এক_চিলতে_রোদ Part_47
#Writer_Nondini_Nila
বিকেলে থেকে আমি ছটফট করছি। ভাইয়া সেই যে আমাকে বের করলো আর দরজা খুলে বের হয়নি। আমি কতোবার যে উপরে গেলাম কিন্তু দরজা ভেতরে থেকে বন্ধ। ভালো লাগছে না আমার। মন খারাপ করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই চাচি কে দেখলাম। গেস্ট রুমের দিকে যাচ্ছে। ওইখানে তো ফারিয়া মেয়েটা থাকে চাচি সেখানে কেন যাচ্ছে আমি তাকিয়ে আছি। তখন লতা এলো আর আমাকে টেনে নিয়ে বললো,
‘ শুন এই ফারিয়া মেয়েটাকে আমার সুবিধার লাগছে না। কেমন ভাইজানের গায়ে পরে থাকে।’
আমি কিছু বললাম না। ও আবার বললো,
‘ ওই মেয়েকে বেশি ভাইজানের কাছে যেতে দিস না।’
আমি মনে মনে ভাবছি। আমি কি আর যেতে দিতে চাইরে। আমিও তো চাই দূরে থাকুক। আমি চাইলেই কি হবে? তার উপর ভাইয়া রেগে আছে কি করে তার রাগ ভাঙাবো আমি কে জানে?
মন খারাপ করে সোফায় বসলাম। তখন ইলা আপু এলো আর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘আমার রুমে খাবার নিয়ে আয়।’
আমি আচ্ছা বলে খাবার নিয়ে গেলাম। আপু তার কতো গুলো জামাকাপড় দিয়ে বললো,
‘এগুলো ধুয়ে ফেল।’
‘ এখন? কাল করবো নি!’
‘ না এখনি আমার কালকেই দরকার।’
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধুতে গেলাম। এই সব করতে করতে রাত হয়ে গেলো। আমি অর্ধেক ভিজে গেছি তাই নিজের রুমে এসে গোসল করে নিলাম। তারপর দেখতে পেলাম। ইলা আপু, ফারিয়া আর চাচি বসে গল্প করছে সোফায়। আমি তাদের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এমন ভাবে আড্ডা দিচ্ছে এদের দেখে কেউ বলতে পারবে না আজকে এদের পরিচয় হয়েছে। অথচ আমি বারো বছর ধরে এখানে আছি তাও এমন সম্পর্ক আমার সাথে হলো না। আমার চোখ আবার ছলছল করে উঠলো। আমি সবার সামনে নিয়ে মাথা নিচু করে উপরে চলে এলাম। সবাই গল্পে ব্যস্ত তাই আমাকে খেয়াল করেনি।
ভাইয়া দরজা খুলেছে। আমি দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পরলাম। ভাইয়া রুমে নাই বেলকনিতে বসে আছে। হাতে সিগারেট। আমি যেতেই আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ এখানে এসেছিস কেন?’
আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম, ‘ আমি সরি প্লিজ ক্ষমা করে দিন।আর এমন করবো না। আমার সাথে রাগ করে থাকবেন না প্লিজ !’
‘ আমি রাগ করলে তোর কি?’
‘ আমার কষ্ট হয় আপনি রাগ করলে।’
ভাইয়া উঠে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,,
‘ কেন তোর কষ্ট হবে? তুই তো আমাকে ভালোবাসিস না। তাহলে আমার রাগে তোর কি আসে যায়?’
আমি মাথা উঁচু করে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই চোখে চোখ পরলো। ভাইয়া আমার গালে হাত দিয়ে বললো,
‘ কি হলো বল কেন তোর কষ্ট হয় কেন? ভালোবাসিস আমাকে?’
আমি ছলছল চোখে তাকিয়ে আছি। আমি তো সত্যি ভালোবাসি খুব ভালোবাসি। বাসবো না কেন? আমাকে তো কেউ ভালোবাসে না এই একজন মানুষ ছাড়া তাহলে তাকে আমি ভালো না বেসে থাকবো কি করে?
ভাইয়া আমার চোখে চোখ রেখে এক নাগাড়ে জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে।
‘ বল ভালোবাসিস ?’
আমি বলতে চাইছি কিন্তু পারছি না। আমার মুখ এই কথাটা বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কেউ আমার গলা চেপে ধরে আছে ‘ভালোবাসি’ কথাটা বলতেই দিচ্ছে না। ইহান ভাই আমার দুগালে হাত রেখে কপালে কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভাইয়ার নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। আমার বুকের ভেতরে ধুকধুক শব্দ বেড়ে চলেছে।
আমি চোখ বন্ধ করে আছি। ভাইয়া মোটা গলায় আবার বললো,
‘ একবার বল না ভালোবাসি!’
আমার বুকে গিয়ে লাগছে কথা গুলো। ভাইয়া কেমন কাকুতি মিনতি করছে একটা কথা শুনার জন্য আর আমি তা বলতে পারছি না।
আমি তো ভালোবাসি তাহলে কেন বলতে পারছি না। আমার বলা উচিৎ।
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আজ বলে দেবো। ফারিয়ার জন্য তখন আমার চাওয়া অপূর্ণ রয়েছে তা এখন পূরণ করবো।
আমি ঢোক গিলে নিলাম। ঠোঁট কেমন শুকিয়ে আসছে।আমি জ্বিভা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলাম।
আমি আমতা আমতা করে মুখ খুললাম,
‘ আআ-মি আ-প….
আমার কথা থেমে গেলো কারো আওয়াজ পেয়ে। ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ালো সোজা হয়ে। ফারিয়ার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি সেকেন্ড এর মধ্যে বেলকনিতে চলে এলো। আর আমাদের দেখে বললেন,
‘ ইহান কি করছো?’
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে ভাইয়া কাছে গিয়ে বললো,
‘ চলো খেয়ে আসি। আজ তোমার গান শুনবো এসে।’
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ চল।’.
বলেই আমার হাত ধরে হাঁটতে লাগলো। আমি ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি রাগী চোখে তাকিয়ে আছে হাতের দিকে।
নিচে খাবার টেবিলে ভাইয়া আমাকে নিয়ে বসলো। ভাইয়ার সাথে খেতে বসলো তার সাথে টেবিলেই বসতে হয়। রাতে আর গানের কিছু হলো না।ভাইয়ার মাথা ব্যাথা বলে ঘুমিয়ে পরলো। আমিও নিজের রুমে ঘুমিয়ে পরলাম। ফারিয়া মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে চলে গেল।
সকালে উঠে আমি চমকে উঠলাম। ভাইয়ার আমার রুমে আমার বিছানায় শুয়ে আছে আমাকে জরিয়ে ধরে। আমার খাটটা ছোট্ট। ভাইয়া এখানে ঘুমালো কেমনে।
আমার নড়াচড়ায় ভাইয়া জেগে গেলো। আমার বললো,
‘কি হয়েছে এতো নড়ছিস কেন?’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘ আপনি এখানে কেন?’
‘ কেন কি হয়েছে?’
ভাইয়া ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বললো।
আমি বললাম, ‘ আপনি তো নিজের রুমে ছিলেন এখানে কখন এসেছেন? আর এই ছোট খাটে আপনি ঘুমালেন কি করে?’
ভাইয়া বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো আমিও উঠে বসলাম।
‘ তোর যন্ত্রণায় আমি ঘুমাতেও পারবো না। আমি দুটোয় এখানে এসেছি। হয়েছে শুনা।’
‘ মাঝ রাতে কেন?’
অবাক হয়ে বললাম।
‘ তোর জন্য আমার বাজে অভ্যাস হয়ে গেছে।’
‘ আমার জন্য?’
‘ হুম। প্রতিদিন তোকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে এখন তুই এই বুকে না থাকলে আমার ঘুম হয়না। এতো আগেই আমাকে ডেকে তুললি কেন?’
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। ভাইয়া আবার শুতে গেলে আমি টেনে ভাইয়া বাহু চেপে ধরলাম,
‘কি হলো?’
‘আপনি আপনার রুমে যান। এখনি লতা এখানে আসবে!’
‘দরজা আটকানো আছে সমস্যা নাই।’
‘ দরজা আটকানো থাকলে ও আমাকে খুলতে হবে। আপনি আপনার রুমে গিয়ে ঘুমান প্লিজ।’
‘আমি একা ঘুমাবো নাকি তুই ও আমার সাথে ঘুমাবি।’
‘ আমি অসম্ভব। আমাকে কাজ করতে হবে। আর আপনি পরে গেলে কেউ না কেউ দেখে ফেলবে।এখনি যান।’
আমার কথা কানে নিলো না ভাইয়া জোর করে আমাকে টেনে বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে শুয়ে পরলো। আর নিজের মুখ আমার কানের কাছে এনে বললো,
‘ দেখলে দেখবে আই ডোন্ট কেয়ার!’
আমি ছোটাছুটির চেষ্টা করেও পারলে তো। সত্যি লতার ডাক পরলো কিছু সময় পর। আমি মাথা ব্যাথার অযুহাত দিয়ে দিলাম। আটটার সময় আমার ডাকে রেগে উঠে চলে গেলো ভাইয়া। আমি চোরের মতো উঁকি দিচ্ছে কেউ দেখলো কিনা। চাচি কে দেখলাম না। কিন্তু ফারিয়াকে দেখলাম। তিনি ভাইয়াকে আমার রুমে থেকে যেতে দেখেছে।
আমি ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি রান্না শেষের দিকে লতা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ উঠছিস কেন? তোর না মাথা ব্যথা যা শুয়ে থাক।’
‘ না আর দরকার নাই।’
‘ যা ভাইজান শুনলে কিন্তু রাগ করবে মাথা ব্যাথা নিয়ে ও কাজ করতে এসেছিস।’
‘ এখন কমে গেছে।’
লতা আর কিছু বললো না। আমি সালাত কাটছি। তখন ফারিয়া এলো রান্না ঘরে। আর গলা উঁচু করে বললো,
‘ আমার জন্য কফি দাও তো ঊষা!’
আমি মাথা তুলে তাকালাম। তারপর আচ্ছা বললাম।
কফি দিতে গিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম।
‘ ইহান রাতে তোমার রুমে ছিলো?’
আমি চমকে উঠলাম। যা ভয় করেছিলাম। এখন যদি চাচি কে বলে দেয়। আমি ভীতু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি।
‘ ইহান তোমাকে ভালোবেসে জানি তাই বলে বিয়ের আগে তোমরা একসাথে ছিঃ ছিঃ। আমি তো জানতাম এখান কার মেয়েরা এসব মেনে চলে। নিজের সম্মান বিয়ের আগে বিলিয়ে দেয়না। এসব করেই তো আমার ইহান কে ফাঁসিয়ে নিজের করেছো তাইনা।’
আমি ছলছল চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। লজ্জা মাথা তুলে তাকাতে পারছি না। অপমানে আমার সারা শরীরে জ্বলে উঠছে।ফারিয়া অনেক বাজে কথা বললো আমাকে আমি প্রতিবাদে কিছু বলতে পারলাম না। কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এলাম গেস্ট রুম থেকে।
চোখ মুছে মুখটা ভার করে খাবার টেবিলে রাখলাম সবার সাথে। লতা আমার গোমড়া মুখ দেখে জিজ্ঞেস করেছে কি হয়েছে আমি বলিনি। ভাইয়া সবার আগেই খেতে এলো একদম অফিসের ড্রেস পড়ে। একে একে সবাই এলো। ভাইয়ার পাশে বসে থাকলেও আমি খেতে পারছি না। আমার কান্না আসছে। ভাইয়া তারাতাড়ি খাচ্ছে তাই খেয়াল করেনি। কিন্তু হাত ধোয়ার জন্য উঠে আমাকে এভাবে থাকতে দেখে নিজের সাথে টেনে ব্যাসিং এ এনে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে আমার ?
আমি এসব কথা লজ্জা ভাইয়াকে ও বলতে পারলাম না। ভাইয়া তার দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে চলে গেলো। সারাদিন আমার মন খারাপ করেই থাকতে হলো। আর ফারিয়া চাচি বলে দেওয়ার ভয় দেখালো। তা বলে আমাকে দিয়ে নিজের জুতা পরিষ্কার করালো।
ফারিয়া বাসায় আছে চারদিন। আজকে ইহান ভাইকে অফিস থেকে বিকেলেই আনিয়েছে বেড়াতে যাবে তাই। ভাইয়ার যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও ফারিয়ার বলা ফেলতে পারেনি। ফারিয়া বলেছে,
‘ আমি তো চলেই যাব ইহান একটু ঘুরিয়ে দেখাবে না। আমি তোমার ফ্রেন্ড তুমি বলো। তাহলে ফ্রেন্ডের এই আবদার রাখবা না।’
এসব শুনে আর না করতে পারেনি।
ফারিয়া ভাইয়াকে বুঝাচ্ছে সে আমাদের মেনে নিয়েছে কিন্তু আমার মনে হয় না।
আমাকে ও নিয়ে যাবে। তাই ভাইয়ার কথা মতো রেডি হয়ে নিলাম নীল কামিজ পরে। এটা ভাইয়া কিনে দিয়েছে।গাড়ি ভাইয়া আগেই ছিলো আমি এসে ভাইয়ার কাছে বসতে যাব ফারিয়া এসে ইহান ভাইকে বলে,
‘ ইহান আজকে আমাকে তোমার পাশে বসতে দাও না। সব সময় তো ঊষায় তোমার সাথে থাকবে পাশে থাকবে।’
ভাইয়া কিছু বলার আগেই ফাজিল সামনে বসে পরলো।আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম।
#চলবে
( গল্প দিতে লেট হচ্ছে বলে অনেকে অনেক কথা বলছেন। কিন্তু লেখিকার যে আইডির সমস্যা হয়েছে হয়তো অনেকে জানেন না। আমার পেছনে কেউ ভালো ভাবে লেগেছে যে চাচ্ছে না আমি লেখালিখি করি। তাই আমার আইডি নষ্ট করে দিচ্ছে। এখন আমার আইডি নাই। তাই গল্প লিখতে পারছি না আর লেখার মন মানসিকতা হারিয়ে ফেলছি। কিন্তু পাঠকদের ভালোবাসার আর তাদের এতো এতো রিকোয়েস্ট এর জন্য বন্ধ করতে পারছি না লেখালিখি করতে ইচ্ছে হয়। তাই আপনাদের জন্য শুধু আমার মনটা খারাপ থাকা সত্ত্বেও লিখেছি। আপনারা পাশে থাকলে আমি আইডি ছাড়াই গল্প দেবো। শুধু একটু অপেক্ষা করবেন দেরি হয় বলে অধৈর্য হবেন না আমার কষ্ট টা বুঝার চেষ্টা করবেন প্লিজ।)