এক_চিলতে_রোদ Part_33

0
2088

এক_চিলতে_রোদ Part_33

#Writer_Nondini_Nila

ভাইয়া আমার হাত টেনে রুমের বাইরে নিয়ে এলো আর চেঁচিয়ে চাচি কে ডাকতে লাগলো। একটু আগেই সবাই খেয়ে নিজের রুমে গেছে এখন ডাক শুনে বিরক্ত হয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চাচি এলো। কিন্তু ছেলেকে কিছু বলবে না নিজের ই রাগ লাগছে। চাচির পেছনে চাচা ও এলো ভাইয়ার এমন চিৎকার শুনে না এসে পারলো না।
ইলা আপু এখনো বাসায় আসেনি‌। তার আজ রাতে পার্টি আছে। লতা দৌড়ে এলো।চাচি এসে আমার হাত ভাইয়ার হাতে দেখে গোল গোল চোখ করে আমাদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চমকে মাথা নিচু করে আছি। হাত ছুটানোর চেষ্টা করেও পারিনি তাই এখন চেষ্টা বন্ধ করে দিছি।

কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না ভাইয়া এমন করছে কেন? চাচি কে এমন চেঁচিয়ে ডাকলো কেন আর সবার সামনে এভাবে আমার হাত‌ই বা ধরে রেখেছে কেন?

চাচা ও অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি লজ্জায় কি করবো বুঝতে পারছি না।

নিচু কন্ঠে ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বললাম,,” ভাইয়া আমার হাত ছারুন প্লিজ।”

ভাইয়া আমার কথা কানেও নিলো না তাকালো ও না আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি চাচির দিকে তিনি কড়া চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছি। যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে। আমি ভয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। ভাইয়া তখন বলে উঠলো,

” তুমি ঊষাকে বলেছো? ও আমাকে ওর জালে ফাঁসিয়েছে। আমাকে বস করেছে। এই সব কিছু করেছে এই বাড়ির বউ হ‌ওয়ার জন্য? ও ওর রুপ দেখিয়ে আমাকে নিজের করতে চাইছে ।এসব তুমি বলেছো?”
ভাইয়া চেঁচিয়ে বলে উঠলো।

আমি সহ বাসার সবাই কেঁপে উঠলো ভাইয়ার চেঁচিয়ে বলা কথা শুনে।

চাচি এবার ভয় পেয়ে গেছে কারন চাচাও তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘এসব কি ইলিনা তুমি ঊষা কে এসব বলেছো?”

চাচা আমাকে দেখতে না পারলেও এসব মেনে নিচ্ছে না।তিনি আমাকে সহ্য না করলেও কখনো খারাপ কথা বা ভালো কথাও কোনটাই বলেন না। আজ তিনি চাচির এসব কথা শুনে চমকে উঠেছে। ভাইয়া চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আমার হাত ধরে চাচা চাচিকে প্রশ্ন করছে দেখে।চাচি কিছু বলছে না চুপ করে মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে।

“কি হলো কথা বলছো না কেন? তুমি এই বাজে কথা ঊষাকে নিয়ে কি করে বললে? ওকে আমি সহ্য করিনা ঠিক কিন্তু তাই বলে এসব আমি মানতে পারছিনা।”

চাচি কথা বলছে না দেখে ভাইয়া বললো,

“আম্মু কে জিজ্ঞেস করে লাভ নাই। তিনি এখন কিছু বলবে না।এমনিতেই ঊষাকে বাসার কাজের লোক করে রেখেছো তোমরা। তার উপর অত্যাচার তো আছেই এখন আবার আরেক অপবাদ যেটা ও করেই নি। আম্মু, আব্বু শুনো ঊষা আমাকে ওর জালে ফাঁসায় নি আমি নিজে থেকেই ওর মায়ায় ফেঁসে গেছি।ও তো আমাকে ইগনোর করে সব সময় আমার থেকে দূরে লুকিয়ে থাকে। আর আমি জোর করে ওর কাছে যাই।কারন আমি ঊষাকে ভালোবাসি। ঊষা নয়। আম্মু তোমার বুঝতে ভুল হয়েছে।ঊষা আমার পেছনে ঘুরে না আমি ওর পেছনে ঘুরি। তাই ওকে দোষারোপ না করে আমাকে যা বলার বলো। আর তোমরা যাই বলো না কেন আমি ঊষাকে ছারতে পারবো না। বিকজ আই লাভ হিম সো মাচ। ওকে আমি বিয়ে করবো।‌আর এতে যদি তোমাদের মত না থাকে তাও আমি এটাই করবো। বোনের দোহাই দিতে পারবে না কারণ আমি ওকে কখনো বোন ভাবিনি। প্রথম দেখেই ওকে নিয়ে আমার চিন্তা ভাবনা ছিলো অন্যরকম। যাকে আমি আমার হৃদয় এ জায়গা দিয়েছি। আজকের পর থেকে ও আমার হবু বউ এই বাসার কেউ আর ওকে দিয়ে কাজ করাবানা কাজের লোকের মতো।যদি তোমাদের কাজের লোক লাগে বলো আমি এনে দেবো। ঊষাকে আর কেউ অপমান করবা না।”

এক নিঃশ্বাসে কথা বলে থামলো ভাই। তার বোধহয় পানি পিপাসা পেয়েছে। সে লতার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো লতা দৌড়ে পানি এনে দিতেই একহাতেই ঢকঢক করে পানি শেষ করে ফেললো।
এদিকে তার কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে। ভাইয়া পানি খেয়ে একনজর আমার দিকে তাকিয়ে সামনে তাকালো।

আমি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম এবার ভয়ার্ত চোখে সামনে তাকালাম। চাচি ও চাচা দুজন স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছে চোখ গোল গোল করে।দুজনের চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট।
চাচির আগে এবার চাচা বলে উঠলো,,

“এসব কি বলছিস ইহান?”
রাগে চাচার কপাল কুঁচকে এসেছে।তিনি হতবাক করা শুনে। কিন্তু তার এই কথা গুলো একটু ও পছন্দ হয়নি।

ভাইয়া বললো,

” হুম আব্বু আমি ঠিক বলছি। আমি ঊষাকে ভালোবাসি।ওকে আমি বিয়ে করবো। কিন্তু এখন না ওর আঠারো বছর হলে।এখন আমি এই মুহূর্তে ওকে নিজের হবু বউ এর স্বীকৃতি দেবো যাতে তোমরা বাজে কথা বলতে না পারো।”

চাচা বললো,” মানে কি করতে চাইছিস তুই? তুই কি ভুলে গেছিস ও তোর বোন সম্পর্কে তাকে তুই….

ভাইয়া কথা শেষ করতে দিলো না। নিজে বলে উঠলো,,

“প্লিজ আব্বু বার বার বোন বলোনা। ও আমার মায়ের পেটের বোন না তাই ওকে আমি বিয়ে করতেই পারবো।আর আমি ওকে বোন ভাবিনি কখনো কতো বার বলবো।”

এবার চাচি বললো,

“তোর ভাবতে হবে কেন ওর তোর বোন?”

“তাই নাকি তো বোন কেন বাসার কাজের লোক বানিয়ে রাখার সময় মনে ছিলো না। আর ও আমার বোন হলে ইমা ইলার মতো থাকতো। তাই ও আমার বোন না ব‌উ, হবু বউ।”

“কখনো না। এই ফকিন্নির বাচ্চারে আমি কখনো ব‌উ মানবো না। ওকে তুই বিয়ে করতে পারবি না!”

ভাইয়া বললো,” ফকিন্নি ও নাকি তুমি?”

চাচি চেঁচিয়ে উঠলো,,”তুমি আমাকে ফকিন্নি বললি?”

“না তুমি যা বলেছো তা শুধু দেখালাম।”

“এই মেয়ে তোর যোগ্য না।ওকে আমি ব‌উ মানবো না।”

“তোমার মানতে হবে না আমার বউ আমি মানলেই হবে।”

বলেই ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিলো। আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।আমি অতিরিক্ত শক খেয়ে পাথর হয়ে গেছি।
নরতে ও পারছি না কথা ও বলতে পারছি না।

হুট করেই ভাইয়া নিজের হাত থেকে একটা আংটি খুলে আমার অনামিকা আঙ্গুলে পরিয়ে দিলো।

আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার মুখের দিকে।চাচি চেঁচিয়ে বকাবকা করছে। এবার ছুটে এলো আর আমার হাত টেনে আংটি খুলার চেষ্টা করলো। আমি হাত পা ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছি যে যেদিকে টানছে যাচ্ছি। আংটি খুলছে না কারণ এটা আমার আঙুলে ঢুকাতে ও কষ্ট হয়েছে
ভাইয়ার।ছোট হয়েছিলো বোধহয়। চাচি আংটি খুলতে না পেরে রেগে আমার গালে হাত উঠানোর চেষ্টা করলো আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
কিন্তু হাত আমার গালে আসার আগেই ভাইয়া ধরে নিলো আর আমাকে টেনে এক হাতে জরিয়ে বললো।

“সাবধান আম্মু আমার ব‌উয়ের গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করবেনা। নাহলে এর ফল ভালো হবে না।”

“তুই ওই মেয়ের জন্য আমাকে চোখ রাঙাচ্ছিস?”

“হুম।”

হবেই ভাইয়া আমাকে টেনে রুমে নিয়ে এলো। চাচি পেছনে থেকে চেঁচামেচি করতেছে। সাথে ইলা আপুর আওয়াজ এলো সে এসে এসব দেখে অবাক লতা তাকে সব বলছে। ভাইয়া রুমে এসেই শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলো।

আমি থপ করে বিছানায় বসে পরলাম।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here