এক_চিলতে_রোদ Part_8
#Writer_Nondini_Nila
কিরে মুখটা এতো শুকনো লাগছে কেন তোর মনে হচ্ছে খাচ্ছনি কিছু আজ।আর চোখ গুলো কেমন ফুলে আছে যেন কান্না করেছিস? কাল হয়েছে রে আজকেও তোর ওই শয়তান চাচী তোকে বলেছে তাই না ঊষা?
কথাটা আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে বলল নিশা। নিশা আমার একমাত্র ফ্রেন্ড। ওকে কিছু বলার আগেই বুঝে যায় সব। মেয়েটা খুব ভালোবাসে আমাকে।
ও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি শুকনো মুখেই হাসি টেনে বললাম,
কই নাতো, কিছু হয়নি আমার?পরীক্ষার জন্য চিন্তা করছি তাই আমার মন খারাপ।
ও পেছনে থেকে উঠে এবার আমাকে ঠেলে ব্রাঞ্চের কিনারে থেকে ভেতরে ঢুকিয়চ আমার পাশে বসে বলল,,
একদম আমার সাথে চালাকি করতে আসবি না। আমি খুব ভাল করেই জানি তোর ওই চাচী কিছু করেছে। সকালে খেয়ে ও আসিস নি তাইনা।
সত্যি আমি সকালে খেয়ে আসি নি খাব কিভাবে ওই সবের পরে কি খাওয়া যায়?
আমি তখন দৌড়ে নিজের রুমে এসে কান্না করেছিলাম। তারপর নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে কান্না থামিয়ে ফেলি।আমার নিজেকেই নিজের সান্তনা দিতে হবে এটাই স্বাভাবিক আমার তো আর কেউ নাই। তারপর দেখি নয়টা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি কোনরকম রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসি। আসার সময় একবার আমার নজর টেবিলে গিয়ে ছিল অদ্ভুত তখন দেখতে পেয়েছিলাম ভাইয়া টেবিলে নাই। আমি এত কিছু না ভেবে হেঁটেই কলেজে চলে আসি হেঁটে আসার জন্য আধা ঘন্টা উপরে লাগে আসতে।
আসার পর ক্লাসে বসে পরি পরিক্ষা শুরু হতে আরো পনেরো মিনিট আছে আর নিশা আসে নি মন খারাপ করে বসি ছিলাম তার একটু পরেই নিশা আসে আর আসার পর থেকেই আমাকে মনখারাপের কারণ খুঁজে যাচ্ছে।
নিশার কথার মাঝে বেল পর আমার পেছনে গিয়ে বসে পরে।
আমার পাশের জন এখনো আসেনি ব্রাঞ্চের দুই পাশে দুজন করে বসেছে। স্যার এসে সবার সিটে খাতা দিয়ে দিল। মন খারাপ যতই হোক সেইসব এক পাশে ফেলে রেখে পরীক্ষা দিতে মনোযোগী হলাম।
15 মিনিট পর দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে দরজার কাছে এসে দাড়ালো আমার পাশের জন্য। সে নাকি জ্যামে আটকে ছিল।
2 ঘন্টা পরীক্ষার পরে বুঝতে পারলাম পেটের ভেতর তীব্র ব্যথা অনুভব হচ্ছে। গলা শুকিয়ে আসছে সকালে না খাওয়ার জন্য মাথা ঘোরাচ্ছে। দুই মিনিট চোখ বন্ধ করে থেকে লিখতে বসলাম। কোনরকম তিন ঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে বাইরে এসে পানি খেলাম অনেকখানি। যেন এই পানি দিয়ে আজকে পেট ভর্তি করার ইচ্ছা। কিন্তু পানি যতই খাও পেট তো ভরতি হবে না।
ইহান দুটো ক্লাস করিয়ে বেরিয়ে এসেছে ক্যান্টিনে বসে আছে। কফি অর্ডার দিয়ে কফি খাচ্ছে। আর ঊসার কথা ভাবছে আজকে ওর জন্য ঊষাকে এইভাবে কষ্ট পেতে হলো। ও যদি ওকে খেতে না বলতো তাহলে ওকে ঐ সব শুনতে হতো না। ঊষার চোখের জল পানি বেয়ে পড়ছিল ও কিছু তেই ওই চোখের জল সহ্য করতে পারছে না। ওর বুকের ভেতর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।কফিতে একবার চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই ওর চোখে ঊষার কান্না মাখা মুখটা মনে পরলো মেয়েটার আজকে পরীক্ষা আর আজকেও এতটা কষ্ট পেল।
নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে। চোখ খুলতেই সামনে তাকিয়ে দেখে কলেজের স্টুডেন্ট সেকেন্ড ইয়ার এর কিছু মেয়ে ওর সামনের সিটে বসে সিঙ্গাড়া খাচ্ছে আর অর দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে ওর কিছুটা আনইজি ফিল হলো। এইখানে জয়েন হওয়ার পর থেকেই ঝামেলায় পড়েছি। যেখানে যায় মেয়েরা এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে ওর যেন এলিয়ান আর মেয়েগুলো এমনভাবে চেপে ধরে।টিচারের সাথে কোন স্টুডেন্ট এরকম করতে পারে জানা ছিলনা মেয়েগুলো এত গায়ে পড়া বিরক্তে ওর কপাল কুচকে আছে সব সময়।কিন্তু সব মেয়ে এক রকম না বিশেষ করে ওর সামনে যে দল বসে আছে এই দলটা একটু বেশি বেয়াদব। প্রথম দিন থেকেই কেমন চিপকে থাকতে চাই। আমি তাকাতেই সবগুলো আমি হেসে উঠল তারপর ওদের মধ্যে মনে হয় লিডার সেই মেয়েটা হাসি হাসি মুখের সামনে দাঁড়িয়ে বলল আসসালামু আলাইকুম স্যার, কেমন আছেন?
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাসার ইচ্ছে ছিলনা তবু হালকা হেসে সালামের উত্তর দিয়ে ভালো আছি বললাম।
আচমকা মেয়েটা প্রশ্ন করার ছিল স্যার আপনি কি বিয়ে করেছেন?
মেয়েটার হাবভাব একদমই ভালো লাগছে না আমি চমকিত হয়ে মেয়ে দিকে তাকিয়ে আছি। কত বড় বেয়াদব এসে সরাসরি বিয়ে করেছে কিনা জিজ্ঞেস করছে? এইদিকে ও ঊষার কথা ভেবে মাথা খারাপ হচ্ছে। তারপরে আবার এই মেয়ে যন্ত্রনা ইহান রেগে দাঁড়িয়ে পরল তারপর গটগট করে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে এলো।
পরীক্ষা দিয়ে বাসায় এসেছি তিনটার সময়। আসার পর গোসল করে যা ছিল তাই খেয়ে নিয়েছি তারপরে রুমে এসে পড়তে বসলাম কারণ কালকে পরীক্ষা আছে। চাচি বাসায় নেয় আজকে সকালেই নাকি সে তার বোনের বাসায় গেছে আজকে নাকি সেখানেই থাকবে। কাল আসবে।
বাসায় এখন আমি একাই।
কলিং বেলের শব্দে রুমে থেকে বেরিয়ে দরজা খুললাম দরজার ভাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ভাইয়া আমার দিকে একবার অপরাধীর মতো তাকিয়ে উপরে চলে গেল।
লতা গোসল করতে গিয়েছে এখন ভাইয়া খাবে কিনা জানার জন্য আমাকেই যেতে হবে তার তাই আমি ধীর পায়ে ভাইয়ার রুমে গিয়ে নক করলাম ভাইয়া ভেতরে আছে। আমাকে ভেতরে যেতে বলল আমি ভেতরে না গিয়ে দরজায় থেকে জিজ্ঞেস করলাম,
ভাই আপনার জন্য কি খাবার রেডি করব?
ভাইয়া শাটের বুতাম খুলছিল আমি ভেতরে যাচ্ছি না দেখে ওইভাবেই ভাইয়া দরজার কাছে এসে আমাকে ভেতরে যেতে বলেছে। আমি ইতস্তবোধ করতে লাগলাম। বুঝতে পারছিনা ভাইয়া ভেতরে কেন যেতে বলছে।
কিন্তু ভাইয়ার কথা ফেলতে পারলাম না ভেতরে গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ালো।
ভাইয়া আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে এদিক ওদিক তাকাতাকি করছি।আচমকা ভাইয়া আমার কাছে এসে মুখ ছোট করে সরি বললাম।
আমি চমকে মাথা তুলে ভাইয়ের মুখে তার দিকে তাকালাম। ভাইয়া অপরাধী মত আমার দিকে তাকিয়ে আছে যেন খুব বড় অন্যায় করেছে সে আমার উপর।
মানে। অবাক হয়ে।
সরি আমার জন্য তোকে সকালে এত কষ্ট পেতে হলো।
আমি বিশ্মিত হয়ে ভাইয়া দিকে তাকিয়ে আছি।
আমি সত্যি চাইনি তুই এভাবে মার কাছে অপমানিত হচ্ছ।
ভাইয়া মুখটা মলিন করে আমার তাকিয়ে আছে। ভাইয়া আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে। আমাকে সরি বলছে। এই সবকিছু জানো আমার জন্য স্বপ্ন আচমকা ভাইয়ের মুখে এই সরিটা শুনে আমার বুকের ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। ভাইয়ের মুখে আমার জন্য কষ্টের ছায়া দেখতে পেয়ে বুকের ভেতর যেন সুখের অনুভূতি হতে লাগল। আমি মায়া ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে আছি ভাইয়ের দিকে।
ভাইয়া ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু না বলেই দৌড় বেরিয়ে এলাম ভাইয়ার কাছে গেলেই আমার কেমন কেমন জানি লাগে। বুকের ভেতর ধড়াস ধড়াস করে অস্থির লাগে।ভাইয়ার গভীর ভাবে তাকানো দেখলে দম বন্ধ হয়ে আসে।
ভাইয়া আমাকে সরি বলল খুশি আমার মনটা নেচে উঠল।
নিচে গিয়ে ভাইয়ার জন্য খাবার রেডি করলাম। রেডি করতেই ভাইয়ার ট্রাউজার আর কালো গেঞ্জি পরে নেমে এলো চুল হালকা ভেজা গোসল করেছে বোধহয়।
ভাইয়ার দিকে তাকাতেই হার্টবিট বেড়ে গেল আমি নিচে দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া এসে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
তুই খাইছিস?
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম।ভাইয়ার খেতে লাগলো আমি রান্না ঘরে যাব তখন ভাইয়া ডেকে উঠলো আমি থম কে দাঁড়িয়ে পরলাম।
তোর পরিক্ষা কেমন হয়েছে?
আমি না তাকিয়ে বললাম,
মোটামুটি।
ভাইয়া বলল, মোটামুটি কেন? ভালো হয়নি।
আমি কিছু বললাম না।
ভালো হবে কিভাবে না প্রাইভেট পড়ি না। আর পরার সময় ও পায়ন না রাত একটু পড়ি তাও ক্লান্তিতে বেশি পড়তে পারিনা ক্লান্তিতে ঘুম চলে আসে।
আজকে তো ইংরেজি গেল বুঝলাম না প্রথম দিন ইংরেজি কেন দিল? সবসময় সবার প্রথম পরীক্ষা হয় বাংলার আমাদের হয় ইংরেজি কপাল আমার।
#চলবে