এক_চিলতে_রোদ Part_35
#Writer_Nondini_Nila
দ্বিতীয় দিন আমাকে একাই আসতে হলো। আজ ভাইয়ার অফিস জয়েন করার ডেট। তাই ভাইয়া আমার সাথে যেতে পারবে না। শুধু আজ না এখন থেকে আমাকে একাই যেতে হবে। ভাইয়ার মনটা এতে খারাপ কিছুটা।কারন আমাকে একা ছারতে চায়না যে।আমি রেডি হয়ে বেরিয়ে এলাম।খাবার রুমেই খেয়েছি। ভাইয়া টেবিলে থেকে পানি খেয়ে উঠে দাঁড়ালো।
আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি। চাচি চাচা খাচ্ছে। চাচি আমাকে দেখেই অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আমি তার দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত মুখ করে ফেললাম। চাচি তখন দাঁত চেপে বললো,
“রাক্ষসী আমার ছেলেটাকে নিজের চাকর বানিয়ে নিয়েছে।”
কথাটা আমার ও ভাইয়ার কানে এলো ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে। চোখ সরিয়ে চাচি কে কিছু বলতে যাবে আমি বুঝতে পেরে তারাতাড়ি ভাইয়ার হাত ধরে নিলাম। ভাইয়া আমার কাছেই চলে এসেছিলো তাই ধরতে পেরেছি।
ইহান রাগে লাল হয়ে নিজের মায়ের দিকে তাকায়। আবার শুরু করেছে মা এই কয়দিনে এতো অশান্তি করেছে যে তার হিসেব নাই।আবার সকাল সকাল শুরু করছে। রেগে ইহান কিছু কথা বলতে যাবে তখন নিজের বাহু শক্ত করে খামচে আটকে ধরে ঊষা। ও চমকে উঠে তার দিকে তো ঊষার দিকে তাকায়। ওর দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় ওর মলিন মুখটা তাতে আরো রাগ হয় পরিক্ষা দিতে যাবে তখনো মার ঝামেলা না করলে কি হতো না।
আমি আমতা আমতা করে বলে উঠে, ” ভাইয়া প্লিজ চলুন ।এখন ঝামেলা করবেন না প্লিজ। ”
ইহান ভ্রু জোড়া কুঁচকে রাগ নিয়ে বলে, ” কিছু বলবো না মানে কি? অবশ্যই বলবো।”
“না প্লিজ। চলুন। চাচির সাথে আপনার এমন আচরন আমার ভালো লাগে না।”
“তোর সাথে কথা আচরণ তাহলে তোর ভালো লাগে বলছিস?”
আমি মাথা নিচু করে বললাম, ” ভালো না লাগলেও আমি অভস্থ হয়ে গেছি চাচির এসব কথায়।আর আমার পরিক্ষার টাইম হয়ে গেছে প্রায়। এখানে দেরি না করে চলেন আমরা যাই। আর আপনার ও তো দেরি হচ্ছে। আপনি তো আমাকে স্কুল এ রেখে আবার নিজের অফিস যাবেন প্রথম দিন লেট করলে কি ভালো দেখায়?”
আমি কথাগুলো বলে ভয় ভয় চোখে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া কী বলবে কে জানি আমি এতো কথা বললাম,
ভাইয়া কিছু বললো না আমার হাত ধরে টেনে বাইরে চলে এলো।তা দেখে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। পরিবারের সাথে ভাইয়ার এই দ্বন্দ্ব আমার ভালো লাগেনা।
ভাইয়া বাসার গাড়ি নিয়ে এসেছে আমাকে স্কুল এ নামানোর আগে আমার কপালে একটা গভীর চুমু খেলো। তারপর গালে হাত রেখে বললো সাবধানে থাকতে ও ভালো করে পরিক্ষা দিতে।আমি গাড়ি থেকে নামলেও ভাইয়া গেলো না আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম তার যাওয়ার জন্য কিন্তু জোরে হাঁক ছেড়ে বললো,
“গাড়িতে না গিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ”
আমি হকচকিয়ে বললাম,
” আপনি যান তারপর যাবো আমি। আরো দশমিনিট আছে তো!”
ভাইয়া চেঁচিয়ে বললো,
” আমার জন্য আমি তোকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছি কি? আমার লেট হচ্ছে কিন্তু তারাতাড়ি গাড়িতে গিয়ে বস তারপর যাবো আমি।”
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে চলে গেলাম। গাড়িতে আমার আমার পাশ খালি। এটা ভাইয়ার সিট ছিলো। আজ ভাইয়া নাই তাই নিশা আমার পাশে এসে বসলো।ও সব জেনে গেছে ভাইয়ার ব্যাপার এ। আসলে আমি বলেছে এখন মনে হচ্ছে বলে ভুল করেছি। শয়তানি মাইয়া খালি আমারে লজ্জা দেয় এই এখন দিচ্ছে।
“ঊষারে তোর ভাইয়া তোর সাথে এনগেজমেন্ট করে নিছে আর তোর এতো খেয়াল রাখে আমার যে কি ভালো লেগেছে শুনে। তোর চাচি তো খুব কষ্ট এ আছে তাইনা। ”
“এসব কথা বাদ দে!”
“তুই ও ইহান ভাইকে ভালোবাসিস তাইনা ।”
“আমি চুপ করে গেলাম। সত্যি কি আমি ভাইয়াকে ভালোবাসি নাকি বাসিনা?”
নিশা আমার উওর না পেয়ে বললো,
‘তোরা তো এক বাড়ি থাকিস তোদের মধ্যে কিছু হয়েছে?”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, “কি হবে?”
“ধুর, তোরে তোর হবু জামাই চুমু খাইছে?”
আমি হকচকিয়ে গেলাম।
“হবু জামাই কে? আর কি সব বাজে কথা বলছিস?”
নিশা এবার ক্ষেপে গিয়ে বললো, “হবু জামাই চিনো না তো এই আংটি হাতে রাখছিস কেন?”
আমি আংটির দিকে তাকালাম এটার কথা মনেই ছিলোনা। আমি গভীর ভাবে আংটির দিকে তাকিয়ে আছি।
“ওই এটার দিকে তাকিয়ে না থেকে বলনা তোরে কিস করেছে তাইনা। ”
লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নেড়ে হুম বললাম।
এবার ও জিজ্ঞেস করলো কোথা করেছে,” ঠোঁটে তাইনা।”
আমি চমকে উঠলাম। কি অসভ্য আমাকে তো ভাইয়া কপালে আর গালে চুমু দিয়েছে আর ও এটা কি বলছে? আমি রেগে ওকে একটা ধমক দিলাম।
সারা রাস্তা এইসব নিয়ে জিজ্ঞেস করে মাথা খারাপ করেছে তাই আসার সময় ওকে রেখে আমাদের ক্লাস এর মিঠু কে জোর করে বসালাম আমার পাশেও সব চেয়ে মোটা মেয়ে। কিন্তু ও ছাড়া আর কেউ নাই তাই ওকেই বসালাম।ওর জন্য অবশ্য আমার আসতে কষ্ট হলো কারণ ওর অনেক জায়গা লাগে।নিশা এটা দেখে রাগ করলো। আমি পাত্তা দিলাম না।
কিন্তু পরদিন ঠিকিই দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে আবার একসাথে বসলাম। রাগের কথা আমাদের মনেই নাই।
পর পর আমার পরিক্ষা শেষ হতে লাগলো ভাইয়া আর যায় নি আমার সাথে। কিন্তু এর মাঝে আমি রিহান কে দেখেছি সে আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু কাছে আসেনি।না কথা বলেছে।
আমি আসায় ছিলাম কাছে আসার তাহলে উনার মিথ্যা বলা নিয়ে কিছু শুনিয়ে দিতাম। উনার মিথ্যা বলার জন্য ভাইয়া কতো কষ্ট পেয়েছিলো আর আমাকেও কতো কিছু বলেছিলো।
পরিক্ষার মাঝে একবার চাচি আমায় ইচ্ছে মতো ঝাড়ি দেয়।ভাইয়া অফিস এ ছিলো তাই জানে না।গায়ে অবশ্য হাত দেয়না। কিন্তু আমার হাতে থেকে কেড়ে নিলো আংটি। আমি আঁতকে উঠে আংটির দিকে ছলছল করে তাকিয়ে ছিলাম।চাচি শাসিয়ে বললো,
“ইহানের কানে যেন কোন কথা না যায়!”
বলেই আমার গাল টিপে ধরলো।আমি ব্যাথা চোখ বন্ধ করে কুঁকড়ে উঠছি।চাচি ধাক্কা দিয়ে আমাকে সরিয়ে চলে গেলো।
আর তিনটা পরিক্ষা আছে। রাতে ভাইয়া আমার মলিন মুখ দেখে কিছু আঁচ করে বললো কি হয়েছে?
আমি চমকে মুখে মেকি হাসি এনে বললাম, কই কিছু না তো!
ভাইয়া আমার কাছে এসে মুখোমুখি বসলো আমি হকচকিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। ভাইয়া প্রশ্ন ছুড়লো,
” তোর পরিক্ষা খারাপ হয়েছে নাকি?”
আমি বললাম, ওই একটু!
মিথ্যা বললাম যাতে ভাবে পরিক্ষার জন্য মন খারাপ।ভাইয়া বিশ্বাস করলো কিন্তু আবার বললো,
“গালে কি হলো ওমন লাল কেন?”
আমি ভয় পেয়ে বললাম, “কই কিছু না তো। আসলে আমার গরম লাগছে তাই বোধহয় লাল হয়েছে।”
ভাইয়া সন্দেহ হলেও কিছু বললো না।আমি হাত আড়াল করে রেখেছি যাতে দেখতে না পায়। আমার বুকের ভেতরে হাহাকার করছে আংটির জন্য। কিন্তু কিছুই বলতে পারছিনা।
দুইটা পরিক্ষাও শেষ হয়ে গেলো আজ আমার শেষ পরিক্ষার দিন ভাইয়া এলো আমার সাথে।
পরিক্ষা শেষে ভাইয়ার কাছে গেলাম। আমাদের যেখানে পরিক্ষা সেখানকার কাজেই একটা মেলা হচ্ছে। সব স্টুডেন্ট রা যাবার জন্য জোর করছে।সবাই যাবেই যাবে। স্যার রা বাধ্য হয়ে রাজি হলো।
কারন কাউকে থামাতে পারছে না।
দশমিনিট রাস্তায় গিয়ে মেলায় ঢুকা হলো আমার হাত ধরে রেখেছে ভাইয়া। আর আমার পাশে নিশা আছে।
মেলায় মানুষ গিজগিজ। অনেক মানুষ উপস্থিত এখানে। সবাই মজা করছে। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,, কি খাবি?
আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখছি। কেউ খাচ্ছে তো কেউ পছন্দের জিনিস কিনছে। আমি সব কিছু হা করে দেখছি।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে তাকালাম কিন্তু কি খাবো বুঝতে পারছিনা। আমি বললাম,
“আমি খাবো না কিছু।”
বুঝতে না পেরে না করে দিলাম। বলেই আমার গান হাতে চিমটি খেলাম আমি মৃদু চেঁচিয়ে উঠলাম। নিশা দিয়েছে আমি রেগে তাকালাম,
ভাইয়া আমাকে চেঁচাতে দেখে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?
আমি কিছু বলার আগেই নিশা বললো, ” ভাইয়া ও ফুসকা খাবে বলতে লজ্জা পাচ্ছে!”
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম কি মিথ্যুক রে বাবা।
ভাইয়া আমাদের ফুসকার কাছে নিয়ে এলো এতোক্ষন আমার ভিড়ের কাছে ছিলাম না।এবার ভিড় ঠেলে যেতে হবে। ভাইয়া আচমকা আমার জরিয়ে ধরলো তারপর অপরপাশে ফুসকা হোটেল এ আসলাম।
খাওয়া শেষে ভাইয়ার কল এলো আমাদের দাড় করিয়ে ফোন কানে নিয়ে সরে দাঁড়ালো।আমি আর নিশা দাঁড়িয়ে আছি নিশা আমাকে টেনে দোকানে নিয়ে গেলো আর গলায় নেকলেস দেখতে লাগল। আমি তাকিয়ে আছি দোকানের দিকে অনেক জিনিস আছে আমার সব কিছুর মাঝে কাচের চুড়ির দিকে নজর পরলো আমি ধুম করেই চুড়ি হাতে নিলাম কি সুন্দর আমি সাদা চুড়ি হাতে পড়ে দেখছি। দাম জিজ্ঞেস করে চল্লিশ টাকা। কিন্তু আমার কাছে আছে বিশ টাকা মাত্র। এদিকে নিশা নেকলেস টা কিনে নিয়েছে। ওর আর টাকা নাই।আমি মহিলাটা কে জিজ্ঞেস করলাম বিশ টাকায় দেবে কিনা কিন্তু সে বললো সম্ভব না ত্রিশ টাকা হলেও দিতো।আমি মন খারাপ করে চলে এলাম। নিশা ভাইয়াকে বলতে চাইলো আমি মানা করে দিলাম।
একটু পর ভাই এসে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘কি হলো আবার মুখটা এমন পেঁচার মতো করে তাকিয়ে আছিস কেন?”
নিশা বললো,, ভাইয়া ঊষা…
আমি ওর হাত চেপে ধরে চোখ রাঙানি দিলাম ও চুপসে কথা অফ করে দিলো।
ভাইয়া সন্দেহ চোখে তাকিয়ে রইলো।
ভাইয়াকে পুরো জায়গা ঘুরালো আর কিছু কিনবো কিনা জিজ্ঞেস করলো আমি মানা করে দিলাম গাড়িতে উঠার আগে ভাইয়া আমাদের গাড়ির সামনে রেখে আইসক্রিম আনতে গেলো। এটা আমার খুব পছন্দ তাই। একটু পর আইসক্রিম এনে আমাদের হাতে দিলো কিন্তু দুইটা একটা আমার ও একটা নিশার।
#চলবে