওনা হলাম মডেল টিনার বাড়ির উদ্দেশ্যে। রিকশায় পঞ্চাশ টাকা ভাড়া নিয়ে পৌঁছে গেলাম কমলা রঙের এপার্টমেন্টের সামনে। দাড়োয়ানকে জিজ্ঞেস করে ভেতরে গেলাম। ছয় তলায় থাকে। রুম নং ৬০২। সিঁড়ি বেয়ে ছয় তলা উঠতে উঠতে হাপিয়ে গেলাম। দরজায় করাঘাত দিতেই মডেল দরজা খুলল। আমাকে দেখে মোটেও আশ্চর্য হলো না, কারণ আমি যাবো এটা সে আগেই জানতো।
সোফায় বসলাম। একাই থাকে ফ্লাটে। সোফাতে আমার সামনে বসে কিছু সবজি আর ফল খাচ্ছে সে। মডেলদের কত প্যারা, এটা খাওয়া যাবে না। ওটা খাওয়া যাবে না। নতজানু হয়ে বললাম, “আমার ভুল হয়েছে ম্যাম। আমি আমার কাজের জন্য দুঃখিত। আপনি যদি আবার শাহরিয়ার ফ্যাশন হাউসে ফিরে যেতেন।”
“কিন্তু আমি যে চৌধুরী ফ্যাশন হাউজে সাথে চুক্তি করেছি। আপনি হয়তো জানেন না, আমি যখন তখন যেকোনো ফ্যাশন হাউসের হয়ে কাজ করতে পারি।” লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলাম তার কথাগুলো।
“আমি..! ব্যাঙের মতো কিছু আঁটকে গেল গলায়। অভ্র স্যারর সাথে আগেই কথা হয়েছে। এখন আমার কাছে ভাব দেখাচ্ছে। দুবার কাশি দিয়ে বললাম, “হ্যাঁ, আমি জানি। তবুও যদি আপনি চেষ্টা করেন, পারবেন। এতদিন আপনি যে হাউজের হয়ে কাজ করেছেন, আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না। সেই ফ্যাশন হাউসের ক্ষতি হোক?”
“না, চাইবো না। আমি ফিরব। তবে আমার একটা শর্ত আছে। সেদিন যেমন বড়ো বড়ো গলায় আমাকে অপমান করছো। আজ নতজানু হয়ে মাটিতে বসে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে। তাহলেই আমি ফিরবো, নাহলে নয়।” বলেই খেতে লাগল। চোখ থেকে দুফোঁটা পানি ঝরে পড়ল। অভ্র স্যারের জন্য আমি ক্ষমা চাইবো। নাহলে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই উঠতো না। নিজেকে সংযত করে বসলাম মেঝেতে। হাতজোড় করে নতজানু হয়ে বললাম, “আ’ম স্যরি। আপনাকে আমি কোনোভাবেই ছোটো করতেই চাইনি। আমি দুঃখিত। আপনি আবার ফিরে আসুন শাহরিয়ার ফ্যাশন হাউসে।”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]